Friday, 6 April 2018

জানালা

ভোরের অন্ধকারে বাড়ি  ফিরতে ফিরতে পাড়ার মোড়ে অভ্যর্থনা করে ভীত দুটো রাকুন। গাড়ীর হেডলাইটের আলোয় চকচক করে ওঠে ওদের চোখদুটো। মাঝরাস্তায় ছুটোছুটি করছিল দুজনে। আমার জন্য খেলায় ব্যাঘাত হল। দৌড়ে রাস্তার পাশে গিয়ে জুলজুল করে দেখতে থাকে আমায়। ভয়ে ভয়ে আর এক ভীতুর দিকে তাকিয়ে থাকে। আলো ফুটতে থাকে। দিন শুরু হয়। আমি জানলা খুলি, জল গরম করে টি ব্যাগ ডুবিয়ে খাই। দু চুমুক দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে লোক দেখতে...

হাচিকোপুরান/পর্ব ২/ হাচিকোর দোলযাত্রা (২)

হাচিঃ দাঁড়া, টুকে নিই। এঁ ড়ে ত র্ক। হ্যাঁ হয়েছে। পরে ভাইপোর সাথে কথা কইতে গেলে এই কথাটা চালিয়ে দেওয়া যাবে। বড্ড তক্ক করে কথায় কথায়। ও হ্যাঁ, ওই গরমকালে তরমুজ চোষার কথাটা ভাইপোর কানে তুলিসনি যেন।  অসভ্যের মতন দাঁত দেখিয়ে হাসবে। বড় ত্যাঁদড় হয়েছে দিন দিন মায়ের আশকারায়। এই, এঁড়েতর্ক মানেটা কি রে? এঁড়ে বাছুরের মত তর্ক করা? দিদিঃ আমি জানি না যা, এঁড়ে বাছুরের মতন তর্ক করা না আনাড়ির মতন তর্ক করা। আমার...

Monday, 2 April 2018

হাচিকোপুরান/পর্ব-২/হাচিকোর দোলযাত্রা

দোলের দিন বৈকাল, হাচি আসিয়াছে দিদির বাড়ি- দিদিঃ হ্যাঁ রে হাচি, সবাই রঙ খেললো তোকে কেউ রঙ দিলো না একটুও? হাচিঃ না না। ওসব রঙ মাখামাখির মধ্যে আমি নেই। হ্যাঁ তবে ওই রঙের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কিসব খাচ্ছিলো দেখলুম, ওটা বেশ ভাল ছিল। দিদিঃ কি, ও গুজিয়া? তুই খেলি বুঝি? কে দিলো? হাচিঃ এঁহ, কে আবার দেবে? তোরা যেন আমার জন্যে মিষ্টির দোকান খুলে বসে আছিস? টেবিলের নিচে একটা পড়ে গেছিল, তা গুঁড়ি মেরে টেবিলের...

Thursday, 22 March 2018

গন্তব্য

অযুত বছরের পুঞ্জীভূত শোক নেমে এসেছে বসন্ত বরিষণরূপে। অবিরল ধারাবরিষণে, মিশেছে মন। তরলীভূত হয়ে। অনন্তের আবাহানে ছুটেছে জীবন। স্থিরতা হীন গন্তব্যের পানে। সমান্তরালে ছুটে চলেছে একের পর এক স্রোত। প্রতিটি স্রোতের জন্য নির্দিষ্ট তার গন্তব্য। জীবনজুড়ে শুধু গা ভাসিয়ে চলা সঠিক স্রোতের গতিপথ...

Saturday, 17 March 2018

শ্রী

বন্ধ জানালার ফাঁকে ছায়াছায়া রোদ্দুর এসে বসে। উঁকিঝুঁকি-লুকোচুরি চলে সারাক্ষণ। দুপুর শেষে সাজানো পেলব উষ্ণতার মন্তাজ। বন্ধঘরের জানলার কাঁচে শ্রী রাগের আলোড়িত আলাপন খেলা করে। শ্রী আর রোদ্দুরে আলাপ জমেনি আজও। মনসিজে শুধু মেঘলা আকাশ, উতল প্রতীক্ষায়।...

Thursday, 8 March 2018

হাচিকোপুরাণ/ পর্ব-১/ মুখবন্ধ

হাচিকো মস্তান ভৌ ভৌ হাচিকোপুরাণ হইল হাচিকোর বীরগাথা। এই মহাকাব্য শুরু করিবার আগে এই মহাকাব্যের স্থান কাল, পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে কিঞ্চিৎ গৌরচন্দ্রিকা প্রয়োজন। ২০১২ র নভেম্বর হইতে ২০১৫ র অক্টোবর অবধি এক গবেষনা সংস্থাতে থাকাকালীন এই অধমের 'হাচিকো' নাম্নী বীরের সহিত আলাপ এবং পরে কিঞ্চিৎ সখ্যতা করিবার...

