পোস্টটার নাম দেব ভেবেছিলাম 'নামাবলী' নয়তো 'নামসংকীর্তন'। শেষ পর্যন্ত এটাও ভেবে ফেলেছিলাম যে লিখব.....''ওরে আমার নামটা অন্ততঃ ঠিক করে বল"। কাল থেকেই মেজাজটা টং হয়ে আছে। মানুষের নামটা যদি ঠিক করে উচ্চারণ না করা হয় তবে যার নাম তার খারাপ লাগে না বলুন? এমনিতেই বাংলা নাম হিন্দিভাষী লোকজনদের কাছে অনেকসময়ই হিব্রু লাগে। 'তন্ময়িতা' নামের একটি মিষ্টি মেয়েকে চিনতাম, বেচারার বাবা-মা জন্মের সময় প্রচুর ঝাড়াই বাছাই করে এত সুন্দর একটি নাম দিয়েছিলেন। বেচারা হরিয়ানায় এসে প্রথমদিন নাম বলতেই চারপাশের লোকজন চারবার হোঁচট খেল, তান....তানমো...ক্যা? ...তানমো.. ইতা? ইয়ে ক্যায়্সা নাম হ্যায়? meaning ক্যা ইস নামকা?...অর কোই ছোটা নাম নেহি হ্যায় তুমহারা?.....ব্যাস হয়ে গেল সেদিন থেকে তার এত সাধের নামের দফারফা। সেই দুঃখেই কি না জানিনা বেচারা ফেসবুকেও দেখি ডাক নামেই চালাচ্ছে।
এছাড়া সাধারণ নাম গুলোর মধ্যেও তো যথেচ্ছ ভাবে আ-কার যোগ হয়ে যাচ্ছে যেমন তেমন ভাবে। যেমন 'অর্পিতা' হয়ে গেছে 'আর্পিতা', 'সদাশিব' হয়ে গেছে 'সাদাশিভ', 'সৌমেন্দ্র' হয়ে যাচ্ছে 'সাউ-মেন্-দার' ইত্যাদি। মানে আমি যা বুঝেছি, নামের মধ্যে 'অ' অক্ষরের উচ্চারণ থাকলে বঙ্গদেশের বাইরে তার মায়া ত্যাগ করাই ভালো। এবং যুক্তাক্ষর-ওয়ালা নাম শেষপর্যন্ত কি দাঁড়াবে তারও কোনো predictive protocol নেই।
আমার অবশ্য এবিষয়ে একটা জরুরি প্রশ্ন আছে। ধরুন একটি বাঙালি মেয়ের নাম 'স্বাতী', তো তাকে একজন বাঙালি 'স্বাতী' ই বলবে। একজন অবাঙালি বলবে 'স্বো-য়া-তী'। কিন্তু যদি উল্টোটা হয়? মানে যদি একটি অবাঙালি মেয়ের নাম 'স্বাতী' হয় তখন? একজন বাঙালি হিসাবে আমার তাকে 'স্বাতী' বলা উচিত? নাকি অবাঙালি উচ্চারণ হিসাবে 'স্বো-য়া-তী'? নাকি তাকে refer করার সময় 'স্বাতী',আর তাকে ডাকার সময় 'স্বো-য়া-তী'? এই প্রশ্নটা খুব জরুরি আমার কাছে কারণ, একবার একজনের সাথে বেশ খানিকটা উত্তপ্ত আলোচনা স্বত্বেও কিছু ফয়সালা করে উঠতে পারিনি এখনো, যখন যা মনে হয় বলে ফেলি। জানি না কোনটা ঠিক? আমি তো আমার নাম 'আর্পিতা'- র জায়গায় 'অর্পিতা' শুনতেই পছন্দ করব বাঙালি বা অবাঙালি সবার থেকেই। কিন্তু কি আর করব, পছন্দমত তো সবকিছু হবে না, তাই দিব্যি সক্কলের 'আ আ আ র্পিতা'/ 'আ আ আ র্পিতা দি'- হয়েই কাটাচ্ছিলাম। সানন্দে মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু যদি আপনার নামটাকেই কেউ বেমালুম বদল করে দেয় তখন? মানে ধরুন আপনার নাম 'পুণ্ডরীকাক্ষ পুরকায়স্থ', আপনাকে কেউ হঠাত একদিন সকাল থেকে 'রামেশ্বর তর্কপঞ্চানন' বলে ডাকতে শুরু করলো তখন আপনার কেমন লাগবে?
