Monday, 30 June 2014

Thank you

I accused you, four days ago
Because nothing was according to my wish
I accused you for your ignorance to me
I accused you for my fate chosen by you

                           ......................................But that time I didn't see you around me

I asked for your help, three days ago
Because I was afraid to walk alone
I cried for my destination
I prayed to touch the finishing line

                          ...................................... Then I felt your presence around me

I wished your might, two days ago,
Because I lack the strength to achieve my goal
I plead to make me strong enough
To walk through this long way inside the dense wood
  
                          ...................................... Only then I noticed your eyes facing to me

Yesterday I requested you to be with me
Because, I am not wise enough to select the right footprint
I implore to show me the path with your footprints only
That I can follow without the slightest hesitation

                          ......................................At that moment, your holy smile assured me

Today I am thanking you for everything
Because you have selected me to pour your blessings
I am thanking you for permitting me to know you better
I am thanking you for providing me all the right things at the right time

            .............Today I can feel my hand is in the warmth of your compassionate hand

An eternal bliss is entering into my deepest insight
Because I know there is-
No destination to reach
No goal to achieve
No sorrow to bother
No glee to attain
Just to enjoy the journey, nothing else

Now I know, you will embrace me in your secred arm and I will sink in an endless peace

Sunday, 29 June 2014

কি বিভ্রাট! কি বিভ্রাট! বাপরে!!

পোস্টটার নাম দেব ভেবেছিলাম 'নামাবলী' নয়তো 'নামসংকীর্তন'। শেষ পর্যন্ত এটাও ভেবে ফেলেছিলাম যে লিখব.....''ওরে আমার নামটা অন্ততঃ ঠিক করে বল"। কাল থেকেই মেজাজটা টং হয়ে আছে। মানুষের নামটা যদি ঠিক করে উচ্চারণ না করা হয় তবে যার নাম তার খারাপ লাগে না বলুন? এমনিতেই বাংলা নাম হিন্দিভাষী লোকজনদের কাছে অনেকসময়ই হিব্রু লাগে। 'তন্ময়িতা' নামের একটি মিষ্টি মেয়েকে চিনতাম, বেচারার বাবা-মা জন্মের সময় প্রচুর ঝাড়াই বাছাই করে এত সুন্দর একটি নাম দিয়েছিলেন। বেচারা হরিয়ানায় এসে প্রথমদিন নাম বলতেই চারপাশের লোকজন চারবার হোঁচট খেল, তান....তানমো...ক্যা? ...তানমো.. ইতা? ইয়ে ক্যায়্সা নাম হ্যায়? meaning ক্যা ইস নামকা?...অর কোই ছোটা নাম নেহি হ্যায় তুমহারা?.....ব্যাস হয়ে গেল সেদিন থেকে তার এত সাধের নামের দফারফা। সেই দুঃখেই কি না জানিনা বেচারা ফেসবুকেও দেখি ডাক নামেই চালাচ্ছে।

এছাড়া সাধারণ নাম গুলোর মধ্যেও তো যথেচ্ছ ভাবে আ-কার যোগ হয়ে যাচ্ছে যেমন তেমন ভাবে। যেমন 'অর্পিতা' হয়ে গেছে 'আর্পিতা', 'সদাশিব' হয়ে গেছে 'সাদাশিভ', 'সৌমেন্দ্র' হয়ে যাচ্ছে 'সাউ-মেন্-দার' ইত্যাদি। মানে আমি যা বুঝেছি, নামের মধ্যে 'অ' অক্ষরের উচ্চারণ থাকলে বঙ্গদেশের বাইরে তার মায়া ত্যাগ করাই ভালো। এবং যুক্তাক্ষর-ওয়ালা নাম শেষপর্যন্ত কি দাঁড়াবে তারও কোনো predictive protocol নেই।

আমার অবশ্য এবিষয়ে একটা জরুরি প্রশ্ন আছে। ধরুন একটি বাঙালি মেয়ের নাম 'স্বাতী', তো তাকে একজন বাঙালি 'স্বাতী' ই বলবে। একজন অবাঙালি বলবে 'স্বো-য়া-তী'। কিন্তু যদি উল্টোটা হয়? মানে যদি একটি অবাঙালি মেয়ের নাম 'স্বাতী' হয় তখন? একজন বাঙালি হিসাবে আমার তাকে 'স্বাতী' বলা উচিত? নাকি অবাঙালি উচ্চারণ হিসাবে 'স্বো-য়া-তী'? নাকি তাকে refer করার সময় 'স্বাতী',আর তাকে ডাকার সময় 'স্বো-য়া-তী'? এই প্রশ্নটা খুব জরুরি আমার কাছে কারণ, একবার একজনের সাথে বেশ খানিকটা উত্তপ্ত আলোচনা স্বত্বেও কিছু ফয়সালা করে উঠতে পারিনি এখনো, যখন যা মনে হয় বলে ফেলি। জানি না কোনটা ঠিক? আমি তো আমার নাম 'আর্পিতা'- র জায়গায় 'অর্পিতা' শুনতেই পছন্দ করব বাঙালি বা অবাঙালি সবার থেকেই। কিন্তু কি আর করব, পছন্দমত তো সবকিছু হবে না, তাই দিব্যি সক্কলের 'আ আ আ র্পিতা'/ 'আ আ আ র্পিতা দি'- হয়েই কাটাচ্ছিলাম। সানন্দে মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু যদি আপনার নামটাকেই কেউ বেমালুম বদল করে দেয় তখন? মানে ধরুন আপনার নাম 'পুণ্ডরীকাক্ষ পুরকায়স্থ', আপনাকে কেউ হঠাত একদিন সকাল থেকে 'রামেশ্বর তর্কপঞ্চানন' বলে ডাকতে শুরু করলো তখন আপনার কেমন লাগবে?

কাল এরকমই একটা ঘটনা ঘটে গেল যেটা না লিখে পারছি না। অন্য কিছু লিখতে গিয়েও এখন নাম নিয়ে পড়তে হলো এটার জন্য। কালই বলতাম আপনাদের, তবে কিনা কাল থেকে ইন্টারনেট এর পায়ে গুনে গুনে একহাজার আটশ সাতষট্টি বার মাথা খোঁড়া স্বত্বেও তাঁর দয়া না হতে; বাধ্য হয়ে আজ অবধি অপেক্ষা করতে হলো।
ব্যাপারটা বলার আগে একটু গৌরচন্দ্রিকা প্রয়োজন। ঘটনাচক্রে আমার satellite ভদ্রলোকটির নাম -'পিনাকী'। এই নাম নিয়েই যত ঝামেলা। শিব ভক্ত বাবা-মা 'বাবা শিব' এর নামে নাম দিয়েছেন। অসুবিধা কিছুই নেই। অসুবিধা শুরু হলো যখন 'পিনাকী' থেকে সে একজন হিন্দিভাষীর মুখে প্রথম 'পিনাআআকী' হয়ে গেল। আমরা ওই অনাবশ্যক বাড়তি 'আ আ'গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতাম এর বেশি কিছু নয়।

কিন্তু এই হরিয়ানায় এসে নতুন সিমকার্ড নেওয়ার সময় যা হলো তাতে নামটা বদলে ফেলা নিয়ে প্রশ্ন জাগব জাগব করছে। একদিন সন্ধ্যায় ব্যাগ ঘাড়ে করে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি ফিরছি, পকেট এর ফোন চ্যাঁ চ্যাঁ করে উঠলো, অচেনা নম্বর, ধরলাম, বলে কিনা:
----"আপ পিঙ্কি মোন্ডাল কো জানতে হেঁ ক্যা?"
---"রং নম্বর", বলে রেখে দিলাম।

আবার কিছুক্ষণ পর একটি মিহি মেয়েলি গলা-
---"Do you know Pinki Mondal (পিঙ্কি মোন্ডাল), ma'm? "
---"No. I Don't. It's wrong number", বলে আবার রেখে দি। এ কি রে বাবা, লাইন লেগে গেছে উল্টো পাল্টা ফোন-এর।

তৃতীয়বার যখন এল ফোনটা, অপরপক্ষ কিছু বলার আগেই বললাম- কোত্থেকে বলছেন বলুন তো? তখন থেকে সরু মোটা গলায় 'পিঙ্কি মোন্ডাল' এর খোঁজ করছেন? পিঙ্কি মোন্ডাল আমার কেউ হয় না, কস্মিন কালেও কেউ ছিল না, আমি তাকে চিনি না।

এখানেই কথোপকথন শেষ হতে পারত। হয়নি যে আমাদের ভাগ্য ভালো। ওদিক থেকে আমার এই দাঁত খিঁচুনি অগ্রাহ্য করেই কুন্ঠিত গলায় বলে "জি, ম্যায় অমুক কোম্পানি সে বোল রহি হুঁ"।

তক্ষুনি আমার মাথায় বাল্ব জ্বলে ওঠে। অত্যন্ত বিগলিত গলায় ক্ষমা টমা চেয়ে বলি...... হ্যাঁ বোনটি, আমি তাকে বেশ ভালো করেই চিনি। দয়া করে আপনি যদি তার কানেকশন এর ব্যবস্থাটি যথাসাধ্য তাড়াতাড়ি করেন বড় সুবিধা হয়....ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষে তাকে সবিনয়ে জানিয়ে দিলাম, নামটা 'পিঙ্কি মোন্ডাল' নয় 'পি-না-কী ম-ণ্ড-ল'।
কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী নতুন সিমকার্ড নিতে গেলে ওই কোম্পানিরই সিমধারী অন্য কোনো একজনকে introduce করিয়ে দিতে হয়। পিনাকী-র ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিটি ছিলাম আমি। আর অবাঙালিদের মধ্যে 'পিনাকী' নামটা যথেষ্ট প্রচলিত নয় বলেই এই বিপত্তি।
সেই থেকে বেচারা অনেকের কাছেই 'পিনাকী' থেকে 'পিঙ্কি' হয়ে বড় মনকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এরপর এই নামের নানান অপভ্রংশ বেরিয়েছে।রিসেপশনে চিঠি এসেছে, ফোন করে সেই চিঠি নেবার জন্য এমন একজনকে ডাকছে যে নামের কেউ ল্যাবে নেই, প্রথম অক্ষরটা  'P' শুনে "আমার চিঠি হতে পারে" বলে তড়বড়িয়ে তাকে নিচে যেতে হয়েছে--- ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসবও এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু কালকের ঘটনাটাকে আপনারা কি বলবেন বলুন? কাল আমি দুপুরে ল্যাবে কাজ করছিলাম, জন প্রাণী নেই আমাদের ল্যাবে, পাশের ল্যাব গুলোয় দুচার জন আমারই মত হা-ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাদের আমারই মতো শনিবারের ছুটির দুপুরে মাংস-ভাত খেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ল্যাপটপ এ সিনেমা না দেখে ল্যাবে একগোছা টিউব-ফিউব নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে। স্বভাবতই মেজাজ খিঁচড়ে ছিল।

এমন সময় একজন এলেন, দুচারবার আমাদের ল্যাবে উঁকিঝুঁকি মারলেন, বুঝতেই পারলাম আমায় না অন্য কাউকে খুঁজছে মেয়েটি। এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমি উচ্চবাচ্চ্য করি না, আমায় কিছু জিজ্ঞাসা করলে তখন যা বলার বলি। কালও অপেক্ষা করলাম। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আর কাউকে না পেয়ে আমায় এসে সটান confidently জিজ্ঞাসা করলো- " পি না-আ-আ-কি দি, আপ লোগোঁ কা ইয়ে মেশিন ম্যায় use কর লুঁ? মুঝে দো-চার দিন use করনা হোগা, আপ লোগোঁকা প্রবলেম তো নেহি হ্যায়?"

একবার মনে হলো কাঁধ দুটো ধরে বেশ করে জাঁকিয়ে দিয়ে বলি-"ওরে, প্রবলেম হ্যায়!! বিলক্ষণ প্রবলেম হ্যায়!! প্রথমত: 'পি না-আ-আ-কি' নয় 'পিনাকী'। আর দ্বিতীয়ত এবং most importantly: আমার নাম 'পিনাকী' নয়, আমার নাম 'অর্পিতা'। অন্যের জিনিস চাইতে এলে তার নামটা না জেনে আসিস অন্ততঃ জেন্ডারটা ভুল করিস না। 'পিনাকী' হলো একটি বাংলা নাম, যা ছেলেদের জন্য applicable। বুঝলি? আর ভুল করবি?"

আমার ভিতু স্বভাববশতঃ এতসব আমি কিছুই করে উঠতে পারিনি। কিন্তু করতে ভীষন ইচ্ছা করছিল জানেন। কিছুক্ষণ হাঁ আ আ করে তার মখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার চেয়ে দ্বিগুন শক্তিশালী হরিয়ানী মেয়েটিকে মিষ্টি হেসে শুধু বললাম, "কিঁউ নেহি, use কর লো না, খালি হি তো হ্যায়।" মেয়েটি থ্যাঙ্ক ইউ- ট্যাঙ্ক ইউ বলে দারুন খুশি হয়ে চলে গেল। আর আমি কাজ-টাজ ফেলে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পাক্কা এক মিনিট দাঁত কিড়মিড় করলাম।

বিষয়টা হলো, আমরা দুজনে একই সাথে সবজায়গায় ঘুরঘুর করি, এবং একজনের নাম 'পিনাকী'। সুতরাং মেয়েটি ভেবেই নিয়েছে যে 'ই'-কারান্ত শব্দ যখন তখন ওটিই আমার নাম হওয়া সম্ভব।

নেহাত বাবা মায়ের দেওয়া নাম এবং এপর্যন্ত স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া সমস্ত প্রাণভোমরায় এই নামটিই চলছে তাই, নইলে এর পরেও কি নাম বদলে ফেলার কথা না ভেবে থাকা যায় বলুন?

