আজ হয়ত অন্য কিছু একটা লিখতাম। কিন্তু সকালের একটা ঘটনায় এই গল্পটা না বলে থাকতে পারছিনা। আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে কখনো কেউ এসে একটা থাপ্পড় মেরে আপনাদের থেকেই টাকা নিয়ে চলে গেছে? না না আমি ডাকাতির কথা বলছি না। শান্ত মাথায় সুস্থ পরিবেশে?........ আমাদের বাড়িতে হয়েছে এই ঘটনা। সত্যি বলছি।
বেশ কয়েক বছর আগেকার কথা। যখন আমার ওজন বেশ কয়েক কেজি কম ছিল। আমাদের বাড়িতে একটা স্টিল এর আলমারি ছিল মানে এখনো আছে। স্টিল এর আলমারি মানে যেগুলোর চাবি খুলে একটা পাল্লায় লাগানো হাতল ধরে নিচের দিকে টানলে 'ঘ্যাঁচ' করে একটা আওয়াজ করে আলমারি টা খুলে যায়। ওই 'ঘ্যাঁচ' শব্দটা আবার আমার খুব প্রিয় ছিল। কারণ আমাদের বাড়িতে ওই একটাই জিনিস চাবি দেওয়া থাকত। ইচ্ছেমত আমি ওটার ভেতরে তদন্ত চালাতে পারতাম না তো তাই নিষিদ্ধ বস্তুর মত ওটা আমাকে টানত। সুতরাং ওই 'ঘ্যাঁচ' শুনতে পেলেই আমি গুটিগুটি পায়ে আড়চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে (অনেক সময়েই বই খাতা ফেলে উঠে আসতাম তো, তাই এসে মায়ের মুডটা বুঝে নেওয়া জরুরি ছিল) আলমারিটার সামনে হাজির হতাম। এবং মা বা বাবা যে আলমারিটা খুলেছে তার ফাঁকফোকর দিয়ে পুরো বিষয়টা চোখ দিয়ে গিলতে থাকতাম। আর যদি কখনো কেউ ভুল করেও বলত যে "মুন্নি এটা একটু ধর তো আমি এটা বের করি/ ঢুকিয়ে দি", তবে সেইসব কাগজপাতি, ন্যাপথলীন এর গন্ধ মাখা কালেভদ্রে ব্যবহারের জামাকাপড় ইত্যাদি অমূল্য সব ধনরত্ন ছুঁয়ে দেখার আনন্দে আমি বোধকরি সেদিন রাত্রিবেলাতেও ভাত দিলে খেয়ে নিতে পারতাম। তো সে যাই হোক, একদিন সকালে দেখা গেল চাবি ঘোরালেও এই আলমারিটির পাল্লা আর ঘ্যাঁচ করে খুলছে না। কোনভাবে আটকে গেছে আর কি। বুঝতেই পারছেন মা-বাবা ওই আলমারিটির ওপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল। আর আমার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতেও ওই আলমারি। সুতরাং আড়াই জনের পুরো পরিবার সেদিন ওই আলমারির সামনে সারাদিন। নানাভাবে বিভিন্ন সম্ভব অসম্ভব পথে চেষ্টা করা সত্ত্বেও আলমারি তো খুলল না। বলা বাহুল্য আমার চেষ্টা বলতে সেদিন পুরো ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করা আর দূর থেকে মনে মনে মা বাবাকে সাহস যোগান ব্যতিরেকে আর কিছুই ছিল না। শেষে সন্ধ্যেবেলা অনেক সাধ্য সাধনার পর একজন মিস্ত্রী কে ডেকে আনা গেল। যিনি তাঁর ব্যস্ততার মধ্যেও তাড়াহুড়ো করে এলেন, দেখলেন, জায়গা বুঝে কেবলমাত্র একটি থাপ্পড় কষালেন (মানে আমাদের কাউকে নয় আলমারিটার পাল্লায়, হাতলের কাছে) এবং ৫০ টি টাকা নিয়ে চলে গেলেন। এক থাপ্পড়ে আলমারির পাল্লার সব বেয়াদপি ঘুচে গেল। অথচ সারাদিন ধরে ওই আলমারির পাল্লা ধরে কম চড়-চাপাটি, টানাটানি হয়নি সবাই মিলে। বলে না ডাক্তার এলেই রোগ পালায় সেই আর কি। সেদিন থেকে আজ অবধি সেই বছর ৩৫ এর বুড়ো আলমারির লকিং সিস্টেম অন্ত্যত কোনো বেগড়বাঁই করেনি কোনদিন।
