Saturday 19 July 2014

আপনার জীবনের লক্ষ্য কি?

আমি জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে উত্সাহিত হয়ে অনেক দেখে, এসোসিয়েশন স্টাডি করে, কাই স্কোয়ার টেস্ট করে প্রচুর-প্রচুর স্ট্যাটিসটিকাল সিগনিফিকেন্স টেস্ট করে নিচের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এবং মানুষের বয়স অনুসারে ধীরে ধীরে সেই লক্ষ্যের পরিবর্তন বা বলা যায় বিবর্তন বা বৃদ্ধিও হতে থাকে। আমি আমার সিদ্ধান্তগুলো বয়স অনুসারে সাজানোর চেষ্টা করছি। পরিবেশ, পরিস্থিতি বিচার করে হয়ত লক্ষ্যের একটু-আধটু এদিক ওদিক হতে পারে কিন্তু মোটামুটি গতটা একই। দেখুনতো মিলছে কিনা?


 আপনার যখন বয়স
আপনার বাড়ির লোকজন আপনাকে যা বলছেন  
আপনার পাশের বাড়ির লোকজন যা ভাবছেন
আপনি সবকিছু শুনে যা আপনার জীবনের লক্ষ্য বলে ভাবছেন 
 - বছর 
"ওলে বাবা ....কুচুসোনাটা....আন্টিকে একটু 'জ্যাক এন্ড জিল' টা বলে দাও তো সোনা"....কি সুন্দর বলে জানেন তো এখন আপনাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছে।" 
"আদিখ্যেতা! আমার বাবু যেন পারে না! কাল বিকেলে শুনিয়ে দেব। বাবুসোনা, 'ব্যা ব্যা ব্ল্যাক শিপ' টা মুখস্ত করে নাও তো ভালো করে।
"আমি তো বাড়ির বাবুসোনার সঙ্গে খেলতে যাই.....পড়া কেন বলতে হবে তখন?" 
 - বছর 
 "কুচু, নো মোর প্লে, গুড বয়.....সামনের মাসে XXX ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হতে হবে তো না?.....চল আমরা একটু পড়াশুনা করে নি কেমন? পাশের বাড়ির বাবুসোনা যদি পেয়ে যায় তুমি যদি না পাও কি হবে?"
"দেখব দেখব, ওরকম লাখটাকা ডোনেশন দিলে আমার বাবুসোনাও পারবে XXX ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ ভর্তি হতে।"
"তাহলে কি বাবুসোনার সাথে খেলব না মা?"
 -১৫ বছর (মাধ্যমিক/10th)
"কুচু, সামনে মাধ্যমিক। আমার হয়নি, আমার স্বপ্ন তোমাকে কিন্তু 10th এর মধ্যে হতেই হবে.....অমুককাকুর মেয়ে কিন্তু গতবার 90% পেয়েছিল....দেখো আমদের নাক যেন না কাটা যায়।"
"HS এ সাইন্স না পেলে......দেখব দেমাক কোথায় থাকে।.....বাবুসোনা জান লড়িয়ে দে কোনমতেই যেন তোকে টপকাতে না পারে।"
"হে ভগবান, অন্ততঃ 10th পজিসনটা দিও ঠাকুর। নিদেন পক্ষ্যে 91% 
 ১৫-১৭ বছর (উচ্চমাধ্যমিক/12th)
"মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের কিন্তু আকাশ-পাতাল তফাত কুচু......খুব সাবধান সামনে জয়েন্ট......পেতেই হবে। হবেই.....মেডিকেল হলে তো দারুন নইলে ইঞ্জিনিয়ারিং.....rank ঠিকঠাক না হলে কিন্তু লাইফ শেষ মনে রেখো।"
"খুব তো শুনছিলাম এত ভালো তত ভালো......মাধ্যমিক এ rank কি পেল?.....নেহাত আমার বাবুসোনার পরীক্ষার আগে সাতদিন অমন জ্বর হলো তাই নইলে কি আর আমার বাবুও পারতনা অমন রেজাল্ট করতে?......দেখব জয়েন্ট এ কি করে?"
"ঠাকুর, জয়েন্টটা ঠিকঠাক পাইয়ে দাও ভগবান। নাহলে তো আমায় সুইসাইড করতে হবে? নো ফিউচার ইন জেনারেল লাইন......ওরে বাবা!"
 ১৭-২১ বছর (গ্র্যাজুয়েশন)
"অনেক তো হলো কুচু, জয়েন্টটাও ঠিকমত লাগাতে পারলে না....করোটা কি সারাদিন?.....এত টাকা টিউশন ফী দিয়ে যে কোর্সটায় ভর্তি করানো হলো রেজাল্ট ঠিকঠাক না হলে চাকরি বাকরি জুটবে না কোনদিন বলে দিলাম.....ফালতু প্রেম ফ্রেম ছেড়ে পড়াশুনাটা করো ঠিক করে।"
"হলো তো?.....জয়েন্ট এ লবডঙ্কা?....বলেছিলাম না এমন কিছু নয়.....ওই তো জেনারেল লাইন এ অনার্স পড়ে করবেটা কি?.....আমার বাবুসোনাকে তো ব্যাঙ্গালোরে পাঠালাম সেজন্যই। একটু বেশি অ্যাডমিশন ফী লাগলো কিন্ত ওদের কলেজ এ ক্যাম্পাসিংটা দারুন। "
"হে ভগবান, গ্রেডটা যেন ঠিকঠাক আসে, PG তে না পেলে......উফফ ভাবতে পারছি না......কলেজে 'বুঁচি' already ওর কোন পাড়াতুতো দাদার JNU তে পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের গল্প দিয়ে রেখেছে।"   

