Friday 13 February 2015

সার্কাস-১

গত তেইশে জানুয়ারী আমার জীবনের প্রথম ভ্রমনের ছোট্ট একটি গল্প আপনাদেরকে শুনিয়েছিলাম। সেটি একান্ত সম্পর্কহীন নিছকই একটি স্মৃতিকথা ছিলনা বরং আমাদের পরবর্তী ভ্রমনের একটি মুখবন্ধ ছিল বলা যায়। পরবর্তী ভ্রমণটির গন্তব্য অবশ্যই দীঘা ছিল না বলাই বাহুল্য। এই সাগরহীন রুক্ষ এলাকায় থেকে সপ্তাহ শেষের ছুটিতে চাইলেই তো আর সাগর বিরহী মনকে নিয়ে 'চল মন খানিক সমুদ্রভ্রমন করে আসি' বলে লোটা-কম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়া যায় না। তার জন্য প্রস্তুতি লাগে, সময় লাগে। অমন উঠলো বাই তো হিমালয় যাই বলে ব্যাগ ঘাড়ে বেরিয়ে পড়লে এতদূর থেকে সাগরের অপমান হয় না বুঝি? তাই আমরা এখনকার সাগরে নয়, যাচ্ছিলাম অনেক অনেক দিন আগেকার এক সাগরে যা নাকি এখন কালস্রোতে এদিক ওদিক থেকে চাপ খেতে খেতে পৃথিবীর প্রবল প্রতিবাদে একদিন টেথিস সাগর থেকে অভ্রভেদী হিমালয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আচ্ছা এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল একটা কথা। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আচ্ছা, এই যে আমাদের দেশের তিনদিক জোড়া সাগর, এরাও যদি ভবিষ্যতে কোনো একসময় পৃথিবীর তলাকার বিভিন্নরকম প্লেটের খামখেয়ালী নড়াচড়ায় চাপ টাপ খেয়ে ওরকম ভাবে বঙ্গোপসাগর-আরবসাগর-ভারতমহাসাগর থেকে বঙ্গ পর্বতমালা-আরবপর্বতমালা আর ভারতমহাপর্বতমালায় পরিবর্তিত হয়ে যায় কেমন হবে তখন পৃথিবীর চেহারাটা? উত্তরের প্রাচীন প্রপিতামহ হিমালয়ের ছায়া থাকবে তো? নাকি সে নবজন্ম নেবে হিমালয়্মহাসাগর রূপে? আমার চেনা একটি দিল্লিবাসী বছর ছাব্বিশ-সাতাশের মেয়ে আমায় একবার বলেছিল সে এখনো চর্মচক্ষে সমুদ্র দেখেনি। মেয়েটি আদতে গাড়ওয়াল এর আদি বাসিন্দা। পাহাড়ের সঙ্গে সখ্যতা মেয়েটির জন্মসূত্রে। কিন্তু দিল্লি থেকে সমুদ্রের দূরত্ব আর বঙ্গভাষী মানুষদের মত জন্মসূত্রে পায়ের তলায় সর্ষে না থাকার দরুণ জীবনের সিকি শতাব্দী পার হয়ে এসেও ভারতবর্ষের নিচের তিন দিকের তিন প্রহরীর সাথে তার আলাপ করাটা আর হয়ে ওঠেনি। তো এই মেয়েটির পরবর্তী শততম উত্তরপুরুষ কি দিল্লির মতন জায়গায় বসে কোনো একজন বঙ্গভাষী (আমি নিশ্চিত তখনও বাংলা ভাষা লোপ পেয়ে বা পরিবর্তিত হতে হতে সম্পূর্ণ অন্য এক ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে না) মানুষকে অবাক হয়ে বলবে 'সেকি! তুমি এখনো সমুদ্র দেখনি? আমরা তো যেকোনো ছুটিতেই কোনো একটা সমুদ্রতটে চলে যাই।' আর তার উত্তরে সেই বঙ্গদেশের পাহাড়ি জায়গা থেকে গাড়ওয়াল প্রদেশের সমতলে কাজ করতে আসা বাঙালি উত্তরপুরুষ কি বলে উঠবে 'আসলে দুচারদিনের ছুটিতে কি করেই বা আর সমুদ্রে আসা যায় বলো? এতটা দূরত্ব। এবার দেখে নেব।' কিংবা কে জানে প্রকৃতিদেবীর সংসারের এইসব টালমাটালে তোমার দল-আমার দল, তোমার ধর্ম-আমার ধর্ম, নিয়ে নিরন্তর বিব্রত হয়ে থাকা ভারতবর্ষ বলে যে একটি ত্রিভুজাকৃতি ভূখন্ড আছে সেটিরই অস্তিত্ব বিলোপ ঘটবে কিনা।

