Thursday 26 June 2014

আহির ভৈরব

গত জন্মের মৃত্যু থেকে এই মুহুর্তে জেগে উঠছি যেন এইজন্মের ভোরে।
নিকষ অন্ধকার থেকে বিশ্বজগত যেমন জেগে উঠছে ভোরের মাতাল হাওয়ায়,
উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমার যত ক্লান্তি, যত ক্লেদাক্ত ইতিহাস
তিল তিল করে আলোময় হয়ে ওঠা এইজন্মের ভোরে সমস্ত নিয়ম ভেঙ্গে দিয়ে জেগে উঠেছে পাখিরাও।

আমিও সেই ভোরের নশ্বর সাক্ষী হয়ে এসে দাঁড়িয়েছি ঘরের বাইরে,
পেছনের যে দরজাটা দিয়ে বেরিয়ে এসেছি সেটিই যেন ছিল শেকল।
যেন বন্ধন মুক্তির আবেশ সারা শরীরে আমার,
অপূর্ব এক নেশার মত ঝিমধরা আবছায়ায় দাঁড়িয়ে মনে হলো -
এই বুঝি পূর্ণতা?
এতদিনে?
মনে হলো আমার চার পাশে আর কেউ নেই,
অদ্ভূত এক কুয়াশাছন্ন ভোর,
পূর্বদিককে জাগিয়ে তোলা লালিমা,
সবকিছুকে ওলট-পালট করে দেওয়া ঠান্ডা নেশালু হাওয়া,
আর সবকিছুর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা একা আমি-
সম্পূর্ণতা।
আর ফিরে কোথাও যাবার নেই আমার
ওই পেছনের দরজাটা যেন এখন ইতিহাস।
দুচোখ বন্ধ করতেই শিহরিত হলাম
গত হাজার জন্ম ধরে আমি এসে দাঁড়িয়েছি এমনিই এক একটি ভোরে।
আর প্রশ্ন করে চলেছি-আমি কি করে শোধ করব এই সম্পূর্ণতার ঋণ?

ধীরে অথচ অতি সহজতায় উন্মোচিত হচ্ছিল চরাচর।
চোখ কচলে উঠে বসেছিল চারিপাশের পৃথিবী,
আর আমি একটু একটু করে নিতান্ত অনিচ্ছায় ফিরে আসছিলাম ওই পিছনের দরজাটার দিকে
মনে হচ্ছিল-কেন? কেন চলে গেল এত তাড়াতাড়ি এই আবেশ?
একটু একটু করে ধীরে অথচ অনিবার্য ভাবে শুরু হচ্ছিল সকাল, এবারেই তো বন্ধন।

যেন আমাকেই মুক্তি দিতে,ঠিক তখনই
পিছনের ওই দরজার ভেতর থেকে বেজে উঠলো সুর
খান সাহেবের শান্ত-সমাহিত সরোদ কথা কয়ে উঠলো আহির ভৈরবের সুরে
সেই মুহুর্তে একাকার হয়ে গেল আমার ভেতর-বাহির
ভুল হয়ে গেল সবকিছু, কোনটা বাঁধন-কোনটা ছুটি,
দরজার বাইরের মুক্তি কি করে যেন আমায় প্রবল আকর্ষণে ফিরিয়ে নিয়ে এল দরজার ভিতরে
এইজন্মের আমি ক্রমশঃ মিশে যেতে লাগলাম আরো হাজার জন্মের আমির সঙ্গে আহির ভৈরবের সুরে।
আমার সারা সকাল জুড়ে সেদিন ছিল আমার মুক্তি, আমার.......'আহির ভৈরব'।
     

0 comments:

Post a Comment