Friday, 27 June 2014

খাই খাই

হ্যাঁ হ্যাঁ এখনও বেঁচেই আছি। পরশুর ম্যারাথন হাবিজাবি কাজকর্মের পর রাত তিনটের সময় বাড়ি ফিরে কাল ফের সকালে হাই তুলতে তুলতে বহাল তবিয়তে চলে এসেছি। ঠিক যা ভেবেছিলাম, পরশু রাতে ঘুমোতে যাবার সময় ঘুমের থেকে খিদেটাই বেশি পাচ্ছিল। আর তখনই নানা রকম ভালো ভালো খাবার-দাবারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ঠিক এটাই হয় না আপনাদেরও? যখন হাতের কাছে খাবার মত কিচ্ছু থাকে না, ঠিক তখনই আপনি কবে কোন দোকানে এক প্লেট দেবভোগ্য বিরিয়ানি খেয়েছিলেন, কোন দোকানের মাটন চাঁবটা জাস্ট মিস করা যায় না, আরো কোথাকার নানান সব দেশী-বিদেশী খাবারদাবার, নিদেন পক্ষে পাড়ার মোড়ের ফুচকা-আলুকাবলি-জিলিপি-বেগুনি সব ঠিক ওই সময়টার জন্যই যেন অপেক্ষা করে থাকে আপনার মাথায় ভিড় করবে বলে। আমারও করছিল। মা কি কি দারুন দারুন সব স্বর্গীয় খাবার-দাবার বানায়, জ্যাঠিমার নানান সব স্পেশাল ডিশ, এছাড়া pizza-পেস্ট্রী, বাইরের অন্য দোকানের অনবদ্য সব ভোজ্যবস্তু ইত্যাদি-প্রভৃতি (উফফ খিদে পেয়ে যাচ্ছে আবার। সকালে উঠতে মারাত্মক রকম দেরী হয়ে গেছিল বলে, যা অবশ্য রোজ-রোজই হয়ে থাকে নির্লজ্জের মত, দুটো বুড়ো আঙ্গুলের সাইজের কলা ছাড়া কিছু জোটেনি) নানান কিছু মনে পড়ে মনটা এমন ঝিরকুটে মেরে গেল যে তখন আর কিছুতেই ক্রিম-ক্র্যাকার বিস্কুট চিবোতে ইচ্ছা করলো না, ঢক ঢক করে খানিকটা জল খেয়ে শুয়ে শুয়ে ভালো ভালো খাবারের স্বপ্ন দেখতে লাগলাম।

সেই ইস্তক বড় খাই-খাই করছে মনটা। এই কিছুক্ষণ আগেই Domino's Pizza র সাইটে ঢুকে মেনু দেখছিলাম জানেন। এমন বিচ্ছিরি জায়গায় থাকি যে ডমিনো'স এখানে ডেলিভারি পর্যন্ত দেয় না, ছি ছি! Pizza খেতে গেলে গুড়গাঁও যেতে হয়। কি দুরবস্থা আমার! কপাল সবই কপাল! যাক গে, ভলো-মন্দ খাওয়া যখন হচ্ছেই না.....ভাবছি, আপনাদের কটা রান্নাবান্নার গল্প শোনাই। না না ভয় পাবেন না। জটিল সব রেসিপি দিয়ে আপনাদের বিরক্ত করবনা। প্রমিস। আমি শুধু কয়েকটা মনে রাখার মত রান্না করার ঘটনা বলব। ঘটনার কুশীলব অবশ্যই আমি এবং আমার চারপাশের কয়েকজন। রন্ধনে যারা আমরা মোটামুটি দ্রৌপদী গোছের তাদের কিছু রান্না করার ঘটনা।

আচ্ছা দাঁড়ান আপনারা কেউ কখনো 'Crispy potato with sprinkling coffee' খেয়েছেন? কিংবা, '১০০% oil free অমলেট'? অথবা 'Crunchy smashed pool barb'? হুঁ-হুঁ বাবা, খাননি তো? জানতাম। এসব জিনিস কি আর আপনাদের জাঁদরেল জাঁদরেল restaurant এ পাওয়া যায়? এসব হলো গিয়ে custom made খাবার দাবার। চাইলে রেসিপি আপনাদের দিতে পারি কিন্তু লোকজনকে খাওয়ালে তার পরের দায়িত্ব কিন্তু আমার নয় সাফ বলে দিচ্ছি।

এবার রেসিপিগুলো বলছি, অখন্ড মনোযোগ দিয়ে শুনে ফেলুন দেখি।

১.  Crispy potato with sprinkling coffee: আলুকে স্নান করিয়ে পাউডার মাখিয়ে, থুড়ি কেটে ধুয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখুন, কড়ায় তেল গরম করে আলু গুলো তাতে ছুড়ে মারুন। ভাজা হয়ে গেলে তাতে পর্যাপ্ত পরিমান কফি পাউডার ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। তারপর রুটির সাথে এক গ্রাস মুথে তুলুন  ......... আর?.....থু থু করে ফেলে দিন...........আমার এক গুণধর বন্ধুকে এটাই করতে হয়েছিল। আলুভাজা আর কফি দুটিই আলাদা আলাদা ভাবে তার দারুন লাগে বলে বেচারা ভেবেছিল দুটো একসাথে খেলে বুঝি ভাললাগাটা exponentially বাড়বে। এক্সপেরিমেন্টাল রান্না করতে গিয়ে ঐদিন রাতে ভাগ্যে ম্যাগি আর কি!

২.দ্বিতীয় রেসিপি ১০০% oil free অমলেট: সৌজন্যে আমার বাবা। মায়ের কোনো এক ছোটখাটো অসুস্থতায় বাবা আমায় এই অনবদ্য রেসিপিটি খাওয়াবার চেষ্টা করেছিল, মানে প্রথমে ব্যাপারটা oil free করার সাধু উদ্দেশ্য তাঁর ছিলনা ঠিকই কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়ে গেছিল। বলল "দাঁড়া ডিমটা আমিই ভেজে নিচ্ছি।" ভাবলাম, এটা সেফলি ছাড়া যেতে পারে। ডিম ভাজতে আর কি আছে, ও তো নিজগুণেই ভাজা হয়ে যাবে। তো বাবা তাওয়াটা গ্যাসে বসলো, আমার কেটে রাখা পেঁয়াজ-লঙ্কার মধ্যে নুন দিল, মেশালো- এই পর্যন্ত according to protocol। ভাবলাম এই তো হয়ে যাবে ব্যাপারটা। তারপর ডিম গুলো ভেঙ্গে তাতে দিয়ে প্রবল বেগে নাড়াচাড়া করলো এবং........হাঁ হাঁ করে ওঠার আগেই ঝুপ করে গরম তাওয়ায় ঢেলে দিল। "
এটা কি করলে এ এ এ এ এ!!!!"- বলে চেঁচিয়ে উঠতে বলল, "কেন?"
"আরে তুমি তেল দিলে না তো, সব পুড়ে গেল তো?"
"ও হো ও ও ও ও.... তেল দিতে হতো তো আগে......ভুলেই গেছি........কি করব এবার ?"
দুজনে damage control এর চেষ্টায় লাগি। "দাঁড়াও, সাইড দিয়ে একটু একটু করে তেল ঢালি", আমি তেল ঢালতে থাকি, বাবা তিনখানা ডিমের কালো হয়ে আসা অমূল্য চাঁইকে চারপাশ থেকে খোঁচাতে থাকে।
কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেছে, আমার বাবা প্রথম থেকেই গ্যাসটাকে যত্পরনাস্তি বাড়িয়ে রেখে সমস্ত কাজ করছিলেন তাড়াতাড়ি হবে বলে অতএব.....
আর কি? ১০০% oil free অমলেট রেডি।

 ৩. তৃতীয়টা? Crunchy smashed pool barb? দাঁড়ান বলছি: আমার জ্যেঠতুতো বৌদি আর আমি সমবয়সী না হলেও বড় কাছের লোক ছিলাম। কারণটা বোধকরি দুজনে একই স্কুলের আগে পিছের ছাত্রী বলে, তখন অন্ততঃ আমার এই অমোঘ কারণটাই প্রধান বলে মনে হত। তাই তার নতুন বিয়ে হবার পর আমি তার পেছনে আঠার মত সেঁটে থাকতাম, মানে সব বাচ্চারাই বোধহয় বাড়ির নতুন বউ-এর পেছনে তাই থাকে। আমিও বাকি সবার, বিশেষ করে দাদার সমস্তরকম অসুবিধাকে নস্যাত করে বৌদির সঙ্গে ছায়ার মত লেগে থাকতাম। এই অবস্থায় একদিন জ্যাঠিমাকে পাড়াতেই একটি বাড়িতে যেতে হবে কোনো একটি কারণে, কিন্তু বাড়িতে একগাদা টাটকা পুঁটিমাছ। সেটা ভেজে তারপর যেতে গেলে দেরী হয়ে যায় আর এসে ভাজতে বসলে দুপুরে খাবার সময়টা শিফট করে বিকেল ৪টে করে নিতে হয়। অগত্যা আমার নতুন বৌদি আগবাড়িয়ে বলে "ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি দেখে নিচ্ছি, আমি আছি তো।" জ্যেঠিমা তো তাঁর আদরের নতুন বৌমার হাতে নধর পুঁটিমাছের ঝুড়িটি ধরিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে চলে গেলেন। আর আমরা পড়লাম অকুল পাথারে। দুজনেরই সমান অভিজ্ঞতা রান্না করার। আমরা যে যার মায়েদের মাছ ভাজার পদ্ধতি মনে মনে ঝালিয়ে নিয়ে 'জয় মা' বলে কড়ায় তেল দিলাম, মাছ দিলাম, নাড়তে থাকলাম.....নাড়তে থাকলাম........নাড়তে থাকলাম।
"ওমা, ও বৌদি, কড়ার গায়ে আটকে যাচ্ছে কেন বলতো ?"
"তেল কম হয়েছে মনে হয়, বুঝলি?"
"তাই হবে, আরো তেল দাও তো।"
....
"এখনও আটকাচ্ছে তো, আরো একটু তেল দিতে হবে নাকি বলতো?"
"দাঁড়া, আর একটু দি"
....
...
এরকম কথোপকথন কয়েকবার রিপিট হবার পর কড়ার মধ্যে যে বস্তুটি দাঁড়ালো সেটারই এখন আমি নাম দিয়েছি 'Crunchy smashed pool barb'। দেখলাম, বড় বড় ফ্রেশ সুন্দর একঝুড়ি পুঁটিমাছ দিয়ে আমরা দুজন মিলে প্রায় এক ঘন্টার মারাত্মক গবেষণামূলক প্রচেষ্টায় আধকড়া তেলের মধ্যে অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে একটা মণ্ড তৈরী করে ফেলেছি।

............হেঁ হেঁ মানে ওই দিন থেকে আমি শিখেছিলাম যে তেল যথেষ্ট গরম না করে মাছ ভাজতে গেলে মাছ ভাজার জায়গায় যেটা তৈরী হয় সেটা ওই 'Crunchy smashed xxxxxx fish'।

খেতে কিন্তু খারাপ হয়নি বিশ্বাস করুন, সত্যি বলছি।

এরকম মারাত্মক সুস্বাদু রেসিপি আরো অনেক আছে আমার কাছে। আপনাদের কাছে যদি এরকম ভালো ভালো রেসিপি থেকে থাকে please share করবেন আমার সাথে। 

Thursday, 26 June 2014

আহির ভৈরব

গত জন্মের মৃত্যু থেকে এই মুহুর্তে জেগে উঠছি যেন এইজন্মের ভোরে।
নিকষ অন্ধকার থেকে বিশ্বজগত যেমন জেগে উঠছে ভোরের মাতাল হাওয়ায়,
উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমার যত ক্লান্তি, যত ক্লেদাক্ত ইতিহাস
তিল তিল করে আলোময় হয়ে ওঠা এইজন্মের ভোরে সমস্ত নিয়ম ভেঙ্গে দিয়ে জেগে উঠেছে পাখিরাও।

আমিও সেই ভোরের নশ্বর সাক্ষী হয়ে এসে দাঁড়িয়েছি ঘরের বাইরে,
পেছনের যে দরজাটা দিয়ে বেরিয়ে এসেছি সেটিই যেন ছিল শেকল।
যেন বন্ধন মুক্তির আবেশ সারা শরীরে আমার,
অপূর্ব এক নেশার মত ঝিমধরা আবছায়ায় দাঁড়িয়ে মনে হলো -
এই বুঝি পূর্ণতা?
এতদিনে?
মনে হলো আমার চার পাশে আর কেউ নেই,
অদ্ভূত এক কুয়াশাছন্ন ভোর,
পূর্বদিককে জাগিয়ে তোলা লালিমা,
সবকিছুকে ওলট-পালট করে দেওয়া ঠান্ডা নেশালু হাওয়া,
আর সবকিছুর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা একা আমি-
সম্পূর্ণতা।
আর ফিরে কোথাও যাবার নেই আমার
ওই পেছনের দরজাটা যেন এখন ইতিহাস।
দুচোখ বন্ধ করতেই শিহরিত হলাম
গত হাজার জন্ম ধরে আমি এসে দাঁড়িয়েছি এমনিই এক একটি ভোরে।
আর প্রশ্ন করে চলেছি-আমি কি করে শোধ করব এই সম্পূর্ণতার ঋণ?

ধীরে অথচ অতি সহজতায় উন্মোচিত হচ্ছিল চরাচর।
চোখ কচলে উঠে বসেছিল চারিপাশের পৃথিবী,
আর আমি একটু একটু করে নিতান্ত অনিচ্ছায় ফিরে আসছিলাম ওই পিছনের দরজাটার দিকে
মনে হচ্ছিল-কেন? কেন চলে গেল এত তাড়াতাড়ি এই আবেশ?
একটু একটু করে ধীরে অথচ অনিবার্য ভাবে শুরু হচ্ছিল সকাল, এবারেই তো বন্ধন।

যেন আমাকেই মুক্তি দিতে,ঠিক তখনই
পিছনের ওই দরজার ভেতর থেকে বেজে উঠলো সুর
খান সাহেবের শান্ত-সমাহিত সরোদ কথা কয়ে উঠলো আহির ভৈরবের সুরে
সেই মুহুর্তে একাকার হয়ে গেল আমার ভেতর-বাহির
ভুল হয়ে গেল সবকিছু, কোনটা বাঁধন-কোনটা ছুটি,
দরজার বাইরের মুক্তি কি করে যেন আমায় প্রবল আকর্ষণে ফিরিয়ে নিয়ে এল দরজার ভিতরে
এইজন্মের আমি ক্রমশঃ মিশে যেতে লাগলাম আরো হাজার জন্মের আমির সঙ্গে আহির ভৈরবের সুরে।
আমার সারা সকাল জুড়ে সেদিন ছিল আমার মুক্তি, আমার.......'আহির ভৈরব'।
     

আমি মারা যেতে চা আ আ আ আ.....ই!!!!!!!

