Sunday 26 October 2014

দেওয়ালী.........৩


দেওয়ালী.........২ এরপর  

“আরে ভাই ম্যায় ক্যায়া তেরে লিয়ে পুরি রাত ব্যায়ঠে রহুঁ? যো বাকি হ্যায় জমা কর দে, প্যায়সা লেকে ঘর যা......আরে উও প্যাকেট দে মুঝে......শালা।” বিনোদ মকবুলের হাতের প্যাকেটটার দিকে ইঙ্গিত করে।
মকবুল পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে প্যাকেটটা বাড়িয়ে ধরে। শনু নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করে পরবর্তী অগ্নুৎপাতের জন্য। বিনোদ এসে ছিনিয়ে নেয় প্যাকেটটা। নিজে নিজেই বিড়বিড় করে, “অ্যায়সে হি শালা দের হো গ্যায়া।” প্যাকেট খুলে ভুরু কুঁচকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে বিনোদ। শনু এসে মকবুলের পাশে এসে দাঁড়ায়। মকবুল অনুভব করে তার হাঁটুর গরম ভাবটা চলে গিয়ে আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে হাত আর পায়ের পাতা।
বিনোদ তাকালো মকবুলের দিকে। “ইয়ে ক্যায়া? মজাক হো রাহা হ্যায় ক্যায়া?”
শনু এগিয়ে আসে। “বিনোদ ভাইয়া, শুনো না, অ্যাকসিডেন্ট হুয়া হ্যায় মকবুলকা, দেখো না ক্যায়সে খুন নিকল রাহা হ্যায় ঘুটনে সে। গাড়ি ডাঁয়ে প্যায়ের কে উপর সে চলতে চলতে রাহে গ্যায়ে।”
এত বলেও বিনোদের দৃষ্টি প্যাকেট থেকে মকবুলের পায়ের দিকে ঘোরাতে পারলো না শনু। কয়েক সেকেন্ড মকবুলের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ভেতর দিকে চলে গেল বিনোদ।
শনু এসে মকবুলের বরফঠাণ্ডা হাত ধরে বলল, “ঘাবড়ানা মৎ ইয়ার। ম্যায় ভি তো হুঁ।” মকবুল একহাতে একটা খুঁটি অন্য হাতে শনুর হাত চেপে ধরল। বিক্রম শেঠ বেরিয়ে এল খুব শান্ত ভাবে। -“কিতনে প্যাকেট দিয়ে থে তুনে শালে কো আজ বিনোদ?”
-পাঁচাশ শেঠজি।
-পুরা গ্যায়া?-মকবুলের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করে বিক্রম শেঠ।
শনু তাড়াতাড়ি বলে ওঠে “নেহি শেঠ, বেচা থা না পেহেলে কুছ। দশ- বারা প্যাকেট তো বিক গ্যায়ে থে......হ্যায় না মকবুল?”
“তু চুপ কর শালে, তুঝ সে পুছা ম্যায়নে কুছ?” এক ধমক দিয়ে ওঠে শেঠ শনুকে। তারপর দুপা এগিয়ে গিয়ে মকবুলের মুখোমুখি দাঁড়ায়। “তু বোল, কিতনে প্যাকেট বিকা থা?”
-“চার” মুখ নিচু করে বলে মকবুল।
হঠাৎ ঠাসিয়ে একটা চড় কষায় বিক্রম শেঠ মকবুলের গালে। তার ধাক্কায় পাশে রাখা বস্তা-প্যাকিং কেসের ডাঁই এর ওপরে প্রায় পড়তে পড়তে সামলে নিল মকবুল। “শালা চার প্যাকেট বিকা হ্যায় পুরি দিন মে। বাকি কে সারে ধুল বানা কর লে আয়ে মেরে মু পে ডালনে কে লিয়ে? বাকি কে প্যায়সা কৌন দেঙ্গে? তেরা বাপ? শালা উসকা ভি তো পতা হ্যায় মুঝে। বাকি চালিশ-প্যাঁয়তাল্লিশ প্যাকেটকা প্যাঁয়তিশ রূপেয়া কে হিসাবসে পুরা প্যায়সা ওয়াপাস চাহিয়ে মুঝে। সমঝা কুত্তা শালা?” –চেঁচিয়ে ওঠে শেঠ।
-“শেঠ?”-আস্তে করে ডাকে শনু।
-“তু বিচ মে মৎ বোলনা। তুঝকো ভি ক্যায়া দুঁ ক্যায়া খিঁচকে এক?”
