Adam D.I. Kramer এর PNAS, 2014 র পেপার থেকে
সে না হয় করুক গে যাক। কিন্তু আজ একটা খবর পড়া অবধি সবাইকে না বলে স্বস্তি পাচ্ছি না। তাই সকাল সকাল এসে ফেসবুক চেক টেক করেই আপনাদের বলতে বসেছি। সাংঘাতিক এক ছোঁয়াচে অসুখ নাকি ছড়াচ্ছে ফেসবুক থেকে। নাকি বলছি কেন সত্যি সত্যি। পৃথিবী বিখ্যাত মস্ত বৈজ্ঞানিক পত্রিকা তো তাই বলছে। না হাঁচি-কাশি-ফ্লু নয়, রীতিমত ভয়ানক অসুখ। যেমন ধরুন কান্না পাওয়া, পৃথিবীর কাউকে বিশ্বাস না করা, মরজগতে তুমি যে একা- এটা নতুন করে মনে পড়ে 'হা হতোস্মি' বলে উদাস হয়ে যাওয়া ইত্যাদি প্রভৃতি। বোঝা যাচ্ছে না ব্যাপারটা, না? আচ্ছা সহজ করে বলছি। জ্ঞানী গুনী গবেষকরা গবেষণা করে বলছেন যে, আপনি আজ ফুরফুরে মেজাজে শিস দিতে দিতে বাড়ি ফিরবেন নাকি অটোতে বসে পাশের গোবেচারা লোকটির ভেজা ছাতা থেকে একফোঁটা জল গায়ে পড়লেই গলাবাজি করে ফাটিয়ে দেবেন অথবা কোনো কিছুই না করে বাড়ি ফিরে ছাদে বসে আকাশের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকবেন তা নির্ভর করে আপনার বন্ধুরা ফেসবুক এ কি ধরনের পোস্ট করছেন তার ওপর। যদি আপনি সারাদিন ধরে প্রচন্ড উদ্দীপনা মূলক পোস্ট পড়েন তবে আপনিও সেদিন বাড়ি ফিরে মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে বাসন মাজতে না বসে হয়ত রঙ-তুলি নিয়ে ছোটবেলার ভুলতে বসা বিদ্যেটাকে ঝালিয়ে নিতে চাইবেন। আবার যদি আপনি সারাদিন ধরে ঘ্যানঘ্যানে মন খারাপ করা সব পোস্ট পড়েন তবে তো হয়েই গেল, বাসন মাজাটাও সেদিন আর হলো না, বাড়ি ফিরে আলো নিভিয়ে সটান সিলিং এর দিকে তাকিয়ে প্রতি দু মিনিটে একটা করে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হবে আপনাকে। ফলে আপনিও রাত সাড়ে বারোটার সময় উঠে অনেক খুঁজে পেতে পরের একঘন্টা ধরে এডিটিং করে আরো একটি একাকিত্ব-দীর্ঘশ্বাস-অশ্রুবিন্দু মার্কা পোস্ট করবেন। সেটি পরদিন সকালে আপনার বন্ধু শিস দিতে দিতে অফিসে এসেই পড়বেন এবং সেদিনের মতো মুডের সাড়ে চোদ্দটা বাজিয়ে ফেলবেন। আপনি কিন্তু ততক্ষণে অন্য একটি উদ্দীপক উদ্ধৃতি পড়ে-টড়ে ফের একদম চাঙ্গা মুডে। মানে ব্যাপারটা খানিকটা এরকম, আপনার কারো থেকে ভাইরাল ইনফেকশন হলো-আপনি কিছুদিন ভুগলেন-আপনার বন্ধু আপনাকে দেখতে এল-আপনি তার মুখের সামনে ফ্যাঁচ-ফ্যাঁচ করে হাঁচলেন-পরদিন আপনার জ্বর সেরে গেল-বন্ধু পড়ল জ্বরে। একদম টিপিকাল ছোঁয়াচে রোগ যেমন হয় আর কি। কি সাংঘাতিক ব্যাপার দেখুন দেখি?
এই বাজারে যখন শুনি নাকি ভালো থাকাটাই বড় কঠিন বিষয়, তখন কোথায় একটু কাজের ফাঁকে, মানে ফাঁকি মেরে ফেসবুক দেখব তাতেও একগাদা বালি? কি নিয়ে বাঁচা যায় বলুন তো? বসের কাছে ধ্যাতানি শুনে এসে মন ভালো করতে ফেসবুক খুলে যদি অন্যের কাঁদুনি শুনে আরো বেশি কাঁদতে হয় তবে আর "তারা দাঁড়াই কোথা "? তবে ভেবে দেখলাম এর একটা ভালো দিকও আছে। মানে উল্টোটা যদি হয় আর কি? বসের ধ্যাতানি শুনে এসে ফেসবুক খুলে যদি অন্যের কাঁদুনির জায়গায় দলাই লামার উক্তি দেখতে পাই তবে উঠে বসলেও বসতে পারি তাই না? তাই মাথা-টাথা চুলকে ভাবতে বসতে হচ্ছে কি করা উচিত? এমনিতেই অজস্র কান্নাকাটির উপকরণ থাকতে নতুন করে ফেসবুক দেখে জানলার বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে এ ব্যাপারটা বড় ভালো বলে মনে হছে না। আবার ফেসবুক খুললে সক্কলের যে সব আন্তর্জাতিক মানের ফটোগ্রাফি, স্বরচিত কবিতা ইত্যাদি নানান অমূল্য জিনিসপত্র দেখা যায় সেসব থেকেও বঞ্চিত হতে ইচ্ছা করছে না।
আমাকে অত্যন্ত ভাবিত দেখে এক জুনিয়র বলল- "কিছু প্রবলেম?" বললাম সমস্যাটা। বলে "আরে ভাবছ কেন? যারাই কোনো কিছু নিয়ে বেশি বেশি পোস্ট করতে থাকে আমি তো তাদের ব্যান করে দি। সে বেশি বেশি ঠাকুর দেবতার পোস্ট, বেশি বেশি রাজনৈতিক পোস্ট, বেশি বেশি নেগেটিভ পোস্ট যাই হোক না কেন।"
এখন ভাবছি আরো একটা কাজ তাহলে বাড়লো। শুধু ফেসবুক চেক করলেই হবে না, স্ক্রুটিনিও করতে হবে কোন কোন পোস্ট পড়লে আমার সন্ধ্যেবেলার কাজকর্ম ফেলে বেশি বেশি হাবি জাবি খেতে ইচ্ছে করছে। মানে ওটাই আমার ডিপ্রেশন এর মেন সিম্পটম কিনা। আপনাদের কি বক্তব্য এই ব্যাপারে?
নাহ, অনেকক্ষণ গল্পগাছা হলো। এবার একবার ফেসবুক চেক করে নিয়ে একটু কাজকর্ম করা যাক।
0 comments:
Post a Comment