কাল এরকমই একটা ঘটনা ঘটে গেল যেটা না লিখে পারছি না। অন্য কিছু লিখতে গিয়েও এখন নাম নিয়ে পড়তে হলো এটার জন্য। কালই বলতাম আপনাদের, তবে কিনা কাল থেকে ইন্টারনেট এর পায়ে গুনে গুনে একহাজার আটশ সাতষট্টি বার মাথা খোঁড়া স্বত্বেও তাঁর দয়া না হতে; বাধ্য হয়ে আজ অবধি অপেক্ষা করতে হলো।
ব্যাপারটা বলার আগে একটু গৌরচন্দ্রিকা প্রয়োজন। ঘটনাচক্রে আমার satellite ভদ্রলোকটির নাম -'পিনাকী'। এই নাম নিয়েই যত ঝামেলা। শিব ভক্ত বাবা-মা 'বাবা শিব' এর নামে নাম দিয়েছেন। অসুবিধা কিছুই নেই। অসুবিধা শুরু হলো যখন 'পিনাকী' থেকে সে একজন হিন্দিভাষীর মুখে প্রথম 'পিনাআআকী' হয়ে গেল। আমরা ওই অনাবশ্যক বাড়তি 'আ আ'গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতাম এর বেশি কিছু নয়।
কিন্তু এই হরিয়ানায় এসে নতুন সিমকার্ড নেওয়ার সময় যা হলো তাতে নামটা বদলে ফেলা নিয়ে প্রশ্ন জাগব জাগব করছে। একদিন সন্ধ্যায় ব্যাগ ঘাড়ে করে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি ফিরছি, পকেট এর ফোন চ্যাঁ চ্যাঁ করে উঠলো, অচেনা নম্বর, ধরলাম, বলে কিনা:
----"আপ পিঙ্কি মোন্ডাল কো জানতে হেঁ ক্যা?"
---"রং নম্বর", বলে রেখে দিলাম।
আবার কিছুক্ষণ পর একটি মিহি মেয়েলি গলা-
---"Do you know Pinki Mondal (পিঙ্কি মোন্ডাল), ma'm? "
---"No. I Don't. It's wrong number", বলে আবার রেখে দি। এ কি রে বাবা, লাইন লেগে গেছে উল্টো পাল্টা ফোন-এর।
তৃতীয়বার যখন এল ফোনটা, অপরপক্ষ কিছু বলার আগেই বললাম- কোত্থেকে বলছেন বলুন তো? তখন থেকে সরু মোটা গলায় 'পিঙ্কি মোন্ডাল' এর খোঁজ করছেন? পিঙ্কি মোন্ডাল আমার কেউ হয় না, কস্মিন কালেও কেউ ছিল না, আমি তাকে চিনি না।
এখানেই কথোপকথন শেষ হতে পারত। হয়নি যে আমাদের ভাগ্য ভালো। ওদিক থেকে আমার এই দাঁত খিঁচুনি অগ্রাহ্য করেই কুন্ঠিত গলায় বলে "জি, ম্যায় অমুক কোম্পানি সে বোল রহি হুঁ"।
তক্ষুনি আমার মাথায় বাল্ব জ্বলে ওঠে। অত্যন্ত বিগলিত গলায় ক্ষমা টমা চেয়ে বলি...... হ্যাঁ বোনটি, আমি তাকে বেশ ভালো করেই চিনি। দয়া করে আপনি যদি তার কানেকশন এর ব্যবস্থাটি যথাসাধ্য তাড়াতাড়ি করেন বড় সুবিধা হয়....ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষে তাকে সবিনয়ে জানিয়ে দিলাম, নামটা 'পিঙ্কি মোন্ডাল' নয় 'পি-না-কী ম-ণ্ড-ল'।
কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী নতুন সিমকার্ড নিতে গেলে ওই কোম্পানিরই সিমধারী অন্য কোনো একজনকে introduce করিয়ে দিতে হয়। পিনাকী-র ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিটি ছিলাম আমি। আর অবাঙালিদের মধ্যে 'পিনাকী' নামটা যথেষ্ট প্রচলিত নয় বলেই এই বিপত্তি।
সেই থেকে বেচারা অনেকের কাছেই 'পিনাকী' থেকে 'পিঙ্কি' হয়ে বড় মনকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এরপর এই নামের নানান অপভ্রংশ বেরিয়েছে।রিসেপশনে চিঠি এসেছে, ফোন করে সেই চিঠি নেবার জন্য এমন একজনকে ডাকছে যে নামের কেউ ল্যাবে নেই, প্রথম অক্ষরটা 'P' শুনে "আমার চিঠি হতে পারে" বলে তড়বড়িয়ে তাকে নিচে যেতে হয়েছে--- ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসবও এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু কালকের ঘটনাটাকে আপনারা কি বলবেন বলুন? কাল আমি দুপুরে ল্যাবে কাজ করছিলাম, জন প্রাণী নেই আমাদের ল্যাবে, পাশের ল্যাব গুলোয় দুচার জন আমারই মত হা-ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাদের আমারই মতো শনিবারের ছুটির দুপুরে মাংস-ভাত খেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ল্যাপটপ এ সিনেমা না দেখে ল্যাবে একগোছা টিউব-ফিউব নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে। স্বভাবতই মেজাজ খিঁচড়ে ছিল।
এমন সময় একজন এলেন, দুচারবার আমাদের ল্যাবে উঁকিঝুঁকি মারলেন, বুঝতেই পারলাম আমায় না অন্য কাউকে খুঁজছে মেয়েটি। এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমি উচ্চবাচ্চ্য করি না, আমায় কিছু জিজ্ঞাসা করলে তখন যা বলার বলি। কালও অপেক্ষা করলাম। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আর কাউকে না পেয়ে আমায় এসে সটান confidently জিজ্ঞাসা করলো- " পি না-আ-আ-কি দি, আপ লোগোঁ কা ইয়ে মেশিন ম্যায় use কর লুঁ? মুঝে দো-চার দিন use করনা হোগা, আপ লোগোঁকা প্রবলেম তো নেহি হ্যায়?"
একবার মনে হলো কাঁধ দুটো ধরে বেশ করে জাঁকিয়ে দিয়ে বলি-"ওরে, প্রবলেম হ্যায়!! বিলক্ষণ প্রবলেম হ্যায়!! প্রথমত: 'পি না-আ-আ-কি' নয় 'পিনাকী'। আর দ্বিতীয়ত এবং most importantly: আমার নাম 'পিনাকী' নয়, আমার নাম 'অর্পিতা'। অন্যের জিনিস চাইতে এলে তার নামটা না জেনে আসিস অন্ততঃ জেন্ডারটা ভুল করিস না। 'পিনাকী' হলো একটি বাংলা নাম, যা ছেলেদের জন্য applicable। বুঝলি? আর ভুল করবি?"