Tuesday, 27 February 2018

তবুও তিতিক্ষা

জীবনে যা কিছু ফাঁকি পড়ে গেল, মৃত অনুভূতি যত, অজেয় বিষাদ, তাড়া করে শুধু অমোঘ প্রেমের মত। পলে অনুপলে অতীত যাপন মেঘমাখানো স্মৃতি, প্রেমহারা মন পরশ খোঁজে মরমী জীবনগীতি। গতজন্মের ধার করা প্রেম অলীক স্বপ্নময়, মরে আর বাঁচে, লজ্জা হারায় যাপিত জীবন ক্ষয়। তবুও স্বপ্ন, তবুও আশা, তবুও প্রতীক্ষা অশেষ...

Tuesday, 13 February 2018

প্রোষিতভর্তৃকা

সোনালী রোদ্দুরে ভাসছে তোর উষ্ণতা। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দেখি, এখনো তাতে তোর জিভের নুন লেগে আছে। নুনটুকুনির স্বাদ নিলাম আমার জিভে জড়িয়ে। রোজকার প্রাত্যহিকতায় জীর্ণ হয়ে আসা চাদরটা, যার সুতোয় রোঁয়ায় নিজের কিছুটা রেখে গিয়েছিলিস তুই, তাকেই নিলাম জড়িয়ে। তোর গন্ধ আর আদর পাবো বলে। আজ আর জানলা খোলা হল না। আজ যে আমার ঘরে থাকার দিন। আজ আমি প্রোষিতভর্তৃকা।...

Monday, 12 February 2018

শিলং-চেরাপুঞ্জি

এই লেখাটি 'বাতায়ন' পত্রিকার অক্টোবর, ২০১৭ সংখ্যা তে পূর্বপ্রকাশিত। মূল লেখাটি এখানে পাবেন। বাতায়নের লিনক:  http://batayan.org/ --------------------------------------------------------------------------- শিলং সম্পর্কে বললে বাঙালিমাত্রেই বলবে 'শেষের কবিতা'-র কথা। আমার কাছে এছাড়াও নারায়ণ সান্যালের 'গজমুক্তা' বা রহস্যের পিছনে ধাওয়া করা প্রৌঢ় কর্নেল এর কাহিনী- আসামের...

Tuesday, 6 February 2018

ইচ্ছে ছিল

ইচ্ছে ছিল শিশির মাখা নরম ঘাসে উপুড় হয়ে চোখে মুখে শিশির মাখার। ইচ্ছে ছিল খোলা নৌকায় সমস্ত রাত চিৎ হয়ে মহাসাগরের মাথার ওপর তারা দেখার । ইচ্ছে ছিল দেখবো বসে তেপান্তরের মাঠের পারে কেমন করে ভোর হয়ে যায় রাত্রি থেকে। ইচ্ছে ছিল নদীর সঙ্গে পথ চলার কেমন করে পাহাড় থেকে পথ খুঁজে নেয় সাগর...

Monday, 5 February 2018

অভিমান

জমানো সব অভিমানগুলোকে উবে যেতে দেব বলে, দুপুরবেলার রোদ্দুরের সাথে মিশিয়ে বিছিয়ে রেখেছিলাম উঠোনে। তারপর নিশ্চিন্ত মনে ভাতঘুম দিয়ে উঠে দেখি, উবে যাবার বদলে- রোদে পুড়ে আরও পোক্ত হয়ে উঠেছে আমার কাঁচা অভিমানগুলো। এখন আমার বরাদ্দ দুপুরের রোদ্দুরটাও গিয়েছে খরচ হয়ে। হাতের...

Thursday, 4 January 2018

কেক

১৯৯৩-৯৪ সাল নাগাদ কলকাতা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের কোনো একটি গ্রামে বছর দশ-বারোর বালিকার জন্য কেক মানে ছিল বাপুজী কেক। নকল চেরির মোজাইক করা ময়দার চৌকোনা টুকরো আর ওপরে সবজে-লাল তেলতেলে কাগজের মোড়ক। তার স্বাদ যদিও তখনও অপূর্ব লাগতো, এখনো এই কেক-প্যাস্ট্রির দেশে একশো...