যাক গে, কি যেন বলছিলাম? হ্যাঁ আমরা হিমালয়ে যাচ্ছিলাম। শনি-রবির সাথে ছাব্বিশে জানুয়ারির ছুটিটা যোগ করতেই সুন্দর তিনদিনের মুক্তাঙ্গন তৈরি হয়ে গেল মনের মধ্যে। এবারে ঠিক করেছিলাম ওরকম "যাবি?" "চল তাহলে" বলে একবেলার মধ্যে প্ল্যান করে শেষ মুহুর্তে ব্যাগ প্যাক করে বেরোব না। তার একটা বিশেষ কারণও অবশ্য ছিল। কারণটা হলো, অনেক দিন ধরেই প্ল্যান হচ্ছিল যে যেহেতু আমাদের বেশিরভাগ বেড়ানোই ওরকম শেষ মুহুর্তে ব্যাগ গুছিয়ে বেরোনো, তাই নানান টুকিটাকি জিনিস নিয়ে দুটি ব্যাগ প্যাক করেই রেখে দেব। সেই মর্মে দুটি ব্যাকপ্যাক, তাদের একটির মধ্যে একটি বেশ কয়েকটি খোপ-খাপ যুক্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ছোটো ব্যাগ ইত্যাদি গুছিয়ে রাখা ছিল। আর তার সাথে যুক্ত ছিল দুটি স্লিপিং ব্যাগ। আমাদের বেড়াতে যাবার লটবহরের নবতম সংযোজন এই স্লিপিং ব্যাগ দুটি কেনার একটি ইতিহাস আছে। সেটিও বেশ গুছিয়ে "আমাদের স্লিপিং ব্যাগ কেনার কারণ " এই নামে একটি পৃথক ব্লগপোস্ট হবার দাবি রাখে। তাই এবারের হিমালয় ভ্রমণের গল্পের মাঝে দুলাইনে সে ইতিহাসকে বর্ণনা করলে পুরো ঘটনার প্রতি সুবিচার করা হয় না। তাই খুব তাড়াতাড়িই "আমাদের স্লিপিং ব্যাগ কেনার কারণ " আলাদা করে বর্ণনা করব। আপাতত এটা জেনে রাখুন যে সেই স্লিপিং ব্যাগ আসা ইস্তক তার ভেতরে ঢুকে শীতকাল শেষ হবার আগেই স্লীপার ক্লাসে করে কোনো একরাতের একটি ট্রেন জার্নির জন্যে আমরা মুখিয়ে ছিলাম। সুতরাং নতুন ব্যাকপ্যাক, তার ভেতরে স্লিপিং ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে মনে মনে ভ্রমণ শুরু হয়ে গেছিলো প্রায় সপ্তাহ দু-এক আগে থেকেই। তারপর যখন গন্তব্য স্থির হলো তখন যথারীতি দেখা গেল আমরা ছাড়া বাকি লোকজন অনেক আগে ভেবে সমস্ত ট্রেনের টিকিট শেষ করে রেখেছে। এতে অবশ্য আমরা একতিলও ঘাবড়ালাম না। কারণ এটাই আমাদের স্বাভাবিক ঘটনা বেড়াতে যাবার ক্ষেত্রে। কারণ আমরা বেড়াতে যাবার ক্ষেত্রে সমস্ত কিছু ঠিকঠাক করে তারপর গন্তব্য ঠিক করি। সমস্ত কিছু গুছিয়ে যেদিন বিকেলে বেরোব সেদিন সকালে ভ্রমণ পত্রিকা বা ইন্টারনেট দেখে কোথায় যাওয়া যায় সেটা ভেবে মাথার চুল ছিড়ছি এ ঘটনাও ঘটেছে। সুতরাং "কোনো চিন্তা নেই, তৎকাল কোটায় দেখব" বলে ব্যাগ গোছাতে থাকলাম 'ফাগু'-র উদ্দেশে। ফাগু হলো হিমাচলের রানী শিমলা থেকে নারকান্ডা যাবার রাস্তায় চব্বিশ-পঁচিশ কিলোমিটার দূরে পর্যটক কোলাহলবিহীন একটি শান্ত পাহাড়ী হিমাচলী গ্রাম। আমাদের এবারের গন্তব্য।

