Thursday 18 September 2014

গুপ্তধন কোথায়?...........শেষ পর্ব


প্রথম ক্লু তো তালে গোলে হরিবোল হয়ে গেল। দ্বিতীয় ক্লু পেতে দেখি তাতে লেখা আছে ক্যান্সার সংক্রান্ত কিছু। এমন একটা জায়গা যেখানে ঢুকলে 1400 শতাব্দীর কথা মনে হয়, আবার তাতে ক্যান্সার এর উল্লেখ আছে, আবার তাতে নয়নতারা ফুলের উল্লেখ আছে..........বোঝো। ঠিক যেন চন্দ্রবিন্দুর '', বেড়ালের '' আর রুমালের 'মা' কি আর বলব? আমার মনে পড়ল কোথায় আমি নয়নতারা ফুলের ঝোপ দেখেছি। সবাইকে বলতে, দে দৌড় সেখানে। সেখানে গিয়ে যথারীতি কিছু মিলল না। কোনো সাইন, টুকরো কাগজ- কিচ্ছু না। আবার লেখা আছে একলা দাঁড়ানো একটি নয়নতারা ফুলের গাছের কথা। কেউ কোনো ভাবেই মনে করতে পারল না একলা দাঁড়ানো একটি নয়নতারার কথা (কোথায় কি গাছ আছে তার একটা ভার্চুয়াল লিস্ট মনে মনে সেভ করে রাখতে হবে দেখছি) আমি আর পিয়ুশি গেলাম ল্যাবে। ওখানে টবে টবে একটা করে গাছ রাখা আছে তার মধ্যে কোনটা নয়নতারা নয় তো? তারপর আবার ক্যান্সার এর কথা লিখেছে। তার মানে আমাদের ল্যাব নয় তো? আমাদেরতো ক্যান্সার নিয়ে কিঞ্চিত নাড়াঘাঁটা হয়। দুজনে দোতলার যাবতীয় টব দেখে শুনে একটা লতানে মানিপ্ল্যান্টকে প্রায় উত্খাত করার উপক্রম করে বিফল মনোরথ হয়ে নিচে নেমে এলাম। নিচে সবাই জটলা করছে। নানা মুনির নানা মত। বেচারা একটি নিরীহ ছেলে শেষ পর্যন্ত সন্দেহের তালিকায় চলে এলো। সে নাকি নেক্সট ভলেন্টিয়ার। তার কাছে নেক্সট ক্লু থাকতে পারে। তার অপরাধ বেচারা একটু বেশি সংখ্যায় সিগারেট খায়। যেহেতু ক্লু তে ক্যান্সার এর কথা আছে, সেহেতু তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে বেচারাকে সিগারেট খায় বলে ক্যান্সার অবধি টেনে নিয়ে যেতেও ছাড়া হলো না। নেহাত সে আমার ব্লগ পড়বে না এই বিশ্বাস থেকেই লিখছি এত বিশদে। যাই হোক, এই ক্লু থেকে কোন ভলেন্টিয়ার আমাদের পরের ক্লু তে নিয়ে গেল আমি জানি না। কি ভাবেই বা এই ধাঁধার নির্ণয় হলো জানি না। দেখলাম তৃতীয় ক্লু হাতে চলে এসেছে। তাতে লেখা আছে এই ক্লু টি ভাঁওতা, আগের ক্লুতে ফিরে যাও। কি জ্বালা দেখুন দিকি