আপাতত খুব খারাপ অবস্থা। ঠিক এরকম দেখতে লাগছে আমায় বিশ্বাস করুন।

একটু আগে পেইন্ট খুলে বেগুনি রং দিয়ে মোটা করে লিখছিলাম "আমি মারা যেতে চা আ আ আ আ.....ই, আমি আর কোনো কাজ করব নাআআআআ! আমি বাড়ি যাব ও ও ও ও ও ও ! আমায় বাড়ি যেতে দাও ও ও ও ও ও......," কেউ আমায় বেঁধে রাখেনি ঠিকই কিন্তু ওই আর কি বোঝেনই তো সব। সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু করেছি Nobel winning experiment সব। এখন রাত সাড়ে এগারোটা, এখনো চলছে এবং চলবে রাত আড়াইটা পর্যন্ত। না না পাগলা কুকুরে কামড়ায়নি আমাকে যে আমি সাধ করে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ল্যাবের মোষ তাড়াব। আমি অত ভালো নই। তার চেয়ে ঘরে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে দানাদার খেতে খেতে সিনেমা দেখা ভালো। আছি ঠ্যালায় পড়েই। কি আর করব। আমরা দুই স্যাঙ্গাত আছি, গোটা চারেক জুনিয়র বাচ্চা ছেলেময়ে আছে। এগারোটার সময় ক্যান্টিনের লোকেদের ঘুম থেকে তুলে ভরপেট খেয়ে এসেছি। বিভিন্ন রকম হাহা হিহি চলছে কাজের ফাঁকে ফাঁকে। আমার একটুও হাসি পাচ্ছে না বিশ্বাস করুন। বোতলের মত মুখ করে কম্পিউটার এর সামনে বসে আছি। এখন পঁয়তাল্লিশ মিনিটের জন্য মোষ নিজে নিজেই চরবে, আমার তদারকির দরকার নেই, পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর মোষের ঘাড় ধরে আবার সোজা রাস্তায় তাড়াতে হবে তাই এখন একটু ছুটি পেয়েছি। পিঠ আর পা টা মনে হচ্ছে অন্যলোকের। মা হলে বলত "খুলে রেখে দে, যন্ত্রণা কমে গেলে আবার পরে নিবি।" কি আর বলব? যাক গে যাক, ভরপেট খেয়ে AC র হাওয়ায় বেজায় ঘুম পাচ্ছে। ঢুলতে ঢুলতে কোন রিঅ্যাকশনে কি add করব কি জানি? রাত বাড়লেই ল্যাবের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন রকমের আওয়াজ আসতে থাকে। কেউ সিনেমা দেখছে, কেউ গান শুনছে, কেউ ফোন ফিসফিস করে প্রেম করছে, কেউ নিজেদের মধ্যে হ্যা হ্যা করছে, আমি আপনাদের বোর করছি ইত্যাদি। আপাতত একটা কথা মনে হচ্ছে, শেষ রাতে তো খিদে পেয়ে যাবে, কি খাব? ক্যান্টিনে যাওয়া যাবে না, ক্যান্টিনের লোকেরা আমায় মারবে আবার ঘুম থেকে তুলে খেতে চাইলে। কি যে করি? এইসব ঝড়-জল, ভূমিকম্প, ঝঞ্ঝাবাত, জলোচ্ছাসের মধ্যে আপনাদের সঙ্গে একটু গপ্প করে নিলাম আর কি। আপাতত টাটা। কাল যদি বেঁচে থাকি কথা হবে।        

Tuesday, 24 June 2014

বাক্স গাড়ি vs বুড়ির চুল

আপনাদের স্কুলজীবন কিভাবে শুরু হয়েছিল? আকাশী রঙের জামা-নীল রঙের প্যান্ট/স্কার্ট-গলায় খয়েরি টাই-পায়ে সাদা বা কালো জুতো, নাকি যেকোনো একটা রঙের জামা আর পায়ে যাহোক একটা জুতো? আমার দ্বিতীয়টা। অর্থাত কিনা আমার পাঁচ বছর বয়স হতেই আমার বাবা আর রুমার বাবা যথাক্রমে আমাকে আর রুমাকে সাইকেলে চাপিয়ে আমাদের গ্রামের ভারত সরকার এর স্নেহধন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়ে এলেন। তখন আমাদের গ্রামে কোনো কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল না, তার দু-এক বছর পরেই অবশ্য একটি স্কুল চালু হলো যার ড্রেস কোডটাই বললাম প্রথমে আপনাদের। তো সেই কিন্ডারগার্টেন স্কুলটি অচিরেই সবার কাছে কেজি স্কুল হয়ে গেল। এবং উদ্যোগী সব মায়েরা ফুটফুটে-পরিস্কার বাচ্চাদের সকাল সকাল মাথায় পর্যাপ্ত পরিমান তেলসহ স্নান করিয়ে, চোখে এবং কপালের বামদিকে ধ্যবড়া করে কাজল পরিয়ে, পিঠে ব্যাগ ও গলায় লাল নীল জলের বোতল ঝুলিয়ে দিয়ে হাত ধরে সেই কেজি স্কুলে যেতে লাগলেন। যাঁরা যেতে পারলেন না তাঁরা স্কুলের নামলেখা টিনের বাক্স গাড়িতে তাঁদের বাচ্চাদের তুলে দিতে লাগলেন রাস্তার মোড় থেকে। বাক্স গাড়ি মানে...., ধরুন একটা বড়সড় টিনের বাক্স, তার চার দেওয়ালের উপরের দিকে তারের জানালা, এতে গাড়িটাকে অনেকটা খাঁচার মত দেখতে লাগত তাই আমরা অনেকে এটাকে খাঁচা গাড়িও বলতাম, এবার ওই বাক্স বা খাঁচাটাকে যদি একটু নিচু একটা ভ্যান রিক্সার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে যেটা দাঁড়ায় তাকেই আমি এখন বাক্সগাড়ি বলছি। এই পর্যন্ত লিখে জানেন আপনাদের ওই বাক্স গাড়ির খানিক আইডিয়া দেব বলে Google ইমেজে 'box van for kids', 'school vans for kids', 'rural kindergarten school vans' ইত্যাদি নানারকম সার্চ দিলাম, নাহ, অনেক খুঁজেও পেলাম না জানেন, ওটা কি ওখানকারই specialty ছিল নাকি কে জানে। তো সেই বাক্স গাড়ির চালক মানে ভ্যানকাকুটির যখন রাস্তার উঁচু নিচুর জন্য টানতে অসুবিধা হত তখন উঁচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা মানে ওই স্কুল এর তুলনায় উঁচু ক্লাস আরকি, এই ধরুন ক্লাস থ্রী -ফোর, তাদের নেমে গাড়ির পেছনে ঠ্যালা মারতে হত। এটা বেশ মজার ও বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল আমার কাছে।
এত সব কান্ডের পর স্পষ্টতই আমাদের মত সরকারী প্রাইমারি স্কুলে পরা বাচ্চাদের মায়েদের সাথে ওই টাইপরা পাঁচ মিনিটের হাঁটা রাস্তা খাঁচা গাড়ি করে যাওয়া LKG-UKG র বাচ্চাদের মায়েদের একটা তফাত তৈরী হলো। দ্বিতীয় দলের মায়েরা প্রতিনিয়তই পাড়ার বৈকালিক জটলায় তাঁদের বাচ্চাদের স্কুলের মহিমা, বাদামী রঙের তেলতেলে কাগজের মলাট দেওয়া তাদের পিঠের ব্যাগের আর তাদের মায়েদের কথার ভার বাড়ানো নানা রকম বই, একশ আট রকম খাতা ইত্যাদি নিয়ে প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করতে লাগলেন। তাঁদের দাপটে ওরই মধ্যে একটু ভালো জামা পরে টিনের সুটকেস হাতে হেঁটে যাওয়া সরকারী প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের মায়েদের দৃশ্যতই বেশ মুহ্যমান লাগতে লাগলো। অনেকেই এক-দুই বছর প্রাইমারি স্কুলে পড়ানোর পর তাঁদের বাচ্চাদের ওই কেজি স্কুলে ট্রান্সফার করিয়ে নিতে লাগলেন।
আমার মা-বাবা যে এত সব কিছুর পরেও মাথা ঠান্ডা রেখে আমাকে আগামী দিনের কেউকেটা বানানোর জন্য একদিন ওই বাক্স গাড়িতে তুলে দেননি তার মূলত তিনটি কারণ ছিল বলে আমার মনে হয়। এক: পাড়ার বৈকালিক জটলায় আমার মায়ের অনুপস্থিতি, দুই: পুরনো জিনিসের প্রতি আমার মা বাবার অগাধ আস্থা এবং তিন: আমাদের প্রাইমারি স্কুলের হেড মিস্ট্রেস-শিবানী রায়, আমার দিদিমনি। ছোটো পিসির সাথে বন্ধুত্বের কারণে ইনি আমাদের বাড়ির খুব কাছের লোক ছিলেন, বলা যায় আমার মায়েরও বন্ধুস্থানীয় ছিলেন। এই তিন নম্বর ব্যাপারটা আমার বড়ই অসুবিধার কারণ ছিল বলাই বাহুল্য, কারণ এর ফলে স্কুলে আমাকে ভীষণ শান্ত বাচ্চা হয়ে থাকতে হত। স্বভাবসুলভ সর্দারি, বাঁদরামিগুলো বিকেলে খেলার মাঠের জন্য তুলে রাখত হত। তো সে দুঃখের কথা নাহয় পরে একদিন গল্প করা যাবে। এখন যা বলছিলাম বলি।
আমাদের সরকারবাহাদুর ঠিক সেসময়ই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন যে ক্লাস সিক্স এর আগে ইংরিজি শেখা মানে বাচ্চাদের কচি মাথায় চাপ পড়া। তাই তারা ক্লাস সিক্স এ গিয়েই নাহয় A-B-C-D শিখবে। এর ফলে বাচ্চাদের মাথায় কতটা চাপ পড়ত তা জানি না, তবে আমার পিঠে যে বেশ বড়সড় ধরনের চাপ পড়েছিল সেটা আমি হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলাম। কারণ, এতে আমাকে ইংরিজিটা যে বাড়িতেই শেখাতে হবে এবং তাতে কোনো মতেই কোনো ফাঁক রাখা যাবে না এ ব্যাপারে আমার মা বোধহয় সেইদিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। তাতে পরবর্তী চার পাঁচ বছর আমার যে অবস্থা হয়েছিল সে বোধহয় ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। প্রতিদিন বিকেলে সে নরক যন্ত্রণা শুরু হত জানেন, কত আর বলব দুঃখের কথা।
এমতাবস্থায়, কেন জানিনা হঠাত শোনা গেল ওই বাক্স গাড়ির স্কুলটির পড়াশুনা নাকি ইংরিজি মাধ্যমে হয়। আর পর আর স্থির থাকা যায় বলুন? এই অজগাঁয়ে কিনা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল! মায়েরা তো উঠেপড়ে লাগলেন বাচ্চাদের সব ইংরিজিতে পন্ডিত করে তুলতে। রুমার মা একদিন হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আমার মা কে বললেন "হ্যাঁ গো, ইংরেজি পড়ায় খুব ভালো ভাবে। চলুন এদের দুজনকেও ওখানে ভর্তি করে দি।" মাকে সেদিন তাঁকে বোঝাতে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছিল যে স্কুলে ইংরেজি পড়ানো আর পুরোটাই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর মধ্যে কি তফাত। যাক গে যাক সে সব কথা।
আমি আর রুমা দুজন তো 'রাজ্য সরকারের ঐতিহাসিক ভুল' এর স্বীকার হয়ে 'সারদামনি প্রাথমিক বিদ্যামন্দির' এই রয়ে গেলাম। গুটি গুটি পায়ে ব্যাগ-সুটকেস নিয়ে স্কুলে যেতে লাগলাম আর যথাসাধ্য সামলে-সুমলে বাঁদরামি করতে লাগলাম। এই করতে করতে যখন বেশ বড় হয়ে গেছি মানে ক্লাস থ্রী, অর্থাত বাক্স-গাড়ির স্কুলে পড়লে যেসময় আমাদের দুজনকে ঢালু রাস্তায় গাড়ি ঠ্যালার জন্য assigned হয়ে যেতে হত সে সময়কার কথা বলছি। একদিন টিফিন ব্রেকে ক্লাস সুদ্ধু সক্কলে হয় স্কুল এর সামনে হুড়োহুড়ি করছে নয়তো পাশের গার্লস হাই স্কুল এর গেটের সামনে ঝালমুড়ি-চানা-কাঠি আইসক্রিম খাচ্ছে, আর আমরা দুই মক্কেল ক্লাস থ্রী-র ক্লাস রুমে রাস্তার দিকের জানলায় থুতনি ঠেকিয়ে বসে বসে রাস্তা দেখছি (আমরাও কেন ছুটোছুটি করছিলাম না কে জানে, দুজনে মিলে তেড়ে কারো সাথে ঝগড়া করেছিলাম বোধহয়, তাই কেউ খেলতে নেয়নি। এমনিতে দুজনের দিনের মধ্যে প্রায় ১২ ঘন্টাই ঝগড়া চললেও থার্ড পারসন কেউ ঝগড়া করতে এলেই আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝগড়া করে ফাটিয়ে দিতাম), এমন সময় একটা অদ্ভূত দৃশ্য।
আপনাদের কেমন লাগে জানি না, আমার ক্যান্ডি ফ্লস জিনিসটা খুব একটা ভালো লাগে না, বড্ড বেশি রকমের মিষ্টি। কিন্তু আমি মেলা টেলায় গেলে ক্যান্ডি ফ্লস খেয়ে থাকি। কেন জানেন? ওটা বানানো দেখতে আমার 'দারু উ উ উ উ উ উ উ......ণ' লাগে। আর ওই দিন আমি আর রুমা ওই জানলা দিয়ে ওই দৃশ্যটাই জীবনে প্রথমবারের জন্য দেখেছিলাম, জানলার ঠিক নিচেই বানানো আর বিক্রি চলছিল জিনিসটা। দুজনে প্রবল গবেষণা করেছিলাম জিনিসটা কি হতে পারে সেই নিয়ে। রুমা তার কলকাতায় মাসির বাড়ি যাবার আর আমি কলকাতায় আমার জ্যেঠু-পিসিদের বাড়ি যাবার সমস্ত অভিজ্ঞতা জড়ো করেও বুঝতে পারছিলাম না ব্যাপারটা কি হতে পারে। কলকাতার কথা বললাম এই কারণেই যে তখনও পর্যন্ত আমাদের ধারণা ছিল পৃথিবীর সমস্ত রকমের আশ্চর্য ব্যাপার কলকাতাতেই হওয়া সম্ভব। তারপর যখন আমাদেরই দু-এক জন বন্ধু সেই আশ্চর্য বস্তুটি কিনে খেতে লাগলো তখন আমরা আরো মুষড়ে পড়লাম। কারণ ক্লাসের আশিভাগ লোকজনের মতই আমাদেরও পকেট গড়ের মাঠ। শেষে 'আঙ্গুর ফল টক' এর মত করে রুমা তো বড়দের মত নিদানই দিয়ে ফেলল যে "জিনিসটা খাওয়া ভালো নয় বুঝলি, বাইরের জিনিস, দেখিস না মা আমাদের চানা খেতে বারণ করে।" রুমার কথা সাধারণত আমি খানিকটা তর্কাতর্কি না করে কখনো মেনে নিইনি, কিন্তু সেদিন ওই মহার্ঘ বস্তুটি কিনে খাবার কোনো উপায়ই ছিল না কিনা তাই আমিও তত্ক্ষনাত 'ঠিক বলেছিস' বলে লোলুপ দৃষ্টিতে জানলার বাইরে তাকিয়ে থাকলাম। ঠিক করে দেখে রাখি ব্যাপারটা ঠিক কি রকম, যাতে পরে ঠিকঠাক বর্ণনা করলে বাড়ির লোক ব্যবস্থা করলেও করতে পারে এমনই যখন মনের ভাব, ঠিক তখনিই শুনি পেছনে একটা গম্ভীর গলায় ডাক, "এই তোরা দুজন এখানে আয়, আমার কাছে।" আমাদের দিদিমনি, শিবানী রায়। পপুলার রাগী হেড মিস্ট্রেস। চার পাঁচটা ঢোঁক গিলে, এ-ওকে ঠেলাঠেলি করতে করতে তো দাঁড়ালাম গিয়ে সামনে। লাস্ট পিরিয়ডের ঝগড়ার জন্য পাওনা বাকি আছে, সেটারই শোধনপর্বের জন্য এই আহ্বান-এতে কোনো সন্দেহই ছিল না। কাঁপতে কাঁপতে কাঁপতে কানে এলো,"ওটাকে বলে 'বুড়ির চুল', এই নে টাকা, দুজনে দুটো কিনে নিয়ে আয়...যা....আরে মা কিছু বলবে না....বলবি আমি কিনে দিয়েছি।" উনি পেছন থেকে পুরো বিষয়টিই নজর করেছিলেন।...... এরপর আর কি? সেই 'অমৃত' তৈরী পুনরায় অবলোকন ও অমৃত ভক্ষণ।
এর পর যতবার আমি বুড়ির চুল খেয়েছি বা যতবার ওটি তৈরি হতে দেখেছি, ততবার আমার ওই দিনটার কথা মনে হয়েছে। আর আজও প্রায় পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর পরও ছোটবেলার স্কুলের ওই একতলা টালির চাল এর বাড়িটা, সামনে ফুলে ছাওয়া দুটো লালে লাল কৃষ্ণচূড়া গাছ, ছোটবেলার বন্ধু-বান্ধব, ক্লাস ওয়ানের মেঝে থেকে ক্লাস টু-র বেঞ্চে উন্নতি ইত্যাদি সমস্ত রকম স্মৃতি ছাপিয়ে আমার এই ঘটনাটার কথা প্রথমেই মনে পড়ে আর মনে হয় ভাগ্যিস আমার মা-বাবা আমায় টাই পরিয়ে খাঁচা গাড়িতে তুলে দেননি তাহলে তো রাশভারী শিবানী রায় চিরদিন আমার কাছে হেড মিস্ট্রেস হয়েই থেকে যেতেন, আমার দিদিমনি হয়ে উঠতেন না কোনদিন। ভাগ্যিস! ভাগ্যিস!   
           

