ইচ্ছেখাতা (যা ইচ্ছে লেখা যায়, দেখে কেউ নম্বর দিতে আসবে এই ভয় নেই তো তাই 'ইচ্ছেখাতা') আমার অনেক দিনের সঙ্গী। সেই কোন ১২-১৪ বছর বয়সে জেঠুমনি একটা ছোট্ট ডায়রি দিয়েছিল চকলেট রঙের।তার আবার তিনটে পার্ট। মানে threefold আর কি, তো সেই ডায়রি তে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল এ তেন্ডুলকার এর স্কোর, ভারতের নবতম মহাকাশযান এর নাম, গরমের ছুটিতে বন্ধুদের না জানিয়ে অনেকটা পড়া এগিয়ে রাখার সংকল্পে তৈরী করা schedule (যদিও সেই schedule এর ১২ আনা-ই ফাঁকি পড়ত বলাই বাহুল্য) ইত্যাদি ইত্যাদি তত্কালীন প্রচন্ড ইম্পর্টান্ট অনেক জিনিসপত্রের এর সাথে দু-এক পাতায় ছন্দ মেলানো কিছু লেখাঝোকা ও ছিল। সেই হলো ইচ্ছেখাতার শৈশব। অন্তত ৯০ ভাগ বাঙালির ই এরকম একটা ইচ্ছেখাতা থাকে। তারপর তো high school, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ৬-৭ বছর অনাদি অনন্ত ল্যাবজীবন যাপনের এর পর দেখা গেল ছোটো- বড়, বেঁটে-লম্বা, সাদা কালো নানা রঙের ডায়রি তে ভর্তি আমার বুকশেলফ। তার ৯০% ই জেঠুমনির দেওয়া বিভিন্ন সময়ে আর কিছু এধার ওধার থেকে পাওয়া। এবং সেইসব বিচিত্র ডায়রি ই বিভিন্ন সময় হয়ে উঠেছে আমার ইচ্ছেখাতা। বিভিন্ন সময় নানা কাজে বুকশেলফ হাঁটকে কিছু আবোলতাবোল জিনিস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে তারা। সামনের কয়েক পাতার লেখার ধরন ক্রমবিবর্তিত হয়েছে হিমবাহের প্রকারভেদ থেকে laws of thermodynamics থেকে tRNA structure -transcription -translation ছুঁয়ে পপুলেশন জেনেটিক্স এর ভুরি ভুরি কঠিন কঠিন জিনিস এ যেসব এর অর্ধেক ও আমার আর মনে নেই। কিন্তু সেসব ডায়রীর শেষের দিক গুলো ছিল আমার মন ভালো করার জায়গা। অজস্র ছোটো ছোটো লেখা- রাগ অভিমান- ভালোলাগা- মন্দলাগা- ছোটো ছোটো দৃশ্য নানান কিছু তে ভরা। নিশ্চয়ই সেগুলো ও নানা ভাবে বিবর্তিত হয়েছে ছোটোবেলার পদ্য থেকে বড়বেলার অন্তমিলহীন আবেগ থেকে বয়সকালের প্রেমজ যত হাবিজাবি অভিমান- কঠিন কঠিন সব অনুভূতি প্পভৃতি নানারকম অমূল্য সব সাহিত্যকর্মে। একথা না বললেও চলে যে স্বরচিত সেইসব সাহিত্যকীর্তির (যা মোটামুটি সবার ই থাকে) মুল্য কেবলমাত্র সেসব এর রচয়িতা ই জানে (কেউ মোরে বুঝলো না গা)। তো সেই সব ডায়রী গুলো ও হচ্ছে (ইয়েস প্রেসেন্ট টেন্স, স-অ-অ-অ-অ-ব এখনো আছে, এতসব অমূল্য সাহিত্য চর্চার নজির প্রাণে ধরে ফেলেদেওয়া যায় না কিনা তাই) আমার ইচ্ছেখাতা। তো এখন যখন এই উন্নত প্রযুক্তি র যুগে ল্যাবের কাজ এর ফাঁকে (মানে ফাঁকি মেরে আর কি) টুকিটাকি লিখে ফেলা যাচ্ছে আলাদা করে খাতা পেন্সিল বের না করে তখন ভাবলাম ইচ্ছেখাতাটাকে digital এ transfer করে ফেলা যাক। তাতে লাভ দুই জাতীয়। আর ক্ষতি একটাই। ক্ষতিটা ই আগে বলি, আমার বিচ্ছিরি হাতেরলেখা ক্রমশ: বিশ্রীতর থেকে বিশ্রীতম থেকে অপাঠ্য হয়ে উঠবে। আর লাভ হলো ল্যাব এ বসে বিচিত্র খাতায় বিচিত্র রঙের কালি দিয়ে মাথা নিচু করে লেখার থেকে কম্পিউটার এর দিকে চোখ রেখে কিছু টাইপ করাটা অনেক বেশি নিরাপদ। একথা আমরা যারা কাজের জায়গায় একটা ট্যাব এ অকাজ এর জিনিস (যথা রিসার্চ পেপার এর PDF, এক্সেল শিট, নানা স্ট্যাটিসটিকাল data নিয়ে গ্রাফ এর কারিকুরি ইত্যাদি ইত্যাদি) এবং বাকি সব ট্যাব এ নানা কাজের জিনিস (যথা facebook, নানা অনলাইন শপিং এর আকর্ষনীয় সব সাইট, দুর্দান্ত সব গল্পের বই এর PDF, আরো যতসব লাল- নীল- হলুদ- সবুজ গেম ওয়েবসাইট ইত্যাদি) খুলে সারাদিন প্রচন্ড গম্ভীর মুখে কাজ করি আর মাস্টারমশাই/ দিদিমনি রা এলেই চট করে অকাজ এর জিনিস খুলে বসি তারা সবাই জানি। দ্বিতীয় লাভ তা হলো ডিজিটাল ইচ্ছেখাতার প্রতিটি পাতা আমি চাবি দিয়ে রাখতে পারব। ইচ্ছা হলে লোকজন কে দেখতে দেব। না হলে দেব না। আগেকার খাতাগুলো তো বুকশেলফ এই থাকত আর আমার অনুপস্হিতিতে যে কেউ আমার মনের সব কথা যা আমি সযত্নে ঢাকাঢুকি দিয়ে রাখতাম তা পড়ে ফেলতে পারত। এটা বড় বাজে ব্যাপার। যদিও আমার বাড়িতে আমার বুকশেলফ হাঁটকানোর সুযোগ মা- বাবা ছাড়া আর কারো ছিল না আর মা বাবার এইসব খাতা এবং তার হাবিজাবি লেখা পড়ার মত যথেষ্ট সময় ও ইচ্ছা ছিল না বলেই আমি জানি। তাই লাভ ক্ষতি হিসাব করে ভাবলাম এই নতুন রকম ইচ্ছেখাতা টা try করা যাক। ল্যাব এ বসে বা বাড়িতে যখন ই ইচ্ছে হবে হাবিজাবি (আমার কাছে কিন্তু দারুণ) লিখতে পারব। আর দরকার মত চাবি দেওয়া বা খোলার কাজটাও করতে পারব তাই এই নতুন রকম ইচ্ছেখাতা।
Monday 16 June 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
ভূমিকাটা ভালো হয়েছে, এবার কিছু লেখাও পড়তে চাই।
ReplyDeleteঅবশ্যই অবশ্যই
ReplyDelete