হরিয়ানার এই জুন মাসের বিচ্ছিরিরকম গরমে হাবা (হাবা র কথা তো আগের দিনই বললাম) র মত শান্তশিষ্ট কুকুরও পর্যন্ত যখন খেঁকি হয়ে উঠেছে, তখন কাল সন্ধ্যেবেলা ধুঁকতে ধুঁকতে বেরিয়ে যখন দেখলাম বড়বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামল তখন মেন গেট এর অল্পবয়সী গার্ডটাও দেখি "বারিষ আয়া ?বারিষ আয়া ?" বলে হেসে হেসে বাইরে বেরিয়ে আসছে। যাকে আমি নিবিষ্টমনে হিন্দি খবরের কাগজ পড়তেই এতদিন দেখেছি কোনদিন কারো সাথে কথাবার্তা বলতে শুনিনি। আর আমার ঠিক সেই মুহুর্তেই মনে হলো 'যাক বাবা আজ একটু ভালো করে ঘুমোনো যাবে'। এই ভেবেই আমি দারুণ খুশি হয়ে গেলাম। তারপর তো আমার শিক ভাঙ্গা হলুদ রঙের ছোট্ট ছাতাটা নিয়ে দুজন মোটা মোটা লোক ব্যাগ ফ্যাগ সামলে বেসুর বিশ্রী গলায় ''এক পীলি ছতরী পে আধে আধে ভিগ রাহে থে.......'' গাইতে গাইতে বাড়ি পৌছলাম। তা সে যাই হোক, ঘুম যেটা হলো সেটার বিশেষণ এই মুহুর্তে যেটা মনে আসছে সেটা হলো - 'মসৃ ই ই ই ই ই ণ'।
তা এরকম মসৃণ ঘুম আমি মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে থাকি বটে। সকালে আমায় ঘুম থেকে ওঠাতে ছোটো বেলা থেকেই মাকে বড় বেগ পেতে হত। মা বলত আমি নাকি কুম্ভকর্ণের ফিমেল সংস্করণ, কানের কাছে ঢাক পিটলেও ঘুম ভাঙ্গে না। তা মা ওরকম আমাকে অনেক কিছুই বলে থাকে ওসব গায়ে মাখলে তো ঘুমোনই যাবে না। তাই আমি ওসব কথা সাধারণত তুশ্চু করে থাকি। আজ এই 'মসৃ ই ই ই ই ই ণ' ঘুমের পর অনেক দিন আগেকার আরো একটা 'মসৃ ই ই ই ই ই ণ' ঘুমের গল্প (গল্প না, আদ্যন্ত সত্যি ঘটনা) না বলে থাকতে পারছি না।
সাত- আট বছর আগে যখন দোকান থেকে রেডিমেড কুর্তি কিনলে সাইডটা সেলাই করে পরতে হত আমায়, তখনকার কথা বলছি। ইউনিভার্সিটির রীতি অনুযায়ী ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটিতে কিছু ক্লাস করব বলে কলকাতায় পুরনো ডেরায় এসে আছি কয়েকদিনের জন্য, আমার এক বন্ধু আছে অন্য আর এক বন্ধুর মেসে। তো সেদিনের ক্লাস সেরে খেয়ে দেয়ে যে যার ঠিকানায় পৌছে তো ঘুমিয়ে পড়লাম রাতের মত। পরদিন সকালে বেশ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সুখস্বপ্ন দেখছি, হটাত মনে হলো স্বপ্নের মধ্যে কলিং বেলের আওয়াজ। সাধারণত এইসব সময় আমি ভেবে থাকি যে আমার নয় অন্য বাড়িতে বাজছে। সেদিনও তাই মনে হলো প্রথমটায়। তারপর মনে হলো বোধহয় এটা আমারই বাড়িতে বাজছে। ধুপ করে বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে নিচে দেখি বন্ধুটি দাঁড়িয়ে আছে উর্দ্ধমুখী হয়ে। "কিরে তুই এসে গেছিস? এত সকাল সকাল?" বলে প্রাতঃসম্ভাষণ শুরু করতে যাব, প্রচন্ড রেগে মেগে দেখি সে বলছে "তাড়াতাড়ি নিচে নেমে দরজা খোল"। কি হলো, টি হলো জিজ্ঞাসা করার আগেই দেখি আশেপাশের বাড়িগুলোর বারান্দায় কৌতুহলী আর হাসি হাসি মহিলা-পুরুষ-ছোটো-বড় নানান সব মুখ আমার দিকে তাকিয়ে ।