এই পর্যন্ত পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন সাপ্তাহান্তিক একটি সাধারণ ভ্রমণ কাহিনীর নাম 'সার্কাস' কেন? এ তো 'শিমলা-ফাগু' নাম দিয়েই লেখা যেত। বিশ্বাস করুন এই নামে লিখবার ইচ্ছে আমারও ছিল তাই তৎকাল-এ কালকা মেল এ টিকিট পেয়ে যেতেই ভাবলাম এত দারুন ব্যাপার! আমাদের দিল্লি থেকে কালকা যাবার ট্রেন, কালকা থেকে শিমলা যাবার টয়ট্রেন এর টিকিট কনফার্মড, ফাগু তে থাকার জায়গায় অ্যাডভান্স বুকিং কমপ্লিট, ফেরার ট্রেন এর টিকিট কনফার্মড। এত নিরাপদ এত গোছানো ভ্রমণ তো হয়না সচরাচর। কোনো কিছু নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই, নিশ্চিন্ত হয়ে "মন উড়েছে, উড়ুক না রে, মেলে দিয়ে গানের পাখনা"-বলে শুধু ঘুরে বেড়াও। ফিরে এসে জমিয়ে বেড়ানোর গল্প করব বলে তেইশ তারিখ সকালে বেড়ানোর গল্পের অনুসঙ্গ হিসেবে আমার প্রথম ভ্রমনের গল্প শুনিয়েছিলাম আপনাদের। বেড়ানো তো শুরু হয় ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে বাড়ি থেকে বাইরে প্রথম কদমটুকু নেওয়া হলেই।তখনও জানতাম না বাড়ি থেকে ফাগুতে পৌঁছানোর আগেই আমাদের কি দুর্দান্ত একটি অভিজ্ঞতা হতে চলেছে যাকে ভ্রমণ না বলে সার্কাস বলাই ভালো। আর সেই সার্কাসের দর্শক না হয়ে কুশীলব হতে চলেছি আমরা। সবটুকু শুনলে আপনারাও একে ভ্রমণ না বলে 'সার্কাস' ই বলবেন আমার বিশ্বাস। সুতরাং আমার এই কাহিনীর নাম 'সার্কাস' রাখাই সাব্যস্ত করলাম।

