Wednesday 3 December 2014

কৈফিয়ৎ ও জগদ্ধাত্রী পুজো

গত একমাস যাবৎ ঘাপটি মেরে থাকার পর আজ আবার ইচ্ছেখাতার পাতায় ভুস করে ভেসে উঠেছি। যদিও এই একমাস এর সবকটি দিনই আমায় প্রচন্ড ব্যস্ত থাকতে হয়নি তাও আমি কষ্ট করে এক অাধ দিনের জন্য আর ভেসে উঠতে চাইনি আর কি। একমাসের বেজায় হুল্লোড়বাজি ছেড়ে আজ থেকে আবার নিজের কূয়োতে প্রত্যাবর্তন করেছি তো তাই আবার পুরনো বন্ধুর কাছে গত একমাসের গল্পের ঝাঁপি নিয়ে হাজির হয়ে গেছি। কি বললেন? কি করলাম এই একমাস? আরে কি করিনি তাই বলুন। দাঁড়ান গুছিয়ে বসি।  হ্যাঁ, এবার লিস্টি রেডি। বলছি। 'মুসকান' এর কুঁচোগুলোর সাথে একটা অনবদ্য দেওয়ালী কাটিয়ে গত ২৮শে অক্টোবর আমরা দুজনে দুটো খালি ব্যাগ নিয়ে কলকাতা রাজধানী চেপে সো ও ও ও ও জা যে যার বাড়ি গেছি। খালি ব্যাগ কেন? সোজা তো। বাড়ি থেকে ফেরার সময় যাতে ভর্তি করে আনতে পারি সেজন্য। তারপর তো দেদার মজা। পয়লা নভেম্বর জগদ্ধাত্রী পুজো ছিল। আমাদের বাড়িতে প্রায় শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে জগদ্ধাত্রী পুজো। আক্ষরিক অর্থেই শতাধিক বললাম। কারণ শুনেছি দাদুর বাবার পাঁচ বছর বয়স থেকে চলে আসছে এই পুজো। দাদু মারা গেছেন ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে। তখন তাঁর বয়স ছিল বিরাশি-তিরাশি বছর। সুতরাং তিনি বেঁচে থাকলে তাঁর এখন বয়স হত ১১৯ বছর। তাঁর বাবার পাঁচবছর বয়সের পুজো মানে আরো ধরে নেওয়া যাক কুড়ি বছর। সুতরাং কাক্কেশ্বরের হিসেব অনুসারে প্রায় একশ চল্লিশ বছরের পুজো। আমাদের রাবনের গুষ্ঠির প্রতিনিধিরা মোটামুটি বছরের এই সময়টা যে যার কূয়ো ছেড়ে এই একশ চল্লিশ বছরের বৃদ্ধা মা জগদ্ধাত্রী আর পারিবারিক হ্যা হ্যা হি হি র টানে লোটা কম্বল নিয়ে আমাদের বাড়িতে গুটি গুটি হাজির হয়। সেই চার পাঁচ দিন একই বিছানায় গুঁতোগুঁতি করে শুয়ে-সকাল থেকে স্নানের লাইন দিয়ে-পুজোর পর প্রসাদ খাওয়া নিয়ে বাচ্চাদের মত হইচই করে ছোটোপিসিমার ঘাড় ভেঙ্গে মিষ্টি-সিঙ্গারা খেয়ে মনেই পড়ে না যে আমি হরিয়ানার জঙ্গুলে গবেষণাগারে সারা বছর ধরে নানা হাস্যকর পরীক্ষা নিরীক্ষার ভান করি। আর প্রতিপদে অকৃতকার্য হয়ে চূড়ান্ত হতাশায় গুরগাঁও গিয়ে pizza খাই আর মোটা হই। যাই হোক, আজ আর এসব বাজে কোথায় সময় নষ্ট করব না। পুজোর শেষে মন খারাপের সুযোগ কিন্তু এবছর ছিল না।  কারণ, পুজোর পরই গেলাম বালিপুর। হুগলী জেলা। একটা দুর্দান্ত দুদিনের ভ্রমণ হলো। সেখানকার গল্প পরের দিন বলছি। বালিপুর থেকে ফিরে এখানে এলাম এবং তখনও কোনো মন খারাপ হলো না বরং আনন্দে নাচতে নাচতে ফিরে এলাম। কারণ সঙ্গে বাবা। বাবাকে আমরা দুজনে এবার "যেতেই হবে" বলে প্রায় হাইজ্যাক করে নিয়ে চলে এসেছিলাম। বাবার সাথে weekend এ গেলাম দিল্লির নতুন সংযোজন অক্ষরধাম মন্দির, যা বাবার দিল্লি বাসের সময় ছিল না। সাথে ফাউ হুমায়ুনের সমাধি। বাকি দিল্লি বাবার চেনা। তাই আর রাস্তায় সময় নষ্ট না করে ভুরিভোজ হলো গুছিয়ে। সেসব গল্পও ধীরে ধীরে বলবখন। তারপর আমরা তিনজনে পরের সপ্তাহান্তে গেলাম জয়পুর। সেসব গল্পও পরে হবেখন। দুদিনে জয়পুর চষে বেরিয়ে সোমবার সকালে ব্যাক টু কূয়ো। আরও খারাপ খবর হলো ঠিক তার পরের দিন অর্থাত মঙ্গলবার বাবা ব্যাক টু বাড়ি। আর আমরা দুই মক্কেল কাল সন্ধ্যেয় বাবাকে নিউ দিল্লি স্টেশন এ তুলে দিয়ে আবার গুটি গুটি পায়ে খোঁয়াড়ে ফিরে এসেছি। মুখ চুন করে মুরগি সেদ্ধ আর রুটি গিলে ঘুমিয়ে পড়েছি। আজ আবার ল্যাবে এসে পুরোনো ভ্যানতাড়ায় সময় নষ্ট করছি। এবছরের মত খেল খতম। পুরনো ছবি দেখে মন ভরাও। আর কি? এই আমার একমাস ডুব মেরে থাকার কৈফিয়ত। কৈফিয়ত সেরে আপনাদের জন্যে রইলো এই বছরের আমাদের জগদ্ধাত্রী পুজোর কটা ছবি।




0 comments:

Post a Comment