কত বার কত রকম ভাবে কোথাও যাওয়া ক্যানসেল হতে পারে বলে আপনাদের মনে হয়? শরীর খারাপ, ট্রেনের টিকিট কনফার্ম না হওয়া, ছুটি না পাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি যেভাবেই হোক না কেন ব্যাপারটা খুবই খারাপ সে সম্পর্কে কিছু বলার নেই। ধরুন, চাঁদিফাটা গরমে পাড়া-প্রতিবেশী, অফিস কলিগ, বন্ধু-বান্ধবদের মনে খানিক ঈর্ষার উদ্রেক করার জন্য তাঁদের 'উফ এই গরমে তো আর পারা যাচ্ছে না' উক্তির উত্তরে ছোট্ট করে জানিয়ে দিলেন যে 'যা বলেছ, আমরা তো তাই ভাবছি পরের মাসে একটু সিমলা ঘুরে আসি, তোমরাও ঘুরে এসো কোথাও থেকে'। যদিও আপনি বেশ ভালো করেই জানেন যে তাঁদের এক্ষুনি কোথাও যাবার প্ল্যানিং নেই। বাঙালিদের লিস্টে সিমলার জায়গা পুরীর ঠিক পরেই বলে আমার মনে হয়। তাই সিমলা বললাম। আপনি "গরম লাগে তো তিব্বত গেলেই পারো "- ও বলতে পারেন। তারপর পরের একমাস ধরে 'জানো, আজ টিকিটটা বুক করেই ফেললাম, সেকেন্ড AC ই করলাম গো, যা গরম, থার্ড AC তে বড্ড ঘেঁষাঘেঁষি' (এখানে আপনি জানেন যাঁকে বলছেন তিনি তাঁর লাস্ট ট্রিপটাতে থার্ড AC তে যাতায়াত করেছেন), 'যে হোটেলটা বুক করলাম না.... যা ভিউ.....উফ, হ্যাঁ নিশ্চয়ই- ছবি তো দেখাবই', 'নেট এ তো দেখলাম দুর্ধর্ষ রেটিং', 'এবার একটা টেলি-লেন্স না হলেই নয় বুঝলে'......ইত্যাদি বলে টলে গরমে চারপাশের লোকজনকে আরো একটু গরম করে ফেললেন। বাক্স-প্যাঁটরা, দুটো ক্যামেরা, সানগ্লাস, জেলুসিল, এভোমিন ইত্যাদি গুছিয়ে আপনি তো রেডি। দুটো ক্যামেরা বললাম কারণ, বেশি দামী ক্যামেরাটা গলায় ঝুলিয়ে বা সত্যজিত রায় এর ভঙ্গি নকল করে চোখে লাগিয়ে, অন্য ক্যামেরাটা দিয়ে সঙ্গীকে বলে একটা অন্ততঃ ছবি তুলিয়ে না রাখলে ফিরে এসে ফেসবুকে লাগাবেন কি? এমতাবস্থায় যাওয়ার ঠিক তিনদিন আগে সকালবেলায় আপনার কাছে খবর এল যে- বসের ইতালির ট্রিপ ক্যানসেল হয়েছে আর তিনি তাই আপনার পেন্ডিং assessment এর ডেট তা এমন দিনে-এমন সময় ফেলেছেন যে দিন-যে সময় আপনার সিমলার ম্যালে ১৬ ডিগ্রী ঠান্ডায় মাঙ্কি ক্যাপ পরে বড়মাসির জন্য উলের চাদর কেনার কথা। উফ ভাল্লাগেনা। এরকম যেন কারো সাথে না হয়, বসেরও না। বসের ট্রিপ ক্যানসেল মানেই তো আপনার ট্রিপ ক্যানসেল। তারপরে তো উল্টোদিকের লোকজন, যাদের আপনি এতদিন গরম করে এসেছেন তাঁরা তো 'কি রে তোরা কবে যেন যাচ্ছিস'? 'তোমাদের এই সপ্তাহেই যাবার কথাছিল না, কি হলো'? 'এমা আ আ আ ! ক্যানসেল হলে গেল'? 'ইশ, কি আর করবে পরে একটা প্ল্যানিং কোরো'.........এইসব নুনগুলো ছিটিয়েই চলবেন। বুঝি বুঝি, এসব দুঃখের কথা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝি।
