Friday 27 June 2014

খাই খাই

হ্যাঁ হ্যাঁ এখনও বেঁচেই আছি। পরশুর ম্যারাথন হাবিজাবি কাজকর্মের পর রাত তিনটের সময় বাড়ি ফিরে কাল ফের সকালে হাই তুলতে তুলতে বহাল তবিয়তে চলে এসেছি। ঠিক যা ভেবেছিলাম, পরশু রাতে ঘুমোতে যাবার সময় ঘুমের থেকে খিদেটাই বেশি পাচ্ছিল। আর তখনই নানা রকম ভালো ভালো খাবার-দাবারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ঠিক এটাই হয় না আপনাদেরও? যখন হাতের কাছে খাবার মত কিচ্ছু থাকে না, ঠিক তখনই আপনি কবে কোন দোকানে এক প্লেট দেবভোগ্য বিরিয়ানি খেয়েছিলেন, কোন দোকানের মাটন চাঁবটা জাস্ট মিস করা যায় না, আরো কোথাকার নানান সব দেশী-বিদেশী খাবারদাবার, নিদেন পক্ষে পাড়ার মোড়ের ফুচকা-আলুকাবলি-জিলিপি-বেগুনি সব ঠিক ওই সময়টার জন্যই যেন অপেক্ষা করে থাকে আপনার মাথায় ভিড় করবে বলে। আমারও করছিল। মা কি কি দারুন দারুন সব স্বর্গীয় খাবার-দাবার বানায়, জ্যাঠিমার নানান সব স্পেশাল ডিশ, এছাড়া pizza-পেস্ট্রী, বাইরের অন্য দোকানের অনবদ্য সব ভোজ্যবস্তু ইত্যাদি-প্রভৃতি (উফফ খিদে পেয়ে যাচ্ছে আবার। সকালে উঠতে মারাত্মক রকম দেরী হয়ে গেছিল বলে, যা অবশ্য রোজ-রোজই হয়ে থাকে নির্লজ্জের মত, দুটো বুড়ো আঙ্গুলের সাইজের কলা ছাড়া কিছু জোটেনি) নানান কিছু মনে পড়ে মনটা এমন ঝিরকুটে মেরে গেল যে তখন আর কিছুতেই ক্রিম-ক্র্যাকার বিস্কুট চিবোতে ইচ্ছা করলো না, ঢক ঢক করে খানিকটা জল খেয়ে শুয়ে শুয়ে ভালো ভালো খাবারের স্বপ্ন দেখতে লাগলাম।

সেই ইস্তক বড় খাই-খাই করছে মনটা। এই কিছুক্ষণ আগেই Domino's Pizza র সাইটে ঢুকে মেনু দেখছিলাম জানেন। এমন বিচ্ছিরি জায়গায় থাকি যে ডমিনো'স এখানে ডেলিভারি পর্যন্ত দেয় না, ছি ছি! Pizza খেতে গেলে গুড়গাঁও যেতে হয়। কি দুরবস্থা আমার! কপাল সবই কপাল! যাক গে, ভলো-মন্দ খাওয়া যখন হচ্ছেই না.....ভাবছি, আপনাদের কটা রান্নাবান্নার গল্প শোনাই। না না ভয় পাবেন না। জটিল সব রেসিপি দিয়ে আপনাদের বিরক্ত করবনা। প্রমিস। আমি শুধু কয়েকটা মনে রাখার মত রান্না করার ঘটনা বলব। ঘটনার কুশীলব অবশ্যই আমি এবং আমার চারপাশের কয়েকজন। রন্ধনে যারা আমরা মোটামুটি দ্রৌপদী গোছের তাদের কিছু রান্না করার ঘটনা।