ততক্ষণে একটা জিনিস পরিস্কার হয়েছে যে আমাদের কোনো চিহ্ন খুঁজতে হবে না। ক্লু অনুসারে সঠিক ভলেন্টিয়ারকে খুঁজে বার করতে হবে। এইখানেই ট্রিক। যার জন্যই মিস্টার হুয়াং, মুখ বদল ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারো ভাঁওতাবাজির অবতারণা। আমাদের টীম এর কত নম্বর ক্লু কোন ভলেন্টিয়ারের কাছে আছে সেটি বের করতে পারলেই হলো। যাই হোক, কি করে যেন সকলের মনে হলো গেটের কাছে যে ভলেন্টিয়ারটি আছে তার কাছে থাকতে পারে।  সে যেতে আমাদের পরের ক্লু দিয়েও দিল। আমি না অনেক কে জিজ্ঞাসা করলাম জানেনযে কি করে বুঝলে যে ওর কাছে আছে নেক্সট ক্লু? সবাই দেখি আমতা আমতা করে। যাই হোক পরের ক্লু তো পাতাভর্তি কিসব লেখা। সবাই ঝুঁকে পড়ে টর্চ জ্বালিয়ে পড়ছে। আমি যথারীতি এই পাঁচফুট উচ্চতা নিয়ে ডিঙ্গি মেরেও লোকজনের ঘাড় পেরিয়ে কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। সুতরাং জটলার চারপাশে ঘুর ঘুর করে বেড়াচ্ছি। এমন সময় দেখি সেই প্রথম ক্লু এর গোমড়ামুখো দিদিমনি এসে জিজ্ঞাসা করছে, 'এই তোমাদের কত নম্বর ক্লু চলছে?' বললাম, চার। বলে দেখি আগের তিনটে ক্লু। সে গবেষণা শেষ করে যা জানালো তাতে বোঝা গেল গেটের ভলেন্টিয়ারটি গোলমাল পাকিয়েছে। সে যে ক্লু টি আমাদের দিয়েছে সেটি আমাদের হাতে এখনি পড়ার কথা নয়। এর ঠিক আগে আরো একটি ক্লু আছে যেটি এই দিদিমনির কাছে আছে। তাই সেটি তার হাত থেকে না নিয়ে কি করে আমরা পরের ক্লু পেয়ে গেলাম সেটি দেখেই তার মনে হয়েছে গড়বড় কিছু একটা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সে তোম্বা মুখে আগের ক্লু টি দিয়ে দিল হাতে আর বলল এটি একটি পাজল। এটার উত্তর না জানলে পরে যখন সব ক্লু এর সমাধান জিজ্ঞাসা করা হবে তখন না বলতে পারলে কিন্তু হবে না, নম্বর কাটা। অর্থাত কিনা আসল ফোর্থ ক্লু এখন আমাদের হাতে আর পঞ্চম ক্লু আমরা আগেই পেয়ে গেছি। ফোর্থ ক্লু এর সমাধান পরে ভাবা যাবে বলে সবাই ফিফথ ক্লু তে মনোনিবেশ করলো। আর আমি যথারীতি জটলার বাইরে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল চুষতে শুরু করলাম। সেই একপাতা জোড়া আবোল তাবোল গল্প পড়া শেষ করে দেখি সবাই ক্যাম্পাস এর মেন গেট এর দিকে ছুটছে। জিজ্ঞেস করে জানলাম যে ওখানে ব্যারিকেড কথাটার উল্লেখ আছে। তাই ব্যারিকেড  যাওয়া হচ্ছে। ব্যারিকেড মানে হলো এই ইনস্টিটিউট এর মেন গেট ঢোকার প্রায় সাতশো মিটার আগে যে একটি চেকপোস্ট আছে সেটি। এই সাতশো মিটার রাস্তা ইনস্টিটিউট এরই। সবাই এখানে মর্নিং-ইভনিং-নাইট সবরকম ওয়াকই করে থাকে। তো সেদিকে ছুটছি এমনসময় পাশের ল্যাবের একটি ছেলে এসে অযাচিত ভাবেই আমাদের ফোর্থ ক্লু এর উত্তর বলে দিল। যেটা আমাদের এখনো দেখাই হয়নি। পরে পেলাম। তারপরে দেখি সেই ছেলেটি গাছের নিচে আধোঅন্ধকারে বসে আছে। যেখান থেকে যা জানতে পারছে সব দলকেই সাহায্য করছে। ভালো ব্যাপার। বড় উপকারী ছেলে। কচুরি খেতে বড় ভালবাসে জানি। ভাবছি ওকে একদিন ডেকে কচুরি টচুরি বানিয়ে খাইয়ে দেব। 

যাই হোক ব্যারিকেড যাবার আগেই দেখি একটি ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে অন্ধকারে ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে বসে আছে। ব্যাটা নিশ্চয়ই ভলেন্টিয়ার। চেপে ধরলাম সবাই মিলে। বললাম আমরা টীম ফাইভ। তোমার কাছে কি আমাদের নেক্সট ক্লু? সে হাতের তালু আড়াল টাড়াল করে মোবাইলে অনেক কিছু চেক করে টরে বলে কিনা, "দেখি তোমাদের ফার্স্ট-সেকেন্ড-থার্ড-ফোর্থ-ফিফথ-সিক্সথ আর সেভেন্থ ক্লু।"

আঁই!!!! তার মানে এর কাছে আমাদের টীম এর আট নম্বর ক্লু আছে। আমরা তো এখন ফিফথ ক্লু তে আছি। সেটা আর জিজ্ঞাসা করেনি হাঁদাগঙ্গারামটা। আগেভাগেই প্রকারান্তরে জানিয়ে দিয়েছে যে তার কাছে আমাদের কখন আসতে হবে। হে হে। 

