Monday 15 April 2019

অসমাপ্ত শত্রূতা



যাক আর কোনো ভয় নেই।  ঘাড়ের বাঁ দিকের ছোট্ট টিউমারটার সার্জিকাল রিমুভালের পর ডাক্তার তাইই বলেছিলেন অ্যাটর্নি মার্ক গরম্যানকে। মেলানোমা, বিশ্রী ধরণের স্কিন ক্যান্সার ছিল গরম্যানের। এরপর কেটে গেছে কোনো ঘটনাহীন আটটা বছর। ১৯৯৮ সাল। রুটিন ডাক্তারি চেক আপ এ গেছেন গরম্যান। পরীক্ষার পর ডাক্তারবাবুর ভ্রূ রীতিমত কুঁচকে উঠল। জিজ্ঞাসাই করে বসলেন, কি ব্যাপার মিস্টার গরম্যান, আপনার কি হঠাৎ পানাসক্তি ভীষণ বেড়ে গেল নাকি? পুরোনো মেলানোমা টিউমারটি বিশ্রী ভাবে তার রাজ্য বিস্তার করেছে গরম্যানের লিভারে। আশেপাশের অন্য অঙ্গেও ছড়ানোর চেষ্টা করছে। সাংঘাতিক প্রাণঘাতী এই মেলানোমা। ছড়িয়ে পড়লে, রোগ ধরাপড়ার ছয় থেকে দশ মাসের বেশি সময় দেয় না যুঝবার। গরম্যানের তখন সবে ঊনপঞ্চাশ। কেমন শান্ত হয়ে গেলেন গরম্যান।পৃথিবীর রূপ রস এত সীমিত ছিল তাঁর জন্য? 
বোনের কাছ থেকে খবর পেলেন হঠাৎ, কলোরাডোর কোন এক হাসপাতাল নাকি মেলানোমার চিকিৎসায় চলতি কেমোথেরাপির সাথে নতুন কি এক ওষুধ ব্যবহার করছে নাম ইন্টারলিউকিন-২, ডাকনাম-আইএল-২। ডুবন্ত মানুষের কুটোও ভরষা। পত্রপাঠ গোরম্যান মেরিল্যান্ড থেকে কলোরাডোর টিকিট কাটলেন। গোরম্যান যতক্ষণে কলরাডো পৌঁছবেন ততক্ষনে চট করে আমরা অন্য একটা গল্প একটু শুনে নিই কেমন? গল্পটা আইএল-২ এর। 

আমাদের শরীরের অসংখ্য ধরণের প্রোটিন থাকে। তাদের প্রত্যেকের জন্য নানান রকম নির্দিষ্ট ধরণের কাজ রয়েছে। আর তার ফলেই আমি, আপনি বা গরম্যান সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে চলে ফিরে বেড়াতে পারি। আর তার ভগ্নাংশের ভগ্নাংশ পরিমান এদিক ওদিক হলেই গন্ডগোল। হ্যাঁ এতটাই নিয়ন্ত্রিত আমাদের নিজেদের শরীর। এখন, এই আইএল-২ বস্তুটি কি? আইএল-২ হল এই অজস্র প্রোটিনের মধ্যে একধরণের প্রোটিন, যা কিনা তৈরী হয় টি-লিম্ফোসাইট বলে একধরণের শ্বেত রক্তকণিকা থেকে। এইরকম আরো নানান আইএল প্রোটিন আছে। সারা শরীরে নানা কাজে তারা ভীষণ ব্যস্ত। খুব সহজে বললে, এই আইএল-২ যদি শরীরে বেশি পরিমানে ঢোকানো যায় তবে উল্টে তারা এই টি-লিম্ফোসাইটকেই বেশি করে সক্রিয় করে তোলে। তা এই টি-লিম্ফোসাইট বেশি সক্রিয় হলে কি এমন হাতি-ঘোড়া লাভটা হবে শুনি? হাতি-ঘোড়া কি বলছেন মশাই? একেবারে ঐরাবৎ বা উচ্চৈঃশ্রবা বলা যেতে পারে। টি-লিম্ফোসাইট হল আমাদের শরীরের সেই মহার্ঘ্য কোষ যা আমাদের শরীরের কোয়ালিটি কন্ট্রোলার। শরীরের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো রকম কোষকে খুঁজে নিয়ে তাকে বেমালুম গিলে ফেলে সে। অবশ্য চিনে নেবার জন্য আরো অন্যান্য বন্ধু বান্ধবদের সাহায্য লাগে। মানে অন্যান্য ধরণের রক্তকণিকাদের আর কি। সেসব এখন বাদ থাক বরং। গিলে ফেলার পর কি হল বলি। তারপর সেই গিলে ফেলা দুষ্টু কোষকে এক্কেবারে কীচক বধের মতন কুচি কুচি করে নষ্ট করে ফেলে, তাকে আমাদের শরীরের ডাস্টবিনের মধ্যে ফেলে, তবে তাদের ছুটি। হ্যাঁ রে বাবা আমাদের শরীরে প্রতিটি কোষে অসাধারণ একটি রিসাইকেল বিন সিস্টেমও আছে তো। আচ্ছা সে গল্পও নাহয় পরে হবে। আপাতত গরম্যানে ফিরতে হবে। তাহলে কি দাঁড়ালো? আইএল-২ বেশি থাকলে, টি-লিম্ফোসাইট বেশি করে এই আপদ বিদায়ের কাজটি করতে পারবে। সে বাইরে থেকে শরীরে ঢোকা বিচ্ছু জীবাণুই হোক বা গরম্যানের মতন বিগড়ে যাওয়া নিজের শরীরের কোষই হোক। এই আইএল-২ থেরাপি কাজ করেছিল গরম্যানের শরীরে। প্রায় পনের বছর গরম্যান ক্যান্সার ফ্রি জীবন কাটালেন। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করা ছাড়া আর কিই বা করার ছিল তাঁর।  গোরম্যানের নিজের ভাষায় বললে, “Some doctors say my immune system is really smart, I just know I'm lucky.” 