Monday, 23 June 2014

সফল হওয়া! "সে বুঝি আর হইল্য না।"

সোমবার সকালে উঠে আপনি কি করেন? শুনেছি নাকি বড় বড় সফল ব্যক্তিরা বিশেষ করে সোমবার সকালটা দারুন ফোকাসড থাকেন। আমার কথা নয়, আমাদের সকলের কমন 'সিধুজ্যাঠা' মানে Google বলছে। ভাবলাম দেখি সোমবার সকালের নিরিখে আমার জীবনে সফল হবার চান্স কতটা। তাঁদের আর আমার সোমবার সকালের to do লিস্ট পাশাপাশি রেখে এত কষ্ট হলো কি বলব। তাঁদের সব ভগবান বলে মনে হতে লাগলো। মানুষের এত মনের জোরও থাকে? আপনাদেরও ব্যাপারটা দেখাই, মনের দুঃখটা একটু কমবে।

 তাঁরা নাকি সোমবার সকালে এই সব করেন
 আমার সোমবার সকাল 
তাড়াতাড়ি উঠে শরীরচর্চা করেন
রবিবার রাতে ২টো পর্যন্ত ল্যাপটপ এর সামনে বসে পৃথিবীর সমস্তরকম এন্টারটেইনমেন্ট এর সাড়ে চোদ্দটা বাজালে সোমবার সকাল ৯টার আগে ওঠা যায়?
প্রচন্ড স্বাস্থ্যসম্মত ব্রেকফাস্ট করেন 
৯টায় উঠলে কি আর ব্রেকফাস্ট করার সময় থাকে? বিস্কুট চিবিয়েই দৌড় মারতে হয়। 
তাড়াতাড়ি অফিস পৌঁছোন 
হি হি..... আমি অফিসেই থাকি কিনা (মানে ক্যাম্পাসে) তাই আর টাইম এ পৌছানোর ব্যাপার থাকে না। 
অফিস এর টেবিল- ড্রয়ার সব পরিপাটি করে গুছিয়ে ফেলেন
সোমবার কেন? কোনো দিনই করি না, ড্রয়ার ঘাঁটলে হেন জিনিস নেই যা আপনি পাবেন না। তাই আর সে চেস্টা করে অমূল্য সময় নষ্ট না করাই ভালো মনে করি।  
কম দরকারী কাজ গুলোকেও সুন্দর করে to do লিস্টে রাখেন
এখানে আমার একটা কথা বলার আছে please বলতে দিন, আমি যেসব কাজগুলো কম দরকারী বলে মনে করি বসের কেন জানি না সেগুলোই ভয়ানক বেশি দরকারী মনে হয়। কেন কে জানে? 
সবাইকার সাথে দারুন মিষ্টি হেসে কথা বলেন এমন কি বসের সাথেও। তাতে নাকি টীম মেম্বারদের সারা সপ্তাহের জন্য দারুন বুস্টিং হয়।
সোমবার বেরোবার সময় চুল আঁচড়াতে গিয়ে মাঝে মাঝে আয়নায় নিজের গম্ভীর মুখ দেখে নিজেই ভয় পেয়ে যাই। 
পুরো week এর to do লিস্ট আপডেট করে ফেলেন 
আগের সপ্তাহের পেন্ডিং কাজগুলো করতে হবে ভেবেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। 
 সেই লিস্ট কে শুক্রবার এর মধ্যে খতম করতে উঠে পড়ে লাগেন 
এত কাজ! নাহ একটু চা খেয়ে আসা যাক। 
 জরুরি email গুলোর জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা করেন 
এটা আমিও করি, যেমন ধরুন, যেসব অনলাইন শপিং সাইট গুলোর অফার-টফার আসে সেখান থেকে চটপট কেনা কাটা সেরে ফেলি।
কঠিন কাজ গুলো নাকি আগেভাগেই করে ফেলার চেষ্টা করেন (ওরে বাপরে বাপ!)
প্রথমেই সহজ কাজ গুলো দিয়ে দিন শুরু করি। যেমন ধরুন, ফেসবুকে লোকজন এর খবরাখর নেওয়া ইত্যাদি। 
মুখে একটা extra হাসি দিয়ে রাখেন 
সোমবারে? পাগল? মনে হয় ডাক ছেড়ে কাঁদি। 
email গুলো কে সুন্দর করে friendly হাই- হ্যালো দিয়ে সাজিয়ে লিখতে পারেন 
দরকার ছাড়া একটা কথাও লিখতে আমার ভাল্লাগে না, চূড়ান্ত অভদ্র আমি জানেন, সে সারা সপ্তাহ ধরেই।
অকাজ কে মিষ্টি করে 'না' বলতে পারেন 
ইশ! যদি পারতাম!
নিজের কাজে স্থির থাকতে পারেন 
প্রতি ২০ মিনিট অন্তর উঠে লোকজনের খোঁজ খবর নি,লোকেরাও আমায় দারুন ভালবাসে তাই সবাই আমার কাছে না এসে গল্প করতেই পারে না, আমিও দারুন এনজয় করি সবার সব রকমের গল্পই। 
কিছু কিছু ইম্পর্টান্ট ডিসিশন মঙ্গলবারের জন্যও রাখতে পারেন, মানে নেক্সট দিনের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন
আমিও করি তো অপেক্ষা, নেক্সট শনি-রবিবারের জন্য।


এই পর্যন্ত লিখে না দারুন মুষড়ে পরেছিলাম বুঝলেন। কারণ বুঝতেই পারছেন, যদিও লিস্টটা ক্লাস সেভেন এর লাইফ সাইন্স এর 'গুপ্তবীজি (Angiosperm) ও ব্যক্তবীজি (Gymnosperm) উদ্ভিদের পার্থক্য লেখো' টাইপ হয়ে গেল, তাও এথেকে এটুকু পরিস্কার যে, সোমবারের  নিরিখে আমার আর কিছু হবার নেই এ জীবনে। এইসব তত্ত্বকথা ভাবতে ভাবতে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছি এমন সময় একজন বলল আরে ভাবছিস কেন? আমাদের মত বাপে খেদানো-মায়ে তাড়ানো অন্ধদের কিবা দিন কিবা রাত্রি? মানে বলতে চাইল আমাদের মত গাইডে খেদানো-ল্যাবে তাড়ানো রিসার্চ স্কলারদের কিবা শনি কিবা রবি? বিশেষ করে আমাদের মত অখাদ্যদের যাদের কিনা ক্যাম্পাসেই থাকতে হয়। আমাদের নাকি আলাদা করে সোমবার নিয়ে আদিখ্যেতা করার নেই। শুনে অবধি প্রাণে বেশ বাতাস খেলছে। ভাবছি যাকগে, এই শনি- রবিটা তো ল্যাব এর যতরকম অকাজ করেই গেল, নেক্সট weekend টায় চুটিয়ে ফাঁকি মারব। আর তো মোটে পাঁচদিন তারপরেই শনিবার। যদিও জানি হয়ত পরের সোমবারেও এই একই কথা ভাবতে হতে পারে। দেখাযাক। আপনাদের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো সামনের পাঁচদিনের সফলতার কামনায়।   

Sunday, 22 June 2014

"ম্যাঁও ধরা কি সহজ নাকি?"

