ভারতীয় আবহবিজ্ঞান দপ্তর-এর ওয়েবসাইট থেকে
এই ছবিটিই আমার গত কয়েক দিনের দেখা সমস্ত ছবির মধ্যে প্রিয়তম ছবি। কি সুন্দর না। কেমন যেন ঝড়-ঝড়, ধোঁয়া-ধোঁয়া, সমুদ্রের ঢেউ-ঢেউ। মাঝের সাদা গুলো দেখুন যেন চেপ্টে যাওয়া ভ্যানিলা আইসক্রিমের কাপের ভেতরটা। বোদ্ধা ছবি তুলিয়েরা এই পুরো ব্যাপারটাকে একটা দারুন অন্যরকম দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে ফেলতে পারবেন, সেসব আমার মতো রামু-শ্যামু দের পক্ষে কল্পনাতেও আসবে না। সে যাক, মোদ্দা কথাটা হলো বিষয়টা দেখে আমার বড্ড ভালো লেগেছে। মানে যাকে বলে ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ।....... হরিয়ানায় বর্ষা ঢুকেছে। কাল যখন কথাটা শুনলাম প্রথমে খুব একটা পাত্তা দিইনি। কারণ মা বলেছে "কক্ষনো বেশি আশা করবে না, যা পাবে তাই নিয়ে খুশি থাকবে।" তাই আমিও আশা করিনি যে হরিয়ানায় পয়লা জুলাই বর্ষা আসার কথা, সে এরকম সুবোধ বালকের মতো দুই তিন তারিখেই এসে পড়বে। তাই গরমে সেদ্ধ হতে হতে, রাতের বেলা ঘুমোতে না পেরে হাঁস ফাঁস করতে করতে, দিনের বেলা ল্যাবে গিয়ে ঢুলতে ঢুলতে.......সবসময় গরমকালের চোদ্দ গুষ্ঠিকে শাপশাপান্ত করতে করতে মনে মনে ভেবেছি........"মুন্নি, সহ্য করো, সহ্য করো......সহ্যের সমান গুণ নেই......সারদা মা সেই কবে থেকেই বলে গেছেন।" আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেছি।
এমতাবস্থায়, কাল যখন দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে বাড়ি আসার সময় ছাতা খুলে রোদের দাঁত খিঁচুনির বদলে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আটকাতে হলো তখনই মনে হলো আমি যেন হাঁটছি না, উড়ছি। ক্রমে ঝিরিঝিরি থেকে ঝরঝর থেকে ঝমঝম শুরু হলো। আর আমি কালো হয়ে আসা ঘরে ঠ্যাং নাচাতে নাচাতে ছকতে শুরু করলাম রাতে কি ভালো মন্দ খাওয়া যায়। আমার তো 'প্রচন্ড দুঃখ', 'প্রচন্ড আনন্দ', 'প্রচন্ড সবকিছুর' ই প্রকাশ 'প্রচন্ড ভালো মন্দ খাওয়া'। একদম ছাপমারা বাঙালি আর কি। তাই প্রথম বর্ষা আসার 'প্রচন্ড আনন্দ'-টাকে সেলিব্রেট করতে 'প্রচন্ড ভালো' কি খাওয়া যায় ভাবতে লাগলাম। আগেই তো বলেছি, যে জায়গায় থাকি সেখান থেকে চট করে বাইরে গিয়ে খেয়ে আসাটা আর শনিবার সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে খড়গপুর লোকালে সিট পাওয়াটা সমান কষ্টকর। সেক্ষেত্রে লোকজনের সাথে সিট নিয়ে ঝগড়া করতে হবে, আর এক্ষেত্রে প্রায় দুশ জনের বাইরে বেরোবার জন্য রাখা ক্যাম্পাসের একমেদ্বিতীয়ম 'টাটা সুমো' গাড়িটি ব্যবহার করার বিরল সুযোগ পেতে হবে। যাক গে যাক সে সব অবান্তর কথা। মোটকথা বাইরে যখন যাওয়া যাবে না তখন রান্না ঘরে রাখা দুটো পেটমোটা ব্যাগই ভরসা। দুজনে মিলে অনেক বাগবিতন্ডা হলো এই নিয়ে। খিচুড়ি খাব-তো ডিম কিনতে যেতে হবে, বিরিয়ানি খাব-তো মাংস কিনতে যেতে হবে। অত করিতকর্মা দুজনের কেউই নই যে সুমো জোগাড় করে বাইরে যাব এর জন্য। শেষে ঠিক হলো 'লুচি-ছোলার ডাল'। সব উপাদান বাড়িতেই আছে। এইসব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শেষ হতে দেখলাম বৃষ্টি থেমে গেছে, রোদ উঠে পড়েছে আবার। কি আর করব, 'লুচি-ছোলার ডাল' ক্যানসেল করে রুটি-ঢ্যাঁড়শের তরকারি ভাবতে ভাবতে দুজনে বোতলের মত মুখ করে তো আবার ল্যাবের দিকে চললাম।