এই আইএল-২ দিয়ে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে (ইমিউন সিস্টেম) ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র করার পদ্ধতিটিই  ইমিউনোথেরাপি (immunotherapy) হিসেবে ১৯৯২ তে প্রথম FDA (Food and Drug Administration) র মান্যতা পায়। সকলের শরীরের ইমিউন সিস্টেম সমান ভাবে সক্রিয় নয়, সুতরাং গরম্যানের শরীরে আইএল-২ কাজ করলেও আমার আপনার শরীরেও যে ঠিক একইরকম ভাবে কাজ করবে তার তো কোনো স্থিরতা নেই না। সুতরাং আরো অন্য অন্য ইমিউন ফ্যাক্টর খুঁজে বের করতেই হবে। মেলানোমা ছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও ইমিউনোথেরাপির হাতিয়ার অন্য কোনো প্রোটিন। সুতরাং এই ক্যান্সার-ইমিউনোথেরাপি তে রিসার্চ, ইনভেস্টমেন্ট হু হু করে বাড়তে শুরু করল।তার পরবর্তী প্রায় একদশক কেটে গেছে আরো নতুন ইমিউন প্রোটিন খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু গরম্যানের মতন সাফল্য কোনোটাতেই আর আসেনি। বহু কোম্পানি, বহু সায়েন্টিফিক গ্রান্ট ব্যয় করেও কেবল হতাশারই ইতিহাস।

