অষ্টমীতে সারা বিকেল সন্ধ্যে গুরগাঁওতে চক্কর কাটার পর আবার পরের দিন যে সারাদিন দিল্লীতে টৈ টৈ কতে পারব নিজের ওপর সে বিশ্বাস আমার ছিল না। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম যে দিল্লী রামকৃষ্ণ মিশনে যাব। সারাদিন ওখানেই পুজো দেখব আর বসে থাকব। কিন্তু আমি চাইলেই তো হবে না, না? আমাদের ভাগ্যে ছিল দিল্লির ঠাকুর দেখার। দেখলাম। সকালে বেরিয়ে আমরা প্রথমে কনট-প্লেস এর বার্কোস-এ গান্ডেপিন্ডে খেলাম। খেলাম না বলে সদা আমাদের খাওয়ালো বলা উচিত। বেচারা একাই বিল পে করলো। বার্কোস-এর সবকিছু আমার ভালো লেগেছে। মেনু-খাবারের স্বাদ-খাবারের পরিমান-খাবারের দাম-পরিবেশ সব কিছুই খুব সুন্দর। আমাদের মতন ভোজনরসিক কিন্তু পাতলা পকেটের মানুষদের জন্য লাগসই একেবারে। ধন্যবাদ সদা। দিল্লি গেলে দুপুরের কোথায় খাব আর ভাবতে হবে না এবার থেকে। নিজাম এর সাথে বার্কোসও যুক্ত হলো আমাদের লিস্টে। সদা সেদিন আমাদের খাওয়ালো- চিকেন থুকপা সাথে ক্রিসপি চিলি ল্যাম্ব। তারপর নুডলস সাথে জাম্বো সাইজের প্রণ ইন হট গার্লিক সস এবং স্লাইসড ল্যাম্ব ইন চিলি বিন সস। শেষে মিক্সড ফ্রুট ড্রিংক। নাম 'প্রিটি ওম্যান'।
 |
চিকেন থুকপা আর ক্রিসপি চিলি ল্যাম্ব |
 |
স্লাইসড ল্যাম্ব ইন চিলি বিন সস আর প্রণ ইন হট গার্লিক সস |
সুন্দর খাওয়া দাওয়ার শেষে 'সুন্দরী মহিলা'-কে পান করে একদম ফুরফুরে হয়ে গেল মন। বার্কোস থেকে বেরিয়ে কনট-প্লেস থেকে দুর্দান্ত একটা মিষ্টি পান খেয়ে অটো নিয়ে সোজা রামকৃষ্ণ মিশন। আমাদের ধারণা ছিল যে ওখানে দূর্গাপূজো হয়েছে। কিন্তু সে ধারণা ছিল পুরোপুরি ভুল। ভোঁ ভাঁ চারিদিক। সুতরাং সেখান থেকে ফের অটো নিয়ে চিত্তরঞ্জন পার্ক।
অটো থেকে নেমেই পিনাকী বলল এবার সব বাংলা। বলার সাথে সাথেই ডানদিক থেকে বাজখাঁই গলায় আওয়াজ-"বদমাইস ছেলে, ঠাস করে একটা চড় কষালে তবে ঠিক হবে, চল ঘরে চল।" দেখলাম পুজোরসময় নতুন খরখরে জামা পরে ঘাড় চুলকোতে চুলকোতে একটা হাতের জিম্মা মাকে দিয়ে মায়ের হাতের টানে প্রায় ঝুলতে ঝুলতে কান্না কান্না মুখ করে চলেছে সাত বছুরে আমার ছোটবেলা। বুঝলাম ঠিক জায়গাতেই নামিয়েছে অটোওয়ালা। অটো থেকে নেমেই গ্রেটার কৈলাস ২ এর পুজো। এদের কথায় GK-II, এরা যে কেন পুরো কথাটা বলে না কে জানে। কনট-প্লেস-কে CP, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট-কে CS- কি রে বাবা! প্রথম প্রথম আমার এই মান্ধাতার আমলের মাথা নিয়ে বুঝতেই পারতাম না কি বলছে। যাক যে যাক। গ্রেটার কৈলাস ২ এর পুজো খুব ভালো লাগলো। সদার দৌলতে একপেট খেয়ে কোল্ড ড্রিংক-এ চুমুক দিতে দিতে দারুন আড্ডা হলো। সদা গানও শোনালো। মনে হচ্ছিল আমাদের পাড়ার প্যান্ডেলে বসে আড্ডা দিচ্ছি।