আমার ভিতু স্বভাববশতঃ এতসব আমি কিছুই করে উঠতে পারিনি। কিন্তু করতে ভীষন ইচ্ছা করছিল জানেন। কিছুক্ষণ হাঁ আ আ করে তার মখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার চেয়ে দ্বিগুন শক্তিশালী হরিয়ানী মেয়েটিকে মিষ্টি হেসে শুধু বললাম, "কিঁউ নেহি, use কর লো না, খালি হি তো হ্যায়।" মেয়েটি থ্যাঙ্ক ইউ- ট্যাঙ্ক ইউ বলে দারুন খুশি হয়ে চলে গেল। আর আমি কাজ-টাজ ফেলে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পাক্কা এক মিনিট দাঁত কিড়মিড় করলাম।
বিষয়টা হলো, আমরা দুজনে একই সাথে সবজায়গায় ঘুরঘুর করি, এবং একজনের নাম 'পিনাকী'। সুতরাং মেয়েটি ভেবেই নিয়েছে যে 'ই'-কারান্ত শব্দ যখন তখন ওটিই আমার নাম হওয়া সম্ভব।
নেহাত বাবা মায়ের দেওয়া নাম এবং এপর্যন্ত স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া সমস্ত প্রাণভোমরায় এই নামটিই চলছে তাই, নইলে এর পরেও কি নাম বদলে ফেলার কথা না ভেবে থাকা যায় বলুন?
এছাড়া সাধারণ নাম গুলোর মধ্যেও তো যথেচ্ছ ভাবে আ-কার যোগ হয়ে যাচ্ছে যেমন তেমন ভাবে। যেমন 'অর্পিতা' হয়ে গেছে 'আর্পিতা', 'সদাশিব' হয়ে গেছে 'সাদাশিভ', 'সৌমেন্দ্র' হয়ে যাচ্ছে 'সাউ-মেন্-দার' ইত্যাদি। মানে আমি যা বুঝেছি, নামের মধ্যে 'অ' অক্ষরের উচ্চারণ থাকলে বঙ্গদেশের বাইরে তার মায়া ত্যাগ করাই ভালো। এবং যুক্তাক্ষর-ওয়ালা নাম শেষপর্যন্ত কি দাঁড়াবে তারও কোনো predictive protocol নেই।
আমার অবশ্য এবিষয়ে একটা জরুরি প্রশ্ন আছে। ধরুন একটি বাঙালি মেয়ের নাম 'স্বাতী', তো তাকে একজন বাঙালি 'স্বাতী' ই বলবে। একজন অবাঙালি বলবে 'স্বো-য়া-তী'। কিন্তু যদি উল্টোটা হয়? মানে যদি একটি অবাঙালি মেয়ের নাম 'স্বাতী' হয় তখন? একজন বাঙালি হিসাবে আমার তাকে 'স্বাতী' বলা উচিত? নাকি অবাঙালি উচ্চারণ হিসাবে 'স্বো-য়া-তী'? নাকি তাকে refer করার সময় 'স্বাতী',আর তাকে ডাকার সময় 'স্বো-য়া-তী'? এই প্রশ্নটা খুব জরুরি আমার কাছে কারণ, একবার একজনের সাথে বেশ খানিকটা উত্তপ্ত আলোচনা স্বত্বেও কিছু ফয়সালা করে উঠতে পারিনি এখনো, যখন যা মনে হয় বলে ফেলি। জানি না কোনটা ঠিক? আমি তো আমার নাম 'আর্পিতা'- র জায়গায় 'অর্পিতা' শুনতেই পছন্দ করব বাঙালি বা অবাঙালি সবার থেকেই। কিন্তু কি আর করব, পছন্দমত তো সবকিছু হবে না, তাই দিব্যি সক্কলের 'আ আ আ র্পিতা'/ 'আ আ আ র্পিতা দি'- হয়েই কাটাচ্ছিলাম। সানন্দে মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু যদি আপনার নামটাকেই কেউ বেমালুম বদল করে দেয় তখন? মানে ধরুন আপনার নাম 'পুণ্ডরীকাক্ষ পুরকায়স্থ', আপনাকে কেউ হঠাত একদিন সকাল থেকে 'রামেশ্বর তর্কপঞ্চানন' বলে ডাকতে শুরু করলো তখন আপনার কেমন লাগবে?