ইমিউনোথেরাপির আসল ইতিহাসের শুরু কিন্তু এর অনেক অনেক আগে। ১৮৯১ এর আগেই  ডাক্তাররা নজর করেছেন যে, কোনো ইনফেকশন হলে রহস্যজনক ভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের প্রকোপ কমে যাচ্ছে। ১৮৯১ সালে, নিউয়র্কের সার্জেন ড: উইলিয়াম কোলে (William Coley) সেই অবজার্ভেশনের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে প্রথম রোগীদের টিউমারে ব্যাকটেরিয়া ইনজেকশন শুরু করেন। তাঁর আশা ছিল এই যে, বাইরের ব্যাকটেরিয়ার জন্য শরীরের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং সেই সক্রিয় ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়ার সাথে সাথে একই সঙ্গে টিউমারকেও ধ্বংস করবে। এইটি ছিল প্রথম পদক্ষেপ আজকের এই বিশাল ক্যান্সার ইমিউনোথেরাপির জগতের। যদিও কোলের প্রচেষ্টা ছিল এক্কেবারেই একক। এবং সব চাইতে বড় কথা, ব্যাপারটা এতটা সোজা নয়। ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হল আর গপ করে ক্যান্সার কোষকে গিলে ফেলল, তা হয় নাকি? মনে করুন আপনার বাড়িতে চোর এলো। আর আপনার কুকুর তাকে চিনে ফেলে চেঁচাতে লাগলো এবং আপনি বন্দুক নিয়ে চোরকে আটকে দিলেন, আর চোর ধরা পড়ে গেল। এতই সোজা নাকি? চোর প্রথমেই এসে কুকুর আর ওই বন্দুকটার ব্যবস্থা নেবে তারপর নিজের কাজ শুরু করবে। ইমিউন সিস্টেম যেমন স্মার্ট, ক্যান্সার কোষ গুলি তার এক কাঠি বাড়া। তারা প্রথমেই নিজেদের এমনভাবে আড়াল করবে যাতে আপনার টি-লিম্ফোসাইট তাকে চিনতে না পারে। তারপর টি-লিম্ফোসাইট যাতে কাজ করতে না পারে তার জন্য কিছু প্রোটিন নিজের শরীরে তৈরী করবে ঢাল হিসেবে। মানে ওই কুকুর আর বন্দুকের কাজটাকে অকেজো করে দেওয়া আর কি। তার পর শুরু করবে নিজের বিধ্বংসী কাজ। তা এইসব বজ্জাত গুন্ডা প্রোটিন, যারা টি-লিম্ফোসাইটকে আটকে ক্যানসারকে বাড়তে সাহায্য করে, তাদেরকে কোনোভাবে আটকে দেওয়া যায় কিনা, ধ্বংস করা যায় কিনা তার প্রচেষ্টা চলছিলই অনেকদিন ধরে। এইরকম একটি ঢালস্বরূপ প্রোটিন হলো CTLA -4. অনেক বছরের অনেক ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর শেষে ২০১১ সালে FDA এই CTLA-4 কে নষ্ট করতে পারে এমন একটি ড্রাগকে বাজারে আসার অনুমতি দিল। বাজারে এল প্রথম ইমিউনোথেরাপিউটিক ড্রাগ Yervoy (ipilimumab)। 

অর্থাৎ ব্যাপারটা হল এরকম, শরীরের কোনো কোষ ক্যান্সার কোষে পরিণত হলে টি-লিম্ফোসাইট তাকে নষ্ট করতে ছুটে আসবে, ইতিমধ্যে ক্যান্সার কোষ এই CTLA-4 এবং আরো অন্য সব ঢাল বাগিয়ে বসে আছে টি-লিম্ফোসাইটকে আটকাবে বলে। ফলে টি-লিম্ফোসাইট আর নিজের কাজ করতে পারছে না। এমতাবস্থায় যদি Yervoy (ipilimumab) এর মতো কোনো ড্রাগ রোগীর শরীরে দেওয়া যায় তবে CTLA-4 কে আটকে টি-লিম্ফোসাইট আবার তার নিজের মত করে ক্যান্সার কোষ নষ্ট করতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা Yervoy এর লম্বা কার্যকারিতা। Yervoy নিয়ে তেরো বছর পর্যন্ত মেলানোমার রোগী নিরাপদ নিরাময় পেয়েছেন এই উদাহরণও আছে। সমস্যা হল অন্য জায়গায়।Yervoy কাজ করল মাত্র আট শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে। কারণ সকলের ইমিউন সিস্টেম সমান নয়। এবং CTLA-4 ছাড়াও আরো ঢাল আছে ক্যান্সার কোষের নিজেকে বাঁচাতে। এমনকি পনেরো শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সাইড এফেক্ট দেখা গেল Yervoy নেবার পর। কারণ, কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার কোষের সাথে সাথে সাধারণ নয় কোষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে এই Yervoy। এখন উপায়? 