এতদিন এ তল্লাটে থেকেছি কিন্তু এদের ৯০ ভাগ লোকজনই আমার অচেনা (এতো আর আমাদের মফস্বল নয় যে সবাই সবাই কে চিনবে, বড় শহরে নাকি কারো সাথে অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা বলাটা অনাধুনিক ব্যাপারস্যাপার। তা হবে! আমিও শহরে এসে আধুনিক হয়েছিলাম)। এতগুলো অচেনা লোক আমার দিকে সাত সকালে এত উত্সাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে কেন রে বাবা? যতই মুখটা হাসি হাসি হোক কেমন যেন ভয় ভয় করলো। ঢোঁক টোঁক গিলে নিচে নেমে দরজা খুলতে সে তো তরতর করে ওপরে উঠে চলে এল। তারপর সে যা বলল তাতে তো আমি আর মুখ লুকাবার জায়গা পাচ্ছিলাম না, প্রতিবেশীদের কৌতূহল এর কারণটাও বোঝা গেল। তারপরতো সরি টরি বলে প্রায় মাটিতে মিশে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইলাম। যেহেতু তার আর কিছু করার মত শারীরিক অবস্থা ছিলনা তাই সেদিন আমি বেঁচে গিয়েছিলাম নইলে দুচারটে চড়-থাপ্পড় পড়লেও কিছু অনায্য হত না।
ঘটনাটা হলো, আগের দিন রাতে প্রচন্ড খিদের মুখে ১০-১২ খানা রুটি আর একটা বড় প্লেট তড়কা খেয়ে বন্ধুটির আমার ঐদিন শেষরাত থেকে আইঢাই অবস্থা (না হলেই আশ্চর্য হতাম), তো কোনো ক্রমে আলো ফুটতে না ফুটতেই প্রচন্ড অসুস্থ অবস্থায় সে নিজেকে টেনে টুনে আমার কাছে এসেছিল যাতে আমি ওষুধপত্র বা অন্যসব কিছুর ব্যবস্থা নিতে পারি। সে তখন ওখানে আর কাউকে বিশেষ চিনত টিনত না । সে প্রথমে ভদ্রভাবে কয়েকবার বেল বাজিয়েছে, তার পর অভদ্রভাবে বেল বাজিয়েছে, বাজিয়েই চলেছে, তার বেল বাজানোর চোটে পাড়া-প্রতিবেশীরা বেরিয়ে এসেছেন, তাঁরা সাজেশন দিয়েছেন ফোন করতে, সে তথন অলিগলি ঘুরে মেন রাস্তায় গেছে, PCO খুঁজে ফোন করেছে আমার ঘরের ল্যান্ড লাইন এ (তখন আমাদের হাতে মোবাইল আসেনি), সেই ফোন বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের শরীর ততক্ষণে তার ঠিক হয়ে গেছে প্রায় (ভোরের হাওয়ায় হাঁটাহাঁটির একটা এফেক্ট থাকবে না?)। উল্টে তার মনে ভয় ঢুকেছে যে আমার কিছু হলো কিনা? টেনশন এর চোটে মেন রাস্তা থেকে ফিরতে গিয়ে সে রাস্তা-টাস্তা গুলিয়ে একাকার কান্ড (বেচারা অসুস্থ মানুষটা)। কোনমতে ফিরে এসে আবার সেই ভদ্র-অভদ্র ভাবে বেল বাজানো হলো বেশ কয়েকবার। অতঃপর আমার বেঁচে না থাকা নিয়ে যখন সবাই মোটামুটি নিশ্চিত, তখন প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ একজন আমার প্রায় কাঁদো কাঁদো বন্ধু কে বলেন "তুমি বেলটা টিপে রেখে দাও ছেড়োনা"। শেষ চেষ্টা আর কি। তো সে কলিং বেলটাকে সর্বশক্তি দিয়ে টিপে ধরে থাকে। ঠিক এই সময়েই আমার স্বপ্নের মধ্যে মনে হয় যে বুঝি পাশের বাড়ির বেল বাজছে। তারপরের ঘটনা........... তো আগেই বলেছি। মাঝে মধ্যে এরকম মসৃণ ঘুম আমার হয় বটে।