আচ্ছা দাঁড়ান আপনারা কেউ কখনো 'Crispy potato with sprinkling coffee' খেয়েছেন? কিংবা, '১০০% oil free অমলেট'? অথবা 'Crunchy smashed pool barb'? হুঁ-হুঁ বাবা, খাননি তো? জানতাম। এসব জিনিস কি আর আপনাদের জাঁদরেল জাঁদরেল restaurant এ পাওয়া যায়? এসব হলো গিয়ে custom made খাবার দাবার। চাইলে রেসিপি আপনাদের দিতে পারি কিন্তু লোকজনকে খাওয়ালে তার পরের দায়িত্ব কিন্তু আমার নয় সাফ বলে দিচ্ছি।

এবার রেসিপিগুলো বলছি, অখন্ড মনোযোগ দিয়ে শুনে ফেলুন দেখি।

১.  Crispy potato with sprinkling coffee: আলুকে স্নান করিয়ে পাউডার মাখিয়ে, থুড়ি কেটে ধুয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখুন, কড়ায় তেল গরম করে আলু গুলো তাতে ছুড়ে মারুন। ভাজা হয়ে গেলে তাতে পর্যাপ্ত পরিমান কফি পাউডার ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। তারপর রুটির সাথে এক গ্রাস মুথে তুলুন  ......... আর?.....থু থু করে ফেলে দিন...........আমার এক গুণধর বন্ধুকে এটাই করতে হয়েছিল। আলুভাজা আর কফি দুটিই আলাদা আলাদা ভাবে তার দারুন লাগে বলে বেচারা ভেবেছিল দুটো একসাথে খেলে বুঝি ভাললাগাটা exponentially বাড়বে। এক্সপেরিমেন্টাল রান্না করতে গিয়ে ঐদিন রাতে ভাগ্যে ম্যাগি আর কি!

২.দ্বিতীয় রেসিপি ১০০% oil free অমলেট: সৌজন্যে আমার বাবা। মায়ের কোনো এক ছোটখাটো অসুস্থতায় বাবা আমায় এই অনবদ্য রেসিপিটি খাওয়াবার চেষ্টা করেছিল, মানে প্রথমে ব্যাপারটা oil free করার সাধু উদ্দেশ্য তাঁর ছিলনা ঠিকই কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়ে গেছিল। বলল "দাঁড়া ডিমটা আমিই ভেজে নিচ্ছি।" ভাবলাম, এটা সেফলি ছাড়া যেতে পারে। ডিম ভাজতে আর কি আছে, ও তো নিজগুণেই ভাজা হয়ে যাবে। তো বাবা তাওয়াটা গ্যাসে বসলো, আমার কেটে রাখা পেঁয়াজ-লঙ্কার মধ্যে নুন দিল, মেশালো- এই পর্যন্ত according to protocol। ভাবলাম এই তো হয়ে যাবে ব্যাপারটা। তারপর ডিম গুলো ভেঙ্গে তাতে দিয়ে প্রবল বেগে নাড়াচাড়া করলো এবং........হাঁ হাঁ করে ওঠার আগেই ঝুপ করে গরম তাওয়ায় ঢেলে দিল। "
এটা কি করলে এ এ এ এ এ!!!!"- বলে চেঁচিয়ে উঠতে বলল, "কেন?"
"আরে তুমি তেল দিলে না তো, সব পুড়ে গেল তো?"
"ও হো ও ও ও ও.... তেল দিতে হতো তো আগে......ভুলেই গেছি........কি করব এবার ?"
দুজনে damage control এর চেষ্টায় লাগি। "দাঁড়াও, সাইড দিয়ে একটু একটু করে তেল ঢালি", আমি তেল ঢালতে থাকি, বাবা তিনখানা ডিমের কালো হয়ে আসা অমূল্য চাঁইকে চারপাশ থেকে খোঁচাতে থাকে।
কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেছে, আমার বাবা প্রথম থেকেই গ্যাসটাকে যত্পরনাস্তি বাড়িয়ে রেখে সমস্ত কাজ করছিলেন তাড়াতাড়ি হবে বলে অতএব.....
আর কি? ১০০% oil free অমলেট রেডি।

