Friday, 11 July 2014

আমার শোনা কিছু বিখ্যাত উক্তি

এক একটা উক্তি মানুষ সারা জীবন মনে রেখে দেয়। বিখ্যাত মানুষদের উক্তি তো বাইবেল-কোরান-ভাগবদগীতার মত করে লোকে পড়ে। আমার ছাত্রজীবনেও, মানে আমাদের মত অভাগাদের তো সারা জীবনই ছাত্রজীবন। তাও যে সময়টায় আমি ভদ্র বাচ্চার মতো সকাল সন্ধ্যে বই খাতা খুলে ওপরের ঘরের টেবিলের সামনে বসে গালে হাত দিয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতাম তখনকার কথা বলছি। তখন আমার টেবিলে একটা টেবিল ক্যালেন্ডারের মত জিনিস ছিল যার প্রতিটা পাতায় পাতায় ঠাসা ছিল বক্তার নামসহ নানান বিখ্যাত সঞ্জীবনী উক্তি। নিশ্চয়ই জ্যেঠুমনির দৌলতে পাওয়া। এরকম সব ভালো ভালো জিনিস আমায় জ্যেঠুমনিই অবিরত সাপ্লাই দিয়ে গেছেন নানান জায়গা থেকে পেয়ে সারা ছোটবেলাটা জুড়ে। তো সেই বস্তুটি এখনো বাড়িতে আমার বইয়ের তাকে অতি যত্নে রাখা আছে। এরকম জিনিস হয়ত অনেকেরই আছে। বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের মানসিক গঠন ঠিক করার জন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিখ্যাত উক্তির যোগান দিয়ে থাকেন শুনেছি। তার মধ্যে কিছু কিছু উক্তি মানুষের সারা জীবনের মত মনে গেঁথে যায়। আমার যেমন গেছে। এইসব বিখ্যাত উক্তির কয়েকটা ভাবলাম আজ আপনাদের শোনাই। ভালো জিনিস সকলের সাথে ভাগ করে নিতে হয়। তাই না? এটাও যেন কোন বিখ্যাত লোকের উক্তি। ভুলে গেছি। যাই হোক বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথম উক্তিটা বলি-

"মাংসের ডাঁটা দিতে বলনা": বক্তা আমার পিসতুতো দিদির ছেলে। বছর পাঁচ-ছয় বয়স তখন আমাদের বাড়ি বেড়াতে এসেছে। নানান রকমারি তরিতরকারির সাথে মাংসের ঝোল রান্না হয়েছে। তিনি তখন বাচ্চা মানুষ ছিলেন কিনা, কচি দাঁতে হাড় চিবোতে পারবেন না, তাই আমার মা তাঁকে বেছে বেছে মাংসওয়ালা পিসই দিয়েছে। বেশ  কয়েক গ্রাস সোনা মুখ করে খেয়ে নেবার পর শুনি তিনি গুজগুজ করে তাঁর মায়ের কাছে কি যেন অনুযোগ করছেন। আর তাঁর মা তাঁকে কি যেন সব বলে আস্বস্ত করছে। "কি হয়েছে"-"কি হয়েছে" করে অনেক অনুসন্ধানের পর জানা গেল- বাড়িতে ছোটখাটো হাড় চিবিয়ে তিনি অভ্যস্ত এবং তাঁর সেটি বেশ পছন্দের বিষয়। আমার মা তাঁকে যে বাটিটি পরিবেশন করেছেন তাতে একটিও হাড় নেই তাই তিনি তাঁর মাকে অভিযোগ করছেন যে- "মাংসতে একটাও ডাঁটা দেয়নি কেন মা এরা? ডাঁটা দিতে বলনা একটা ।" বক্তা বর্তমানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর দ্বিতীয় বর্ষের গম্ভীর চশমা চোখো ছাত্র। ভাগ্যিস আমার এই শিশু ব্লগটির অস্তিত্বের কথা তাঁর অজানা। সেই ভেবে নিশ্চিন্তে লিখছি।