যাই হোক সেই পাঁচ নম্বর ক্লু সলভ করতে করতে তো হোস্টেল এর বাইরের দিকের মেনটেনেন্স এর জন্য রাখা যাবতীয় দরজা খুলে দেখা গেল। অন্য টীম এর ক্লু রাখা আছে দেখলাম। আমাদেরটাই নেই। পিনাকী, আমি আর ইমরান মিলে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে ড্রেন মেনটেনেন্স এর যাবতীয় সরু সরু সুগন্ধি দরজা খুলে খুলে দেখলাম। তার মধ্যে রুচি-পিয়ুশি মেস থেকে আলুর পরটা এনে মাঠে বসেই খেতে শুরু করে দিয়েছে। বেচারাদের খিদে পেয়ে গেছে ছুটতে ছুটতে। আমার এতক্ষণে মনে পড়ল যে ভাত-ডাল-বাঁধাকপির তরকারী আমার সাথে বিশেষ বেয়াদপি করেনি তো। বেশ তো দৌড়াচ্ছি। তার মানে এখনও অনিয়ন্ত্রিত রকম বেঢপ হইনি মনে হয়। নইলে এর আগেই দম শেষ হয়ে যাবার কথা ছিল। কথাটা মনে হতে এত ভাল্লাগলো জানেন, ঐসব গন্ধওয়ালা দরজা-ফরজা ছেড়ে দিয়ে মাঠে বসেই পড়লাম লা-লা-লা-লা করতে করতে। ট্রেজার না পেলেই বা কি? তাই না বলুন? 

তারপর আরো কিসব খোঁজা খুঁজির শেষে রুচি আবিষ্কার করলো নতুন ল্যাব বিল্ডিং নেক্সট ক্লু। সেই ষষ্ঠ ক্লু বলছে হোয়াং হো নদীর কথা এই নদীর নাম একটি নির্দিষ্ট ভলেন্টিয়ারকে বলতে হবে আর তারপর p79 আর p80 খুঁজতে হবে। এখন 'Huang He' নদী কে আমজনতা ছোটবেলা থেকেই 'হোয়াং হো' নামেই চেনে। বাংলা বা হিন্দিতেও উচ্চারণটা 'হোয়াং হো' বলেই জানে সবাই। সেমতই তাকে যেই বলা হয়েছে যে 'হোয়াং হো' নদী, বলে না হয়নি। ঠিক করে বলতে হবে। শেষমেষ ফাহিম বানান করে করে বলল। ওরে মা -কার আর -কার আলাদা কিছু আমরা বুঝিনি ঠিকই বুঝেছি। তবে সে সন্তুষ্ট হলো। তাকে নাকি 'হোয়াং হে' বলতে হতো। কি ভীষণ খেলা রে বাবা
যাক গে যাক।  তারপর p79 আর p80 ব্যাপারটা বলি। এটা সোজা। ঊনআশি আর আশি নম্বর লাইট পোস্ট। এই দুটি লাইট পোস্টের মাঝে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই ঘাস জঙ্গলের মাঝে পাথর চাপা দেওয়া নেক্সট ক্লু বেরিয়ে গেল। সেখানেও অন্য দলের আরো একটি ক্লু ছিল দেখলাম। সেটা নিয়ে আর মাথা টাথা না ঘামিয়ে সোজা সেই মেন গেট এর বাইরে গঙ্গারামের কাছে। কারণ সে বলেছে তার কাছে আট নম্বর ক্লু আছে। সে আমাদের বিনা বাক্যব্যয়ে আট নম্বর ক্লু দিয়ে দিল। 