শনু তাও দু পা পিছিয়ে গিয়ে বলে ওঠে, “বহুত খতরনাক অ্যাকসিডেন্ট হুয়া থা শেঠ মকবুল কা। প্যায়ের দেখিয়ে না উসকা শেঠ জি।”
-“সব দিখতা হ্যায় মুঝে। শালা মর তো নেহি গ্যায়া না? আপনে প্যায়ের কি উপর হি তো খাড়া হ্যায় না? কোই হাড্ডি-উড্ডি নেহি টুটা না? কিতনা খতরনাক অ্যাকসিডেন্ট সব পতা হ্যায় মুঝে। শালা কামচোর। পুরি দিন মে চার প্যাকেট? শালা বাকি কে দিন ক্যায়া কর রাহা থা বোল।”
-“শেঠ, উও প্যাকেট কা মোম ফ্যাক্টরি মে দে দেনে সে ফির সে বন যায়েগা” – শনু একটা শেষ চেষ্টা করে।
মকবুলকে ছেড়ে শনুর দিকে এগিয়ে আসে বিক্রম শেঠ। কোমরের প্যান্টটা একটু তুলে নেয়। তারপর খুব ঠাণ্ডা গলায় শনুর ঘাড়টা শক্ত হাতে ধরে বলে, “চল, নিকল ইঁহা সে। বহুত দের সে ফটর-ফটর কর রাহা হ্যায় তু। তু দেগা প্যায়সা মেরা? চল শালে, নিকল ইঁহাসে।” এক ধাক্কায় দরজার কাছে এসে পড়লো শনু।
গোডাউনের দরজায় একটা হাত রেখে হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে আছে আসলাম শেখ। উঠে দাঁড়িয়ে তার কাছে গিয়ে অসহায়ের মত বলল শনু, “মকবুল কো বাঁচা লিজিয়ে চাচা। উসকা কোই গলতি নেহি হ্যায় চাচা।” যাকে উদ্দেশ্য করে বলা তার কথাটা কানে ঢুকেছে কিনা বোঝা গেল না। আকুল চোখে ছেলের পরবর্তী হেনস্থা কি হতে পারে তাই দেখছে। তার পেছনে দুচোখে ভর্তি প্রশ্ন নিয়ে জড়ো হচ্ছে সিগন্যাল ফেরত বাকি মনসুর-সুরিন্দর-জাভেদ-রোশনী-আসমারার দল। কারো হাতে টিস্যু পেপার, কারো হাতে গাড়ি মোছার নরম কাপড়, কারো হাতে প্লাস্টিকের বাঁশি, কারো হাতে আবার তাদের মতই মোমবাতি বা আবিরের প্যাকেট। সারাদিন নানান সিগন্যালে ঘুরে ঘুরে ধুলোমাখা রুক্ষ চুল আর খড়ি ওঠা লিকপিকে হাতপা নিয়ে অন্নসংস্থানে বেরিয়েছিল। সবারই টিকি বাঁধা এই বিক্রম শেঠের গুদামে।
বিক্রম শেঠ বাঁ হাতে মকবুলের গলাটা ধরে খুঁটির সঙ্গে ঠেসে ধরল ওকে। বুটপরা পা টা পড়ল মকবুলের জখম ডান পায়ের নখের উপর। যন্ত্রণায় কাতরে উঠলো মকবুল। চোখ- মুখ কুঁচকে হজম করছে সে ব্যাথাটাকে। “বহুত দরদ হো রাহা হ্যায় না শালে। কৌন সি দুনিয়া মে রহেকে কাম করতে হে বোল? কিসিকো কুছ নেহি হোতা তেরে সাথহি খতরনাক অ্যাকসিডেন্ট হোতা হ্যায়? ঝুটে শালা। মুঝে মেরে প্যায়সা চাহিয়ে ব্যস।”- সাথে সাথে হাতও চলছে সমান তালে। মকবুল একদম নেতিয়ে পড়েছে।
ততক্ষণে আসলাম শেখ আর জাভেদ-রোশনীর দল জেনে নিয়েছে পুরো ঘটনা। মকবুলের অবস্থা দেখে বিনোদ এগিয়ে আসে। “শেঠজি, ছোড় দিজিয়ে। মর যায়েগা নেহি তো।”
“ছোড় দিজিয়ে মতলব? কিতনে রূপিয়ে কা নুকশান হুয়া হ্যায় পতা হ্যায় তুঝে? শালা অ্যাকসিডেন্ট দিখা রাহা হ্যায় মুঝে। কৌন ভরেগা নুকশান?”