আমাদের বাড়িতে মানে যেখানে আমি এই মুহুর্তে আছি সেটি নয়, আমি অরিজিনালি যেখানকার ফসল, আমার সেই বাড়িতে বর্তমানে দুটি বেড়াল আছে। 'টুই' এবং 'মোটু'। বেড়াল যে আমি প্রচন্ড পছন্দ করি তা নয়। বস্তুত ওরাই আমাকে বিশেষ পছন্দ করে না। তাও টুইকে আমি কেন চটের ব্যাগে করে কলকাতা থেকে ট্যাক্সি এবং ট্রেনে চাপিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে আমার বাড়িতে মা-বাবার ঘাড়ে এনে ফেলেছিলাম তার একটা বিশেষ কারণ ছিল। সে গল্প নাহয় আর একদিন হবে। আপাতত সেই টুইবেড়াল যথা নিয়মে বছরখানেক বয়স হতে না হতেই পাড়ার preexisting বদমাইশ হুলোটার সাথে প্রেম ট্রেম করে তিনটি ইঁদুরছানা সাইজের বাচ্চার আমদানি করলো। তার একটাকে বেশিদিন পৃথিবীর জ্বালা-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়নি। বাকি দুটো, 'মোটু' আর 'ফিরু'। আমার মা কুকুর-বেড়াল নিয়ে আমার বা বাবার মত আদিখ্যেতা না করলেও দুরছাইও করে না কখনো। এবং আমি জানি মনে মনে তাদের বেশ ভালোও বেসে ফেলে। মা তাদের ভালোবেসে দুটি ভালো নাম দিয়েছিল 'মেনি' আর 'টেনি'। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা গেল তাদের স্বভাবের জন্য তারা নিজেরাই নিজেদের নাম ঠিক করে নিয়েছে, শান্তশিষ্ট মোটাসোটাটা হয়ে গেল 'মোটু'। আর ছটফটে রোগাটা হয়ে গেল 'ফিরফিরে' বা 'ফিরু'। এই দ্বিতীয়জন কে নিয়েই আজকের গল্প। ফিরু ছোটোবেলা থেকেই একটু কলম্বাস গোছের। মোটু যখন সোফায় বসে একটু ধ্যান-ট্যান করছে আর আড়চোখে রান্নাঘরের দিকে নজর রেখেছে, ফিরু হয়ত তখন পাঁচিলে উঠে চারিদিক ঘুরে বেরিয়ে পাশের বাড়িতে কিভাবে যাওয়া যেতে পারে সেই প্ল্যান করছে। ওই বয়সেই অন্য বেড়াল বন্ধু জুটিয়ে এন্তার পাড়া বেড়াচ্ছে। মোটকথা দুজনেই দুজনের মতো করে "দিব্বি ছিলেন খোশমেজাজে চেয়ারখানি চেপে।"
একদিন হটাত সাত সকালে মায়ের আকুল ফোন - "মুন্নি, কাল সন্ধ্যে থেকে না ফিরুকে পাওয়া যাছে না", বললাম "দেখো কোথাও পাড়া বেড়াতে গেছে, খাবার সময় ঠিক ফিরে আসবে"। খুব একটা আশ্বস্ত হলো বলে মনে হলো না। পরদিন আবার খবর, "পাশের বাড়ির কালো হিটলার গোঁফওয়ালা সাদাকালো মুন্নু বেড়ালটাকেও পাওয়া যাছে না"। বললাম 'বল কি! elopement? আচ্ছা, দুএকদিন অপেক্ষা করে দেখো।' কারোরই পাত্তা নাই। 'কি আর করা যাবে বলো সবাইতো সংসারে থাকার জন্য আসে না, দেখো গিয়ে সন্ন্যাসী-টন্ন্যাসী হয়ে দেশ ভ্রমনে বেরিয়েছে কিনা'.......বাড়ি থেকে ফোন করলেই এইসব বলে সান্ত্বনা দিতে থাকি আমি। বাবা বলল মোটু নাকি তার বোনকে খুব মিস করছে, সব জায়গা খুঁজছে....... ইত্যাদি। এ পর্যন্ত চেনা গল্প। ঘটনাটা এর পরে। হঠাত একদিন পাশের বাড়ির মুন্নু বেড়ালটা ফিরে এল। তখন সবার মনে আশা যে ফিরু ও ফিরবে। আমি ফোনে বললাম 'ওই তো ওদের তীর্থভ্রমণ শেষ হয়েছে এবার ফিরে আসবে দেখো'। ফিরু কিন্তু ফিরল না। মোটামুটি নিরুদ্দেশবার্তা সারা পাড়াতেই ছড়িয়ে গেছিল। যদিও কোনো পুরস্কার ঘোষণা করেনি আমার বাবা তার হারানো বেড়ালের জন্য। তাও দিন সাতেক পর মিসিং পার্সন স্কোয়ার্ড থেকে জানা গেল, মানে পাড়ার একজন খবর দিলেন যে, পাড়ার মোড়ে যিনি মাছ নিয়ে বসেন তাঁর আশেপাশে নাকি একটি নতুন বেড়াল দেখা যাছে কদিন হলো, সেটাকে নাকি অবিকল ফিরুর মত দেখতে। সামনে গিয়ে ধরতে গেলেই পালায়। কি করে তিনি এত নিশ্চিত হলেন জানি না, কারণ আমার মা-বাবাই মাঝে মধ্যে মোটু আর ফিরুর কোনটা কে গুলিয়ে ফেলত বলে ফিরুর কপালে আলতা দিয়ে একটা লাল তিলক দিয়ে রাখত। যে যাই হোক, বাবা উত্ফুল্ল হয়ে ফোন করে বলল "মুন্নি, কাল অপারেশন ফিরু", বললাম "ওটা ফিরু ই তো"? বাবা বলল "হ্যাঁ রে, ওটা ফিরু ই। "
"তবে পালায় কেন?"
"মেন রাস্তায় অনেক লোকজন, গাড়িঘোড়া তো, ভয় পায় হয়ত।" বাবা আমায় আশ্বস্ত করে।
বললাম, "দেখো, সাবধানে ধোরো, আঁচড়ে কামড়ে না দেয়।" বলে মনে মনে একটু দুঃখও পেলাম। এই ধরনের মিশনে অংশগ্রহণ করতে আমি খুব ভালবাসি। ভাবলাম ইশ বাড়িতে থাকলে বেশ একটা থ্রিলিং ব্যাপার হত। যাক, সন্ধ্যেবেলা বেশ গুছিয়ে বসে খবর নেওয়া যাবে।
সন্ধ্যেবেলায় ফোন করতে শুনি মিশন আনসাকশেসফুল। কি বাপ্যার? বাবা বলল "আরে, কিছুতেই ধরতে পারলাম না রে, হাতে আঁচড়ে দিয়ে পালালো। অনেক চেষ্টা করলাম, এদিক ওদিক দিয়ে খালি দৌড়ে পালায়, কাল আর একবার চেষ্টা করব।" যদিও হাসি পাওয়াটা উচিত নয় তাও দৃশ্যটা ভেবেই হাসি পেয়ে গেল, ভাবুন একবার, সাতসকালে পাড়ার মোড়ে পাড়ার একজন সত্তর-বাহাত্তর বছর বয়সী প্রবীন শ্রদ্ধেয় মানুষ একটা বেড়ালের পেছনে তাড়া করে তাকে ধরার চেষ্টা করছেন। আর বেড়ালটা তাঁর সাথে লুকোচুরি খেলছে। যাই হোক হাসি-টাসি চেপে বললাম "তোমাকে দেখেও পালালো? সত্যিই ফিরু তো?নাকি অন্য বেড়াল?"
"না রে, ফিরু ই, কপালের লাল তিলকটা যদিও ছিল না, অনেকদিন হয়ে গেছে তো তাই উঠে গেছে হয়ত। কাল ধরে বাড়ি নিয়ে এলে, টুই-মোটু কে দেখলে ঠিক চিনতে পারবে"-বাবা কনফিডেন্ট। ভালো, কাল খোঁজ নেব কি হলো।
পরদিন সুসংবাদ ! 'অপারেশন ফিরু' successful! বেড়ালটাকে বেঁধে রাখা হয়েছে ঘরে, কিন্তু টুই বা মোটু কেউই তাকে accept করছে না, সেও সবার দিকে প্রবল বিক্রমে ফ্যাঁশ-ফ্যাঁশ করছে। কিছু খাচ্ছেওনা। বললাম "সেকি গো? সত্যিই ফিরু তো?"
বাবা বলল "হ্যাঁ রে বাবা, দাঁড়া না দুদিন যাক।" ভাবলাম, হবে হয়ত, বিদ্রোহ করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল তো তাই দুপক্ষেরই মান-অভিমান চলছে বুঝি। আস্তে-ধীরে ঠিক হবে। বললাম, "তা ধরলে কি করে ওকে? পালালো না?"
"আরে একা কি পারি? অমুক দোকান থেকে অমুক, তমুক দোকান থেকে তমুক সবাই এসে হেল্প করলো, তবে তো ধরলাম।"
বুঝলাম, সাতসকালে আমার বাবা, আশেপাশের সব দোকান এর বিকিকিনি বন্ধ রাখিয়ে দোকানদারদের 'অপারেশন ফিরু' তে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। মানে তাঁরা আগের দিনের নাটকটা দেখে মজা পেয়ে নিজেরাই লেগে পড়েছিল আর কি। যাক সব ভালো যার শেষ ভালো। ফিরু ফিরে এসেছে এই ঢের।
কিন্তু না, নাটকের ক্ল্যাইম্যাক্স হচ্ছে আরও দুদিন পরে, বিকেলে বাবা বলল, "বেড়ালটাকে ছেড়েই দিলাম বুঝলি, ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করছিল না, বেঁধে রাখতে হচ্ছিল, এরকম করে তো রাখা যায় না, ওটা মনে হয় ফিরু নয়"- বলে আমাকে ফিরুর সাথে এই বেড়ালটার চেহারায় সুক্ষ্ম কিসব পার্থক্য আছে সেসব বোঝাতে লাগলো। অর্থাত এটি ভুল বেড়াল। শুনে হাসব না কাঁদব ভাবতে লাগলাম।
দুদিন ধরে গলদঘর্ম হয়ে পাড়ার দোকানদাররা পর্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত একটা ভুল বেড়াল? উপরুন্তু তার আঁচড়- কামড়ের জন্য বাবাকে কিসব ওষুধ-ইনজেকশনও নিতে হলো। তাই বলছিলাম আর কি, ম্যাঁও ধরা বড় সহজ কথা নয়।     

Saturday, 21 June 2014

Friend for ever


In the midst of night, I got the chance to meet you from my window
You were waiting for me till the evening at the west I know
But it was the obligatory needs of life that prevent me to come to you my friend
It was my thirst to see you
It was my urge to adore you
It was my agitation to touch you
Those made you so glittery that I was astonished to be a witness of your heavenly sparkle
Under the reflection of your ray of innocence
By the healing touch of your sparkling beauty
On the rain of your unconquerable glamour
I was drenched, I was filled, I was on the top of the universe
I forgot that I am the common dweller pressed by daily challenges
I forgot that I am an undistinguished person of most inferior internal excellence…..
A strange perception made me the queen of the holy wisdom
And the ultimate joy of life covered on all of my unaccounted expectations
Then on that starry black night without anyone’s knowledge
I returned to my originality, to my naïve soul
I recognized you my friend, my soul mate, my little star
I smile to you, you blink once….we recognizes each other on that dark sky
On that night I hold your hand and slept an undisturbed sleep
With your glamorous hand of friendship for ever

Friday, 20 June 2014

যাওয়াটা শেষ পর্যন্ত হচ্ছে কি?

কত বার কত রকম ভাবে কোথাও যাওয়া ক্যানসেল হতে পারে বলে আপনাদের মনে হয়? শরীর খারাপ, ট্রেনের টিকিট কনফার্ম না হওয়া, ছুটি না পাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি যেভাবেই হোক না কেন ব্যাপারটা খুবই খারাপ সে সম্পর্কে কিছু বলার নেই। ধরুন, চাঁদিফাটা গরমে পাড়া-প্রতিবেশী, অফিস কলিগ, বন্ধু-বান্ধবদের মনে খানিক ঈর্ষার উদ্রেক করার জন্য তাঁদের 'উফ এই গরমে তো আর পারা যাচ্ছে না' উক্তির উত্তরে ছোট্ট করে জানিয়ে দিলেন যে 'যা বলেছ, আমরা তো তাই ভাবছি পরের মাসে একটু সিমলা ঘুরে আসি, তোমরাও ঘুরে এসো কোথাও থেকে'। যদিও আপনি বেশ ভালো করেই জানেন যে তাঁদের এক্ষুনি কোথাও যাবার প্ল্যানিং নেই। বাঙালিদের লিস্টে সিমলার জায়গা পুরীর ঠিক পরেই বলে আমার মনে হয়। তাই সিমলা বললাম। আপনি "গরম লাগে তো তিব্বত গেলেই পারো "- ও বলতে পারেন। তারপর পরের একমাস ধরে 'জানো, আজ টিকিটটা বুক করেই ফেললাম, সেকেন্ড AC ই করলাম গো, যা গরম, থার্ড AC তে বড্ড ঘেঁষাঘেঁষি' (এখানে আপনি জানেন যাঁকে বলছেন তিনি তাঁর লাস্ট ট্রিপটাতে থার্ড AC তে যাতায়াত করেছেন), 'যে হোটেলটা বুক করলাম না.... যা ভিউ.....উফ, হ্যাঁ নিশ্চয়ই- ছবি তো দেখাবই', 'নেট এ তো দেখলাম দুর্ধর্ষ রেটিং', 'এবার একটা টেলি-লেন্স না হলেই নয় বুঝলে'......ইত্যাদি বলে টলে গরমে চারপাশের লোকজনকে আরো একটু গরম করে ফেললেন। বাক্স-প্যাঁটরা, দুটো ক্যামেরা, সানগ্লাস, জেলুসিল, এভোমিন ইত্যাদি গুছিয়ে আপনি তো রেডি। দুটো ক্যামেরা বললাম কারণ, বেশি দামী ক্যামেরাটা গলায় ঝুলিয়ে বা সত্যজিত রায় এর ভঙ্গি নকল করে চোখে লাগিয়ে, অন্য ক্যামেরাটা দিয়ে সঙ্গীকে বলে একটা অন্ততঃ ছবি তুলিয়ে না রাখলে ফিরে এসে ফেসবুকে লাগাবেন কি? এমতাবস্থায় যাওয়ার ঠিক তিনদিন আগে সকালবেলায় আপনার কাছে খবর এল যে- বসের ইতালির ট্রিপ ক্যানসেল হয়েছে আর তিনি তাই আপনার পেন্ডিং assessment এর ডেট তা এমন দিনে-এমন সময় ফেলেছেন যে দিন-যে সময় আপনার সিমলার ম্যালে ১৬ ডিগ্রী ঠান্ডায় মাঙ্কি ক্যাপ পরে বড়মাসির জন্য উলের চাদর কেনার কথা। উফ ভাল্লাগেনা। এরকম যেন কারো সাথে না হয়, বসেরও না। বসের ট্রিপ ক্যানসেল মানেই তো আপনার ট্রিপ ক্যানসেল। তারপরে তো উল্টোদিকের লোকজন, যাদের আপনি এতদিন গরম করে এসেছেন তাঁরা তো 'কি রে তোরা কবে যেন যাচ্ছিস'? 'তোমাদের এই সপ্তাহেই যাবার কথাছিল না, কি হলো'? 'এমা আ আ আ ! ক্যানসেল হলে গেল'? 'ইশ, কি আর করবে পরে একটা প্ল্যানিং কোরো'.........এইসব নুনগুলো ছিটিয়েই চলবেন। বুঝি বুঝি, এসব দুঃখের কথা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝি।
যেজন্য আজ আপনার এবং অবশ্যই আমারও পুরনো দুঃখ কষ্টগুলো বলে জ্বালা জুড়োলাম তা হলো আজ আরো একবার এরকম ঘটনা ঘটেছে। অবশ্যই আমার সাথে নয়। সেরকম হলে তো আমি এই পোস্ট লেখার মত অবস্থায় থাকতাম না। হয়েছে আমার প্রিয় দুচারজন জুনিয়রের সাথে। দিল্লির আশেপাশে থাকার সুবিধা হলো ১২ ঘন্টার মধ্যে হিমালয়, থর মরুভূমি, দাক্ষিনাত্যের মালভূমি, গাঙ্গেয় সমভূমি ইত্যাদি যেসব ধরনের ভুপ্রকৃতির কথা আপনি ক্লাস এইটের ভারতবর্ষের ভূগোল পড়ার সময় পড়েছিলেন তার যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন। "দেখে শুনে বেছে নিলেই হলো"। বেচারারাও তাই নিয়েছিল। গরম এর কথা মাথায় রেখে অবশ্যই হিমালয়। ৫-৬ জনের গ্রুপ। যথাসাধ্য চুপকে চুপকে সব ব্যবস্থা হচ্ছিল। যাতে কোনদিক থেকে কোনো ব্যাগড়া না আসে। কিন্তু মারে হরি রাখে কে? ব্যাগড়া এল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিক থেকে। যেদিন যাওয়া হবে তার আগেরদিন হঠাতই একজনের বাড়ির লোকজন বেঁকে বসলো। মায়ের বক্তব্য তোমরা এই কয়েকজন যাবে? কোনো বড়রা যাবে না? তা কিকরে হয়? বড়রা না গেলে তো তোমার যাওয়া হবে না। বুঝুন একবার! যাকে বলা হছে সেই মেয়েটির ৫-৬ মাস পর বিয়ে এবং পাত্রটি তার নিজে পছন্দ করা। তাতে কারো কোনো আপত্তি ছিল না। কেজানে হিমালয়ে বেড়াতে যাওয়া আর বিয়ের পাত্র পছন্দ করার মধ্যে কোনটা বেশি বিপজ্জনক? তো তারা তো আমায় ধরে পড়ল কারণ আমি কিনা তাদের চেয়ে বছর চারেক এর বড় বয়সে। আমি গেলে নাকি তাদের যাওয়া হয়। ভাবলাম হায় ভগবান শেষ পর্যন্ত আমার মত একটা দুর্দান্ত ট্যালার ভরসায় কিনা কেউ যাবে? যাই হোক, ট্রিপ ক্যানসেল! এখন এই বিকেলে দেখছি তারা মুখ চুন করে ক্যান্টিনে চা খেতে যাচ্ছে। আর চোখে চোখ পড়লেই ভেবলুর মত হাসছে। সত্যি খারাপ লাগছে আমার, যত না ট্রিপ ক্যানসেল হয়েছে বলে, তার চেয়েও ওরা বড় হতে এখনো কত দেরী এই ভেবে।
আরো একবার জানেন, গত শীতে ল্যাব থেকে তৃতীয়বারের মত প্ল্যান হলো জয়্শলমীর যাবার। একমাস ধরে প্ল্যানিং। ট্রেনের - হোটেলের বুকিং কমপ্লিট। আমি তখনও ভাবিনি যে যাওয়াটা শেষ অবধি হবে। কারণ গত দুইবারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে এই স্টেজেও ক্যানসেল হতে পারে। তা আমি নিজেকে যথাসম্ভব নিরুত্তাপই রেখেছিলাম। কিন্তু যাবার আগের দিন যখন কে কোন খাবারটা নেবে, ক্যান্টিনে কতগুলো রুটি প্যাক করাতে হবে পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়ালো তখন মনে একটু একটু আশা জাগলো। কিন্তু আমি কি ভেবে ঐদিন রাতেও জিনিসপত্র প্যাক করলাম না। মনে ক্ষীন আশা গত দুবারের অভিজ্ঞতা কি এত সহজে বিফল যাবে? আমার প্যাক করতে ১ ঘন্টা লাগবে, যদি সত্যি সত্যি যাওয়াটা হয় তো ১ ঘন্টা আগে এসে প্যাক করে নেব এই ভেবে সকালে ল্যাবে গিয়ে দেখি বেচারী এই মেয়েটিই যে কিনা এখনো বড় হয়নি, সে নিচে গেছে রুটির অর্ডার দিতে, এবং যে যার কাজ-টাজ তাড়াহুড়ো করে গুছিয়ে নিচ্ছে। কান-টান চুলকে ভাবলাম নাহ প্যাকিংটা করে আসলেই ভালো হত। বিকেলে তাড়াহুড়ো করতে হবে। ল্যাবের কাজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেটাও ম্যানেজ করতে হবে। ভেবেই ক্লান্ত হয়ে দুচার ঢোঁক জল খেয়ে কাজে লাগতে যাব, এমন সময় আমার অভিজ্ঞতা কে ঠিক প্রমাণ করে একজন আবির্ভূত হলেন আর ঘোষণা করলেন যে তাঁর পেপার এর কমেন্ট এসেছে। কিছু experiment করে অমুক ডেট এর মধ্যে ছাড়তে হবে। তাই সে যাবে না। কিন্তু তাতে আমাদের যাওয়া আটকাচ্ছে না। ব্যস হয়ে গেল। সবাই বাগবিতন্ডা শুরু করলো। এসব ক্ষেত্রে যা হয় আর কি- " আরে দুদিনের ট্রিপ, এসে শুরু করবে experiment", "আমরা সবাই মিলে ডেটা তুলে দেব"......ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি নিশ্চিন্ত মনে কাজ শুরু করলাম নতুন করে। আর সন্ধ্যে বেলা ল্যাব এর white বোর্ড এ লাল মার্কার পেন দিয়ে আমরা সবাই মিলে- বালিয়াড়ি, উট, কাঁটাগাছ, ট্রেন ইত্যাদি এঁকে নিচে 'হ্যাপি হলিডে' লিখে যে যার বাড়ি চলে গেলাম। ও হ্যাঁ , আমাদের ল্যাবের ছোট্ট মেয়েটিকে আর একবার নিচে ক্যান্টিনে যেতে হয়েছিল রুটির অর্ডার ক্যানসেল করতে।