 ২১-২৩ বছর (পোস্টগ্র্যাজুয়েশন)
"যাই কর কুচু, এখন থেকেই PSC, SSC, UPSC গুলো দিতে থাকো....কিছুই তো হলো না.....কত স্বপ্ন ছিল......ফোঁ ও ও ও ও স (মানে দীর্ঘশ্বাস).....একটা চাকরি তো পেতে হবে.... নাকি?"
"এই তো আমার বাবু কেমন ক্যাম্পাসিং এ পেয়ে গেছে। লাস্ট সেমেস্টারের পরেই joining....স্টার্টিং এ একটু কমই দিচ্ছে....কিন্তু বাড়বে.....আচ্ছা আপনার কুচু এরপর কি করবে টরবে বলছে?" 
"হে ভগবান! বুঁচির সেই *&$#@ দাদা স্কলারশিপ-টিপ পেয়ে বিদেশে চলে গেল পিএইচডি করতে.......দেখো ঠাকুর যেন নেট ফেট পেয়ে দেশেই না হয় একটা পিএইচডি জোটাতে পারি।"
২৩-৩০ বছর (ডকটরাল গবেষণা)
"আচ্ছা কুচু, তোর এই পিএইচডি বিষয়টা বেশ করে বোঝা তো দেখি.....কি যে চাকরির চেষ্টা না করে করছিস?....বললাম কতো করে প্রাইমারি স্কুল এ পাচ্ছিলি ছাড়িস না, পরে না হয় batter কিছু পেলে ছেড়ে দিতিস। চাকরি কেউ পেয়ে ছেড়ে দেয়?....কি যে করছিস? বিয়ে টিয়ে করতে হবে তো নাকি.....তিরিশ হতে চলল ।" "যাই বল বাবা, চাকরি is চাকরি, ওসব গবেষণা-টবেশনা যাই বল না কেন সবই তো চাকরির জন্য সেই জন্যই তো আমার বাবু প্রথম চান্সেই accept করে নিয়েছে.....এখন তো দারুন স্কেল হয়ে গেছে.....ভাবছি তো সামনের নভেম্বরে বিয়েটা দিয়ে দেব। " "যাক, বুঁচিটা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে। এবার থিসিসটা কোনক্রমে জমা করতে পারলে হয়, কিন্তু পেপারটার যে কি হলো? খালি ফেরত আসে.....হে ভগবান, পেপার-থিসিসটা ভালয় ভালয় নামিয়ে দাও ঠাকুর। বিয়েটাও আটকে আছে এর জন্য।"
 ৩০-৩৫ বছর (পোস্ট ডকটরাল গবেষণা )
 "আচ্ছা কুচু, পিএইচডি তো হলো চাকরি করবি কবে?.....বিয়ে হলো এবার তো বাচ্চা চাই তাই না......আমাদের তো শখ আছে....সবাই কেমন সেটেলেড......"
"আমার বাবুর তো সেকেন্ড বেবি আসতে চলেছে দিদি......আপনাদেরই তো পাড়ার মধ্যে সবচয়ে কাছের মনে করি তাই প্রথমে আপনাকেই বলছি আর কেউ জানে না.....বড়টা? ক্লাস ওয়ান হবে এবার। কি ভালো নাচে কি বলব....আমি তো  তাই বৌমাকে বলছিলাম ডান্স বাংলা ডান্স এর অডিশনে যাও একবার.... ওর বাবা মায়েরও খুব ইচ্ছা......আচ্ছা কুচু কি চাকরি-টাকরির apply করছে না? এইসবই করবে?"  
 "হে ভগবান, বিদেশে একটা ভালো পজিশন পাইয়ে দাও ঠাকুর। নাহলে দেশেই.....সবাই কেমন সেটেলেড"


 আমি কিনা এই বয়সসীমা পার হতে পারিনি এখনো তাই আর পরের লক্ষ্য গুলো সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না এখনই। পরে কখনো দেখা যাবে। আপাতত সমীকরনটা যা দাঁড়ালো তা হলো এই- আপনি গবেষনা, চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি হাবিজাবি যাই করুন না কেন আপনার জীবনের লক্ষ্য হলো,
ভালো স্কুল-ভালো রেজাল্ট-জয়েন্ট এন্ট্রান্স-চাকরি-চাকরি মানেই বিয়ে-বিয়ে মানেই বাচ্চা। আপনি ঠিকঠাক মানুষ না হলেও চলবে, অপার মিথ্যে কথা বললেও চলবে, ধরা না পড়ে টুকটাক ঘুষ নিলেও চলবে, চিপস খেয়ে রাস্তায় প্যাকেট ফেলাটা কেন দোষের সেটা না বুঝলেও চলবে......... কিন্তু 'রেজাল্ট-চাকরি-বিয়ে-বাচ্চা' এই সমীকরণটিই হলো আপনার জীবনের লক্ষ্য। মিলিয়ে নিন ঠিক বললাম কিনা? এই গতে না চললে আপনার জীবনে ষোলো আনাই ফাঁকি। তা সে আপনি যত বড় জগদীশ বোস-ই হন না কেন।

0 comments:

Post a Comment