যেজন্য আজ আপনার এবং অবশ্যই আমারও পুরনো দুঃখ কষ্টগুলো বলে জ্বালা জুড়োলাম তা হলো আজ আরো একবার এরকম ঘটনা ঘটেছে। অবশ্যই আমার সাথে নয়। সেরকম হলে তো আমি এই পোস্ট লেখার মত অবস্থায় থাকতাম না। হয়েছে আমার প্রিয় দুচারজন জুনিয়রের সাথে। দিল্লির আশেপাশে থাকার সুবিধা হলো ১২ ঘন্টার মধ্যে হিমালয়, থর মরুভূমি, দাক্ষিনাত্যের মালভূমি, গাঙ্গেয় সমভূমি ইত্যাদি যেসব ধরনের ভুপ্রকৃতির কথা আপনি ক্লাস এইটের ভারতবর্ষের ভূগোল পড়ার সময় পড়েছিলেন তার যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন। "দেখে শুনে বেছে নিলেই হলো"। বেচারারাও তাই নিয়েছিল। গরম এর কথা মাথায় রেখে অবশ্যই হিমালয়। ৫-৬ জনের গ্রুপ। যথাসাধ্য চুপকে চুপকে সব ব্যবস্থা হচ্ছিল। যাতে কোনদিক থেকে কোনো ব্যাগড়া না আসে। কিন্তু মারে হরি রাখে কে? ব্যাগড়া এল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিক থেকে। যেদিন যাওয়া হবে তার আগেরদিন হঠাতই একজনের বাড়ির লোকজন বেঁকে বসলো। মায়ের বক্তব্য তোমরা এই কয়েকজন যাবে? কোনো বড়রা যাবে না? তা কিকরে হয়? বড়রা না গেলে তো তোমার যাওয়া হবে না। বুঝুন একবার! যাকে বলা হছে সেই মেয়েটির ৫-৬ মাস পর বিয়ে এবং পাত্রটি তার নিজে পছন্দ করা। তাতে কারো কোনো আপত্তি ছিল না। কেজানে হিমালয়ে বেড়াতে যাওয়া আর বিয়ের পাত্র পছন্দ করার মধ্যে কোনটা বেশি বিপজ্জনক? তো তারা তো আমায় ধরে পড়ল কারণ আমি কিনা তাদের চেয়ে বছর চারেক এর বড় বয়সে। আমি গেলে নাকি তাদের যাওয়া হয়। ভাবলাম হায় ভগবান শেষ পর্যন্ত আমার মত একটা দুর্দান্ত ট্যালার ভরসায় কিনা কেউ যাবে? যাই হোক, ট্রিপ ক্যানসেল! এখন এই বিকেলে দেখছি তারা মুখ চুন করে ক্যান্টিনে চা খেতে যাচ্ছে। আর চোখে চোখ পড়লেই ভেবলুর মত হাসছে। সত্যি খারাপ লাগছে আমার, যত না ট্রিপ ক্যানসেল হয়েছে বলে, তার চেয়েও ওরা বড় হতে এখনো কত দেরী এই ভেবে।
আরো একবার জানেন, গত শীতে ল্যাব থেকে তৃতীয়বারের মত প্ল্যান হলো জয়্শলমীর যাবার। একমাস ধরে প্ল্যানিং। ট্রেনের - হোটেলের বুকিং কমপ্লিট। আমি তখনও ভাবিনি যে যাওয়াটা শেষ অবধি হবে। কারণ গত দুইবারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে এই স্টেজেও ক্যানসেল হতে পারে। তা আমি নিজেকে যথাসম্ভব নিরুত্তাপই রেখেছিলাম। কিন্তু যাবার আগের দিন যখন কে কোন খাবারটা নেবে, ক্যান্টিনে কতগুলো রুটি প্যাক করাতে হবে পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়ালো তখন মনে একটু একটু আশা জাগলো। কিন্তু আমি কি ভেবে ঐদিন রাতেও জিনিসপত্র প্যাক করলাম না। মনে ক্ষীন আশা গত দুবারের অভিজ্ঞতা কি এত সহজে বিফল যাবে? আমার প্যাক করতে ১ ঘন্টা লাগবে, যদি সত্যি সত্যি যাওয়াটা হয় তো ১ ঘন্টা আগে এসে প্যাক করে নেব এই ভেবে সকালে ল্যাবে গিয়ে দেখি বেচারী এই মেয়েটিই