  

Thursday, 19 June 2014

আমি একটুখানি ঘুমোতে ভালোবাসি

হরিয়ানার এই জুন মাসের বিচ্ছিরিরকম গরমে হাবা (হাবা র কথা তো আগের দিনই বললাম) র মত শান্তশিষ্ট কুকুরও পর্যন্ত যখন খেঁকি হয়ে উঠেছে, তখন কাল সন্ধ্যেবেলা ধুঁকতে ধুঁকতে বেরিয়ে যখন দেখলাম বড়বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামল তখন মেন গেট এর অল্পবয়সী গার্ডটাও দেখি "বারিষ আয়া ?বারিষ আয়া ?" বলে হেসে হেসে বাইরে বেরিয়ে আসছে। যাকে আমি নিবিষ্টমনে হিন্দি খবরের কাগজ পড়তেই এতদিন দেখেছি কোনদিন কারো সাথে কথাবার্তা বলতে শুনিনি। আর আমার ঠিক সেই মুহুর্তেই মনে হলো 'যাক বাবা আজ একটু ভালো করে ঘুমোনো যাবে'। এই ভেবেই আমি দারুণ খুশি হয়ে গেলাম। তারপর তো আমার শিক ভাঙ্গা হলুদ রঙের ছোট্ট ছাতাটা নিয়ে দুজন মোটা মোটা লোক ব্যাগ ফ্যাগ সামলে বেসুর বিশ্রী গলায় ''এক পীলি ছতরী পে আধে আধে ভিগ রাহে থে.......'' গাইতে গাইতে বাড়ি পৌছলাম। তা সে যাই হোক, ঘুম যেটা হলো সেটার বিশেষণ এই মুহুর্তে যেটা মনে আসছে সেটা হলো - 'মসৃ ই ই ই ই ই ণ'।
তা এরকম মসৃণ ঘুম আমি মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে থাকি বটে। সকালে আমায় ঘুম থেকে ওঠাতে ছোটো বেলা থেকেই মাকে বড় বেগ পেতে হত। মা বলত আমি নাকি কুম্ভকর্ণের ফিমেল সংস্করণ, কানের কাছে ঢাক পিটলেও ঘুম ভাঙ্গে না।  তা মা ওরকম আমাকে অনেক কিছুই বলে থাকে ওসব গায়ে মাখলে তো ঘুমোনই যাবে না। তাই আমি ওসব কথা সাধারণত তুশ্চু করে থাকি। আজ এই 'মসৃ ই ই ই ই ই ণ' ঘুমের পর অনেক দিন আগেকার আরো একটা 'মসৃ ই ই ই ই ই ণ' ঘুমের গল্প (গল্প না, আদ্যন্ত সত্যি ঘটনা) না বলে থাকতে পারছি না।
সাত- আট বছর আগে যখন দোকান থেকে রেডিমেড কুর্তি কিনলে সাইডটা সেলাই করে পরতে হত আমায়, তখনকার কথা বলছি। ইউনিভার্সিটির রীতি অনুযায়ী ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটিতে কিছু ক্লাস করব বলে কলকাতায় পুরনো ডেরায় এসে আছি কয়েকদিনের জন্য, আমার এক বন্ধু আছে অন্য আর এক বন্ধুর মেসে। তো সেদিনের ক্লাস সেরে খেয়ে দেয়ে যে যার ঠিকানায় পৌছে তো ঘুমিয়ে পড়লাম রাতের মত। পরদিন সকালে বেশ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সুখস্বপ্ন দেখছি, হটাত মনে হলো স্বপ্নের মধ্যে কলিং বেলের আওয়াজ। সাধারণত এইসব সময় আমি ভেবে থাকি যে আমার নয় অন্য বাড়িতে বাজছে। সেদিনও তাই মনে হলো প্রথমটায়। তারপর মনে হলো বোধহয় এটা আমারই বাড়িতে বাজছে। ধুপ করে বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে নিচে দেখি বন্ধুটি দাঁড়িয়ে আছে উর্দ্ধমুখী হয়ে। "কিরে তুই এসে গেছিস? এত সকাল সকাল?" বলে প্রাতঃসম্ভাষণ শুরু করতে যাব, প্রচন্ড রেগে মেগে দেখি সে বলছে "তাড়াতাড়ি নিচে নেমে দরজা খোল"। কি হলো, টি হলো জিজ্ঞাসা করার আগেই দেখি আশেপাশের বাড়িগুলোর বারান্দায় কৌতুহলী আর হাসি হাসি মহিলা-পুরুষ-ছোটো-বড় নানান সব মুখ আমার দিকে তাকিয়ে ।এতদিন এ তল্লাটে থেকেছি কিন্তু এদের ৯০ ভাগ লোকজনই আমার অচেনা (এতো আর আমাদের মফস্বল নয় যে সবাই সবাই কে চিনবে, বড় শহরে নাকি কারো সাথে অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা বলাটা অনাধুনিক ব্যাপারস্যাপার। তা হবে! আমিও শহরে এসে আধুনিক হয়েছিলাম)। এতগুলো অচেনা লোক আমার দিকে সাত সকালে এত উত্সাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে কেন রে বাবা? যতই মুখটা হাসি হাসি হোক কেমন যেন ভয় ভয় করলো। ঢোঁক টোঁক গিলে নিচে নেমে দরজা খুলতে সে তো তরতর করে ওপরে উঠে চলে এল। তারপর সে যা বলল তাতে তো আমি আর মুখ লুকাবার জায়গা পাচ্ছিলাম না, প্রতিবেশীদের কৌতূহল এর কারণটাও বোঝা গেল। তারপরতো সরি টরি বলে প্রায় মাটিতে মিশে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইলাম। যেহেতু তার আর কিছু করার মত শারীরিক অবস্থা ছিলনা তাই সেদিন আমি বেঁচে গিয়েছিলাম নইলে দুচারটে চড়-থাপ্পড় পড়লেও কিছু অনায্য হত না।
ঘটনাটা হলো, আগের দিন রাতে প্রচন্ড খিদের মুখে ১০-১২ খানা রুটি আর একটা বড় প্লেট তড়কা খেয়ে বন্ধুটির আমার ঐদিন শেষরাত থেকে আইঢাই অবস্থা (না হলেই আশ্চর্য হতাম), তো কোনো ক্রমে আলো ফুটতে না ফুটতেই প্রচন্ড অসুস্থ অবস্থায় সে নিজেকে টেনে টুনে আমার কাছে এসেছিল যাতে আমি ওষুধপত্র বা অন্যসব কিছুর ব্যবস্থা নিতে পারি। সে তখন ওখানে আর কাউকে বিশেষ চিনত টিনত না । সে প্রথমে ভদ্রভাবে কয়েকবার বেল বাজিয়েছে, তার পর অভদ্রভাবে বেল বাজিয়েছে, বাজিয়েই চলেছে, তার বেল বাজানোর চোটে পাড়া-প্রতিবেশীরা বেরিয়ে এসেছেন, তাঁরা সাজেশন দিয়েছেন ফোন করতে, সে তথন অলিগলি ঘুরে মেন রাস্তায় গেছে, PCO খুঁজে ফোন করেছে আমার ঘরের ল্যান্ড লাইন এ (তখন আমাদের হাতে মোবাইল আসেনি), সেই ফোন বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের শরীর ততক্ষণে তার ঠিক হয়ে গেছে প্রায় (ভোরের হাওয়ায় হাঁটাহাঁটির একটা এফেক্ট থাকবে না?)। উল্টে তার মনে ভয় ঢুকেছে যে আমার কিছু হলো কিনা? টেনশন এর চোটে মেন রাস্তা থেকে ফিরতে গিয়ে সে রাস্তা-টাস্তা গুলিয়ে একাকার কান্ড (বেচারা অসুস্থ মানুষটা)। কোনমতে ফিরে এসে আবার সেই ভদ্র-অভদ্র ভাবে বেল বাজানো হলো বেশ কয়েকবার। অতঃপর আমার বেঁচে না থাকা নিয়ে যখন সবাই মোটামুটি নিশ্চিত, তখন প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ একজন আমার প্রায় কাঁদো কাঁদো বন্ধু কে বলেন "তুমি বেলটা টিপে রেখে দাও ছেড়োনা"। শেষ চেষ্টা আর কি। তো সে কলিং বেলটাকে সর্বশক্তি দিয়ে টিপে ধরে থাকে। ঠিক এই সময়েই আমার স্বপ্নের মধ্যে মনে হয় যে বুঝি পাশের বাড়ির বেল বাজছে। তারপরের ঘটনা........... তো আগেই বলেছি। মাঝে মধ্যে এরকম মসৃণ ঘুম আমার হয় বটে। 