তা এরকম মসৃণ ঘুম আমি মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে থাকি বটে। সকালে আমায় ঘুম থেকে ওঠাতে ছোটো বেলা থেকেই মাকে বড় বেগ পেতে হত। মা বলত আমি নাকি কুম্ভকর্ণের ফিমেল সংস্করণ, কানের কাছে ঢাক পিটলেও ঘুম ভাঙ্গে না। তা মা ওরকম আমাকে অনেক কিছুই বলে থাকে ওসব গায়ে মাখলে তো ঘুমোনই যাবে না। তাই আমি ওসব কথা সাধারণত তুশ্চু করে থাকি। আজ এই 'মসৃ ই ই ই ই ই ণ' ঘুমের পর অনেক দিন আগেকার আরো একটা 'মসৃ ই ই ই ই ই ণ' ঘুমের গল্প (গল্প না, আদ্যন্ত সত্যি ঘটনা) না বলে থাকতে পারছি না।
সাত- আট বছর আগে যখন দোকান থেকে রেডিমেড কুর্তি কিনলে সাইডটা সেলাই করে পরতে হত আমায়, তখনকার কথা বলছি। ইউনিভার্সিটির রীতি অনুযায়ী ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটিতে কিছু ক্লাস করব বলে কলকাতায় পুরনো ডেরায় এসে আছি কয়েকদিনের জন্য, আমার এক বন্ধু আছে অন্য আর এক বন্ধুর মেসে। তো সেদিনের ক্লাস সেরে খেয়ে দেয়ে যে যার ঠিকানায় পৌছে তো ঘুমিয়ে পড়লাম রাতের মত। পরদিন সকালে বেশ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সুখস্বপ্ন দেখছি, হটাত মনে হলো স্বপ্নের মধ্যে কলিং বেলের আওয়াজ। সাধারণত এইসব সময় আমি ভেবে থাকি যে আমার নয় অন্য বাড়িতে বাজছে। সেদিনও তাই মনে হলো প্রথমটায়। তারপর মনে হলো বোধহয় এটা আমারই বাড়িতে বাজছে। ধুপ করে বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে নিচে দেখি বন্ধুটি দাঁড়িয়ে আছে উর্দ্ধমুখী হয়ে। "কিরে তুই এসে গেছিস? এত সকাল সকাল?" বলে প্রাতঃসম্ভাষণ শুরু করতে যাব, প্রচন্ড রেগে মেগে দেখি সে বলছে "তাড়াতাড়ি নিচে নেমে দরজা খোল"। কি হলো, টি হলো জিজ্ঞাসা করার আগেই দেখি আশেপাশের বাড়িগুলোর বারান্দায় কৌতুহলী আর হাসি হাসি মহিলা-পুরুষ-ছোটো-বড় নানান সব মুখ আমার দিকে তাকিয়ে ।এতদিন এ তল্লাটে থেকেছি কিন্তু এদের ৯০ ভাগ লোকজনই আমার অচেনা (এতো আর আমাদের মফস্বল নয় যে সবাই সবাই কে চিনবে, বড় শহরে নাকি কারো সাথে অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা বলাটা অনাধুনিক ব্যাপারস্যাপার। তা হবে! আমিও শহরে এসে আধুনিক হয়েছিলাম)। এতগুলো অচেনা লোক আমার দিকে সাত সকালে এত উত্সাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে কেন রে বাবা? যতই মুখটা হাসি হাসি হোক