যে কিনা এখনো বড় হয়নি, সে নিচে গেছে রুটির অর্ডার দিতে, এবং যে যার কাজ-টাজ তাড়াহুড়ো করে গুছিয়ে নিচ্ছে। কান-টান চুলকে ভাবলাম নাহ প্যাকিংটা করে আসলেই ভালো হত। বিকেলে তাড়াহুড়ো করতে হবে। ল্যাবের কাজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেটাও ম্যানেজ করতে হবে। ভেবেই ক্লান্ত হয়ে দুচার ঢোঁক জল খেয়ে কাজে লাগতে যাব, এমন সময় আমার অভিজ্ঞতা কে ঠিক প্রমাণ করে একজন আবির্ভূত হলেন আর ঘোষণা করলেন যে তাঁর পেপার এর কমেন্ট এসেছে। কিছু experiment করে অমুক ডেট এর মধ্যে ছাড়তে হবে। তাই সে যাবে না। কিন্তু তাতে আমাদের যাওয়া আটকাচ্ছে না। ব্যস হয়ে গেল। সবাই বাগবিতন্ডা শুরু করলো। এসব ক্ষেত্রে যা হয় আর কি- " আরে দুদিনের ট্রিপ, এসে শুরু করবে experiment", "আমরা সবাই মিলে ডেটা তুলে দেব"......ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি নিশ্চিন্ত মনে কাজ শুরু করলাম নতুন করে। আর সন্ধ্যে বেলা ল্যাব এর white বোর্ড এ লাল মার্কার পেন দিয়ে আমরা সবাই মিলে- বালিয়াড়ি, উট, কাঁটাগাছ, ট্রেন ইত্যাদি এঁকে নিচে 'হ্যাপি হলিডে' লিখে যে যার বাড়ি চলে গেলাম। ও হ্যাঁ , আমাদের ল্যাবের ছোট্ট মেয়েটিকে আর একবার নিচে ক্যান্টিনে যেতে হয়েছিল রুটির অর্ডার ক্যানসেল করতে।
যেজন্য আজ আপনার এবং অবশ্যই আমারও পুরনো দুঃখ কষ্টগুলো বলে জ্বালা জুড়োলাম তা হলো আজ আরো একবার এরকম ঘটনা ঘটেছে। অবশ্যই আমার সাথে নয়। সেরকম হলে তো আমি এই পোস্ট লেখার মত অবস্থায় থাকতাম না। হয়েছে আমার প্রিয় দুচারজন জুনিয়রের সাথে। দিল্লির আশেপাশে থাকার সুবিধা হলো ১২ ঘন্টার মধ্যে হিমালয়, থর মরুভূমি, দাক্ষিনাত্যের মালভূমি, গাঙ্গেয় সমভূমি ইত্যাদি যেসব ধরনের ভুপ্রকৃতির কথা আপনি ক্লাস এইটের ভারতবর্ষের ভূগোল পড়ার সময় পড়েছিলেন তার যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন। "দেখে শুনে বেছে নিলেই হলো"। বেচারারাও তাই নিয়েছিল। গরম এর কথা মাথায় রেখে অবশ্যই হিমালয়। ৫-৬ জনের গ্রুপ। যথাসাধ্য চুপকে চুপকে সব ব্যবস্থা হচ্ছিল। যাতে কোনদিক থেকে কোনো ব্যাগড়া না আসে। কিন্তু মারে হরি রাখে কে? ব্যাগড়া এল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিক থেকে। যেদিন যাওয়া হবে তার আগেরদিন হঠাতই একজনের বাড়ির লোকজন বেঁকে বসলো। মায়ের বক্তব্য তোমরা এই কয়েকজন যাবে? কোনো বড়রা যাবে না? তা কিকরে হয়? বড়রা না গেলে তো তোমার যাওয়া হবে না। বুঝুন একবার! যাকে বলা হছে সেই মেয়েটির ৫-৬ মাস পর বিয়ে এবং পাত্রটি তার নিজে পছন্দ করা। তাতে কারো কোনো আপত্তি ছিল না। কেজানে হিমালয়ে বেড়াতে যাওয়া আর বিয়ের পাত্র পছন্দ করার মধ্যে কোনটা বেশি বিপজ্জনক? তো তারা তো আমায় ধরে