তাতে লেখা আছে "Mitochondria is the powerhouse of the cell"-এই একটি লাইন। এটা নিয়েও বিশেষ মাথা ঘামাতে হয়নি। কারণ পাওয়ার হাউস তো বলেই দিয়েছে।অতএবচল পানসি পাওয়ার হাউস। ওখানেই আছে নবম ক্লু। মানে শেষ ক্লু। পেতেই হবে তাড়াতাড়ি। তবেই ট্রেজার বক্স এর সন্ধান পাব। জয় মা বলে দৌড় লাগলাম পাওয়ার হাউস এর দিকে। বললে বিশ্বাস করবেন না আমার নিজের প্রতি কনফিডেন্স বেড়ে গেল যে আমি এত জোরেও দৌড়াতে পারি এখনো? এই চেহারা নিয়েও! দুদ্দাড়িয়ে পৌঁছালাম পাওয়ার হাউস। কে ভলেন্টিয়ার এখানে? কাউকে তো দেখছি না। তবে কি ঝোপে ঝাড়ে কোথাও লুকানো আছে ক্লু? পাওয়ার হাউস এর চারপাশ টর্চ দিয়ে পুরো খুঁজে ফেলা হলো। ভেতরে দানবীয় মেসিনগুলোর ফাঁক ফোঁকড়ও বাদ গেল না। উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখে নেওয়া হলো। কিন্তু অতবড় পাওয়ার হাউস কোথায় খুঁজবো? এই মেশিন তো আর কুলার নয় যে ফাহিম কে বলব ভাই সব খুলে ফেলে উল্টে দিয়ে দেখ। এখানে আর যাইহোক টানাটানি করা যাবে না। দেখা গেল হয়ত ইনস্টিটিউট সমেত উড়ে গেল। পরদিন কাগজে হেডলাইন- 'ট্রেজার হান্ট খেলতে গিয়ে DBT- আশির্বাদধন্য গবেষণা কেন্দ্র ভস্মীভূত।' ওরেব্বাস!! কি করি? বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি ফাহিম জনে জনে প্রতিটি কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করছে তুমি কি ভলেন্টিয়ার? তুমি কি ভলেন্টিয়ার? সবাই মাথা নাড়ে কি রে বাবা? এর মধ্যে দেখি রুচি, পিয়ুশি আর রেশমা হাওয়া। ফোন করতে বলে, আমরা তো মেসে এসেছি। পাওয়ারহাউস বলতে খাবারদাবারকেও বোঝাতে পারে তো, মানে আমরা তো ওখানথেকেই বডি-পাওয়ার পাই তাই এখানে এসেছি। এতক্ষণে মনে পড়ল ওদের আধখাওয়া আলুর পরোটাগুলো তো খবরের কাগজ মোড়া অবস্থায় আমার হাতেই রয়ে গেছে। কখন আমার হাতে দিয়েছিল। আমি সেটা নিয়ে নিয়েই দৌড়াচ্ছি। এই ফাঁকে আমিও ওগুলো থেকে কিছুটা পাওয়ার নিয়ে নেব কিনা ভাবছি, এমন সময় দেখি সদা, ইমরান আর পিনাকী নেক্সট ক্লু নিয়ে আমাদের ডাকছে। আর ফাহিম পাওয়ার হাউস এর একজন কর্মীকে প্রচন্ড বকাবকি করছে, "তুঝে ম্যায়নে কিতনি বার পুছা কি তু ভলেন্টিয়ার হ্যায় কি নেহি? বোল ?" -আর প্রতিটা শব্দের শেষে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে একটা করে 'শালে' গুঁজে দিচ্ছে। বুঝলাম গত পনের-কুড়ি মিনিট ধরে অন্ততঃ পাঁচ-সাত বার ওই ছেলেটিকে ফাহিম জিজ্ঞাসা করেছে যে টীম ফাইভ-এর জন্য নাইন্থ ক্লু তার কাছে আছে কিনা, সে ভলেন্টিয়ার কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। সে প্রতিবারেই কোনো অজানা কারণে 'না' বলেছে। এখন নিজেই বলেছে যে তার কাছেই আছে ক্লু। কি আর বলব ভলেন্টিয়ারদের কথা।  কেউ নিজেই না বুঝে বলে দেয় আমার কাছে এত নম্বর ক্লু আছে। কেউ হাজারবার জিজ্ঞাসা করলেও বলে না। যেন আমরা খেলার নিয়মের বাইরে গিয়ে তাকে কোনোকিছু জিজ্ঞাসা করছি। মনে হলো বলে দি-" কে রে শান্তিগোপাল? এত আজব কালেকশন!!!" কিন্তু না আগের ভুল মাথায় রেখে আর বললাম না। যা হ্যাবলা আমি, বলব একজনকে, বুঝবে আর একজন হয়ত। কি দরকার বাবা? 

নবম ক্লু পেয়ে তো আহ্লাদে নাচতে নাচতে আটজন মিলে দেখলাম সেটা। একটা নক্সা। যেটা মাঠের মাঝে মেন বড় লাইট পোস্টটাকে বোঝাচ্ছে মনে হলো। আর তার চার পাশে প্রচুর সংখ্যা লেখা। দৌড়ে-দৌড়ে পোস্টটার কাছে পৌঁছে বুঝলাম এই সংখ্যাগুলো ছোটো ছোটো লাইট পোস্টগুলোর। যেমন আমরা p79 আর p80 খুঁজেছিলাম তেমনি এরকম পোস্ট সংখ্যা অনুযায়ী খুঁজে বার করে ক্লুএর কাছে পৌঁছাতে হবে যেটা আলটিমেটলি আমাদের বলবে কোথায় আছে গুপ্তধন। ক্লু অনুসারে p13, p9 p24 খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি এমন সময় দেখি মাঠময় হুল্লোড়। কিসের? কি আর? আমাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে অন্য একটা দল পেয়ে গেছে সন্ধান গুপ্তধনের। তারা যাচ্ছে সেটা নিতে। আর আমরাঅস্টরথীএকহাতে লাস্ট ক্লু আর এক হাতে বিশাল বড় ঝুলপড়া একটা হ্যারিকেন নিয়ে মাঠের মাঝে ভেবলু মুখে দাঁড়িয়ে আছি। 