কিন্তু না.....আজ 'হ্যাপি এন্ডিং'। অনেকদিন পর কাল বিকেল বিকেল কাজ শেষ, ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে দেখি মাঝে আরো একপশলা বৃষ্টি হয়েছে এবং, চারি দিক লালে লাল। মনটা এত ফুরফুরে হয়ে গেল যে কাঁধের ব্যাগটাও ওজনও রোজকার মত তিনমণের জায়গায় তিনশ গ্রাম লাগতে লাগলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার মত হ্যাবলাও পট করে মোবাইল দিয়ে 'একখান ফটোক' তুলে ফেললুম। আপনাদের একটু দেখাতে ইচ্ছে হচ্ছে। জানি আপনারা অনেক বেশি ভারী ভারী দামের, ভারী ভারী লেন্স দিয়ে নানান রকম কায়দা কানুন করে যেসব ছবি তোলেন তার যেকোনো একটার ধাক্কাতেই আমি কুপোকাত। তাও কালকের আকাশটা please একটু দেখুন। এই যে,
হুঁ হুঁ!! কেমন? ভালো না? না, মানে আমার ছবি তোলার কায়দাটা বলছি না। এত সাহস আমার নেই। আমি আকাশটার কথা বলছি।
আকাশের এরকম চাকচিক্য দেখে তো আমি ফের ফুল মুডে। রোজই আসতে যেতে কাঠ চাঁপা গাছ গুলোকে দেখি ফুলে ফুলে সাদা হয়ে আছে। কাল দেখি প্রচুর ফুল নিচে বৃষ্টির জন্য ঝরে পড়েছে। কি মনে হলো, ছোটবেলার শিউলি ফুল কুড়োতে যাবার কথা মনে পড়ে গেল। পিঠে ব্যাগ নিয়েই দুহাত ভর্তি করে ফুল কুড়োলাম। দুটো ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েও দুএকটা ফুল কুড়োচ্ছিলো, লেগে গেলাম কম্পিটিশনে। তারা রোজই আমায় দেখে, গম্ভীর হয়ে চশমা এঁটে যাতায়াত করি। হঠাত আমার এই তত্পরতা দেখে তারাও কেমন যেন ঘাবড়ে টাবড়ে গিয়ে ফুল না কুড়িয়ে আমার দিকে চেয়ে বলল "হ্যালো দিদি"। আমি দুহাত ভর্তি সাদা ফুল নিয়ে একগাল হেসে বললাম,"হ্যালো"। তারপর ফুলগুলো দেখিয়ে মুখে বললাম, "চাহিয়ে"? আর মনে মনে বললাম, "দেখলি, কতগুলো পেলাম ফুল? তোদের চেয়ে কত্ত গুলো বেশি?" তারা বোধহয় আমার হামলে পড়ে ফুল কুড়ানো দেখে আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়েই হেসে দুদিকে মাথা নাড়ল। দেখে মজা পেয়েছে মনে হয়, তাতে আমার ভারী বয়েই গেল। আমি দুহাত ভরে কাঠচাঁপা নিয়ে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে মনে মনে তাদের কাঁচকলা দেখিয়ে বাড়ি চলে এলাম।
ও হো, আর কাল রাতে আমরা ময়দার ফুলকো লুচি আর নারকেল সহ ছোলার ডাল দিয়ে গুছিয়ে ডিনার করেছিলাম। পুরোপুরি বাঙালি মতে। শেষ পাতে জিনট্যাক-টাকেও বাদ দিইনি।
বরাবর আনন্দবাজারের সাংবাদিকের লেখা, যেমন গরমে "কলকাতা হারাল মরু শহরকে", বর্ষায় "বৃষ্টিপাতে পাল্লা দিচ্ছে চেরাপুঞ্জিকে", শীতে "কনকনে শীতে লন্ডনের ছোঁয়া", পড়েছি আর হেসেছি। যদিও এখানে কোনো তুলনা টানার চেষ্টা নেই, তাও বৃষ্টি বাদলার দেশের মানুষের হরিয়ানায় বসে বর্ষার আগমনে উচ্ছ্বাস "প্রাণের ভিতর দিয়ে পেটেতে প্রবেশ করিলো রে"!
ReplyDeleteহে হে.... একদম ঠিক। আমি দায়িত্ব নিয়ে বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করা পাবলিক। তাই সমস্ত ইমোশনেরই প্রকাশ পেট সংক্রান্ত আর কি।
Delete