পড়ল কারণ আমি কিনা তাদের চেয়ে বছর চারেক এর বড় বয়সে। আমি গেলে নাকি তাদের যাওয়া হয়। ভাবলাম হায় ভগবান শেষ পর্যন্ত আমার মত একটা দুর্দান্ত ট্যালার ভরসায় কিনা কেউ যাবে? যাই হোক, ট্রিপ ক্যানসেল! এখন এই বিকেলে দেখছি তারা মুখ চুন করে ক্যান্টিনে চা খেতে যাচ্ছে। আর চোখে চোখ পড়লেই ভেবলুর মত হাসছে। সত্যি খারাপ লাগছে আমার, যত না ট্রিপ ক্যানসেল হয়েছে বলে, তার চেয়েও ওরা বড় হতে এখনো কত দেরী এই ভেবে।
আরো একবার জানেন, গত শীতে ল্যাব থেকে তৃতীয়বারের মত প্ল্যান হলো জয়্শলমীর যাবার। একমাস ধরে প্ল্যানিং। ট্রেনের - হোটেলের বুকিং কমপ্লিট। আমি তখনও ভাবিনি যে যাওয়াটা শেষ অবধি হবে। কারণ গত দুইবারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে এই স্টেজেও ক্যানসেল হতে পারে। তা আমি নিজেকে যথাসম্ভব নিরুত্তাপই রেখেছিলাম। কিন্তু যাবার আগের দিন যখন কে কোন খাবারটা নেবে, ক্যান্টিনে কতগুলো রুটি প্যাক করাতে হবে পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়ালো তখন মনে একটু একটু আশা জাগলো। কিন্তু আমি কি ভেবে ঐদিন রাতেও জিনিসপত্র প্যাক করলাম না। মনে ক্ষীন আশা গত দুবারের অভিজ্ঞতা কি এত সহজে বিফল যাবে? আমার প্যাক করতে ১ ঘন্টা লাগবে, যদি সত্যি সত্যি যাওয়াটা হয় তো ১ ঘন্টা আগে এসে প্যাক করে নেব এই ভেবে সকালে ল্যাবে গিয়ে দেখি বেচারী এই মেয়েটিই যে কিনা এখনো বড় হয়নি, সে নিচে গেছে রুটির অর্ডার দিতে, এবং যে যার কাজ-টাজ তাড়াহুড়ো করে গুছিয়ে নিচ্ছে। কান-টান চুলকে ভাবলাম নাহ প্যাকিংটা করে আসলেই ভালো হত। বিকেলে তাড়াহুড়ো করতে হবে। ল্যাবের কাজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেটাও ম্যানেজ করতে হবে। ভেবেই ক্লান্ত হয়ে দুচার ঢোঁক জল খেয়ে কাজে লাগতে যাব, এমন সময় আমার অভিজ্ঞতা কে ঠিক প্রমাণ করে একজন আবির্ভূত হলেন আর ঘোষণা করলেন যে তাঁর পেপার এর কমেন্ট এসেছে। কিছু experiment করে অমুক ডেট এর মধ্যে ছাড়তে হবে। তাই সে যাবে না। কিন্তু তাতে আমাদের যাওয়া আটকাচ্ছে না। ব্যস হয়ে গেল। সবাই বাগবিতন্ডা শুরু করলো। এসব ক্ষেত্রে যা হয় আর কি- " আরে দুদিনের ট্রিপ, এসে শুরু করবে experiment", "আমরা সবাই মিলে ডেটা তুলে দেব"......ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি নিশ্চিন্ত মনে কাজ শুরু করলাম নতুন করে। আর সন্ধ্যে বেলা ল্যাব এর white বোর্ড এ লাল মার্কার পেন দিয়ে আমরা সবাই মিলে- বালিয়াড়ি, উট, কাঁটাগাছ, ট্রেন ইত্যাদি এঁকে নিচে 'হ্যাপি হলিডে' লিখে যে যার বাড়ি চলে গেলাম। ও হ্যাঁ , আমাদের ল্যাবের ছোট্ট মেয়েটিকে আর একবার নিচে ক্যান্টিনে যেতে হয়েছিল রুটির অর্ডার ক্যানসেল করতে।
0 comments:
Post a Comment