কেমন যেন ভয় ভয় করলো। ঢোঁক টোঁক গিলে নিচে নেমে দরজা খুলতে সে তো তরতর করে ওপরে উঠে চলে এল। তারপর সে যা বলল তাতে তো আমি আর মুখ লুকাবার জায়গা পাচ্ছিলাম না, প্রতিবেশীদের কৌতূহল এর কারণটাও বোঝা গেল। তারপরতো সরি টরি বলে প্রায় মাটিতে মিশে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইলাম। যেহেতু তার আর কিছু করার মত শারীরিক অবস্থা ছিলনা তাই সেদিন আমি বেঁচে গিয়েছিলাম নইলে দুচারটে চড়-থাপ্পড় পড়লেও কিছু অনায্য হত না।
ঘটনাটা হলো, আগের দিন রাতে প্রচন্ড খিদের মুখে ১০-১২ খানা রুটি আর একটা বড় প্লেট তড়কা খেয়ে বন্ধুটির আমার ঐদিন শেষরাত থেকে আইঢাই অবস্থা (না হলেই আশ্চর্য হতাম), তো কোনো ক্রমে আলো ফুটতে না ফুটতেই প্রচন্ড অসুস্থ অবস্থায় সে নিজেকে টেনে টুনে আমার কাছে এসেছিল যাতে আমি ওষুধপত্র বা অন্যসব কিছুর ব্যবস্থা নিতে পারি। সে তখন ওখানে আর কাউকে বিশেষ চিনত টিনত না । সে প্রথমে ভদ্রভাবে কয়েকবার বেল বাজিয়েছে, তার পর অভদ্রভাবে বেল বাজিয়েছে, বাজিয়েই চলেছে, তার বেল বাজানোর চোটে পাড়া-প্রতিবেশীরা বেরিয়ে এসেছেন, তাঁরা সাজেশন দিয়েছেন ফোন করতে, সে তথন অলিগলি ঘুরে মেন রাস্তায় গেছে, PCO খুঁজে ফোন করেছে আমার ঘরের ল্যান্ড লাইন এ (তখন আমাদের হাতে মোবাইল আসেনি), সেই ফোন বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের শরীর ততক্ষণে তার ঠিক হয়ে গেছে প্রায় (ভোরের হাওয়ায় হাঁটাহাঁটির একটা এফেক্ট থাকবে না?)। উল্টে তার মনে ভয় ঢুকেছে যে আমার কিছু হলো কিনা? টেনশন এর চোটে মেন রাস্তা থেকে ফিরতে গিয়ে সে রাস্তা-টাস্তা গুলিয়ে একাকার কান্ড (বেচারা অসুস্থ মানুষটা)। কোনমতে ফিরে এসে আবার সেই ভদ্র-অভদ্র ভাবে বেল বাজানো হলো বেশ কয়েকবার। অতঃপর আমার বেঁচে না থাকা নিয়ে যখন সবাই মোটামুটি নিশ্চিত, তখন প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ একজন আমার প্রায় কাঁদো কাঁদো বন্ধু কে বলেন "তুমি বেলটা টিপে রেখে দাও ছেড়োনা"। শেষ চেষ্টা আর কি। তো সে কলিং বেলটাকে সর্বশক্তি দিয়ে টিপে ধরে থাকে। ঠিক এই সময়েই আমার স্বপ্নের মধ্যে মনে হয় যে বুঝি পাশের বাড়ির বেল বাজছে। তারপরের ঘটনা........... তো আগেই বলেছি। মাঝে মধ্যে এরকম মসৃণ ঘুম আমার হয় বটে।
একটা ছোট্ট কথা শুধু যোগ করতে চাই। কলিংবেল টায় আর্থিং - এর তার ঠিক করে লাগানো ছিল না, সেদিন বৃষ্টি পড়ছিল, আর যে বন্ধুটি বেল বাজাচ্ছিল, সে ক্রমাগত শক খাচ্ছিল।
ReplyDeleteভোরের হাওয়া, ইলেকট্রিক শক, হাঁটাহাঁটি, টেনশন সব মিলিয়ে শরীর টা তো ৮০% ঠিক হয়ে গেছিল। সব কিছুরই ভালো দিকটাই দেখা উচিত। তাই না?
Deleteহ্যাঁ।
Delete