Monday 2 April 2018

হাচিকোপুরান/পর্ব-২/হাচিকোর দোলযাত্রা

দোলের দিন বৈকাল, হাচি আসিয়াছে দিদির বাড়ি-

দিদিঃ হ্যাঁ রে হাচি, সবাই রঙ খেললো তোকে কেউ রঙ দিলো না একটুও?

হাচিঃ না না। ওসব রঙ মাখামাখির মধ্যে আমি নেই। হ্যাঁ তবে ওই রঙের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কিসব খাচ্ছিলো দেখলুম, ওটা বেশ ভাল ছিল।

দিদিঃ কি, ও গুজিয়া? তুই খেলি বুঝি? কে দিলো?

হাচিঃ এঁহ, কে আবার দেবে? তোরা যেন আমার জন্যে মিষ্টির দোকান খুলে বসে আছিস? টেবিলের নিচে একটা পড়ে গেছিল, তা গুঁড়ি মেরে টেবিলের তলায় ঢুকে একটা কামড় বসিয়েছি কি বসাইনি, ছিটেলগুলো জলের বালতি নিয়ে তাড়া করলো মাইরি!

দিদিঃ জলের বালতি? ধুর গাধা, রঙের বালতি বল। আর হ্যাঁ, কতবার তোকে বলেছি এসব মাইরি টাইরি বলবি না আমার সামনে। আমার ভাল্লাগেনা।

হাচিঃ কেন বললে কি হয়? মাইরি মানে কি রে?

দিদিঃ তুই মানে না জেনেই বেতালার মতন কথাটা বলে যাচ্ছিস? বলতে বারণ করছি বলবিনা ব্যস। আচ্ছা বেয়াদব কুকুর তো।

হাচিঃ আবার? আবার কুকুর বলছিস আমায়? আমি কুকুর?

দিদিঃ কুকুর না তো কি তুমি? ছাগল কোথাকার।

হাচিঃ উফ এই জন্যেই বলি তোদের এই দুপেয়ে মানুষগুলোর মাথার ঠিক নেই। পিত্তের দোষ, সব পিত্তের দোষ। আগে  ঠিক কর আমায় কুকুর বলবি না ছাগল। যদিও কোনোটাই আমি নই।

দিদিঃ তবে তুমি কি? গাধা কোথাকার।

হাচিঃ অই দেখ! সাধে বলছি পিত্তের দোষ। আমি হলুম গে চারপেয়ে মানুষ।

দিদিঃ হ্যাঁ রে গাধা! তবে পেছনে ওই কালো লম্বা পানা ওটি কি? খাবারের গন্ধেই নড়তে থাকে?

হাচিঃ ওটিই তো তোর সাথে আমার তফারেন্স। তোর নেই আমার আছে। দুপেয়ে মানুষদের থাকে না। চারপেয়ে মানুষদের থাকে। বুঝলি?

দিদিঃ এই দাঁড়া দাঁড়া দাঁড়া দাঁড়া দাঁড়া!  কি বললি?

হাচিঃ (ঘাবড়ে গিয়ে) কি বললুম আবার?

দিদিঃ তোর সাথে আমার কী?

হাচিঃ কি?

দিদিঃ তোর সাথে আমার কী বললি?

হাচিঃ অ, ওইটা? 'তফারেন্স'। মানে বুঝলি না তো? কিই যে পড়াশুনা শিখেছিস? কিছুই তো জানিস না।  তফারেন্স মানে হল তফাৎ,  ডিফারেন্স। 

দিদিঃ মানে টা কি? তুই একটা শব্দের অর্ধেকটা বাংলা আর অর্ধেকটা ইংরাজি করে বলবি? আবার বলবি আমি পড়াশুনা জানি না! আশ্চর্য তো!

হাচিঃ কেন হবে না কেন? সবকটা দুপেয়ে কে দেখি, অর্ধেকটা বাংলা আর অর্ধেকটা ইংরাজি মিশিয়ে কথা বলে। তুই ও তো বলিস- "বোরড লাগছে রে হাচি"(ভেঙচিয়ে), বলিস না? বল সত্যি কথা। কেন 'মনখারাপ করছে' বলতে পারিস না? আর আমি বললেই দোষ?

দিদিঃ দুটো ব্যাপার এক নয়। তুই ওরকম একটা শব্দে দুটো ভাষা মেশাতে পারবিনা ব্যস।

হাচিঃ আরে সেটাই তো শুধুচ্ছি রে ছিটেল কোথাকার। কেন? কেন পারব না? একটা বাক্যে দুটো ভাষা মিশতে পারলে একটা শব্দে পারবে না কেন? আমি তো ভাবছিলুম বাংলা, হিন্দি, মালায়লম আর ইংরাজি মিশিয়ে একটা ভাষা বানালে কেমন হয়?

দিদিঃ দুর্দান্ত হয় রে ছাগল। পরের বছর ভাষাদিবসে তোকে সাহিত্যে নোবেল আর ভারতরত্ন মিশিয়ে নোভেলরত্ন দেবে রে পণ্ডিত এজন্য।

হাচিঃ কয়েকটা শব্দের মানে যদিও এখন বুঝতে পারলুম না তবু মনে হচ্ছে কটু কথাই বলছিস। কেন রে? আমরা চারপেয়ে মানুষদের নতুন ভাষা। ভাল হবে না বল?

দিদিঃ আহা শুনে কানে বাতাস লাগল। এঁড়েতক্ক করবিনা হাচি। এসব গাধামি বাদ দাও। এসব হয়না।

হাচিঃ এই তোদের ছিটেল দুপেয়েগুলোর দোষ, জানিস তো। যা আজীবনকাল থেকে চলে আসছে, তাতে একটু কিছু অন্যরকম হলেই পাগলা জগাই এর মতন তেড়ে আসিস। কোথায় সবাই মিলে দেখবি ব্যাপারটা কিরকম দাঁড়াচ্ছে, তা না। পরে খারাপ লাগলে নাহয় ত্যাগ দিবি। এই যেমন আমি, মাংস ছাড়া অন্য কিছু আমাদের শাস্ত্রে খাওয়া মানা। তাবলে কি আমি তোর সাথে গরমকালে তরমুজের টুকরো চুষে দেখিনি? দিব্য খেতে, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা।  যাক গে যাক।  এসব তোরা দুপেয়েরা বুঝবি না। কাজের কথাটা শুধোই। ওই যে কি যেন একটা তক্ক বললি, ওটা কি রে? বলতো আরেকবার।  নোটবইতে টুকে রাখি। নতুন বাংলা শব্দ, এটা জানি না।

দিদিঃ এঁড়ে তক্ক, মানে এঁড়েতর্ক।

হাচিঃ এঁড়ে?  মানে ড এ শূন্য ড়?

দিদিঃ হ্যাঁ।

(চলবে)

0 comments:

Post a Comment