আজকের সকালের ঘটনাটাও প্রায় অনুরূপ। এখানে কেবলমাত্র মিস্ত্রীটি professional নয় বলে শেষে ওই ৫০ টি টাকা আমায় দিতে হয়নি। ঘটনাটা বলি। আজ তো সকালে যথাসাধ্য ঘুমিয়ে উঠে (মানে যখন আর না উঠলেই নয় আর কি), চাট্টি biscuit চিবিয়ে ল্যাব এ এসে হাই টাই তুলে ভাবলাম অনেক দিন পর আজ একটু কাজকর্ম করলে মন্দ হয় না। বেশ খানিকটা ভেবে টেবে, আঙ্গুল-টাঙ্ঙ্গুল মটকে, মাথা চুলকোতে চুলকোতে তো গেলাম। দেখলাম দুটো হুড (আমাদের science-science খেলার একটা জীবানুমুক্ত টেবিল আর কি) খালি। দেখেশুনে "একজনকে মনে হলো ওরই মধ্যে অন্যরকম", অন্যটাকে পত্রপাঠ নাকচ করে সবকিছু ওই হুড এই গুছিয়ে শেষকালে UV light টা অন করতে গিয়ে দেখি সে ব্যাটা কিছুতেই অন হয় না। মনে পড়ল এটা কিছুদিন হলো বিগড়েছিল বটে। চটপট করে নাকচ করে দেওয়া হুড টার দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা আমার থেকে অনেক স্মার্ট একজন ইতিমধ্যে দখল করে ফেলেছে (এজন্যই আমার দ্বারা কিছু হয়না)। করূন চোখে আরও দেখলাম সে যা জিনিসপত্র সাজিয়ে বসেছে, তাতে তার দোকান বন্ধ করতে কম করে এক-দেড় ঘন্টা লাগবে। ততক্ষণে আমাকে বসে হাপু গাইতে হবে। মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে ফোনটা করেই ফেললাম। ভাবলাম দেখি শেষ চেষ্টা করে। "আচ্ছা তুই কি জানিস বাঁ-দিকের হুডটার UV ল্যাম্প ঠিক হয়েছিল কিনা (আমি যথারীতি জানিনা)?" তো সেই ভগবানের অবতার বললেন "হাঁ হাঁ একটু দাঁড়া আমি আসছি।" তিনি এলেন, switch দিলেন, হুড এর সামনের কভারটা ধরে একবারমাত্র যত্পরনাস্তি ঝাঁকালেন এবং ল্যাম্প অন হয়ে গেল। আমি হাঁদাগঙ্গারামের মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হ্যা-হ্যা করে হাসতে লাগলাম আর আমার ছোটো বেলার আলমারির ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। যাক বাবা আমায় তো বাবার মত ৫০ টাকা দিতে হয়নি।
বেশ কয়েক বছর আগেকার কথা। যখন আমার ওজন বেশ কয়েক কেজি কম ছিল। আমাদের বাড়িতে একটা স্টিল এর আলমারি ছিল মানে এখনো আছে। স্টিল এর আলমারি মানে যেগুলোর চাবি খুলে একটা পাল্লায় লাগানো হাতল ধরে নিচের দিকে টানলে 'ঘ্যাঁচ' করে একটা আওয়াজ করে আলমারি টা খুলে যায়। ওই 'ঘ্যাঁচ' শব্দটা আবার আমার খুব প্রিয় ছিল। কারণ আমাদের বাড়িতে ওই একটাই জিনিস চাবি দেওয়া থাকত। ইচ্ছেমত আমি ওটার ভেতরে তদন্ত চালাতে পারতাম না তো তাই নিষিদ্ধ বস্তুর মত ওটা আমাকে টানত। সুতরাং ওই 'ঘ্যাঁচ' শুনতে পেলেই আমি গুটিগুটি পায়ে আড়চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে (অনেক সময়েই বই খাতা ফেলে উঠে আসতাম তো, তাই এসে মায়ের মুডটা বুঝে নেওয়া জরুরি ছিল) আলমারিটার সামনে হাজির হতাম। এবং মা বা বাবা যে আলমারিটা খুলেছে তার ফাঁকফোকর দিয়ে পুরো বিষয়টা চোখ দিয়ে গিলতে থাকতাম। আর যদি কখনো কেউ ভুল করেও বলত যে "মুন্নি এটা একটু ধর তো আমি এটা বের করি/ ঢুকিয়ে দি", তবে সেইসব কাগজপাতি, ন্যাপথলীন এর গন্ধ মাখা কালেভদ্রে ব্যবহারের জামাকাপড় ইত্যাদি অমূল্য সব ধনরত্ন ছুঁয়ে দেখার আনন্দে আমি বোধকরি সেদিন রাত্রিবেলাতেও ভাত দিলে খেয়ে নিতে পারতাম। তো সে যাই হোক, একদিন সকালে দেখা গেল চাবি ঘোরালেও এই আলমারিটির পাল্লা আর ঘ্যাঁচ করে খুলছে না। কোনভাবে আটকে গেছে আর কি। বুঝতেই