"বড়দির সাথে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে": আমার জীবনের এখনো পর্যন্ত সেরা সময় ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস টেন। যে গার্লস স্কুলে আমি পড়তাম সেই স্কুলের প্রচন্ড রাগী বড়দির একটু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় তাঁর husband সঙ্গে আসতেন। হয়ত retire করার পর কাজ ছিল না বিশেষ এবং বড়দিরও রাস্তাঘাটে একজন সঙ্গে থাকার দরকার হত তাই তিনি আসতেন। তাঁর নাম আমি জানিনা এখনো। স্কুল সুদ্ধু মেয়েরা সক্কলে তাঁকে হাস্যকরভাবে 'জামাইবাবু' বলে রেফার করত। সম্মোধনটা এড়িয়ে যেত। যাই হোক, দুঁদে বড়দির ঠেলাতেই অস্থির ছিলাম আমরা, তার উপরে শাকের আঁটির মত ছিলেন এই 'জামাইবাবু' ভদ্রলোক। উভয়ার্থেই কঞ্চিসম জামাইবাবু, বাঁশের উপর দিয়ে যেতেন। সর্বদাই মেয়েদের উপর কারণে অকারণে অনধিকার কর্তিত্ব ফলানোর চেষ্টায় থাকতেন।

বিশেষ কোনো এক সর্বজনপ্রিয় দিদিমনির অবসরজীবন শুরুর সম্বর্ধনা নিয়ে উঁচুক্লাসের মেয়েদের সাথে বড়দির মনোমালিন্য চলছে কয়েক দিন ধরেই। ওই বিশেষ শিক্ষিকার সাথে কোনো অজানা কারণে বড়দির ঝামেলা ছিল। তাই তিনি সম্বর্ধনা নিয়ে বিশেষ বাড়াবাড়ি চাইছিলেন না। আর মেয়েরা সকলে চাইছিল উল্টোটা। বলাই বাহুল্য যে মেয়েদের পিছনে স্কুলের অন্য কয়েক জন শিক্ষিকাও গোপনে মদত দিচ্ছিলেন। এই নিয়ে আমাদের ক্লাসের সাথে বড়দির ঝামেলা তুঙ্গে উঠেছে সেদিন। বড়দি ক্লাস থেকে জনে জনে ডেকে জিজ্ঞাসা করছেন ঘটনার ডিটেল আর সবাই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ক্লাসের সবচেয়ে ফচকে মেয়ে অনুস্মিতা আর তার সাকরেদ সুহিতার ডাক পড়ার খবর আসতেই দুজনে একদৌড়ে ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে একতলার টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আর আমরাও যথারীতি বলে দিয়েছি "ওরা কোথায় জানিনা তো, ব্যাগও নেই। আজ মনে হয় আসে নি।" বড়দির পায়ের সমস্যা থাকায় আর ওঁনার অফিসঘর দোতলাতে হওয়ায় উনি সকালে এসে একবার দোতলায় উঠে গেলে ছুটি না হওয়া পর্যন্ত আর নামতেন না। সেই সুযোগটাই অনুস্মিতারা নিয়েছিল। জানত একতলায় বড়দি আসবেন না। কিন্তু, কোথায় বলে না- "বাবু যত বলে পরিষদ দল বলে তার শত গুন!" ওদের একতলার টয়লেটে ঢুকতে দেখে ফেলেছিলেন এই 'জামাইবাবু'। তিনি নিজে মেয়েদের টয়লেটের দরজায় ধাক্কা দিতে না পেরে বড়দির অ্যাসিস্ট্যান্ট উষাদিকে পাঠিয়েছেন ওদের ধরে আনতে। আমরা দোতলার সাইড উইং থেকে যে দৃশ্যটা সেদিন দেখেছিলাম সেটা হলো এরকম-উষাদি দুমদাম করে টয়লেটের দরজায় ধাক্কা মারছেন আর তাঁর স্বাভাবিক খনা গলায় চিত্কাত করছেন- "বেরিয়ে আয়, বড়দি ডাকছেন", 'জামাইবাবু' টয়লেট থেকে একটু দূরে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির কাছে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে উষাদির গলার আওয়াজকে ছাপিয়ে চিত্কার করছেন-" বেরিয়ে এস বলছি, আমি জানি তোমরা ওখানে আছ, বড়দির সাথে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে নাকি? হ্যাঁ? লুকোচুরি খেলা হচ্ছে?" এবং বড়দি দোতলা থেকে উঁকি মেরে নিচে দেখার চেষ্টা করছেন, এবং অবিশ্বাস্যভাবে তাঁর মুখে অল্প একটু হাসি আসব আসব করছে। আর আমরা টেনশন-ফেনশন ভুলে পুরো ব্যাপারটা দেখে মিচকে মিচকে হাসছি।            

