Tuesday 2 September 2014

এটা কে রে শান্তিগোপাল!

হে হে মানে আজ একটা কাজ করে ফেলেছি। ছড়াতে চাইনি কিন্তু কি করব প্রতিবারের মত আজকেও ছড়িয়ে ফেলেছি। যতই সাধু সেজে আপনাদের কাছে গুছিয়ে বসে দিনদুবেলা অন্য লোকেদের নামে নিন্দের ঝুড়ি খুলে বসি না কেন, এরকম অকাজ আমি মাঝে মধ্যে করে থাকি। নিজের কীর্তি কি আর বলা যায় বলুন ঢাক পিটিয়ে? এতদিন রাজ্যের লোকেদের নিয়ে ফাজলামি করে গেছি। বাবা দাদাকেও ছাড়িনি। এবার মনে খানিক বোধোদয় হল, ভাবছি নিজের চাট্টি গুনপনার কথা একটু বলা উচিৎ। নইলে কেমন যেন গুজগুজ করবে মনটা। বলেই ফেলি কি বলুন অ্যাঁ?

হয়েছে কি, প্রতি দিনের মত আজও দুজনে সাত-সকালে একপেট খেয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে ল্যাবের দিকে যাচ্ছি, যাচ্ছি না বলে ছুটছি বলাই ভালো। সকালে লাস্ট মোমেন্ট পর্যন্ত বালিশ আঁকড়ে হাঁ করে ঘুমাবো। তারপরে ঘুম চোখে উঠে হাই-টাই তুলে পেটে হাত বোলাতে বোলাতে জলের বোতলটা হাতে নিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়েই যখন ঘুম বাপবাপ বলে পালাবে তখন শুরু হবে আমার সকাল। মানে যাকে বলে কুরুক্ষেত্র। মার মার কাট কাট শব্দে দুজনের স্নান-ব্রেকফাস্ট ইত্যাদি হবে, হাতের কাছে যে জামা আর যে জুতো পাবো গায়ে-পায়ে গলিয়ে দুদ্দাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমেই দে ছুট ল্যাবের দিকে। বিশ্বাস করুন প্রতিদিনই এই সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আমি নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞা করি যে- নাহ, আজই শেষ, কাল থেকে ঠিক অ্যালার্ম বাজলেই উঠে পড়বো, অ্যালার্ম বন্ধ করে আর ঘুমবো না। কিন্তু ওই আর কি।

আজও সেরকমই প্রতিজ্ঞা-টতিজ্ঞা করে বেরিয়েছিলাম। যথারীতি যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে কি এক্সসারসাইজ বন্ধ রাখা যায় বলুন? না না সাত সকালে দৌড়াদৌড়ি, হাত-পা বাঁকিয়ে-চুরিয়ে যোগব্যায়াম, পেট ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে আবার বুক নিংড়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে রাম-লক্ষ্মণ কোনো বাবার দাওয়াই–ই আমি খুব একটা ভাল চোখে দেখি না। তাতে সকালের ঘুমের সময় কমে যায়। আমি মনের ব্যায়ামের কথা বলছি আর কি। লোকের নামে নিন্দে আর রাজ্যের লোককে নিয়ে হ্যা হ্যা করতে করতে সকালবেলা বেশ মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। বেশ মেডিটেশন টাইপের শান্তি পাওয়া যায় মনে। ট্রাই করে দেখতে পারেন, সাত সকালে হাঁসফেঁসে প্রানায়ামের চেয়েও কাজের জিনিস। যারা করে তারা জানে।

