Wednesday 24 June 2015

Multitasking

Multitasking ব্যাপারটা শুনতে যতটা কঠিন লাগে ব্যাপারটা আদতে তার চেয়ে শতগুণ বেশি কঠিন। এই আপ্তবাক্যটি আমি সম্প্রতি আবিষ্কার করেছি। বলা ভাল নিজের দৈনন্দিন জীবন দিয়ে বুঝতে শিখেছি বা শিখছি। এতদিন Multitasking বলতে বুঝতাম ল্যাবে তিনটে এক্সপেরিমেন্ট একসাথে করে ফেলার চেষ্টা করা বা বাড়িতে মাছ ভাজা করতে করতে গত দশদিনের ঝাঁট না পড়া ঘরের মেঝেতে ঝাঁটা বুলিয়ে ফেলা বা প্রেসার কুকারে খিচুড়ি চাপিয়ে সেই খিচুড়ি না পুড়িয়ে ফেলে আস্ত একটা সিনেমা দেখে ফেলার মতন কাজ বুঝি। ফলে এযাবৎকাল এই জাতীয় মহান কাজকর্ম একসাথে করে ফেলতে পেরে “ওরে এ তো দারুণ multitasking”- বলে গলা ফুলো পায়রা হয়ে ঘুরে বেড়াতাম। এখন বুঝছি ব্যাপারটা এতটাও বোধহয় ইয়ে নয়। যখন ল্যাবের তিনটে এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটা হল “চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের তালব্য শ আর রুমালের মা” তখন তার থেকে ‘চশমা’ বানানোটা যে কি বিপুল ঝকমারির কম্ম তা যেকোনো রিসার্চ ল্যাবে বছর তিনেক কাটানো যেকোনো হতভাগ্যই জানেন। আর তার সাথে যদি থাকে নির্দিষ্ট সময়সীমার রক্তচক্ষু তবে তো ব্যাপারটা আর বেশ রসস্থ হয়ে ওঠে। আর তার সাথে যদি যোগ হয় নিজের ভবিষ্যত দর্শনের বৃথা চেষ্টা তাহলে তো সোনায় সোহাগা, দিগ্বিদিকে অন্ধকার। এবং এখানেও শেষ না হয়ে বেয়াড়া মাথা যদি বলে আমার বিনোদনের খোরাকটি গেল কই? ফলে আরও একশো রকম বিষয়ে পড়াশুনা-আলোচনা, আলুভাজা খেতে খেতে একশো রকম ভাবে ব্রেনস্টর্মিং ইত্যাদি। সাথে আবার মনের বায়নায় তার বিনোদনের ব্যবস্থার কথাটিও ভুললে চলে না। নইলে আবার মন আর মাথার ঝগড়ায় মন বা মাথা সমস্ত কাজই ভুন্ডুল হতে বসে। এত কিছুর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল সমস্ত কিছু থেকে সঠিক সময় মন সরিয়ে এনে সেই মুহূর্তের বর্তমান বিষয়টিতে মনোনিবেশ করা। কিন্তু বাকি বিষয়গুলিকেও ভুলে গেলে চলে না। সঠিক সময়ে সমস্ত মন মাথা নিয়ে সেখানে ফিরে আসার কথাটিকে মস্তিস্কের কোন একটি কুঠুরিতে সযত্নে লালন করা চাই। অর্থাৎ ঘরের মেঝেতে ঝাঁটা বোলাতে বোলাতে মাছভাজার কথা ভুলে গেলে সেদিন আর ভাতের সাথে মাছটি জুটলো না। আবার সম্পূর্ণ মাথাটি মাছের দিকে থাকলে ঘরের এদিক ওদিক রয়ে যায় ধুলোর পরত। আমার যেমন মাছ ভাজতে গেলে মনে পড়ে ঘরটা না পরিস্কার করলেই নয়। উশখুশ করতে করতে যেই না ঝাঁটা হাতে নিলাম, অমনি সাঁ করে মন হতভাগা ঝাঁপ মারলো মাছের কড়াইতে। ফলে যা হয়- না হল ঠিক করে মাছ ভাজা, না হল ঠিক করে ঘর পরিস্কার করা। দুপুরে আধপোড়া বা আধকাঁচা মাছ দিয়ে ধুলো কিচকিচ ঘরের মেঝেতে বসে ভাত খেতে হল। উপরি পাওনা ঠিক সময়ে ঠিক কাজ না করায় মন খুঁতখুঁত- বুক দুড়দুড়- জীবনটাকে একবাটি ভর্তি কালমেঘ পাতার রস ছাড়া আর কিছু মনে না হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। দুইয়ের মাঝে সঠিক ব্যালান্সই যে হল আসল multitasking সেটি এই বুড়ো হয়ে তবে একটু একটু বুঝতে পারছি। আগে তো পুরোটা হৃদয়ঙ্গম করে উঠি তবে তো চেষ্টা করে করে একটু একটু multitasking করার কথা ভাবা যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট বিষয়ে পূর্ণ মনোনিবেশ আর নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট বিষয় থেকে সাময়িক ভাবে মন তুলে নিয়ে পরবর্তী নির্দিষ্ট বিষয়ে পূর্ণ মনোনিবেশ করতে আমার তো অন্তত এখনও ল্যাজেগোবরে অবস্থা। দেখা যাক। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এই চেষ্টাটা অন্তত শুরু করে উঠতে পেরেছি বলে অন্তত নিজের চোখের দিকে আয়নায় তাকাতে পারা যাচ্ছে। অপরাধবোধ খানিক কম কম বলেই মনে হচ্ছে, তাই হয়ত প্রাণে খানিক হাওয়া লেগেছে। অবশ্য প্রাণে বাতাস লাগার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ঘটেছে। এক, মৌসুমি বাতাসের অক্ষরেখা উত্তরপ্রদেশের মাঠঘাট ছাপিয়ে হরিয়ানা ছুঁই ছুঁই হয়ে এসেছে। তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আর খটখটে হরিয়ানায় বসে থাকা বর্ষা ভেজা সবুজ জল ছপছপ বঙ্গে বড় হওয়া মানুষের কাছে এর চেয়ে ভাল খবর আর কি হতে পারে? আর দুই নম্বর কারণটা হল এই যে, আমরা কাল আবার দুজনে লোটা কম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়ছি তিন-চার দিনের জন্য। এবারের গন্তব্য কুমায়ুন পাহাড়ের খাঁজে লুকিয়ে থাকা-মুক্তেশ্বর। আমাদের বেড়ানোর রুটিন মেনে কালকে যথারীতি বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস ঘোষিত হয়ে গেছে এরই মধ্যে।


এর পরেও প্রাণে বাতাস না লেগে পারে?