"গরিয়ানার হোরুদের mitochondria বেশি থাকে" : এই ব্যাপারটা একদমই রিসেন্ট। দুতিন দিন আগে বিকেলের চায়ের গামলা হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাওয়া খেতে খেতে আমরা দুই মক্কেল বিজ্ঞান বিষয়ক গভীর জ্ঞানের সব কথা আলোচনা করছিলাম। মানে সামনে দিয়ে একটা পায়রা উড়ে যেতে দেখে পাখিরা এতটা পথ উড়ে যেতে এনার্জি কোথায় পায় এই গবেষণা হচ্ছিল আর কি। আমি কোথায় যেন পড়েছিলাম যে পাথীদের দেহকোষে mitochondria বেশি থাকে। যা থেকে নাকি এনার্জি তৈরী হয় বলে গুরুজনরা বলে থাকেন (এবং যা কিনা আমার দেহকোষে অন্ততঃ চল্লিশ শতাংশ কম আছে বলে আমার ধারণা) । আমি ঠিক এই জ্ঞানটাই পিনাকীকে দেবার চেষ্টা করছিলাম। হঠাত দেখি সে দূরে জঙ্গলের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাকে বলছে "হ্যাঁ হ্যাঁ, গরিয়ানার হোরুদের mitochondria বেশি থাকে"।..........আমি হাঁ আ আ আ আ করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি দেখে সে ভুরু টুরু কুঁচকে বলল -"কি হলো?" তার পরক্ষনেই ভুল বুঝতে পেরে প্রচন্ড রাগ টাগ করে বলল "আমি কি করব? দূরে বড় বড় গরু চরছে দেখে আমি বলতে চাইছিলাম যে হরিয়ানার গরুগুলো কত বড় বড় হয় দেখ"। আমি নাকি ঠিক সেই সময়েই তাকে মাইটোকনড্রিয়া-ট্রিয়া বলে এমন ব্যতিব্যস্ত করে ফেলেছি যে, সে ঘাবড়ে টাবড়ে গিয়ে "হরিয়ানার গরুগুলো কত বড় বড় হয়" বলতে গিয়ে "গরিয়ানার হোরুদের mitochondria বেশি থাকে" বলে ফেলেছে। কি বলব একে বলুন?

এই উক্তির ফলে সেদিন গায়ে হাতে গরম চা-ফা ফেলে, দোতলার লোকেদের কৌতুহলের উদ্রেক করে পাক্কা তিন মিনিট হ্যা হ্যা করতে হয়েছিল আমাদের।

"কিচ্ছু হচ্ছে না, সব ফুটকি ফুটকি": এই বিখ্যাত উক্তির বক্তা আমার মা। ভদ্রমহিলাকে নতুন কম্পিউটার বিদ্যায় হাতেখড়ি দেওয়ানো হয়েছে। যাতে তিনি চাইলে মেয়ের সাথে Skype-টাইপে চাট্টি গপ্প-গুজব করতে পারেন এবং মাঝে মধ্যে ই-মেল মারফত কিছু খবরাখবর বিনিময় করতে পারেন। গত চার-পাঁচ মাস আগে যখন তিনি এসেছিলেন তখন তাঁকে পাখি পড়ার মত করে রীতিমত সকাল সন্ধ্যা ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। একটি চকমকে খাতায় ক্লাসনোট লিখে দেওয়া হয়েছে। মানে প্রতিটা স্টেপ এ স্টেপ এ কি করতে হবে, কোথায় ক্লিক করতে হবে, কতবার করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়। তিনিও প্রচুর বার প্র্যাকটিস করে অবশেষে যখন পরীক্ষা দিতে বসলেন মানে বাড়ি পৌঁছে কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেক্ট করতে চেষ্টা করলেন তখন ডাহা ফেল। উপায়ন্তর না দেখে আমায় ফোন পাকড়াও করলেন। সেদিনে আমার নব্য কম্পিউটার স্বাক্ষর মায়ের সাথে আমার যে কথোপকথন হয়েছিল সেটা আমি আপনাদের হুবহু বলে যাবার চেষ্টা করছি।

