Wednesday 17 September 2014

গুপ্তধন কোথায়?.........দ্বিতীয় পর্ব

গুপ্তধন কোথায়.......প্রথম পর্বের পর 

হ্যাঁ যা বলছিলাম.........তারপর? ........"তারপর এদিকে বড়মন্ত্রী তো রাজকন্যার গুলিসুতো খেয়ে ফেলেছে। কেউ কিচ্ছু জানে না................." ! না মানে ইয়ে হয়েছে কদ্দুর বলেছিলাম? হ্যাঁ মনে পড়েছে। খেলা শুরু হলো। এইবছরের গপ্প শুরু করার আগে গত কয়েক বছরের নিয়মাবলী একটু বলে নেওয়া দরকার। কারনটা পরে বুঝতে পারবেন। গত কয়েক বছর যা নিয়ম ছিল তাতে প্রতিটি দলের জন্য দশটি করে ক্লু থাকে। প্রতিটি ক্লু বা পাজল সমাধান করলে দলটি ক্যাম্পাসের যে কোনো জায়গায় লুকানো একটি নির্দিষ্ট চিহ্নের কাছে পৌঁছাবে এবং সেই চিহ্নটিই বা তার কাছাকাছি কোনো জায়গা থেকে পরবর্তী ক্লু-টি পাওয়া যাবে। এই ভাবে দশটি পাজল সমাধান করলে শেষ ক্লু-টি গুপ্তধনের সন্ধান দেবে। প্রত্যেক দলের ক্লু এর পারম্পর্য আলাদা আলাদা যাতে সবাই মিলে একসাথে একজায়গায় হুড়োহুড়ি না করতে পারে। আর শেষ ক্লু টি সব দলের জন্যই এক। যাতে সবাই শেষপর্যন্ত ট্রেজার এর কাছেই পৌঁছায়। সেই মতই সবাই ভাবছে এরকমই হবে ক্লু। কিন্তু সেরকমই যদি হবে তাহলে আর আমি রসিয়ে বসে এই পোস্ট লিখব কেন? কেন? দাঁড়ান আস্তে আস্তে তো পরত খুলবো।

এই বছরে তো অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টারমশাই টীম ক্যাপ্টেনদের ডেকে প্রথম ক্লু দিলেন। পিনাকীও ঝটপট এসে স্টেপল করা ক্লু খুলে ফেলল। আর আমরা বাকি সাতটা মাথাও গোল হয়ে সেই কাগজের ওপরে ঝুঁকে পড়লাম। বাকি সব দলই মাঠের মধ্যে গোল গোল জটলা তৈরী করেছে। প্রথম ক্লু থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, কাউন্ট ড্রাকুলার একটি ব্যাঙ্ক চেক খুঁজে বার করতে হবে। সেটি আছে মিস্টার হুয়াং বলে একজনের কাছে। যার মুখ মাঝে মাঝেই বদলে যায় কিন্তু নাম বদলায় না। সে বর্তমানে আছে আমাদের কাছাকাছিরই একটি জায়গায় এবং সে ড্রাইভার এর ছদ্মবেশে আছে। তার বয়স ৬৩০০ বছর এবং সে রক্ত চুষে খায়।.........বোঝো!!! আর সেই কাগজে ছিল একটি ছড়া যার মানে দাঁড়ায় যে আমাদের খুঁজতে হবে একটি হলুদ দরজা, যেটি আবার দরজা নাও হতে পারে (মানেটা কি?), তার ভেতরে নীল কিছু একটা। আর উল সংক্রান্ত কিছু একটা। তার ভেতরে আঠা দিয়ে কিছু একটা আটকানো আছে। তবেই আমরা দ্বিতীয় ক্লু এর কাছে পৌঁছাবো........কি ভীষণ ক্লু!!!!