আমরা তেইশে জানুয়ারী বিকেল বেলায় দুটো ঢাউস ব্যাকপ্যাক নিয়ে ইনস্টিটিউট এর বাসে চেপে বসলাম। ব্যগদুটির পেটের মধ্যে শুয়ে আছে লাল রঙের স্লিপিং ব্যাগরূপি আমাদের দুটি মন। এই ভ্রমণে ফাগু দেখার লোভ আমাদের যতটা স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে ঘুমোনোর উত্তেজনাও তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সুতরাং দুজনেরই মনের অবস্থা এই যে, ফাগু তো কাল দুপুরের আগে পৌঁছাতে পারছি না সুতরাং কখন কালকা মেলে উঠে স্লিপিং ব্যাগ এ ঢুকব এই চিন্তাতেই পা দুটো নেচে নেচে উঠছিল থেকে থেকেই। বাস কিন্তু টইটম্বুর। ছোটো-বড়-মাঝারি নানান রকম ছাঁদের ব্যাগে। দল কে দল লোক হোস্টেল ছেড়ে পাহাড়ে চলেছে। কোনো দল চলেছে বৈষ্ণোদেবী দর্শনে পূণ্য আর কাটরার পাহাড়ের সৌন্দর্য্যের লোভে, কোনো দল চলেছে উত্তরাখন্ডের কোনো পাহাড়ে, কেউবা আমাদের এই দুজনের দলের মত হিমাচলের পাহাড়ে। কেউ বা আবার স্রেফ ছুটি পেয়ে হোস্টেল এর লাউকি বা টিন্ডা-র ঘ্যাঁট এর মায়া ত্যাগ করে বাড়িতে ভালো মন্দ খেতে। মোদ্দাকথা বাসে তিল ধারণের জায়গা নেই। আমাদের ব্যাগ দুটো কোনক্রমে শেষ সিটে ডাঁই করে সিটে গুছিয়ে বসেই ঘড়িতে দেখি সাড়ে পাঁচ। কি ব্যাপার! সাড়ে পাঁচটা হয়ে গেছে বাস ছাড়ছেনা কেন? সকলেই উসখুস করছে। শেষে প্রায় পাঁচটা চল্লিশ নাগাদ একটি মেয়ে ছোটো-ছোটো তিন চারটি ব্যাগ নিয়ে হেলতে দুলতে একপিঠ সদ্য শ্যাম্পু করা চুপচুপে ভিজে চুল নিয়ে বাসে এসে উঠলো। এই শ্যাম্পু করতে গিয়েই একবাস লোককে বোধহয় দশ মিনিট অপেক্ষা করাতে হলো বেচারাকে। মনে হলো একবার জিজ্ঞাসা করি "বাছার গন্তব্যস্থলের তাপমাত্রা বোধকরি বর্তমানে শুন্যাঙ্কের নিচে। তাই পরের তিনদিন স্নানটাই হয়ে উঠবে কিনা তার কোনো স্থিরতা নেই বলেই এই একবাস যাত্রীদের বসিয়ে রেখে শেষ মুহুর্তের চুল ধোওয়ার কাজটি না করলেই চলছিল না? " বাসের লোকজন হইহই করতে করতেই বাস স্টার্ট নিলো। মেন গেট থেকে বাইরে এসেছে কি আসেনি সদ্যস্নাতা গজগামিনী আরো একটি বোমা ফাটালেন। তাঁর বন্ধু আসছেন। আমাদের আরো একটু অপেক্ষা করতে হবে। ভাবলাম "স্বাভাবিক। একটাই তো বাথরুম। ঘরে দুজন মেয়ে। একজন স্নান সারলে তবে তো অন্যজন সারবে। বন্ধু ভালো করে শ্যাম্পু-ট্যাম্পু দিয়ে স্নান না সেরে কি করে আসে।" নিশ্চিন্তে হেলান দিয়ে বসলাম। কালকা মেলের তো অনেক দেরী। আহা বেচারা স্নান সারছে সারুক। বাস শুদ্ধু লোকজন ভুরু কোঁচকাচ্ছে, উশখুশ করছে। গজগামিনীর কোনো হেলদোল নেই। ফোন করে বন্ধুকে তাড়াটুকুও দিছে না। ফোনে নেটওয়ার্ক, চার্জ, ব্যালেন্স বা ফোন করার ইচ্ছে কোনো কিছু একটা ছিলনা বোধহয়। আহারে বেচারা। যাক গে। বন্ধুটিও দেখলাম 'তাড়াহুড়ো করা শয়তানের কাজ' এই মতে বিশ্বাসী। অত্যন্ত ধীরে সুস্থে কানে ফোন নিয়ে হেলেদুলে এলেন। এঁনার দেরী শ্যাম্পু করতে গিয়ে কিনা বুঝতে পারলাম না। চুল ভিজে তো নয়ই বরং বেশ ফুরফুরে। শ্যাম্পুর পরে ড্রায়ারও চালাতে হয়েছে বোধহয়। দেরী তো হবেই। বাসশুদ্ধু সবাই প্রায় দেরী দেখে হই হই করছে। আর এই দুজনের কোনো তাপ-উত্তাপ নেই দেখলাম। ভালো কিন্তু একদিক থেকে। যতই গালাগাল দাও না কেন আমি শুনলে তবে তো।