--"কি ব্যাপার? তুমি তো দেখে গেলে এখান থেকে, এখন পারছ না কেন?"
--"তখন তো হচ্ছিল, এখন তো হচ্ছে না, আমি কি করব?"
--"কি করে করছ বলত?"
--"যা যা লিখে দিয়েছিলি খাতায়, সেটা দেখেই তো করছি, হচ্ছেনা তো?"
--"কি করছ আমায় একবার বল। "
--"ওই তো, Dongle টা লাগিয়েছি, তারপরে পেজটা খুলছে, তারপরে সেটিংস এ একটা ক্লিক করছি, তারপরে পাসওয়ার্ড লেখার জায়গাটা আসছে.........."-মা আমায় খাতা থেকে দেখে দেখে পড়ে শোনাতে থাকে। আমি বলি-
--"বাহ, ঠিকই তো আছে, এবার পাসওয়ার্ডটা লিখে এন্টার করে দাও তাহলেই তো হবে।"
--"হচ্ছে না তো, কত বার ধরে লিখছি, কখন থেকে চেষ্টা করছি।"
--"তার মানে তুমি পাসওয়ার্ড লিখতে ভুল করছ, ঠিক করে ধীরে ধীরে লেখ।"
মা প্রচন্ড অধৈর্য হয়ে বলে উঠলো, "আরে বলছি পাসওয়ার্ডটা লেখা যাছে না ওখানে।"
--অবাক হয়ে বললাম,"মানে? লেখা যাচ্ছেনা আবার কি? টাইপ করো, হবে।"
--মা এক ধমক দিয়ে, রেগে মেগে কেটে কেটে বলল, "না-হবে-না, আমি অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি কোনো লেখা হচ্ছে না, সব ফুটকি ফুটকি আসছে।"

আমি তো শুনে হো হো হাসব না মারাত্মক রেগে যাব বুঝে উঠতে পারলাম না। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে ব্যাপারটাকে হজম করলাম। তারপর বললাম, "না মানে, তুমি পাসওয়ার্ড লিখলে সেটা দেখা যাবে না, ওরকম ফুটকি ফুটকিই আসবে, নইলে যদি কেউ দেখতে চায় তুমি টাইপ করার সময় সে তোমার পাসওয়ার্ড জেনে যাবে তো। তাই।"

ফোনের ওপাশে মা কিছুক্ষণ চুপ করে  থেকে দ্বিগুন রেগে বলল "তা সেটা খাতায় লিখে দিতে কি হয়েছিল? আমি কি করে জানব যে পাসওয়ার্ড লিখলে ওরকম ফুটকি ফুটকি দেখায়?"
 বলে ভীষণ রেগে ফোন রেখে দিল। আর আমি হাত পা ছড়িয়ে পেট চেপে ধরে হাসতে বসলাম।
   
"নাহলে তোমার চুমু খেতে অসুবিধা হত": সমস্তরকম স্টেজ শো এর সবচেয়ে আকর্ষনীয় বস্তুটি যেমন সবচেয়ে শেষে দেখানো হয় আমার এই পোস্টের সবচেয়ে মারাত্মক উক্তিটি আমি সকলের শেষে বলব বলে রেখে দিয়েছি।
আমি আর পিনাকী, দুজনেই টো-টো কোম্পানির ক্যাপ্টেন বলা যায়। বেড়াতে পারলে আর কিছু চাই না, নেহাত পকেটে টান পড়ে তাই, নইলে সারা বছরই কাজকর্ম না করে ঘুরে বেড়াতে পারি। যে কোনো অবস্থায় ঘর থেকে বেরোতে পারলেই হলো। তাই যখন আমার এক দাদা ও তার সদ্যবিবাহিত বৌ-এর সনির্বন্ধ প্রস্তাব এল তাদের সাথে কেরালা-তামিলনাড়ু ঘুরতে যাবার, তাদের নববিবাহের কথা মাথায় রেখে প্রথমে দু এক বার না না করলেও পরে রাজি হয়ে গেলাম। যদিও itinerary-র অর্ধেক অংশ আমাদের দেখা তাও বাকি অর্ধেক তো নতুন। অতএব, 'চল পানসি কেরালা-তামিলনাড়ু'। দাদা ও আমার মিষ্টি বৌদি গাড়ির পেছনের সিটে, দাদার পাশে পিনাকী, আমি সামনে ড্রাইভার এর পাশে। দারুন ট্যুর চলছে। সবাই একদম ফুরফুরে মেজাজে। তার ওপর লাঞ্চটাও হয়েছে মন মাতানো। চার জনেই দারুন মাতোয়ারা। কোদাইকানালের পাহাড়-বন-জঙ্গল চষে ফেলা চলছে। গাড়িতে নানা বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। হটাত প্রসঙ্গ উঠলো যে দাদার উদাসীনতা বিষয়ে। বিবাহ প্রথার জন্মের সময় থেকে সমস্ত স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের বিষয়ে যে সাধারণ অভিযোগটি করে থাকেন বৌদিও আপামর স্ত্রীদের মত মিষ্টি করে বলল দাদা নাকি তার বিষয়েও উদাসীন। আমরা হালকা চালে হাসলাম। দাদা তার স্বভাবসুলভ মৃদুভাষে হেসে হেসে বলল "কে বলল আমি তোমার ব্যাপারে উদাসীন? বিয়ের আগে দাঁত পরিস্কার করালাম যে?"
বৌদি বলল "তাতে আমার কি হলো? তোমার দাঁত কালো হয়ে যাচ্ছিল তাই পরিস্কার করিয়েছ?"
--"তাহলে তো আগেও করাতে পারতাম, বিয়ের আগেই করালাম কেন?"
--"তার মানে? কি বলতে চাইছ? আমার জন্য করিয়েছ?"
দাদা এরপর অবলীলায় মৃদু মৃদু হেসে যে কথাটা বলল তার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না, বলল- "অবশ্যই, তোমার জন্য, নইলে তোমার চুমু খেতে অসুবিধা হতে পারত তো?"