“উসকা হি রোজ সে কাট লেনা আপ। আভি আউর মৎ মারিয়ে, কুছ হো যায়েগা তো আপ কে উপর মুস্কিল আ সকতা হ্যায়।”
একটু থমকাল বিক্রম শেঠ।
এতক্ষণে সম্বিৎ ফিরে এল আসলাম শেখের। সামনে গিয়ে হাতজোড় করে বলে, “ছোড় দিজিয়ে জনাব। মর যায়েগা বেচারা। দেওয়ালী কে দিন হ্যায় শেঠজি, মাফ কর দিজিয়ে।”
“দেওয়ালী সে তেরা ক্যায়া হ্যায় রে? শালা মুসলমানকে বাচ্চে। দেওয়ালী দিখাতা হ্যায়। মেরা চালিশ প্যাকেট কা প্যায়সা তুঝে ভরনা পড়েগা।”
মাথা নিচু করে বসে পড়ে আসলাম শেখ। “ছোড় দিজিয়ে শেঠজি। ফির সে অ্যায়সা কভি নেহি হোগা মকবুলসে।”
“ফির সে কভি নেহি হোগা ইয়ে তো মুঝে ভি পতা হ্যায়। কিঁউকি কাল সে তু নেহি আয়েগা সমঝা?” –মকবুলকে ঠেলা মেরে বলল বিক্রম শেঠ। মকবুলকে ছেড়ে বিনোদের দিকে গিয়ে বলল, “ইস কো কাল সে গোডাউন মে ঘুসনে মৎ দেনা বিনোদ। ইস তরহ কে বাচ্চে সে মেরা কাম নেহি চলেগা। সমঝা?”
-“অর নেহি হোগা শেঠজি। নিকাল মৎ দিজিয়ে মুঝে।”-এতক্ষণে কোনমতে বলতে পারে মকবুল। খুঁটি থেকে খসে ওখানেই বসে পড়লো মকবুল। আর দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি ছিল না তার।
“চোপ শালে।”-চেঁচিয়ে ওঠে বিক্রম শেঠ।
“অ্যায়সা মৎ করনা শেঠজি। মাফ কর দিজিয়ে। ম্যায়নে আপকা পুরা প্যায়সা চুকা দুঙ্গা।” –হাতজোড় করে বলে আসলাম শেখ।
“উও তো তু দেগা হি।”- বলে ভেতরের দিকে চলে যেতে থাকে শেঠ।
বিনোদ হঠাৎ বলে ওঠে, “শেঠজি, মেরা এক বাত শুনিয়ে, আপ ইসকো নিকাল দেঙ্গে ত ইস কা বাপ আপকো প্যায়সা না দে তো? আপ উসকো কাঁহা ঢুঁড়েঙ্গে, মকবুল আপকে আন্ডার রহে তো আপ উসকে রোজ সে প্যায়সা কাট সকতে হেঁ।”
“নেহি বিনোদ তু মুঝে মৎ সমঝা। অ্যায়সা মাফিক কাম করে তো ক্যায়া ফায়দা, পুরি দিন মে চার-পাঁচ প্যাকেট বিকা, উপর সে নুকশান। ইস সে নেহি চলেগা।”
“ঠিক হ্যায় আপ প্যায়সা ওয়সুল তক রাখ লিজিয়ে। ফির নিকাল দেনা। নেহি তো আপ কা প্যায়সা ভি ওয়সুল নেহি হো সাকতা হ্যায়............” –শেঠজির পেছন পেছন ভেতরের অফিস ঘরের ভেতর মিলিয়ে যায় বিনোদ।
এতক্ষণে শনু পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে মকবুলের দিকে। “উঠ মকবুল।”
মকবুলের গলার কাছে কেমন যেন একটা হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে। শুখনো চোখে আব্বুর দিকে তাকাল মকবুল। গোডাউনের মেঝেতেই বসে আছে সেই থেকে মানুষটা মাথা নিচু করে।
“আব্বু”- আস্তে করে ডাকে মকবুল। কোনো সাড়া নেই। শনুর হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায় মকবুল। মার খেয়ে তার কান-গাল গরম হয়ে গেছে। নাক দিয়ে গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। ঠিক জ্বর হলে যেমন হয়। আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় সে আব্বুর দিকে। পাশে বসে পিঠে হাত দিয়ে ডাকে, “আব্বু?”
