Tuesday 1 July 2014

সোমভদ্র-মেরুকা না সোমভদ্র-শফরী

সোমভদ্র, মেরুকা আর শফরী কে মনে আছে? নইলে আমি একটু সাহায্য করতে পারি। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এর লেখা 'আদিম' গল্পের নায়ক-নায়িকা এরা। পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরের একটি বিশেষ সামাজিক রীতি নিয়ে লেখা একটি দুর্দান্ত গল্প। সোমভদ্র-মেরুকা-শফরীর ত্রিকোণ প্রেমের গল্পে জিতেছিল শেষপর্যন্ত সোমভদ্র-শফরী জুটি। ভাবছেন সকাল সকাল এই অতি সাধারণ প্লটের বিশেষ গল্পটি নিয়ে পড়লাম কেন? কারণ আছে। গল্পটির বিশেষত্ব হলো, সোমভদ্র আর শফরী ছিল আপন ভাই-বোন।

ইয়েস!!!!!!!! সেই সময় মিশর কেন আরো অনেক জায়গাতেই আপন ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে সামাজিক ও আইনগত ভাবে স্বীকৃত ছিল। ছোটবেলায় ইতিহাস বইতে পড়া বিখ্যাত সব লোকজন যেমন তুতেনখামেন, ক্লিওপেট্রা এঁরা সবাই নিজের নিজের ভাইবোনকেই বিয়ে করেছিলেন। এছাড়া গল্প উপন্যাসে এরকম নানা ঘটনার উল্লেখ তো আছেই। আজকাল জেনেশুনে এধরনের বিয়ে না হলেও অজান্তে হতেই পারে। যেমন চীন এর একটি সত্যি ঘটনার কথা পড়ছিলাম কিছুদিন আগে। বেচারারা ছোটো থেকে একসাথে বড় হয়েছে পাশাপাশি বাড়িতে। বড় হয়ে প্রেম ও বিয়ে। তারপর তাদের ছানা-পোনা হবার প্রশ্ন যখন ওঠে তখন বেচারী পাত্রের বাবা আসল রহস্য ফাঁস করেন।

তা সে যাই হোক। সামাজিক ভাবে এ প্রথা কেন আগে চালু ছিল আর কেনই বা তা বন্ধ হয়ে গেল তা নিয়ে আপাতত আমার চুল না ছিঁড়লেও চলবে। আমার যেটি বক্তব্য সেটি হলো-বিয়ে এমন লোককেই করা উচিত যার সঙ্গে থাকতে গেলে দিন দুবেলা লাঠালাঠি করতে হবে না। বেশ সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে দুনিয়ার লোকের নামে পি-এন-পি-সি করা যাবে, রাত দুটো পর্যন্ত কমেডি বা থ্রিলার দেখা যাবে.....ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছুই করা যাবে। এখন যদি আপনার পাশের লোকটির সাথে আপনার পছন্দ গুলো একেবারেই না মেলে? মানে ধরুন, আপনি 'X'-এর নামে নিন্দে করতে চান কিন্তু 'X'-কে আবার আপনার পার্টনারের দারুন পছন্দ, অথবা- আপনি থ্রিলার দেখতে চান পাশের জন তখন বক্সিং দেখতে মগ্ন। এমতাবস্থায় তো কিছুদিনের মধ্যে লাঠালাঠি হতে বাধ্য।