CTLA-4 এর মতোই ক্যান্সার কোষের আরো একটি ঢাল হল PDL-1।  প্রথম থেকেই কিছু গবেষক CTLA-4 এর সাথে সাথে PDL-1 এর বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। Yervoy বাজারে আসার পাঁচ- ছয় বছরের মধ্যে এলো Nivolumab, PDL-1 এর কার্যকারিতার বিরুদ্ধ ড্রাগ। PDL-1 ইনহিবিটর, Nivolumab এর সুবিধা হলো, এটি  CTLA-4 ইনহিবিটর , Yervoy চেয়ে অনেক অনেক কম ক্ষতিকর নন-ক্যান্সার সাধারণ কোষের জন্য। অর্থাৎ এটি সাধারণ কোষের মধ্যে থেকে আরো ভালোভাবে ক্যান্সার কোষ কে খুঁজে নিয়ে তার PDL-1 প্রোটিনকে নষ্ট করে। এখন, CTLA-4 ইনহিবিটর এবং PDL-1 ইনহিবিটর, দুটোর মিলিত শক্তি আরো ভালো ভাবে সমর্থ হল ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে। ইমিউনোথেরাপিতে সাড়া দিলেন আরো বেশি সংখ্যক রোগী। সাফল্যের হার আরো একটু বাড়লো। এখন ক্যান্সারে ব্যবহৃত অন্য কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপির সাথে মিলিয়ে এই দুটি ইনিবিটরকে ব্যবহার করার চেষ্টা শুরু হল। মানে ব্যাপারটা দাঁড়ালো এরকম যে, অন্য এন্টিক্যান্সার ড্রাগগুলি শরীরে ঢুকে ক্যান্সার কোষকে মারবে, রেডিয়েশন থেরাপি ক্যান্সার কোষকে মারযেও সাথে সাথে ইমিউন ফ্যাক্টর গুলোকে টেনে ক্যান্সার এর জায়গায় নিয়ে আসবে। এবার এর সাথে CTLA-4 এবং PDL-1 ইনহিবিটর দিয়ে ক্যান্সার কোষের CTLA-4 এবং PDL-1 কে ধ্বংস করে তার চারপাশে নির্মিত সুরক্ষাবলয়টিকেও যখন ভেঙে দেওয়া হল তখন, শরীরের টি-লিম্ফোসাইটও তার সাথে হাত লাগালো ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে। এখন কিন্তু সাফল্যের হার আরো অনেক বেশি বেড়ে গেল। তবুও কিন্তু সমস্যা একটা রয়েই গেল, এই নানান কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন বিভিন্ন রোগীর শরীরে বিভিন্ন রকম কাজ করে, এদের নানান সাইড এফেক্টগুলো তো রয়েই গেল।কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশনের অফ টার্গেট এফেক্টের জন্য তারা ক্যান্সার কোষ ছাড়া কিছুটা হলেও সাধারণ কোষকে নষ্ট করে তার ফলে টিউমার সাইজ ছোট হয়ে বা অনেক ক্ষেত্রে মিলিয়ে গেলেও অনেকের ক্ষেত্রেই তারা আবার ফিরে এলো, বা অন্য শারীরিক সমস্যা শুরু হল। যে সমস্যার সমাধান এখনো পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। পরবর্তী ধাপের চ্যালেঞ্জ এইটাই। গবেষকরা নানান দিক থেকে এই সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনো সময় আসেনি সেই গল্প লেখার। হয়ত আরো পাঁচ বা দশ বছর পর আমাদের মুখে হাসি ফুটবে। আসার কথা এই যে, চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া রোগীর শতকরা অনুপাতটা এখন অনেক অনেক বেশি। 

এর মধ্যে একটি প্রজেক্টের কথা না বললেই নয়। সেটি হলো, এডাপ্টিভ টি-সেল থেরাপি। মেরিল্যান্ডে ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক ড: স্টিভেন রোজেনবার্গ একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করলেন, যেখানে ক্যান্সার রোগীদের শরীর থেকে তাদের টি-লিম্ফোসাইট এবং খানিকটা ক্যান্সার কোষ বের করা হল। তারপর ওই টি-লিম্ফোসাইটের মধ্যে থেকে যারা ওই রোগীর ক্যান্সার কোষকে মারতে পারে তাদের বেছে নিয়ে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হল। তারপর সেই কোষগুলিকে ওই যে প্রথমে বলেছিলাম আইএল-২ (গরম্যানের চিকিৎসায়), তাই দিয়ে এক্টিভেট করে আবার রোগীর শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। এবং এই যাত্রায় ড:রোজেনবার্গ প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মেলানোমা রোগীর টিউমার কমিয়ে দিতে, এমনকি কুড়ি শতাংশের সম্পূর্ণ নিরাময় করে দিতে সমর্থ হলেন।১৯৯৮ এ যখন গোরম্যানের চিকিৎসা শুরু হয় তখন মেলানোমা রোগীর আয়ু ছিল খুব বেশি হলে একটি বছর।  যাত্রাটা বড় কম দিনের ছিল না,  প্রায় দুই দশক। 