যাক গে যাক, যা বলছিলাম। অন্য দিনের মত আজকেও আমরা দুজনে সেই মনশুদ্ধির ব্যায়াম করতে করতে ল্যাবের দিকে ছুটছিলাম। তখনই ক্যাবলার মতন ছড়িয়েছে ব্যাপারটা। আর এইসব ক্ষেত্রে যা হয় আর কি, যথারীতি আমিই কালপ্রিট। দুজনেই বলব, কিন্তু ঘটনা ঘটার সময় দেখা যাবে আমার শ্রীমুখ নিঃসৃত বাণীই সকলের কানে পৌঁছেছে, সবাই আমার দিকে কেমন করে যেন একটা তাকাচ্ছে, পিনাকী আমায় কনুইএর ঠ্যালা মারছে আর আমি ছড়িয়ে ফেলেছি বুঝতে পেরে একটা স্মার্ট হাসি দেবার চেষ্টা করছি এবং তাতে আমায় যৎপরোনাস্তি ক্যাবলাকান্ত লাগছে। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। সকাল সকাল কোনো একজনের নামে কোন একটা ঘটনা মনে করে তাতে আরও খানিকটা কাল্পনিক ঘটনা যোগ করে, এরকম হলে কি হতে পারত এই ভেবে দুজনে পেট ফাটিয়ে হ্যা হ্যা করতে করতে ল্যাবের দিকে দৌড়চ্ছিলাম। করতে করতে কখন মেন এন্ট্রান্স-এ পৌঁছে গেছি খেয়াল করিনি। মানে আমি করিনি। দরজার সামনে বেশ কয়েকজনই যাতায়াত করছে। এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই বঙ্গভাষাভাষী। পিনাকী সামলে নিয়েছে কথাবার্তা। আমি তালকানার মত তখনও হাসছি আর বলছি, “সেই যে রে ‘ভূতের ভবিষ্যত’ সিনেমাটায় ছিল রে, কি যেন কথাটা? কি যেন?” পিনাকি দেখি মুখটুখ মুছে বলছে, “হ্যাঁ চ, পরে বলছি।” আমার মাথা এসময়ই কি করে যেন অপ্রয়োজনীয়ভাবে অবিশ্বাস্যরকমের সাফ হয়ে গেল। ঝপ করে মনে পড়ে গেল কথাটা। চারপাশ না দেখে পটাং করে বলে ফেললাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে। ধর, যদি ওকে (যাকে নিয়ে এতক্ষন হ্যা হ্যা হচ্ছিল আর কি) সামনে বসিয়ে বলা হয় যে, এটা কে রে শান্তিগোপাল! এতো আজব কালেকশান!” বলে নিজের ফাজলামিতে নিজেই হেসে কুটিপাটি হবার পর খেয়াল হল পিনাকী হাসছে না তো। কি হল? দেখি সে গম্ভীর হয়ে সোজা সামনে তাকিয়ে হাঁটছে, আর আমার একদম সামনে একটি বাঙালি ছেলে আমার মুখের দিকে ভুরু টুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমিও সঙ্গে সঙ্গে প্রবল গম্ভীর হবার চেষ্টা করে কান টান চুলকে তাকে পাশ কাটিয়ে সিঁড়িতে উঠে গেলাম।

ওপরে উঠে পিনাকী বলল, “তোকে কতবার বলতে হবে যে, এখানে আশি ভাগ লোক বাংলা বোঝে, কথাবার্তা বুঝে শুনে বল?”
সকাল সকাল ছড়িয়ে তারপর বকুনি খেয়ে সামলাবার জন্য যেই বলেছি, “আমি কি ওই ছেলেটাকে বলেছি নাকি?”
আবার বকুনি, “সেটা ও বুঝবে কি করে? ও সামনে এল আর তুই বললি, এটা কে রে শান্তিগোপাল! এতো আজব কালেকশান!......এর মানে কি দাঁড়ায়?”

বুঝলাম একটু বেশিরকমেরই ঘেঁটে গেছে ব্যাপারটা। কি আর করব? ঘটনাটা ঘটাতে চাইনি। ঘটে গেছে। কদিন ওই ছেলেটাকে দেখলে ভয়ানকরকম সিরিয়াস মুখ করে মাথা নিচু করে পাশ কাটাতে হবে আর কি।

তাই বলছিলাম, মনুষ্যচরিত্র অনুযায়ী অন্যকে নিয়ে নিন্দেমন্দ করলেও আমারও এরকম ধরনের কীর্তিকলাপ কম নেই। আজ মাথা টাথা চুলকে ভাবলাম একটা স্বীকারোক্তি করেই ফেলি। ঝুলিতে আরও আছে রঙ বেরঙের বেড়াল। ক্রমশঃ প্রকাশ্য।   

2 comments:

  1. বেশ মজাদার তো! :)

    ReplyDelete
  2. Sorry comment ta onek din pore chokhe porlo tai uttor dite deri holo. Hum Arijit. moja to botei kintu amar obosthata majhe majhe khub korun hoye jay moja korte giye.

    ReplyDelete