সেজন্যই আমরা সব আজকাল বিয়ের হাঁড়িকাঠে গলা দেবার আগে ভেবেচিন্তে অনেক দিন ধরে সাম্ভব্য candidate দের বেশ করে বাজিয়ে নিয়ে অর্থাত কি থেতে, কোথায় বেড়াতে যেতে, কোন TV শো দেখতে ভালোবাসে ইত্যাদি নানান গুরুত্বপূর্ণ সব criteria বিচার করে তবে একজনকে পছন্দ করি। তাতে সময় যায় বিস্তর। যথা আপনাকে তার সাথে পার্কে, restaurant এ, সিনেমা হলে আরো নানান জায়গায় দিনরাত্রি- রোদবৃষ্টি মাথায় করে ঘুরে বেড়াতে হবে, প্রচুর প্রেম-প্রেম কবিতা শুনতে ও শোনাতে হবে, একগাদা হাবিজাবি খাদ্য-পানীয়র খেয়ে পেট ও পকেটের অবস্থা খারাপ করতে হবে, এসব করতে গিয়ে মতের মিল না হলে খোলা জায়গায় ক্লাস ফোরের বাচ্চাদের মতো গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করতে হবে, নিদেন পক্ষ্যে কোল্ড ওয়ার এর পর ঘরে বসে চোখ- নাক মুছতে হবে, ফোন বা ইন্টারনেট এর বিল বাড়বে, শরীর খারাপ হবে, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ কমবে, বাড়ির লোকজনের কাছে চোর চোর হাবভাবে ঘুরে বেড়াতে হবে........ইত্যাদি ইত্যাদি আরো সম্ভব-অসম্ভব কি কি যে হতে পারে তা আর কি বলব। সবাই কম বেশি ভুক্তভুগী। এবং তাতেও যে সবসময় সফল হওয়া যায় তা নয়।

কিন্তু একটা বেসিক প্রশ্ন, এতসব আপনি করবেন কেন? আপনি যার সাথে থাকবেন তার সাথে আপনার পছন্দ মেলে কিনা জানবার জন্য? ভগবান!!! তার জন্য এত সময়-এনার্জি-পয়সা-শরীর সব নষ্ট। দাঁড়ান আমি একটা শর্টকার্ট পদ্ধতির সন্ধান পেয়েছি। আপনাদেরও বাতলে দি।

আপনার পছন্দ-অপছন্দ সমস্ত কিছু কে নিয়ন্ত্রণ করে কে? না আপনার DNA। একথা এখন ক্লাস ফাইভ এর বাচ্চাও জানে, তাইতো? এখন যদি আপনি এমন একটি লোককে খুঁজে বার করতে পারেন যার DNA, আপনার DNA র যমজ না হোক মোটামুটি একই রকম জিনিসপত্র দিয়ে তৈরী, তাহলেই কেল্লা ফতে। বুঝলেন না? তার আর আপনার ডিএনএ যদি মোটামুটি একই রকম হয় তবে তো আপনাদের পছন্দ-অপছন্দ গুলো মিলে যাবার চান্স অনেক বেশি। DNA র মিলে শতকরা যত ভাগ বাড়বে, আপনাদের লাঠালাঠিও শতকরা ততভাগ কমবে। এক্কেবারে ইনভার্স রিলেশনশিপ। আমি বলছি না রিপোর্ট বলছে, পড়ে দেখে নিন। সুখী বিবাহের চাবিকাঠি নাকি ডিএনএ এর মিল। ভালই হলো এখন আর চিন্তা নেই। এত কষ্ট করে কাউকে আর জীবন সঙ্গী খুঁজতে হবে না। সাম্ভব্য পাত্রদের ধরে ধরে তার খানিকটা করে রক্ত নিতে হবে, তা থেকে DNA বার করে নিয়ে ঠান্ডা ল্যাবে বসে খানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিজেরটার সাথে মিলিয়ে দেখলেই হলো। যার সাথে মিল সবচেয়ে বেশি তার গলাতেই মালা। সময়-এনার্জি-পয়সা-শরীর সব সাশ্রয়। দারুন না ব্যাপারটা?

মনে হয় এজন্যই আগেকার দিনে ভাই বোনের মধ্যে বিয়ের প্রচলন ছিল। অন্য পরিবারের কারোর চেয়ে নিজের ভাই বোনের সঙ্গে DNA র মিল বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কে আর দিন-দুবেলা লাঠালাঠি চায় বলুন। সাধে কি আর সোমভদ্র মেরুকাকে ছেড়ে শফরীকে বেছে নিয়েছিল?
              

0 comments:

Post a Comment