 |
গ্রেটার কৈলাস-২ এর পুজো ও মন্ডপ |
 |
গ্রেটার কৈলাস-২ এর প্রতিমা |
সেখান থেকে কো-অপারেটিভ এর পুজো। এখানে থিম আন্ডার ওয়াটার। বেশ দেখতে মন্ডপ। দেখুন।
 |
কো -অপারেটিভ এর পুজো |
এখানে বসে গতবছর আড্ডা দিয়েছিলাম। এখানেও প্রচুর খাদ্যদ্রব্যের সম্ভার। কিন্তু বার্কোস তখনও পেটে গজগজ করছে। ঠাকুর দেখে বেরিয়ে আসার সময় মা দুগ্গা কে নমো করার সময় বললুম "মা গো, পেটের ভেতরের জায়গাটা আর এক ছটাক বাড়িয়ে দিলে না কেন মা? এই এত ভালো ভালো খাবার-দাবার দেখেও ঢেঁকুর তুলে চলে যেতে হচ্ছে। সেই তো কাল থেকে পান্ডব-বর্জিত জায়গায় গিয়ে ঘ্যাঁট রান্না করে খেতে হবে নয়তো কবে গুরগাঁও যাওয়া হবে সেই দিকে হাঁ আ আ আ করে তাকিয়ে বসে থাকতে হবে। বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে জুলজুল চোখে খাবারের স্টলগুলোর দিকে তাকাতে তাকাতে কো-অপারেটিভ এর পুজো প্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে এলাম। পরবর্তী গন্তব্য চিত্তরঞ্জন পার্ক কালিবাড়ির পুজো। এও বেশ জাঁকজমকের পুজো। মেলা বসেছে পুজোর সাথে। সাবেকি প্রতিমা। সুন্দর মন্ডপ সজ্জা।
 |
চিত্তরঞ্জন পার্ক কালিবাড়ির পুজো |
 |
কালিবাড়ির প্রতিমা ও কালী মন্দির |
তারপর ভেবেছিলাম মেলাগ্রাউন্ড এর পুজোটাও দেখে ফিরব কিন্তু সেটা আর হলো না। সদাকে যেতে হবে সদার বন্ধুর বাড়ি। আমরাও ল্যাংবোট। তার সাথে দেখা করে, তার মেয়ের মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে, তাঁদের বাড়িতে কলকাতা থেকে আনা ইয়া বড় বড় ক্ষীরকদম খেয়ে আমরা অটো ধরে মেট্রো স্টেশন। সেখান থেকে মেট্রো আর তারপরে ডমিনোস এর pizza বগলে অটো ধরে বাড়ি। মাঝে অবশ্য প্রিপেইড অটো স্ট্যান্ডে ট্রাফিক পুলিশত্রয়কে আমাদের রিসার্চ সম্পর্কে তিনজন মিলে বিস্তর জ্ঞান প্রদান করেছিলাম। সে গল্প পরে একদিন করা যাবেখন।
এই হলো আমাদের এই বছরের পূজা পরিক্রমা। দশমীর দিন কি আর করব, মিষ্টিমুখ তো করতেই হবে। বাঙালি বলে কথা। এই ধ্যাদ্দেড়ে গোবিন্দপুরে তো জিরে কিনতে গেলেও তিনকিলোমিটার গাড়ি করে যেতে হয়, তা মিষ্টি পাব কোথায়? তাই বাড়িতেই পান্তুয়া-ল্যাংচা-নারকেল নাড়ু-কুঁচো নিমকি বানিয়ে নিয়ম আর রসনা রক্ষা করতে হলো। সেই পান্তুয়া-ল্যাংচা এখন রাত-বিরেতে খিদে পেলে পিত্তরক্ষার দায় সামলাচ্ছে ফ্রিজ আলো করে বসে। এই দেখুন।
শুভ-বিজয়া জানাই সক্কলকে। সবাই খুব ভালো থাকবেন। টা টা।
এই লেখার সমস্ত ছবি পিনাকীর সৌজন্যে।
Sob bangalir pujoe duto jinis chai, jomie khaoa aar aada.
ReplyDeleteEkdom thik Anusia. khaoa daoa ta thik thak na hole aar ki roilo jibone tai na? aae adda to must.
Delete