পারছেন মা-বাবা ওই আলমারিটির ওপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল। আর আমার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতেও ওই আলমারি। সুতরাং আড়াই জনের পুরো পরিবার সেদিন ওই আলমারির সামনে সারাদিন। নানাভাবে বিভিন্ন সম্ভব অসম্ভব পথে চেষ্টা করা সত্ত্বেও আলমারি তো খুলল না। বলা বাহুল্য আমার চেষ্টা বলতে সেদিন পুরো ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করা আর দূর থেকে মনে মনে মা বাবাকে সাহস যোগান ব্যতিরেকে আর কিছুই ছিল না। শেষে সন্ধ্যেবেলা অনেক সাধ্য সাধনার পর একজন মিস্ত্রী কে ডেকে আনা গেল। যিনি তাঁর ব্যস্ততার মধ্যেও তাড়াহুড়ো করে এলেন, দেখলেন, জায়গা বুঝে কেবলমাত্র একটি থাপ্পড় কষালেন (মানে আমাদের কাউকে নয় আলমারিটার পাল্লায়, হাতলের কাছে) এবং ৫০ টি টাকা নিয়ে চলে গেলেন। এক থাপ্পড়ে আলমারির পাল্লার সব বেয়াদপি ঘুচে গেল। অথচ সারাদিন ধরে ওই আলমারির পাল্লা ধরে কম চড়-চাপাটি, টানাটানি হয়নি সবাই মিলে। বলে না ডাক্তার এলেই রোগ পালায় সেই আর কি। সেদিন থেকে আজ অবধি সেই বছর ৩৫ এর বুড়ো আলমারির লকিং সিস্টেম অন্ত্যত কোনো বেগড়বাঁই করেনি কোনদিন।
আজকের সকালের ঘটনাটাও প্রায় অনুরূপ। এখানে কেবলমাত্র মিস্ত্রীটি professional নয় বলে শেষে ওই ৫০ টি টাকা আমায় দিতে হয়নি। ঘটনাটা বলি। আজ তো সকালে যথাসাধ্য ঘুমিয়ে উঠে (মানে যখন আর না উঠলেই নয় আর কি), চাট্টি biscuit চিবিয়ে ল্যাব এ এসে হাই টাই তুলে ভাবলাম অনেক দিন পর আজ একটু কাজকর্ম করলে মন্দ হয় না। বেশ খানিকটা ভেবে টেবে, আঙ্গুল-টাঙ্ঙ্গুল মটকে, মাথা চুলকোতে চুলকোতে তো গেলাম। দেখলাম দুটো হুড (আমাদের science-science খেলার একটা জীবানুমুক্ত টেবিল আর কি) খালি। দেখেশুনে "একজনকে মনে হলো ওরই মধ্যে অন্যরকম", অন্যটাকে পত্রপাঠ নাকচ করে সবকিছু ওই হুড এই গুছিয়ে শেষকালে UV light টা অন করতে গিয়ে দেখি সে ব্যাটা কিছুতেই অন হয় না। মনে পড়ল এটা কিছুদিন হলো বিগড়েছিল বটে। চটপট করে নাকচ করে দেওয়া হুড টার দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা আমার থেকে অনেক স্মার্ট একজন ইতিমধ্যে দখল করে ফেলেছে (এজন্যই আমার দ্বারা কিছু হয়না)। করূন চোখে আরও দেখলাম সে যা জিনিসপত্র সাজিয়ে বসেছে, তাতে তার দোকান বন্ধ করতে কম করে এক-দেড় ঘন্টা লাগবে। ততক্ষণে আমাকে বসে হাপু গাইতে হবে। মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে ফোনটা করেই ফেললাম। ভাবলাম দেখি শেষ চেষ্টা করে। "আচ্ছা তুই কি জানিস বাঁ-দিকের হুডটার UV ল্যাম্প ঠিক হয়েছিল কিনা (আমি যথারীতি জানিনা)?" তো সেই ভগবানের অবতার বললেন "হাঁ হাঁ একটু দাঁড়া আমি আসছি।" তিনি এলেন, switch দিলেন, হুড এর সামনের কভারটা ধরে একবারমাত্র যত্পরনাস্তি ঝাঁকালেন এবং ল্যাম্প অন হয়ে গেল। আমি হাঁদাগঙ্গারামের মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হ্যা-হ্যা করে হাসতে লাগলাম আর আমার ছোটো বেলার আলমারির ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। যাক বাবা আমায় তো বাবার মত ৫০ টাকা দিতে হয়নি।
0 comments:
Post a Comment