হঠাৎই যেন রক্ত চড়ে যায় আসলাম শেখের মাথায়। বসে বসেই এক লাথি কষায় মকবুলকে। “শালা, শুয়ার। সরে যা সামনে থিকে। কোথাও শান্তি নেই? একটা কাজও মন দিয়ে করতে পারনি শালা ইবলিসের বাচ্চা? দুটো পয়সা রোজগার হচ্ছিলো, সইলনি সেটা? বাপের ঘাড়ে বসে গিলতে লজ্জা করেনে? খেতে বসে তো কোন ভুল হয়নে। শালা তোকে গোরে দিয়ে তবে আমার শান্তি।”
এতক্ষণে যেন সন্ধ্যে থেকে তার সাথে ঘটা সব ঘটনার যন্ত্রণা উপচে ওঠে মকবুলের দুচোখ বেয়ে। এতক্ষণের মারধর-গালিগালাজ-ডান পায়ের জখম সবকিছুকে দাঁত চেপে সহ্য করেও এবার আর পারে না মকবুল। মেঝেতে বসেই অঝোরে কাঁদতে থাকে সে। দুহাত দূরে দাঁড়িয়ে পাথর হয়ে যায় শনু।
আসলাম শেখ ততক্ষণে বাঁ হাতের উল্টোপিঠটা দিয়ে একবার চোখটা মুছে নিয়ে গোডাউনের দরজা ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। “জাভেদ, মকবুল কো দেখ না”- বলে পেছন পেছন দৌড়োয় শনু।
বিক্রম শেঠকে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে মকবুল তাড়াতাড়ি জামার হাতায় চোখ-মুখ মুছে উঠে দাঁড়ালো। তার দিকে এতটুকুও না তাকিয়ে পেছন পেছন আসা বিনোদকে বলল বিক্রম শেঠ, “ম্যায় চলতা হুঁ, ইসকো সমঝা দেনা, ম্যায় এক মাহিনা দেখুঙ্গা, মেরা নুকশান কা প্যায়সা ইসকে অন্দর ভর জানা চাহিয়ে। কৌন ভরেগা, ইয়ে ক্যায়া ইসকে বাপ উস সে মুঝে কই লেনা দেনা নেহি। ফের সে অ্যায়সা হোগা তো উস হি দিন উসকা লাস্ট হোগা। অর বাকি বাচ্চোঁকা হিসাব বরাবর রাখ দে। আজ কা পেমেণ্ট কাল একসাথ হো জায়েগা।”
দরজার সামনে গিয়ে হাতের জাঁদরেল হেলমেটটা মাথায় পরে বাকলস আঁটতে আঁটতে বলে, “হাঁ বিনোদ, জলদি সে গোডাউন বন্ধ করকে শুখলাল কো চাবি দে দেনা। দেওয়ালী কে দিন ফালতু বখেড়া শালা মুসলমানকা বাচ্চা, শালা হারামি, দিন হি খারাব কর দিয়া।” তার দিকে একবার তাকিয়ে মোটরবাইকে স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে যায় বিক্রম শেঠ। মকবুল খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।
“আজ কা পেমেণ্ট নেহি মিলেগা ক্যায়া বিনোদ ভাইয়া? মালিক তো চলা গ্যায়া।”- আসমারার কথায় তাকায় বিনোদ। বলে, “শুনি নেহি? মালিক নে ক্যায়া বোলা? কাল একসাথ হো জায়েগা। আভি কিস কে পাশ ক্যায়া বাঁচা হ্যায় জলদি এন্ট্রি কর দে। গোডাউন বন্ধ করনা হ্যায় মুঝে।” আসমারা উশখুশ করে ওঠে। “হামলোগ ক্যায়া কিয়া? উস কে লিয়ে মেরা পেমেন্ট কিঁউ রুকেগা? মুঝে প্যায়সা চাহিয়ে।” 