Wednesday, 18 June 2014

সহাবস্থান

সাধারণত: আমরা বাড়িতে কাউকে থাকতে দিতে না করি না।  আমরা দুজন ছাড়াও গুটি ছয়-সাত কাঠবেড়ালি, অন্তত: গোটা কুড়ি পায়রা, দুটি কুকুর- এঁনারা দিনের বেশ কিছুটা সময় আমাদের সাথেই খাওয়াদাওয়া-ওঠা বসা করেন। এর মধ্যে আমাদের দুই বন্ধু, হাচিকো আর হাবা (হাচিকোর বান্ধবী) যারা কিনা জেনেটিক্সগত ভাবে কুকুর প্রজাতির, তাঁদের আমরাই নেমতন্ন করে ডেকে এনেছি। এজন্য বাইরের দরজার সামনেটা, মাঝে মাঝে ভেতরটাও তাদের গায়ের ধুলোতে এতই নোংরা হয়ে থাকে যে বাইরের লোকজন আসলে আমরা স্মার্টলি "এ হে হে !ইস ! কি নোংরা করেছে এরা! এই এদের জন্য কিচ্ছু পরিস্কার থাকেনা আমাদের, এই- এই যে -এখান দিয়ে আসুন-সাবধান" এইসব বলতে থাকি (রোজ একবার করে ঝাড়ু মেরে দিলেই হয়, কিন্তু ওই আর কি, বুঝতেই তো পারছেন)। বাকিরা নিজেরাই এসেছেন এবং খেয়েছেন আর মনের আনন্দে ঘরদোর নোংরা করছেন। বারান্দার হাবিজাবির মধ্যে পায়রারা ডিম পেড়েছেন তাই আমরা ওখানে যেতে পারিনা, পরিস্কার ও করতে পারিনা (পরিস্কার না করার দারুন অজুহাত এটা, আমি তো চাই সারাবছরই ওখানে পায়রার বাসা থাকুক)। বাথরুমে exhaust fan এর ফোঁকরে পায়রার বাসা তাই আমরা এই প্রচন্ড গরমে বাথরুমের exhaust চালাতে পারিনা। মাঝে মাঝে ওনাদের ডানা ঝাপটানির চোটে খসে পড়া পালক, বাসার কাঠিকুঠি, ইত্যাদি আরো অনেক কিছুর জন্য বাথরুমটা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠে (এটাকে পরিস্কার না করে থাকা যায় না বলে অগত্যা করতেই হয়)। এছাড়া টিকটিকি, আরশোলা, মশা মাছি ইত্যাদির কথা ছেড়ে দিলাম।
এহেন আমাদের (যারা অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া হাত-পা নাড়াচাড়া তে বিশ্বাসী নই) আজ সকালে একটা বাজে কাজ করতে হয়েছে। একটা বোলতার চাক খুঁচিয়ে ভাঙ্গতে হয়েছে। খুবই ছোট্ট চাক যদিও, সবমিলিয়ে ১০-১২ খানা বোলতা ছিল। তাও এই অপ্রিয় কাজটা সকালবেলা হাত-পা নেড়ে করতে হয়েছে। কারণ আমি সমস্ত প্রাণীজগত কে মন থেকে ভালোবাসলেও বোলতা - ভীমরুল জাতীয় জীবদের আমি মোটেই পছন্দ করি না (সাপ, টিকটিকি, আরশোলা ইত্যাদি মাথায় রেখেও বলছি)। তাই কাল থেকে জানালার বাইরে বোলতার চাক টাকে দেখেই আমার মনে হচ্ছিল কথন ওটাকে ভাঙ্গা হবে। ভাবছেন কি নিষ্ঠুর! ভাববেন ই তো। ওরা যে বেছে বেছে আমার সাথেই দিনের পর দিন নিষ্ঠুরতা করে চলেছে তার বেলা?
তখন কোন ক্লাস এ পড়ি ভুলে গেছি। প্রাইমারিতে হবে। দোতলার বারান্দায় গেছি কেন কে জানে, হটাত্ কোথাও কিছু নেই সামনে কিছু একটা মিসাইল এর স্পিড এ বঁ ও ও ও ও ও...... করে চলে গেল।  আর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম উপরের ঠোঁটের বাঁদিক টা চড়চড় করে ফুলে গেল, দুচার সেকেন্ড পরে যন্ত্রণা টা টের পেলাম। চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে নিচে আসার সিঁড়িতে বসে শুনলাম মা বলছে ওপরে বোলতার চাক ছিল না একটা? নিশ্চয়ই খুঁচিয়েছিস? বুঝুন ব্যাপারটা! আমি বলে কিনা শান্তশিষ্ট মানুষ এমনিই গেছি ওপরে। বেমক্কা ওরাই তো আমায় attack করলো। সবসময়ই মা আমার দোষ দেখে। যাক গে, সবকিছুরই তো ভালো দিক থাকে। সেদিনও ছিল। আমাকে সেদিন একটা কাঠি আইসক্রিম (ক্রিম না বলাই ভালো তাও বলি, মানে যেগুলোতে ক্রিম থাকে না, জল জল, চুষে খেতে হয়, নানা রকম রঙের হয়) কিনে দেওয়া হয়েছিল। ঠোঁটে লাগাবার জন্য। বুঝতেই পারছেন সেটা শেষ পর্যন্ত ঠোঁটের বাইরে বেশিক্ষণ থাকেনি। এমনিতে আইসক্রিম খাওয়া আমার নিষিদ্ধ ছিল।
দ্বিতীয় ঘটনাটা আর একটু heavy dose এর।  একদিন সকালে বই খাতা নিয়ে জানলার ধারে বসে একবার জানলার দিকে আর একবার বই এর দিকে চেয়ে আকাশ পাতাল ভাবছি (মা ভাবছে পড়ছি), হঠাত শুনলাম মা ডাকছে "আয় দেথে যা আনারস গাছে কেমন একটা বাসা করেছে......"। আমি তো 'আয় দেখে যা....' পর্যন্ত শুনেই  খাট থেকে নেমে সোজা অকুস্হলে। বই ছেড়ে ওঠার চান্স পেয়েছি এই যথেষ্ট। কি দেখতে হবে না জানলেও চলবে। মা বলল দূর থেকে দেখ। তা মায়ের কথা কে আর কবে ফার্স্ট চান্স এই শুনেছে? আমিও যথারীতি 'দাঁড়াও না, কি হবে' বলে যথাসাধ্য সামনে গিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে গবেষণা করতে শুরু করলাম। "দেখো মা ঠিক যেন আনারসের মতন করেই বানিয়েছে! আচ্ছা এটা কি মাটি দিয়ে বানানো ? এরা কি করে মাটি নিয়ে আসে?" এইসব জটিল প্রশ্নে আমি যখন মগ্ন তখন বোধহয় আমারই হাত-পা লেগে গাছটা একটু নড়ে গেছিল (আমি তো নাড়াইনি), হঠাত "কোথা হইতে কি হইয়া গেল" চাক ভর্তি ভীমরুল রে রে করে আমার জামার ফাঁকফোঁকর দিয়ে পিঠ, পেট এ ঢুকে গেল।  মুখ, হাত পা ইত্যাদির অবস্থা ও কহতব্য নয়।  এই বিষয়টার জ্বালা যন্ত্রণা সম্পর্কে আর কিছু বলব না।  যাঁরা একটিও ভীমরুলের কামড় খেয়েছেন তাঁরা জানেন একসাথে অন্ত্যত ২০-৩০ টি ভীমরুলের কামড় খেয়ে একটা ১২-১৪ বছরের মেয়ের কি কি হতে পারে।  শুধু এটুকু বলি এটারও একটা ভালো দিক আমি খুঁজে পেয়েছিলাম। সেটা হলো আমায় চারদিন স্কুল এ যেতে হয়নি। সারা দিনরাত আমার দুটো প্রিয় কাজ করছিলাম। শুধু ঘুমোচ্ছিলাম আর ঘুম ভাঙলেই জানলার দিকে তাকিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে পারছিলাম কেউ পড়তে বসতে বলছিল না। এর পরেও কি ওদের প্রতি আমার শিব জ্ঞানে জীব সেবার মনোবৃত্তি থাকে বলুন?

Tuesday, 17 June 2014

এক থাপ্পড়ে

 আজ হয়ত অন্য কিছু একটা লিখতাম। কিন্তু সকালের একটা ঘটনায় এই গল্পটা না বলে থাকতে পারছিনা। আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে কখনো কেউ এসে একটা থাপ্পড় মেরে আপনাদের থেকেই টাকা নিয়ে চলে গেছে? না না আমি ডাকাতির কথা বলছি না। শান্ত মাথায় সুস্থ পরিবেশে?........ আমাদের বাড়িতে হয়েছে এই ঘটনা। সত্যি বলছি।
বেশ কয়েক বছর আগেকার কথা। যখন আমার ওজন বেশ কয়েক কেজি কম ছিল। আমাদের বাড়িতে একটা স্টিল এর আলমারি ছিল মানে এখনো আছে। স্টিল এর আলমারি মানে যেগুলোর চাবি খুলে একটা পাল্লায় লাগানো হাতল ধরে নিচের দিকে টানলে 'ঘ্যাঁচ' করে একটা আওয়াজ করে আলমারি টা খুলে যায়। ওই 'ঘ্যাঁচ' শব্দটা আবার আমার খুব প্রিয় ছিল। কারণ আমাদের বাড়িতে ওই একটাই জিনিস চাবি দেওয়া থাকত। ইচ্ছেমত আমি ওটার ভেতরে তদন্ত চালাতে পারতাম না তো তাই নিষিদ্ধ বস্তুর মত ওটা আমাকে টানত। সুতরাং ওই 'ঘ্যাঁচ' শুনতে পেলেই আমি গুটিগুটি পায়ে আড়চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে (অনেক সময়েই বই খাতা ফেলে উঠে আসতাম তো, তাই এসে মায়ের মুডটা বুঝে নেওয়া জরুরি ছিল) আলমারিটার সামনে হাজির হতাম। এবং মা বা বাবা যে আলমারিটা খুলেছে তার ফাঁকফোকর দিয়ে পুরো বিষয়টা চোখ দিয়ে গিলতে থাকতাম। আর যদি কখনো কেউ ভুল করেও বলত যে "মুন্নি এটা একটু ধর তো আমি এটা বের করি/ ঢুকিয়ে দি", তবে সেইসব কাগজপাতি, ন্যাপথলীন এর গন্ধ মাখা কালেভদ্রে ব্যবহারের জামাকাপড় ইত্যাদি অমূল্য সব ধনরত্ন ছুঁয়ে দেখার আনন্দে আমি বোধকরি সেদিন রাত্রিবেলাতেও ভাত দিলে খেয়ে নিতে পারতাম। তো সে যাই হোক, একদিন সকালে দেখা গেল চাবি ঘোরালেও এই আলমারিটির পাল্লা আর ঘ্যাঁচ করে খুলছে না। কোনভাবে আটকে গেছে আর কি। বুঝতেই পারছেন মা-বাবা ওই আলমারিটির ওপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল।  আর আমার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতেও ওই আলমারি। সুতরাং আড়াই জনের পুরো পরিবার সেদিন ওই আলমারির সামনে সারাদিন। নানাভাবে বিভিন্ন সম্ভব অসম্ভব পথে চেষ্টা করা সত্ত্বেও আলমারি তো খুলল না। বলা বাহুল্য আমার চেষ্টা বলতে সেদিন পুরো ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করা আর দূর থেকে মনে মনে মা বাবাকে সাহস যোগান ব্যতিরেকে আর কিছুই ছিল না। শেষে সন্ধ্যেবেলা অনেক সাধ্য সাধনার পর একজন মিস্ত্রী কে ডেকে আনা গেল। যিনি তাঁর ব্যস্ততার মধ্যেও তাড়াহুড়ো করে এলেন, দেখলেন, জায়গা বুঝে কেবলমাত্র একটি থাপ্পড় কষালেন (মানে আমাদের কাউকে নয় আলমারিটার পাল্লায়, হাতলের কাছে) এবং ৫০ টি টাকা নিয়ে চলে গেলেন। এক থাপ্পড়ে আলমারির পাল্লার সব বেয়াদপি ঘুচে গেল। অথচ সারাদিন ধরে ওই আলমারির পাল্লা ধরে কম চড়-চাপাটি, টানাটানি হয়নি সবাই মিলে। বলে না ডাক্তার এলেই রোগ পালায় সেই আর কি। সেদিন থেকে আজ অবধি সেই বছর ৩৫ এর বুড়ো আলমারির লকিং সিস্টেম অন্ত্যত কোনো বেগড়বাঁই করেনি কোনদিন।
আজকের সকালের ঘটনাটাও প্রায় অনুরূপ। এখানে কেবলমাত্র মিস্ত্রীটি professional নয় বলে শেষে ওই ৫০ টি টাকা আমায় দিতে হয়নি। ঘটনাটা বলি। আজ তো সকালে যথাসাধ্য ঘুমিয়ে উঠে (মানে যখন আর না উঠলেই নয় আর কি), চাট্টি biscuit চিবিয়ে ল্যাব এ এসে হাই টাই তুলে ভাবলাম অনেক দিন পর আজ একটু কাজকর্ম করলে মন্দ হয় না। বেশ খানিকটা ভেবে টেবে, আঙ্গুল-টাঙ্ঙ্গুল মটকে, মাথা চুলকোতে চুলকোতে তো গেলাম। দেখলাম দুটো হুড (আমাদের science-science খেলার একটা জীবানুমুক্ত টেবিল আর কি) খালি। দেখেশুনে "একজনকে মনে হলো ওরই মধ্যে অন্যরকম", অন্যটাকে পত্রপাঠ নাকচ করে সবকিছু ওই হুড এই গুছিয়ে শেষকালে UV light টা  অন করতে গিয়ে দেখি সে ব্যাটা কিছুতেই অন হয় না। মনে পড়ল এটা কিছুদিন হলো বিগড়েছিল বটে। চটপট করে নাকচ করে দেওয়া হুড টার দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা আমার থেকে অনেক স্মার্ট একজন ইতিমধ্যে দখল করে ফেলেছে (এজন্যই আমার দ্বারা কিছু হয়না)। করূন চোখে আরও দেখলাম সে যা জিনিসপত্র সাজিয়ে বসেছে, তাতে তার দোকান বন্ধ করতে কম করে এক-দেড় ঘন্টা লাগবে। ততক্ষণে আমাকে বসে হাপু গাইতে হবে। মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে ফোনটা করেই ফেললাম। ভাবলাম দেখি শেষ চেষ্টা করে। "আচ্ছা তুই কি জানিস বাঁ-দিকের হুডটার UV ল্যাম্প ঠিক হয়েছিল কিনা (আমি যথারীতি জানিনা)?" তো সেই ভগবানের অবতার বললেন "হাঁ হাঁ একটু দাঁড়া আমি আসছি।" তিনি এলেন, switch দিলেন, হুড এর সামনের কভারটা ধরে একবারমাত্র যত্পরনাস্তি ঝাঁকালেন এবং ল্যাম্প অন হয়ে গেল। আমি হাঁদাগঙ্গারামের মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হ্যা-হ্যা করে হাসতে লাগলাম আর আমার ছোটো বেলার আলমারির ঘটনাটা মনে পড়ে  গেল। যাক বাবা আমায় তো বাবার মত ৫০ টাকা দিতে হয়নি।  