এই সেই বীভৎস প্রথম ক্লু...পিনাকী তুলেছে ছবি

পড়ে টড়ে মনে হলো হাচিকোর কথা শুনলেই ভালো ছিল। সবাই যে যার মোবাইলে পুরো ছড়াটার ছবি তুলে নিল যাতে দলছুট হয়ে খুঁজতে গেলে দেখে নিতে পারে দরকার হলে। আমি আর ছবি টবি তোলার দিকে গেলাম না। কারণ, দলছুট হয়ে একা একা এই ভীষণ ছড়ার মর্মোদ্ধার করা যে আমার কম্ম নয় এই কনফিডেন্স এদ্দিনে আমার নিজের সম্পর্কে হয়েছে। সবাই খুব মাথা টাথা ঘামাতে লাগলো। আমি হাচিকোর মাথায় হাত বুলোতে লাগলাম। হঠাত দেখি সবাই হোস্টেল-১ এর দিকে ছুটছে। আমিও 'ওরে আমিও আছি রে'......বলে হাঁচড়-পাঁচড় করে সাদা টিশার্ট এর দল লক্ষ্য করে ছুটতে লাগলাম। ছুটতে ছুটতেই সদাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমরা কোথায় যাচ্ছি? বলল মেস এ। ওখানে কেন যাচ্ছে জানি না। যাই হোক মেসে পৌঁছে মেসের ছেলেদের জিজ্ঞাসা করা হলো যে এখানে কেউ কিছু লুকিয়েছে কিনা? তারা 'না' বলতে সবাই বলল হোস্টেলের দরজাগুলো তো হলদে রঙের কোনো ঘরে কিছু লোকানো নেই তো? ফাহিম বলল, ওরে ভাই, হোস্টেল-১, হোস্টেল-২ এর সব ঘরের দরজাই তো হলদে রঙের তাহলে তো সব ঘরেই খুঁজতে হয়। ঠিক কথা। তাহলে ওটা নয়। তাহলে কি? হেঁটে হেঁটে মেস থেকে বেরিয়ে আসছি, হঠাত পিনাকী দেখল একটা হলুদ দরজার সামনে নীল পাপোষ। এটাই ক্লু নয় তো? পাপোষ তুলে দেখা হল। পিনাকী বলল আমি কি বেশিই গোয়েন্দাগিরি করে ফেলছি? হোস্টেল-১ থেকে বেরিয়ে এসে মাথা চুলকাচ্ছি, এমনসময় রুচি বলল যে আচ্ছা ছড়াটাতে যে 'blossom of wool' কথাটা ছিল সেটা কোনো ভাবে ওয়াশিং মেশিন এর সাথে যুক্ত নয় তো? অতএব চল চল হোস্টেল-২ এর ওয়াশিং এরিয়াতে। সেখানে গিয়ে গত পাঁচ-ছয় ওয়াশিং মেশিনএর আগাপাশতলা খোঁজাখুঁজি করেও কিছু সুরাহা হলো না। হটাত দেখি ওয়াশিং রুমের দরজার পেছনে একটা কাগজ সেলোটেপ দিয়ে লাগানো। তাতে সূর্যের মতন কিছু চিহ্ন। এই তো পেয়েছি পেয়েছি। কিন্তু এই চিহ্নটাই এবারের চিহ্ন তো? নাকি এটা গত বছর থেকে আটকানো? আমাদের টীম এর রেশমা গতবছরের অর্গানিজার। সে বলল না না দিদি, আমাদের সময় এই চিহ্ন ছিল না। অতএব এটা না হয়ে যায় না। হলদে দরজার পেছনে আঠা দিয়ে আটকানো আছে। চল চল এটাই হবে। দুরে নিচে এসে ভলেন্টিয়ার এর খোঁজ করি। গম্ভীর মুখে দিদিমনি এলেন, -টীম নম্বর কত?
- পাঁচ
-হ্যাঁ বল কি ক্লু।
-ক্লু বলার পরে বলা হলো আমরা কি পেয়েছি। চুপি চুপি। কারণ অন্য টীম এর লোকজনও কাছাকাছিই হাতড়াচ্ছিল।
দিদিমনি গম্ভীর মুখে মাথা নেড়েই চলে। বলে, "হয়নি, হয়নি ফেল।"
-আমরা সবাই হাঁউমাঁউ করে বললাম, কেন? তোমাদের লুকানো চিহ্নটা কি?
-বলব না। তোমাদের খুঁজতে হবে।
যাহ বাবা! কি খুঁজবো সেটাই জানিনা। মনে মনে তিনজনে দিদিমনিকে গালাগালি দিতে দিতে আবার মাঠে এসে দাঁড়ালাম।বাকিরা কোথায়?
দেখি তারা দুই দলে ভাগ হয়ে গেছে। একদল গেছে এনিম্যাল হাউস এ। আর একদল যাচ্ছে হোস্টেল-১ এর জিম এ। কেন যাচ্ছে আমায় জিজ্ঞাসা করবেন না। আমি জানি না। বোধহয় কেউই ঠিক করে জানত না। ভাবলাম জিম এর দিকে যাওয়াটাই ভালো। কারণ এখান থেকে এনিম্যাল হাউস যেতে গেলে অনেকটা দৌড়াতে হবে। অত পরিশ্রম করা স্বাস্থ্যের পক্ষ্যে ভালো নয়। তার চেয়ে জিমের দিকে যাওয়াই ভালো। জিম যেতে গিয়ে হোস্টেল-১ এর রিসেপশন, নোটিশ বোর্ড সব তোলপাড় করা হলো। কারণ সেখানে কিছু হলুদ-নীল এর কম্বিনেশন ছিল। ফাহিম দেখি রিসেপশনে রাখা কুলারটাকে ঝপাং করে খুলে ফেলেছে। উল্টাবার তোড়জোড় করছে। "ওরে থাম থাম !" করে তো তাকে থামানো গেল। দুদ্দাড়িয়ে জিমের দিকে দৌড়ালাম। পিয়ুশি প্রথমেই জিমের যাবতীয় নীল আর হলুদ ঘেঁষা সবকটা ম্যাট্রেস উল্টে পাল্টে ঝেড়ে ঝুড়ে দেখে নিল। আমি ভাবলাম সবাই এত মাথা খাটছে আমিও কিছু করি। নীল রঙের বক্সিং ব্যাগটা ঝুলছিল, টেনে টুনে চেন টেন খুলে দেখতে যাব, রুচি হাঁ হাঁ করে উঠলো। "আরে কর কি কর কি!! খুলে পড়ে গেলেই হলো আর কি"। ঠিক কথা, দেখ না দেখ হয়ত আমার পায়েই পড়ল। ভাবলাম ছেড়ে দি বাবা! সবার পেছনে পেছনে দৌড়াব বরং সেটাই ভালো। বিফল মনোরথ হয়ে নিচে নেমে আসছি, দেখি অন্য একটা দল ভলেন্টিয়ারকে বলছে আমাদের ফোর্থ ক্লু এটা। বলে কি রে ভাই!