বাস ছাড়ল তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় পাঁচটা পঞ্চাশ। এই যে কুড়ি মিনিটের দেরী সেটা আমাদের ফাগু আর স্লিপিং ব্যাগে বুঁদ হয়ে থাকা মনে বিশেষ প্রভাব ফেলেনি তখন। এখন বুঝতে পারি এটিই ছিল পরবর্তী পনেরো ঘন্টায় ঘটা পুরো সার্কাসটার একটি অতি নগন্য পূর্বাভাস। বাস এগিয়ে চলল গুরগাঁও এর দিকে। দুই বাড়িতে সামনের দু-তিন দিনে লাগতে পারে এমন সম্ভব্য সমস্ত জিনিস গুছিয়ে নিয়েছি এই সংবাদ বিশ্বাসযোগ্য ভাবে নিবেদন করার পর নিশ্চিন্তে পা ছড়িয়ে বাসের জানালা দিয়ে সন্ধ্যে নামা দেখতে দেখতে চললাম গুরগাঁও। মেট্রো স্টেশন এ নামার ঠিক এক মিনিট আগে সকলে যখন তৈরী হচ্ছে নামবে বলে তখন আমার মাথায় এটম বোমাটা ফাটলো। হঠাৎই মনে হলো আচ্ছা কালকা মেল কতটা দেরী করতে পারে? একবার রানিং স্টেটাস চেক করা যাক। সে বিষয়টি দেখার আগেই মনে পড়ল দিল্লির চারপাশে আর উত্তরপ্রদেশে প্রচন্ড কুয়াশার দরুন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা সমস্ত ট্রেনই তো অসভ্যের মত দেরী করে দিল্লি স্টেশন এ ঢুকছে আজকাল। ঢোঁক গিলে সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত গলায় বললাম "একবার কালকা মেলের রানিং স্টেটাস চেক করতো" নিজে দেখার আর উৎসাহ ছিল না। পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিটি দেখলাম ব্যাপারটা দেখে শুনে থম মেরে বসে আছে। ইষৎ হাঁ করা মুখ। যা বোঝার বুঝে গেলাম। বললাম, "কতক্ষণ? বারো ঘন্টা?" অল্প মাথা নেড়ে বলল "দশ"। 'দশ' শব্দটা পিনাকীর মুখে কেমন যেন 'ধ্বস' কথাটার মতন শোনালো। সকলে ততক্ষণে ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে নামতে শুরু করেছে। মেট্রো স্টেশন এসে গেছে। আমরা দুজন স্থবিরের মত শূন্য দৃষ্টি মেলে দুটো সিটে বসে আছি। কেউ একজন নামার সময় বলল, "কি নামবে না?" মুখটা হাসি হাসি করার চেষ্টা করলাম, কেমন কেন মুখ ভেটকানোর মতন একটা প্রতিক্রিয়া বেরোলো। সেই দেখে প্রশ্নকর্তা আমাদের আর না ঘাঁটিয়ে নেমে গেলেন।  আর আমরা সকলের শেষে দুটো ব্যাগ ঘাড়ে আসতে আসতে নেমে মেট্রো স্টেশন এর সামনে দাঁড়ালাম। এইখান থেকেই আমাদের যাত্রা থুড়ি 'সার্কাস' শুরু হলো।


(চলবে)

পরবর্তী অংশ সার্কাস-২
             

1 comment:

  1. মুখে "ধ্বস" নামার কারণ শুধু কালকা লেট নয়, এরমধ্যে আমার দেখা হয়ে গেছে যে, হিমাচল ট্যুরিজম-এর বাসে সিট নেই, রেড বাসে আছে, একটা সিট সাড়ে আটটার, একটা সাড়েদশটার বাসে । ঘোরার একদিন কি তাহলে রাস্তাতেই কাটবে!
    কিন্তু তখনো যেটা বুঝিনি সেটা হল, এটা কেবলমাত্র জাত সার্কাসের বিউগল, মুডটা সেট করে দিল, আসল খেলার শুরু এবার!

    ReplyDelete