যাক ঝামেলা মিটে গেল

ঝামেলা আর কার ই বা ভালো লাগে? ওটা মিটিয়ে ফেলতে আমরা সবাই ভালোবাসি। কিন্তু ঝামেলা তো আর আমাদের মর্জি মত চলবে না যে মেটাতে চাইলেই মিটে যাবে। তাও আমরা যে যার সাধ্য মত চেষ্টা করি।  তবে আমার বাবার মত ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে কেউ পারবে না। এ আমি ২০০% হলফ করে বলতে পারি। আমার বাবা দৈনন্দিন সমস্ত কাজ কেই ঝামেলা বলে থাকেন। মানে ধরুন, একদিন সকালে বাবা কে বাজার করতে হবে, জেঠুমনির বাড়ি গিয়ে জেঠুমনির সাথে দেখা করে আসতে হবে, ব্যাঙ্ক এ যেতে হবে এবং  সৌমেনদার দোকানে কোনো কিছু একটা ফোটো - কপি করতে হবে এবং মাঝে একবার আমাকে প্রাত্যহিক ফোনটা করতে হবে।  তো এই চারটি কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে দেখা গেল বাবা সকাল আট টায়  বাড়ি থেকে বেরোলেন। প্রথমেই জেঠুমনি তারপরেই বাজার। এসব সেরে বাড়ি ফিরে দেখা গেল সকল ১০ টা।  ততক্ষণে অন্তত মা কে চার বার বলা হয়ে গেছে যে- "১০ টা বেজে গেল তাড়াতাড়ি টিফিন দাও আজ আবার ব্যাঙ্ক এর 'ঝামেলা' আছে। বাজারের ঝামেলাটা মিটল। ১০টা বেজে গেল এখনো সৌমেন দোকান খোলেনি। ঐকাজ টা রয়ে গেল" (দোকানটি ব্যাঙ্ক, ইলেকট্রিক অফিস এবং স্কুল চত্বরে যার কোনটির ই সকাল ১০ টার আগে খোলার কথা নয়। এবং সৌমেনদা ও তাই আমার বাবার কথা ভেবে সকাল আট তে দোকান খুলে মাছি তাড়াতে চায় নি আর কি)। এবং আরো জরুরী বিষয় টা হলো দোকানটি ব্যাঙ্ক এর ঠিক নিচেই।মানে আমাকে আপনাকে ব্যাঙ্ক এবং ফোটো - কপি র জন্য আলাদা আলাদা ভাবে বেরোতে হবেনা। কিন্তু আমার বাবাকে সকালের কাজের লিস্ট এর পাসে টিক দেবার জন্য মানে ওই ঝামেলাটা মেটাবার জন্য সকাল থেকে বার তিনেক ওই দোকানের দিকে যেতে হবে। এর মধ্যে রয়ে গেল আমায় ফোন করা। "মুন্নি কে ফোনটা করেছ?" এর উত্তরে মা হয়ত বলল দাঁড়াও করব সাড়ে দশটা  নাগাদ, তো বাবা তখুনি ফোনের ঝামেলাটা মিটিয়ে দেবেন। আমি বা মা যদি বলি "কিগো তুমি আমাকে/মুন্নিকে ফোন করাটাকেও ঝামেলা বলছ?" তখন একগাল হেসে বলবেন না মানে ওই আর কি। ব্যাঙ্ক এ যাব তো তাই ফোনটা করে নিলাম (ব্যাঙ্ক থেকে এসে ধীরে সুস্থে ফোনটা করলেও কিন্তু আমায় পাওয়া যেত।  কিন্তু ততক্ষণে তো দুপুর হয়ে যেত সকালের লিস্ট এ ফোন করাটা ছিল। তো একটা ঝামেলা তে টিক মারা যেত না যে!)।
বাবার ঝামেলা মেটানোর অজস্র উদাহরণ এর কয়েকটা দেবার লোভ সামলাতে পারছিনা। বাবা তার একমাত্র মেয়ে মানে আমার বিয়ের বৌভাতে কন্যাযাত্রী নিয়ে চলেছেন। দাঁড়ান একটু প্রত্যক্ষদর্শীর জবান এ বলি। আমার ঝুমরোদা আর বাবার ঝুমরো, বাবার সাথে ঝুমরোদার সম্পর্কটা দাদা-ভাই এর। মানে ঝুমরোদা মা বাবা কে যথাক্রমে বৌদি ও দাদা বলে ডাকে (তা সত্বেও আমি কেন তাঁকে দাদা বলি, কাকা বলি না এটার ইতিহাস আমার কাছে পরিস্কার নয়)। তো এই ঝুমরোদা তিনদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বাবার পাশে বসে চলেছে। পরে আমায় বলেছে  "আমি কোথায় ভাবলাম তিনদিন প্রচুর খাটাখাটনির পর এই দেড়ঘন্টা বাসে বসে একটু ঘুমিয়ে নোবো, আর ছোড়দা (মানে বাবা) উঠেই বসে বসে একের পর এক ফোন করতে করতে চলেছে।  বলে অশোকবাবু কে এটা বলে দেই। গোপালবাবু কেও বলি আমরা স্টার্ট করেছি। পিনাকী কেও একবার জানিয়ে দি যে অশোক বাবু আর গোপালবাবু কে জানানো হয়ে গেছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। এককথায় সমস্ত ফোনের ঝামেলা মেটাতে মেটাতে চলেছে। আমি তো শেষকালে ধুত্তেরি বলে পিছনের সিট এ গিয়ে বসলাম।"
এহেন আমার প্রিয় বাবা ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচন এর দিন (মানে আমাদের বুথে যেদিন ভোট ছিল) সেদিন দুপুরে পিনাকীর সাথে কথা বলছেন। আমি কথোপকথন টা যথাসম্ভব হুবহু তুলে দেবার চেষ্টা করছি।
পিনাকী : কাকু কাল খেলা দেখেছেন (আইপিএল চলছিল)?
বাবা: না গো আমি কাল দেখিনি রাত হয়ে যাচ্ছিল তো। আজ ভোর ভোর ওঠার ছিল।
পিনাকী: কেন আপনার কোথাও যাবার ছিল নাকি আজ?
বাবা: না না ভোট ছিল না আজ আমাদের এখানে।
পিনাকী: মানে! কটায় ভোট দিতে গেছেন?
বাবা: (খুব দু:খিত গলায়) সাড়ে পাঁচটা। তাও আমার আগে একজন লাইন এ ছিল। 
বুথ (পিনাকী র কথায় 'ভোটের দোকান') ৭ টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত খোলা ছিল সেদিন। তার জন্য খেলা মিস করার কারণ টা বাবাই বলতে পারবে।কথোপকথন টা শুনে হো হো করে হেসেছিলাম মনে আছে। তাও সেকেন্ড হয়ে গেলে বাবা? যিনি ফার্স্ট হলেন তিনি বোধহয় আরো বড় ঝামেলা মেটনদার। তাঁর কোনো ছেলে বা মেয়ে আছে কি? তিনি কি ব্লগ লেখেন? নাকি তিনি ওসব ঝামেলায় থাকেন না? এইসব কূট প্রশ্ন জেগেছিল মনের মধ্যে। 
আর একটি অত্যন্ত সাধারণ ঝামেলা মেটানোর কথা দিয়ে শেষ করব। ধরুন আমি আর বাবা দুজনে দুদিক থেকে এসে কোথাও দেখা করে কোথাও একটা যাব। আমি সবসময় বাবাকে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পরের সময় রঁদেভু টাইম বলি। মানে বিকেল ৫ টায় পয়েন্ট এ পৌছাতে হলে আমি বলি যে তুমি ৫:৪৫ থেকে ৬ টায় পৌছালেই হবে।  কারণ আমি জানি মাকে "টিকিট-ফিকিট কাটার ঝামেলা আছে বুঝলে, একটু আগে বেরোনো ভালো"- এইসব বলে টলে টার্গেট ট্রেন এর অন্ত্যত দুটো তিনটে ট্রেন আগে উঠে আমার বাবা ঠিক সাড়ে তিনটে নাগাদ পৌঁছে যাবেন ই।

...............belated HAPPY FATHER'S DAY বাবা.....................

Monday, 16 June 2014

নতুন রকম ইচ্ছেখাতা

ইচ্ছেখাতা (যা ইচ্ছে লেখা যায়,  দেখে কেউ নম্বর দিতে আসবে এই ভয় নেই তো তাই 'ইচ্ছেখাতা') আমার অনেক দিনের সঙ্গী। সেই কোন ১২-১৪ বছর বয়সে জেঠুমনি একটা ছোট্ট ডায়রি দিয়েছিল চকলেট রঙের।তার আবার তিনটে পার্ট। মানে threefold আর কি, তো সেই ডায়রি তে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল এ তেন্ডুলকার এর স্কোর, ভারতের নবতম মহাকাশযান এর নাম, গরমের ছুটিতে বন্ধুদের না জানিয়ে অনেকটা পড়া এগিয়ে রাখার সংকল্পে তৈরী করা schedule (যদিও সেই schedule এর ১২ আনা-ই ফাঁকি পড়ত বলাই বাহুল্য)  ইত্যাদি ইত্যাদি তত্কালীন প্রচন্ড ইম্পর্টান্ট অনেক জিনিসপত্রের এর সাথে দু-এক পাতায় ছন্দ মেলানো কিছু লেখাঝোকা ও ছিল। সেই হলো ইচ্ছেখাতার শৈশব। অন্তত ৯০ ভাগ বাঙালির ই এরকম একটা ইচ্ছেখাতা থাকে। তারপর তো high school, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ৬-৭ বছর অনাদি অনন্ত ল্যাবজীবন যাপনের এর পর দেখা গেল ছোটো- বড়, বেঁটে-লম্বা, সাদা কালো নানা রঙের ডায়রি তে ভর্তি আমার বুকশেলফ। তার ৯০% ই জেঠুমনির দেওয়া বিভিন্ন সময়ে আর কিছু এধার ওধার থেকে পাওয়া। এবং সেইসব বিচিত্র ডায়রি ই বিভিন্ন সময় হয়ে উঠেছে আমার ইচ্ছেখাতা। বিভিন্ন সময় নানা কাজে বুকশেলফ হাঁটকে কিছু আবোলতাবোল জিনিস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে তারা। সামনের কয়েক পাতার লেখার ধরন ক্রমবিবর্তিত হয়েছে হিমবাহের প্রকারভেদ থেকে laws of  thermodynamics থেকে tRNA structure -transcription -translation ছুঁয়ে পপুলেশন জেনেটিক্স এর ভুরি ভুরি কঠিন কঠিন জিনিস এ যেসব এর অর্ধেক ও আমার আর মনে নেই। কিন্তু সেসব ডায়রীর শেষের দিক গুলো ছিল আমার মন ভালো করার জায়গা। অজস্র ছোটো ছোটো লেখা- রাগ অভিমান- ভালোলাগা- মন্দলাগা- ছোটো ছোটো দৃশ্য নানান কিছু তে ভরা।  নিশ্চয়ই সেগুলো ও নানা ভাবে বিবর্তিত হয়েছে ছোটোবেলার পদ্য থেকে বড়বেলার অন্তমিলহীন আবেগ থেকে বয়সকালের প্রেমজ যত হাবিজাবি অভিমান- কঠিন কঠিন সব অনুভূতি প্পভৃতি নানারকম অমূল্য সব সাহিত্যকর্মে। একথা না বললেও চলে যে স্বরচিত সেইসব সাহিত্যকীর্তির (যা মোটামুটি সবার ই থাকে) মুল্য কেবলমাত্র সেসব এর রচয়িতা ই জানে (কেউ মোরে বুঝলো না গা)।  তো সেই সব ডায়রী গুলো ও হচ্ছে (ইয়েস প্রেসেন্ট টেন্স, স-অ-অ-অ-অ-ব এখনো আছে, এতসব অমূল্য সাহিত্য চর্চার নজির প্রাণে ধরে ফেলেদেওয়া যায় না কিনা তাই) আমার ইচ্ছেখাতা। তো এখন যখন এই উন্নত প্রযুক্তি র যুগে ল্যাবের কাজ এর ফাঁকে (মানে ফাঁকি মেরে আর কি) টুকিটাকি লিখে ফেলা যাচ্ছে আলাদা করে খাতা পেন্সিল বের না করে তখন ভাবলাম ইচ্ছেখাতাটাকে digital এ transfer করে ফেলা যাক। তাতে লাভ দুই জাতীয়। আর ক্ষতি একটাই। ক্ষতিটা ই আগে বলি, আমার বিচ্ছিরি হাতেরলেখা ক্রমশ: বিশ্রীতর থেকে বিশ্রীতম থেকে অপাঠ্য হয়ে উঠবে। আর লাভ হলো ল্যাব এ বসে বিচিত্র খাতায় বিচিত্র রঙের কালি দিয়ে মাথা নিচু করে লেখার থেকে কম্পিউটার এর দিকে চোখ রেখে কিছু টাইপ করাটা অনেক বেশি নিরাপদ। একথা আমরা যারা কাজের জায়গায় একটা ট্যাব এ অকাজ এর জিনিস (যথা রিসার্চ পেপার এর PDF, এক্সেল শিট, নানা স্ট্যাটিসটিকাল data নিয়ে গ্রাফ এর কারিকুরি ইত্যাদি ইত্যাদি) এবং বাকি সব ট্যাব এ নানা কাজের জিনিস (যথা facebook, নানা অনলাইন শপিং এর আকর্ষনীয় সব সাইট, দুর্দান্ত সব গল্পের বই এর PDF, আরো যতসব লাল- নীল- হলুদ- সবুজ গেম ওয়েবসাইট ইত্যাদি) খুলে সারাদিন প্রচন্ড গম্ভীর মুখে কাজ করি আর মাস্টারমশাই/ দিদিমনি রা এলেই চট করে অকাজ এর জিনিস খুলে বসি তারা সবাই জানি। দ্বিতীয় লাভ তা হলো ডিজিটাল ইচ্ছেখাতার প্রতিটি পাতা আমি চাবি দিয়ে রাখতে পারব। ইচ্ছা হলে লোকজন কে দেখতে দেব।  না হলে দেব না। আগেকার খাতাগুলো তো বুকশেলফ এই থাকত আর আমার অনুপস্হিতিতে যে কেউ আমার মনের সব কথা যা আমি সযত্নে ঢাকাঢুকি দিয়ে রাখতাম তা পড়ে ফেলতে পারত। এটা বড় বাজে ব্যাপার।  যদিও আমার বাড়িতে আমার বুকশেলফ হাঁটকানোর সুযোগ মা- বাবা ছাড়া আর কারো ছিল না আর মা বাবার এইসব খাতা এবং তার হাবিজাবি লেখা পড়ার মত যথেষ্ট সময় ও ইচ্ছা ছিল না বলেই আমি জানি।  তাই লাভ ক্ষতি হিসাব করে ভাবলাম এই নতুন রকম ইচ্ছেখাতা টা try করা যাক। ল্যাব এ বসে বা বাড়িতে যখন ই ইচ্ছে হবে হাবিজাবি (আমার কাছে কিন্তু দারুণ) লিখতে পারব। আর দরকার মত চাবি দেওয়া বা খোলার কাজটাও করতে পারব তাই এই নতুন রকম ইচ্ছেখাতা।