এমন সময় পিনাকীর ফোন। বলে করছিস কি তোরা? আমরা তো সলভ করে ফেলেছি। চলে আয় এনিম্যাল হাউস এ। হাওয়ার বেগে দৌড়ালাম সবাই। এখানেই মজা। কিছুটা গিয়ে দেখি ইমরান আর পিনাকী দৌড়ে আসছে। হাতে একটা কাগজ। সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে দেখি তাতে একটা ডেঞ্জার সাইন আঁকা। বলে এনিম্যাল হাউস এ ঢোকার মুখে হলুদ দরজার জুতোর খোপের মধ্যে নীল রঙের শু-কভার ছিল সেই খোপে সেলোটেপ দিয়ে এটা লাগানো ছিল। হুররে বলে চিত্কার করতে গিয়েও বাপ বাপ বলে সামলে নিলাম। অন্যেরা শুনে ফেলবে। অন্যদেরও এই ক্লু খুঁজতে হবে কোনো না কোনো সময়। কিন্তু ঝামেলা অন্য জায়গায়। চিহ্ন খুঁজে পেয়েই দুই শার্লক হোমস মিলে সেটাকে সেখান থেকে উত্খাত করে নিয়ে চলে এসেছে। এখন অন্য দল গেলে তো সেটাকে ওখানে খুঁজে পাবে না। আমাদের তো কোনো চিহ্ন নিয়ে চলে আসার কথা নয়। আমাদের তো খেলা থেকে বাদ দিয়ে দেবে গেম কো-অর্ডিনেটর জানতে পারলে। অতএব চল চল ফের লাগিয়ে রেখে আসি কেউ জানতে পারার আগেই। দুই অত্যুত্সাহী গোয়েন্দাকে আবার পাঠানো হলো। তারা আলো টালো নিভিয়ে চুপি চুপি যেখানকার জিনিস সেখানে ফিরিয়ে রেখে এলো।

এই সেই ভুল ডেঞ্জার চিহ্ন, একটা কোন ছেঁড়া দেখতেই পাচ্ছেন, তুলে আনতে গিয়ে সেলোটেপ থেকে ছিড়ে গিয়েছিল।...ছবি পিনাকী তুলেছে।