“এ বাচ্চি, যাদা বোল মৎ। মালিক কো কিঁউ নেহি বোলা ফির? তেরে সামনে সে হি তো গ্যায়া না? ম্যায় তুঝে পেমেন্ট করতা হুঁ ক্যায়া? ইধার আ সব। কিসকা কিতনা প্যাকেট বাকি হ্যায় বোল জলদি।”
বিনোদের টেবিলের চার পাশে ভিড় করে সবাই। আসমারা যাবার সময় ভুরু কুঁচকে তাকায় একবার খুঁটিতে হেলান দেওয়া মকবুলের দিকে। সবার ফেরত আনা জিনিসপত্র জমা করতে করতে একসময় মকবুলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে বিনোদ, “তু আভি ভি ইঁহাপর কিঁউ খাড়েঁ হ্যায়? যা ঘর যা। কাল সুভে আ যা না জলদি। অর শুন, যাতে টাইম সাঁই মেডিকেল হল সে ডেটল-ওয়েটল- দাওয়াই যো চাহিয়ে লাগা লেনা প্যায়ের মে। সুঁই লাগানা হে তো ওহি লাগা লেনা। ইস সে ফির বুখার-উখার চড় যায়ে তো কাম চৌপাট। তব ম্যায়নে ফির সে তেরে লিয়ে  শেঠ কো কুছ না বলুঙ্গা। ইয়ে ম্যায়নে আজ সাফ বোল দিয়া। যা ঘর যা? কাঁহা গ্যায়া তেরা বাপ?”
সে কথাটা মকবুলও ভাবছিল। পায়ে পায়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসে এদিক ওদিক দেখল মকবুল। না শনু না আব্বু কাউকেই দেখতে পেল না মকবুল। শনুটারও হেনস্থা হল আজ তার জন্য। কোথায় যে গেল আব্বুর পেছন পেছন? চকের দিকে কয়েক কদম এগিয়ে ফুটপাথের একধারে ডান পা টা মেলে বসে পড়লো মকবুল। পায়ে অসহ্য ব্যাথা। হাঁটুটা ভাঁজ করতে পারছে না সে। মার খেয়ে নেতিয়ে পড়েছে। সারাদিনের পর খিদেও পেয়েছে প্রচুর। আর টানতে পারছে না সে। আবছায়ায় বসে বসে হঠাৎ মায়ের জন্য মনটা হু হু করে উঠল মকবুলের। কান্নাটাকে কিছুতেই থামাতে পারল না সে। বাঁ হাঁটুতে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠলো মকবুল।
হঠাৎই শুনল, “আরে বিচ মে বৈঠ গ্যায়া দেখ। আ বে হট না শালে। ফুতপাথ মে ভি চলনা মুশকিল হো গ্যায়ে হে ইয়েসব কে লিয়ে।” মাথা তুলে মকবুল দেখল বুটপরা দু-জোড়া পা ফুটপাথে ঠিক তার সামনে। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো সে। লোকদুটো চলে গেল ওর দিকে তাকাতে তাকাতে। ভাল করে চোখ-মুখ মুছে ডানদিক-বাঁদিক দেখতে দেখতেই দেখতে পেল আব্বু আসছে সাথে শনুও। রাস্তার আলো তাদের মুখে না পড়লেও দূর থেকে মানুষ দুজনকে চিনতে ভুল হয়না মকবুলের। ওকেও তারা দেখতে পেয়েছে। সোজা তার দিকেই আসছে।
