আজকে নাকি কটকটে রোদ্দুর ওঠার কথা। আবহাওয়ার পূর্বাভাষ তাই বলছে। অথচ কাল রাত থেকে আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় বেজায় "বজ্র বিদ্যুতসহ ভারী বৃষ্টিপাত" হয়ে চলেছে। আজ সকাল থেকে আকাশ মেঘলা। বিকেল থেকে ঠান্ডা হাওয়া আর পশ্চিম দিক থেকে কালো মেঘের হুড়ুমদুড়ুমের চোটে বিকেল থেকে আর ঘরে থাকা গেল না। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই হলো। আর যার যা কাজ, পিনাকী ট্রাইপড-ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বেশ গুনগুনিয়ে ছবি টবি তুলছিল। হঠাত দেখি আঁই আঁই করতে করতে ডান গালে হাত ঘষতে ঘষতে লেজ গুটিয়ে সোজা ঘরের দিকে। 'কি রে কি হলো', টি হলো? বলতে বলতেই আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম। ধুপ ধাপ শিল পড়তে লেগেছে। আর হরিয়ানায় বিরল সেই শিলাবৃষ্টির জাঁদরেল মাপের প্রথম শিলটা সোজা এসে বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়টি বসিয়েছে সিধে আমার ঘরের নিবেদিতপ্রাণ আলোকচিত্রীর ডান গালে।
তার দিকে বিশেষ নজর আর দিতে পারলাম না। কারণ ততক্ষণে আমাদের বারান্দা আর সামনের মাঠ পেল্লায় মাপের শিলীভূত জলে সাদা হয়ে গেছে। ঠাস ঠাস শব্দে অবিরত শিল পড়ে চলেছে। দরজার বাইরে হাচিকো ভয়ে কাঠ হয়ে বসে আছে। এত বড় মাপের শিল বেচারা বোধহয় আগে দেখে নি। তাকে অভয় দিয়ে ঘরে বসানো হলো। থার্মোকলের বাক্স মাথায় দিয়ে কটা শিল কুড়োলামও। না না ছাতা ছিল আমার, কিন্তু যে সাইজের শিল পড়ছিল তাতে নতুন কেনা ছাতাটার ভেঙ্গে যাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল কিনা তাই আর ছাতা মাথায় দিয়ে বারান্দায় যাবার রিস্কটা নিলাম না আর কি।
প্রায় দশ মিনিট ধরে আকাশ ভেঙ্গে পেল্লায় পেল্লায় মাপের শিলাবৃষ্টি হলো। আর আমাদের বোরিং ছুটির দিনটাকে দশমিনিটেই চাঙ্গা করে দিল। আমিও নিরাপদ দূরত্বে থেকে চাট্টি ছবি তুললাম। দেখুন কেমন সাদা হয়ে গেছে মাঠ।
পিনাকীও গাল সামলে ছবি টবি তুলল। তারপর যখন শিলার মাপ আর তার পতনের ফ্রিকোয়েন্সি একটু কমে গেল তখন দেখি হাচিকো ঘরের এককোণে দেওয়াল ঘেঁষে কাঠ হয়ে বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারাকে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার পরে কটা বড় বড় শিলা দিতে দেখি ব্যাটা চেটে চেটে খেল। ক্রিম বিহীন আইস ভেবে বোধহয়। বেচারা। আপাতত বৃষ্টিপত্র হয়ে চরাচর শান্ত। হাচিকো এখন ঘরের বাইরে বসে হাত পা চাটছে। এবার নিশ্চিন্তে ঘুমোবে মনে হয়। আমরাও একপেট ইডলি খেয়ে বুঁদ হয়ে বসে আছি। পিনাকী তবে মাঝে মধ্যেই দেখছি মহাভারত পড়তে পড়তে এখনো ডানগালে হাত ঘষছে। বেচারা!!
0 comments:
Post a Comment