এবার দরকার একজন ভলেন্টিয়ার যাকে বলতে হবে আমরা প্রথম ক্লু সলভ করে ফেলেছি। দ্বিতীয় ক্লু চাই। হিসেব অনুযায়ী এখানে একজন ভলেন্টিয়ার থাকার কথা। কিন্তু কেউ কোথাও নেই। একজন গার্ড বসে আমাদের দেখছে। আমরা সবাই নিজেদের গোয়েন্দা স্বত্তাকে জাগ্রত করে ভাবলাম এই গার্ডই ভলেন্টিয়ার হবে। এর কাছেই আমাদের পরের ক্লু থাকবে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে তাই এঁনাকেই ভলেন্টিয়ার করেছে এরা। সবাই মিলে তাঁকে চেপে ধরা হলো।
-আপনি ভলেন্টিয়ার?
-(একগাল হেসে) হ্যাঁ আমি এখানকার ভলেন্টিয়ার।
-আমাদের টীম নম্বর ফাইভ।
-(হাসি)
-আপনার কাছে আমাদের নেক্সট ক্লু আছে?
-ক্লু? কি ক্লু?
-আপনি এখানকার ভলেন্টিয়ার তো?
-হ্যাঁ
-টীম ফাইভের সেকেন্ড ক্লু আপনার কাছে আছে তো?
-না।  আমার কাছে কোনো ক্লু নেই তো।
এসময় পিনাকী তার ঊর্বর মস্তিস্ক থেকে বার করলো, আচ্ছা ভলেন্টিয়ারের নাম তো হুয়াং হবে। এঁকে এমনি বললে কিছুই বলবেন না বোধহয়। সে দেখি হটাত জিজ্ঞাসা করছে-"আপ হুয়াং হো না?" গার্ড হাঁ করে তাকিয়ে আছে দেখে আবার জিজ্ঞাসা করলো-"আপকা নাম হুয়াং হ্যায় ক্যা?"
সে দেখি প্রবল নেতিবাচক মাথা নাড়ছে। আরো কিছুক্ষণ তাঁকে বিরক্ত করার পর আট গোয়েন্দারই মাথায় ঢুকলো যে ইনি ভলেন্টিয়ার নন। অতঃপর? সবাই মাথা চুলকাতে চুলকাতে মাঠের ওপর দিয়ে হেঁটে আসছি দেখি দূরে হেডমাস্টারমশাই পায়চারী করছে। দৌড়-দৌড়-দৌড়।
-এনিম্যাল হাউস এ ভলেন্টিয়ার কে?
সে বলে-কেন?
-আমাদের ক্লু এনিম্যাল হাউস এ আছে কিন্তু ভলেন্টিয়ার নেই নেক্সট ক্লু দেবার জন্য। ভলেন্টিয়ার কে বল।
-ভলেন্টিয়ার কে তো বলা যাবে না।  তোমাদের কে খুঁজে বার করতে হবে।
-আরে এটা কি হলো? আচ্ছা বল সাইনটা কিরকম। আমাদের কি সাইন খুঁজতে হবে।  আমরা একটা ডেঞ্জার সাইন পেয়েছি।
-না না আমাদের কোনো ডেঞ্জার সাইন নেই।
আমরা হাঁ। বলে কি? এতক্ষণ কি করলাম তাহলে?
-মানে? এনিম্যাল হাউস যে সাইনটা আছে।
-এনিম্যাল হাউস কোনো ক্লু নেই আমাদের। কোনো ল্যাব এর মধ্যেও নেই। যা আছে বাইরে।
-সাইনটা কি সেটা তো বল। কি দেখে খুঁজবো রে বাবা!
-সেটা বলব না। (কি ঝক্কি বলুন তো)
-হিন্ট তো দে রে বাবা কিছু আমরা ফার্স্ট ক্লু তে আটকে আছি।  সবাই চার-পাঁচে পৌঁছে গেছে।
-এইবছর কোনো হিন্ট নেই।

এরপরে আর কিছু বলা যায় বলুন? মনে হয় না যে মাঠের মধ্যে পা ছড়িয়ে বসে কাঁদি? চোখের সামনে সব দল দৌড়াদৌড়ি করে একের পর এক ক্লু জোগাড় করে চলেছে। সেটাই আরো বড় সমস্যা। আমি না পারি ক্ষতি নেই কিন্তু অন্য কেউ পারলেই তো সমস্যা। যা চিরকালীন সমস্যা আর কি। কি করব?