তারপর? তারপর আর কি? তারা আনন্দে চেঁচাতে চেঁচাতে ট্রেজার এর বাক্স নিয়ে এলো। সেটা নিয়ে বাকি সব টীমের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে ছবি টবি তুলল। এই সময় আবার আমি উঁকি মেরে ছবি তোলা দেখতে গেছিলাম। সামনে একজন জগদ্দল পাথরের মত এসে দাঁড়িয়ে পড়ল বলে কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না তাই 'ধুস' বলে জটলা ছেড়ে বাইরের দিকে বেরিয়ে এসেছি। এমন সময় দেখি পেছন থেকে একজন আবার ফ্রীতে জ্ঞান দিয়ে দিল। "আরে এতেই মুষড়ে পড়ছ কেন? জিততে পারনি তো কি হয়েছে?" আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি দেখে আবার আরো একটা কথা জুড়ে দিল-"জীবন অনেক বড়।".......ভগবান! কি বলব বলুন একে? ভাবলাম, একে আর কিছুই বলব না এখন। পরে বলব রসিয়ে, কি ছড়িয়েছে সে সেদিন। গুপ্তধনের বাক্স ততক্ষণে খোলা হয়ে গেছে। মণিমুক্তা সব ছড়িয়ে পড়ল তা থেকে। মণিমুক্তা মানে হলদিরামের চিপস, ভুজিয়া এসবের একগুচ্ছ প্যাকেট

দেখেশুনে খিদে পেয়ে গেল। আটগোয়েন্দা মিলে ক্যান্টিনে গিয়ে লোকেদের ঘুম ভাঙিয়ে চিপস কোল্ডড্রিংক খেতে খেতে পূর্ববর্তী বছরের ট্রেজার হান্ট এর গল্প করে, এই বছরের প্রথম ক্লু তে দেড়ঘন্টা পার হয়ে যাওয়া আর লাস্ট ক্লু তে পনের কুড়ি মিনিট ভলেন্টিয়ার এর জন্য নষ্ট হওয়া সময়ের বাপান্ত করতে করতে আরো খানিকক্ষণ হ্যা হ্যা করে বাড়ি চলে এলাম

এই হলো আমার জীবনের প্রথম গোয়েন্দাগিরির গল্প। এটা ঠিক কি ধরনের গোয়েন্দাগিরি জানিনা। হোমস-পোয়ারো-মিস মার্পল-ফেলুদা-ব্যোমকেশ-ভাদুড়িমশাই-কিরীটি বা হালের মিতিনমাসি-দীপকাকু-এঁদের কথা ছেড়েই দিলাম নেহাত পান্ডব গোয়েন্দারাও কি এরকম ভ্যাবলার মত গোয়েন্দাগিরি করত? মনে হয়না। যাই হোক অনেক কিছুর মত গোয়েন্দাগিরিতেও আমার দৌড় বোঝা গেছে। হাচিকোই ঠিক। আমার লাভ যেটা হলো সেটা এই যে, সারা সন্ধ্যে ধরে সারা ক্যাম্পাস ছোটাছুটি করে খানিক এনার্জি লস হলো। তাতে এই বিশাল বপুর হয়ত খানিক সুবিধা হলো এই আর কি। আর হ্যা হ্যা করে মাথাটার মেদও বেশ খানিকটা ঝরলো


2 comments:

  1. bah, darun laglo........arre janoto, bokar mato amar ebachar khela holona holona kare man kharap karchilam...chotobelar chinchkaduni avyasta jayni r ki.....tabe akhan r kono kichu mane hachhena....tomra thakte amar abar chinta ki? eito kamn puro treasure hunt khelata amar chokher samne, manei holona je ami khelini bale.............ufff...darun anondo holo amaro...thanku thanku eta lekhar janye...

    ReplyDelete
  2. ধন্যবাদ...ধন্যবাদ ।

    ReplyDelete