কথাটির রিঅ্যাকশনে যেটা হলো -
আমি ঘাড় সোজা করে সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম, "ভাগ্যিস ড্রাইভার বাংলা বোঝেন না।"
বৌদি লাল হয়ে "ভগবান!!!!" বলে দুহাতে মুখ ঢাকলো।
পিনাকী আপ্রাণ গম্ভীর হবার চেষ্টা করে জানলার দিকে তাকিয়ে ফ্যাঁচ করে হেসে ফেলল ।

আর দাদা? সে একগাল হেসে বলল- "এত লজ্জা পাবার কি আছে? আমি কি ভুল বলেছি? সবাই তো অ্যাডাল্ট এখানে।" বলে দুলে দুলে হাসতে লাগলো।
বৌদি এক ধমকে দাদাকে চুপ করালো আর আমরা আর থাকতে না পেরে হো হো করে হেসে উঠলাম।
ড্রাইভার আগাপাশতলা কিচ্ছু বুঝতে না পেরে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল একবার।

দাদা-বৌদির permission নিয়েই এই ঘটনাটা লিখলাম।

এই হচ্ছে আমার জীবনের কয়েকটা মারাত্মক স্মরণীয় উক্তি। এরকম আরো আছে। সময় সুযোগ মত শোনাব আপনাদের। বলুন এগুলো ভুলে যাওয়া যায়? আপনাদেরও নিশ্চয়ই এরকম কয়েকটা স্মরণীয় উক্তিই আছে? শেয়ার করবেন। শোনার ইচ্ছা রইলো। 

4 comments:

  1. "ম্যাম, জামাইবাবু ফোন করেছেন"-আমার পুরনো কাজের জায়গার এক অবিস্বরণীয় উক্তি। ল্যাবের বসের সঙ্গে কথা বলার সময় স্যার বা ম্যাম বলা হলেও, কথাবার্তায় অমুকদা বা অমুকদি বলার-ই চল ছিল। একদিন ম্যামের ফোন আসে, আর এক ছাত্র গিয়ে তাঁকে বলে উপরের উক্তিটি। ম্যাম ঘাবড়ে যান, ফোন ধরতে যেতে যেতে আপনমনে বলেন, "জামাইবাবু ! আমার তো কোনো দিদি নেই !" ফিরে আসলে জানা যায় যে ফোনটা ওনার স্বামী করেছিলেন। ছেলেটিকে অন্যরা জামাইবাবু বলার কারণ জানতে চাইলে, সে সহজ যুক্তি দেখায়, ম্যাম দিদি হলে তাঁর স্বামী তো জামাইবাবু-ই হবেন !

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক ঠিক ঠিক, যুক্তি তো ঠিক ই আছে। অবিস্মরণীয়ই বটে।

      Delete
  2. Ha ha ha... Sotti bhulei gechilam... Aar tor boudi o... Khali amake jiggesh korche kano koriyechile daat poriskar... Aar ami bolchi kalo chilo bole.... ha ha ha ha.... Ghotonata monei chilo naa..........:-D

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওই তো মজা। তুমি এক একটা কান্ড করে তারপর ভুলে যাবে, আর আমরা যারা সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তারা সারা জীবন সেটা মনে করে হেসে হেসে পেট ফাটিয়ে ফেলবো। আর এক একটা মজার ব্লগ পোস্ট লেখার উপকরণ পেয়ে যাব।

      Delete