 ৩. তৃতীয়টা? Crunchy smashed pool barb? দাঁড়ান বলছি: আমার জ্যেঠতুতো বৌদি আর আমি সমবয়সী না হলেও বড় কাছের লোক ছিলাম। কারণটা বোধকরি দুজনে একই স্কুলের আগে পিছের ছাত্রী বলে, তখন অন্ততঃ আমার এই অমোঘ কারণটাই প্রধান বলে মনে হত। তাই তার নতুন বিয়ে হবার পর আমি তার পেছনে আঠার মত সেঁটে থাকতাম, মানে সব বাচ্চারাই বোধহয় বাড়ির নতুন বউ-এর পেছনে তাই থাকে। আমিও বাকি সবার, বিশেষ করে দাদার সমস্তরকম অসুবিধাকে নস্যাত করে বৌদির সঙ্গে ছায়ার মত লেগে থাকতাম। এই অবস্থায় একদিন জ্যাঠিমাকে পাড়াতেই একটি বাড়িতে যেতে হবে কোনো একটি কারণে, কিন্তু বাড়িতে একগাদা টাটকা পুঁটিমাছ। সেটা ভেজে তারপর যেতে গেলে দেরী হয়ে যায় আর এসে ভাজতে বসলে দুপুরে খাবার সময়টা শিফট করে বিকেল ৪টে করে নিতে হয়। অগত্যা আমার নতুন বৌদি আগবাড়িয়ে বলে "ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি দেখে নিচ্ছি, আমি আছি তো।" জ্যেঠিমা তো তাঁর আদরের নতুন বৌমার হাতে নধর পুঁটিমাছের ঝুড়িটি ধরিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে চলে গেলেন। আর আমরা পড়লাম অকুল পাথারে। দুজনেরই সমান অভিজ্ঞতা রান্না করার। আমরা যে যার মায়েদের মাছ ভাজার পদ্ধতি মনে মনে ঝালিয়ে নিয়ে 'জয় মা' বলে কড়ায় তেল দিলাম, মাছ দিলাম, নাড়তে থাকলাম.....নাড়তে থাকলাম........নাড়তে থাকলাম।
"ওমা, ও বৌদি, কড়ার গায়ে আটকে যাচ্ছে কেন বলতো ?"
"তেল কম হয়েছে মনে হয়, বুঝলি?"
"তাই হবে, আরো তেল দাও তো।"
....
"এখনও আটকাচ্ছে তো, আরো একটু তেল দিতে হবে নাকি বলতো?"
"দাঁড়া, আর একটু দি"
....
...
এরকম কথোপকথন কয়েকবার রিপিট হবার পর কড়ার মধ্যে যে বস্তুটি দাঁড়ালো সেটারই এখন আমি নাম দিয়েছি 'Crunchy smashed pool barb'। দেখলাম, বড় বড় ফ্রেশ সুন্দর একঝুড়ি পুঁটিমাছ দিয়ে আমরা দুজন মিলে প্রায় এক ঘন্টার মারাত্মক গবেষণামূলক প্রচেষ্টায় আধকড়া তেলের মধ্যে অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে একটা মণ্ড তৈরী করে ফেলেছি।

............হেঁ হেঁ মানে ওই দিন থেকে আমি শিখেছিলাম যে তেল যথেষ্ট গরম না করে মাছ ভাজতে গেলে মাছ ভাজার জায়গায় যেটা তৈরী হয় সেটা ওই 'Crunchy smashed xxxxxx fish'।

খেতে কিন্তু খারাপ হয়নি বিশ্বাস করুন, সত্যি বলছি।

এরকম মারাত্মক সুস্বাদু রেসিপি আরো অনেক আছে আমার কাছে। আপনাদের কাছে যদি এরকম ভালো ভালো রেসিপি থেকে থাকে please share করবেন আমার সাথে। 

0 comments:

Post a Comment