কাল এরকমই একটা ঘটনা ঘটে গেল যেটা না লিখে পারছি না। অন্য কিছু লিখতে গিয়েও এখন নাম নিয়ে পড়তে হলো এটার জন্য। কালই বলতাম আপনাদের, তবে কিনা কাল থেকে ইন্টারনেট এর পায়ে গুনে গুনে একহাজার আটশ সাতষট্টি বার মাথা খোঁড়া স্বত্বেও তাঁর দয়া না হতে; বাধ্য হয়ে আজ অবধি অপেক্ষা করতে হলো।
ব্যাপারটা বলার আগে একটু গৌরচন্দ্রিকা প্রয়োজন। ঘটনাচক্রে আমার satellite ভদ্রলোকটির নাম -'পিনাকী'। এই নাম নিয়েই যত ঝামেলা। শিব ভক্ত বাবা-মা 'বাবা শিব' এর নামে নাম দিয়েছেন। অসুবিধা কিছুই নেই। অসুবিধা শুরু হলো যখন 'পিনাকী' থেকে সে একজন হিন্দিভাষীর মুখে প্রথম 'পিনাআআকী' হয়ে গেল। আমরা ওই অনাবশ্যক বাড়তি 'আ আ'গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতাম এর বেশি কিছু নয়।
কিন্তু এই হরিয়ানায় এসে নতুন সিমকার্ড নেওয়ার সময় যা হলো তাতে নামটা বদলে ফেলা নিয়ে প্রশ্ন জাগব জাগব করছে। একদিন সন্ধ্যায় ব্যাগ ঘাড়ে করে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি ফিরছি, পকেট এর ফোন চ্যাঁ চ্যাঁ করে উঠলো, অচেনা নম্বর, ধরলাম, বলে কিনা:
----"আপ পিঙ্কি মোন্ডাল কো জানতে হেঁ ক্যা?"
---"রং নম্বর", বলে রেখে দিলাম।
আবার কিছুক্ষণ পর একটি মিহি মেয়েলি গলা-
---"Do you know Pinki Mondal (পিঙ্কি মোন্ডাল), ma'm? "
---"No. I Don't. It's wrong number", বলে আবার রেখে দি। এ কি রে বাবা, লাইন লেগে গেছে উল্টো পাল্টা ফোন-এর।
তৃতীয়বার যখন এল ফোনটা, অপরপক্ষ কিছু বলার আগেই বললাম- কোত্থেকে বলছেন বলুন তো? তখন থেকে সরু মোটা গলায় 'পিঙ্কি মোন্ডাল' এর খোঁজ করছেন? পিঙ্কি মোন্ডাল আমার কেউ হয় না, কস্মিন কালেও কেউ ছিল না, আমি তাকে চিনি না।
এখানেই কথোপকথন শেষ হতে পারত। হয়নি যে আমাদের ভাগ্য ভালো। ওদিক থেকে আমার এই দাঁত খিঁচুনি অগ্রাহ্য করেই কুন্ঠিত গলায় বলে "জি, ম্যায় অমুক কোম্পানি সে বোল রহি হুঁ"।
তক্ষুনি আমার মাথায় বাল্ব জ্বলে ওঠে। অত্যন্ত বিগলিত গলায় ক্ষমা টমা চেয়ে বলি...... হ্যাঁ বোনটি, আমি তাকে বেশ ভালো করেই চিনি। দয়া করে আপনি যদি তার কানেকশন এর ব্যবস্থাটি যথাসাধ্য তাড়াতাড়ি করেন বড় সুবিধা হয়....ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষে তাকে সবিনয়ে জানিয়ে দিলাম, নামটা 'পিঙ্কি মোন্ডাল' নয় 'পি-না-কী ম-ণ্ড-ল'।
কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী নতুন সিমকার্ড নিতে গেলে ওই কোম্পানিরই সিমধারী অন্য কোনো একজনকে introduce করিয়ে দিতে হয়। পিনাকী-র ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিটি ছিলাম আমি। আর অবাঙালিদের মধ্যে 'পিনাকী' নামটা যথেষ্ট প্রচলিত নয় বলেই এই বিপত্তি।