এডাপ্টিভ টি-সেল থেরাপির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল টেকনিক্যালিটি। রোগীর দেহ থেকে টি-সেল বের করে এনে- ঝেড়ে -বেছে -এক্টিভেট করে আবার রোগীর দেহে সুষ্ঠ কোষগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যে অনেক গুলো টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জ আছে।  ফলত চিকিৎসার খরচ বাড়ে এবং সাফল্যের হার একটু হলেও কমে। 

আরো একটি বিষয় হল, সমস্ত রকম ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি কাজ করবে না। কারণ খুব সোজা, আপনার টি-লিম্ফোসাইটকে তো ক্যান্সারের জায়গায় পৌঁছতে হবে, তবে তো ক্যান্সার কোষ সেই টি-লিম্ফোসাইটের বিরুদ্ধে CTLA-4, PDL-1 বা অন্য প্রোটিন দিয়ে নিজের চারপাশে সুরক্ষা বলয় তৈরী করবে, আর তখন আপনি এইসব প্রোটিন এর বিরুদ্ধে ইনহিবিটর ব্যবহার করে সেই সুরক্ষাবলয় ভেঙে টি-লিম্ফোসাইটকে জায়গা করে দেবেন ক্যান্সার কোষকে মারার। এখন টি-লিম্ফোসাইট যদি নাই পৌঁছায় তবে তো এই অস্ত্রে যুদ্ধে জেতা যাবে না মশাই। তখন অন্য উপায় ভাবতে হবে। সে আবার অন্য গল্প। কিন্তু হ্যাঁ, দুই দশকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা গবেষণার পরে মেলানোমা, কিডনি বা ফুসফুসের ক্যান্সারের মতন ইমিউন কোষের সহজ বিচরণ ভূমি যেসব ক্যান্সার, তাতে এই ইমিউনোথেরাপি নিঃসন্দেহে দিনবদলের খবর এনেছে।

আর সেই দিনবদল হয়েছে কাদের হাত ধরে জানেন? এই দুই দশকের যাত্রাপথের প্রধান দুই কান্ডারী কারা বলুন দিকি? নিশ্চয়ই তাঁদের নাম আপনি জানেন। মানে খবরের কাগজে, টিভিতে দেখেছেন। আচ্ছা বলছি, জেমস এলিসন (James P Allison) আর তাসুকু হানজো (Tasuku Hanjo) এই নাম দুটো নিশ্চয়ই আপনার চেনা? তাই না? গতবছর মানে, ২০১৮ তে ফিজিওলোজি এন্ড মেডিসিনে নোবেলটা এঁনাদের দুজনের নামেই লেখা হল যে। সেই কোন ১৯৯০ সাল নাগাদ CTLA-4 এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন এলিসন, আর PDL-1 বিরুদ্ধে হানজো। তারপর তো ইতিহাস।  

১৯৯৮ এর গরম্যানের গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম। যখন তাঁর খাতায় কলমে আয়ু ছিল মাত্র এক বছর, ২০১৪-র সেই একই গোরম্যানের কথা বলি। গরম্যান ২০১৪-তে বারবার দুঃখ করেছেন যে মেলানোমা সাপোর্ট গ্রূপে পাওয়া তাঁর এক বন্ধুও যদি তাঁর সাথে ইমিউনো থেরাপির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নাম লেখাতেন। তাঁর অন্য আর এক বন্ধুর কাহিনী অবশ্য একদম বিপরীত। তিনি CTLA-4 ইনহিবিটর, Yervoy ট্রিটমেন্টে সম্পূর্ণ নিরাময় পেয়েছেন। গরম্যানের নিজের মেলানোমা? প্রতি দুই বছর অন্তর স্ক্যান করা হয়। এখনো কোনো সমস্যা নেই তাঁর। তাঁর নিজের ভাষায়, “My immune system has it under control.” 


'KNOCK CANCER OFF THE BOARD' 




   
         
   


















               


     

0 comments:

Post a Comment