মনে হলো কি সব ড্রাইভার ট্রাইভার লিখেছিল না ছড়াটাতে? এখানে যে তিনজন ড্রাইভার থাকেন তাঁদের মধ্যে কারো কাছে আমাদের নেক্সট ক্লুটা নেই তো? দেখা যাক। বলে দৌড়ে ড্রাইভারের খোঁজে যাব ঠিক সেসময়ই হাচিকোকে খেলায় পেয়েছে। সে মাঠে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছিল, হটাত উঠে আমাদের সাথে সাথে ছুটতে শুরু করলো। আর পা কামড়াতে শুরু করলো। তাকে কোনমতে ঠান্ডা করে ল্যাব বিল্ডিং এর রিসেপশনে পৌছলাম। সেখানেই ড্রাইভারদের পাওয়া সম্ভব এসময়। সেখানে গিয়ে তো কোনো ড্রাইভার কে প্রথমে পাওয়া গেল না। ফোন করে যে ড্রাইভার ডিউটিতে ছিলেন তাঁকে আনানো হলো বিশ্বাস করেন? বেচারা কিছু কাজ করছিল হয়ত। তাঁকে ডেকে বারংবার জেরা করেও কিছু উদ্ধার হলো না। রিসেপশনের সোফার গদিগুলো দুর্ভাগ্যবশতঃ নীল রঙের। সেগুলোও বাদ গেল না। আট গোয়েন্দাই তখন বোমকে গেছে। হচ্ছেটা কি রে বাবা। সকলে খেলা শেষ করে ফেলবে আর আমরা প্রথম ক্লু তেই আটকে থাকব নাকি? হাত পা ছড়িয়ে রিসেপশনে বসে হাঁপাতে লাগলাম। দেখি রিসেপশনের গার্ড হাসছে আমাদের দেখে। রাগ হয় না বলুন?

তারপর কোথায় কোথায় যাইনি আমরা? পিছনের বাস্কেট বল কোর্ট-যেখানে বিন্দুমাত্র আলো নেই, পাম্পিং স্টেশন শেষে সেই 'blossom of wool' -এর চক্করে নতুন বিল্ডিং এর ছাদে পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে AC র ইন্সুলেশন এর জন্য যে উল জাতীয় জিনিস লাগে তার খানিকটা ছিল। সেটার মধ্যে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হলো।  কবে কেউ সেখানে বসে তাস খেলেছিল সেই দুমড়ে যাওয়া রং চটে যাওয়া তাস চাট্টি পড়েছিল সেগুলো নিয়ে প্রায় হোমস এর মতই তদন্ত করা। কিচ্ছু বাকি রাখিনি বিশ্বাস করুন। কিন্তু খেলা শুরু হবার ঠিক দেড় ঘন্টা পরেও আমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেই জায়গাতেই আটকে আছি। সবুজ দল থেকে কে যেন জিজ্ঞাসা করলো তোমাদের কত নম্বর ক্লু চলছে। বললাম প্রথম ক্লু। বিশ্বাস করলো না।  ভাবলো মিথ্যে বলছি। দোষ নেই, আমরাই বিশ্বাস করছিলাম না। কি বলব আপনাদের মনে হচ্ছিল ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। ছোটবেলায় খেলায় গোলমাল হলে আমার এক বন্ধু বলতো "আমি আর খেলবুনি যা", আর একটু হলেই আমার দ্বারাই সেই উক্তির পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছিল। তারপর 'কোথা হইতে কি হইয়া গেল'.....দেখলাম আমরা সেকেন্ড ক্লু পেয়ে গেছি। সেই প্রথমে ওয়াশিং মেশিনের রুম থেকে বেরিয়ে যে দিদিমনির কাছে হাজিরা দিয়েছিলাম তার কাছেই ছিল আমাদের ক্লু। সেখানে কোথায় হলুদ দরজা-কোথায় বা নীল রং-কোথায় বা আঠা দিয়ে আটকানো কিছু, কেই বা ড্রাইভার? কিছুই বুঝলাম না। সে তো লালচে টি শার্ট পরে কাঁচের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।

বিশ্বাস করুন আমি ক্লু এর আপাদমস্তক কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। চেষ্টা করেছিলাম জানেন তো। আমার বোধের বাইরে ছিল। আর তার পর থেকে আর কোনো ক্লু তে বিশেষ মাথা খাটাইনি।  কি দরকার শুধু শুধু মাথা ব্যথা করে।

এই হলো তিনঘন্টার খেলার প্রথম দেড় ঘন্টার গল্প। আমরা অর্ধেক সময় জুড়ে নটা ক্লু এর কেবলমাত্র প্রথমটা পেরিয়ে দ্বিতীয়তে পৌঁছলাম। পরেরগুলো অবশ্য তাড়াতাড়িই হয়ে গেছিল। কিন্তু কোনো ক্লু- ই ঠিক কি ভাবে সমাধান হলো জিজ্ঞাসা করবেন না প্লিজ। আমি না বলতে পারব না। কি দুর্দান্ত গোয়েন্দাগিরি। কি বলব আপনাদের।

যাই হোক, বাকি দেড় ঘন্টার গল্প আবার কাল বলা যাবে। আজ এপর্যন্তই।

শেষাংশ এখানে পড়ুন..........

   

0 comments:

Post a Comment