সেই থেকে বেচারা অনেকের কাছেই 'পিনাকী' থেকে 'পিঙ্কি' হয়ে বড় মনকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এরপর এই নামের নানান অপভ্রংশ বেরিয়েছে।রিসেপশনে চিঠি এসেছে, ফোন করে সেই চিঠি নেবার জন্য এমন একজনকে ডাকছে যে নামের কেউ ল্যাবে নেই, প্রথম অক্ষরটা 'P' শুনে "আমার চিঠি হতে পারে" বলে তড়বড়িয়ে তাকে নিচে যেতে হয়েছে--- ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসবও এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু কালকের ঘটনাটাকে আপনারা কি বলবেন বলুন? কাল আমি দুপুরে ল্যাবে কাজ করছিলাম, জন প্রাণী নেই আমাদের ল্যাবে, পাশের ল্যাব গুলোয় দুচার জন আমারই মত হা-ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাদের আমারই মতো শনিবারের ছুটির দুপুরে মাংস-ভাত খেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ল্যাপটপ এ সিনেমা না দেখে ল্যাবে একগোছা টিউব-ফিউব নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে। স্বভাবতই মেজাজ খিঁচড়ে ছিল।
এমন সময় একজন এলেন, দুচারবার আমাদের ল্যাবে উঁকিঝুঁকি মারলেন, বুঝতেই পারলাম আমায় না অন্য কাউকে খুঁজছে মেয়েটি। এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমি উচ্চবাচ্চ্য করি না, আমায় কিছু জিজ্ঞাসা করলে তখন যা বলার বলি। কালও অপেক্ষা করলাম। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আর কাউকে না পেয়ে আমায় এসে সটান confidently জিজ্ঞাসা করলো- " পি না-আ-আ-কি দি, আপ লোগোঁ কা ইয়ে মেশিন ম্যায় use কর লুঁ? মুঝে দো-চার দিন use করনা হোগা, আপ লোগোঁকা প্রবলেম তো নেহি হ্যায়?"
একবার মনে হলো কাঁধ দুটো ধরে বেশ করে জাঁকিয়ে দিয়ে বলি-"ওরে, প্রবলেম হ্যায়!! বিলক্ষণ প্রবলেম হ্যায়!! প্রথমত: 'পি না-আ-আ-কি' নয় 'পিনাকী'। আর দ্বিতীয়ত এবং most importantly: আমার নাম 'পিনাকী' নয়, আমার নাম 'অর্পিতা'। অন্যের জিনিস চাইতে এলে তার নামটা না জেনে আসিস অন্ততঃ জেন্ডারটা ভুল করিস না। 'পিনাকী' হলো একটি বাংলা নাম, যা ছেলেদের জন্য applicable। বুঝলি? আর ভুল করবি?"
আমার ভিতু স্বভাববশতঃ এতসব আমি কিছুই করে উঠতে পারিনি। কিন্তু করতে ভীষন ইচ্ছা করছিল জানেন। কিছুক্ষণ হাঁ আ আ করে তার মখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার চেয়ে দ্বিগুন শক্তিশালী হরিয়ানী মেয়েটিকে মিষ্টি হেসে শুধু বললাম, "কিঁউ নেহি, use কর লো না, খালি হি তো হ্যায়।" মেয়েটি থ্যাঙ্ক ইউ- ট্যাঙ্ক ইউ বলে দারুন খুশি হয়ে চলে গেল। আর আমি কাজ-টাজ ফেলে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পাক্কা এক মিনিট দাঁত কিড়মিড় করলাম।
বিষয়টা হলো, আমরা দুজনে একই সাথে সবজায়গায় ঘুরঘুর করি, এবং একজনের নাম 'পিনাকী'। সুতরাং মেয়েটি ভেবেই নিয়েছে যে 'ই'-কারান্ত শব্দ যখন তখন ওটিই আমার নাম হওয়া সম্ভব।
নেহাত বাবা মায়ের দেওয়া নাম এবং এপর্যন্ত স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া সমস্ত প্রাণভোমরায় এই নামটিই চলছে তাই, নইলে এর পরেও কি নাম বদলে ফেলার কথা না ভেবে থাকা যায় বলুন?
0 comments:
Post a Comment