ভয়ে ভয়ে আব্বুর দিকে তাকালো মকবুল। আব্বুর ভাগেরটা এখনো বাকি আছে তার। শনু বলে ওঠে, “তুমলোগ ইঁয়হি পে থোড়ি দের রুকো চাচা। ম্যায় আজ কা পেমেণ্ট লেকে আভি আয়া।”
“গোডাউন বন্ধ হ গ্যায়া শনু। সবকা পেমেন্ট কাল হোগা, মালিক চলা গ্যায়া আজ।”-মকবুল জানায় শনু কে।
“তুঝে ক্যায়া বোলা মালিক নে যানে কে টাইম পে?” প্রশ্নটা শনু করলেও আব্বুরও চোখে একই প্রশ্ন দেখতে পেল মকবুল। “কাল জলদি গোডাউন আনে কে লিয়ে বোলা হ্যায়। উসকা প্যায়সা এক মাহিনাকে অন্দর ওয়াপাস করনা হ্যায় ব্যাস”-আব্বুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে জানায় মকবুল। শনুর মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
আর মকবুলকে অবাক করে একটা পাতলা হাসি ফুটে ওঠে আসলাম শেখের মুখেও। মকবুল তাকিয়ে থাকে আব্বুর মুখের দিকে। আব্বু বলে ওঠে, “চল তবে, ও টাকা আমি রিসকা টেনে শোধ দিয়ে দুবো অনে। এখুন চ মেলার মাঠে বাজি দেখতে যাবি যে তোরা আজ? শনু বলেছে মোকে সব।” হাঁ করে তাকিয়ে থাকে মকবুল আব্বুর দিকে। তারপর শনুর দিকে তাকায়। শনু হাসছে মিটিমিটি। আব্বু বলে- “কি রে চল। রাত দশটা অবধি হবে রোশনাই। এরপর গেলে আর দেখতে পাবিনি। হাঁটতে হবেনি অতটা আর। তোরা ডেঁইরে থাক ইখানে। আমি ঝট করে রিসকাটা লিয়ে আসি। এই যাব আর আসব, ইস্ট্যান্ডে তালা মেরে এসেছি রিসকাটা।”
“ঘরে গিয়ে রান্না করতে হবে যে আব্বু। দেরি হবে।” অস্ফুটে বলে মকবুল।
“নাহ, আসার সময় আমাদের ইস্ট্যান্ডের পাশে জিতেন্দরের ঠ্যালা থেকে তিনটে এগরোল আনব ঠিক করেছি। পরে খিদা পেলে না হয় ঘরকে গিয়ে ভাত ভিজানো আছে, প্যাঁজ লঙ্কা মুলে খেয়ে লিলেই হবে। কি বল? শনু তু এগরোল খায়েগা না?”
শনু একগাল হেসে ঘাড় কাত করে।

মকবুলের চুলগুলোকে একটু ঘেঁটে দিয়ে পিঠে আলতো চাপড় দেয় আসলাম শেখ। বলে, “ডাঁড়া ইখানে দুজনে এট্টু। আমি এই যাবো আর আসবো।” মুখে আলতো হাসি নিয়ে দ্রুত পা চালায় আসলাম শেখ রিক্সা স্ট্যান্ডের দিকে। শহরের হলদে আলোর নিচে দাঁড়িয়ে মকবুল দেখে তার আব্বুর দ্রুত মিলিয়ে যাওয়া অবয়ব। পাশ থেকে শনুর চোখে পড়ে তার বন্ধুর চোখে এক ফোঁটা টলটলে জল রাস্তার আলোয় চকচক করছে। বাঁ হাতটা দিয়ে মকবুলের ডান হাতটা জড়িয়ে ধরে শনু।                     

(শেষ)
দীপাবলি  
অর্পিতা চ্যাটার্জী 



0 comments:

Post a Comment