Friday, 22 August 2014

স্লিপারে ফেরা


ছোট্ট ছোট্ট টিলা। সবুজে মোড়া। বর্ষার জলে নেয়ে ধুয়ে চকচকে একেবারে। মাঝেমধ্যে দুচারটে খাড়া ন্যাড়া পাহাড়, তার টং-এর ওপর আবার পুঁচকে পানা মন্দির। কি করেই বা ওই টং এ উঠে কেই বা যে ওই মন্দির বানিয়েছিল কে জানে। আর ছিল সাঁ সাঁ করে পিছনে ছুটে চলা নরম সবুজ প্রান্তর। কোথাওবা ঢেউ খেলানো, কোথাওবা একদিকে ঢালু। মাঝে মাঝে এমনি সমতল যেন মনে হয় দুরমুশ পেটা করে, দামী ঘাসের বীজ লাগিয়ে, সেই ঘাস সমান করে ছেঁটে তৈরী করা বড়লোক বাড়ির লন বুঝি। মাঝে মাঝে ছায়া দেবার জন্য দুএকটি বড় গাছ। একদম পিকচার পারফেক্ট। ঠিক যেন ছোটবেলার আঁকার খাতা থেকে উঠে আসা একটি দৃশ্যচিত্র। বর্ষা তার দুহাত উজাড় করে সাজিয়েছে রাঢ় বাংলা আর সংলগ্ন ঝাড়খন্ডকে। কুল্লে সাত বা আটটি ছোট ছোট টিলা আর তার চারপাশের উঁচু নিচু মাঠ ঘাট পুরোটাই সবুজ-সবুজ আর সবুজ। কি অপূর্ব লাগলো যে পারশনাথ স্টেশন পার হবার পরে এই দৃশ্যটা। কেবলমাত্র এটুকু দৃশ্য আরো একবার দেখার জন্যই বর্ষাকালে পারশনাথ আসতে রাজি আমি। মনে দাগ কেটে গেল ছোট্ট খুদাই নদী। হয়ত বর্ষা ব্যতীত এ নদীর কোনো অস্তিত্বই থাকে না, কিন্তু বর্ষায় খুদে খুদাই নদীর রূপ আর ধরে না। মাঝে মাঝে মসৃণ পাথর পেরিয়ে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে চলেছে।


এপথে আমি আগেও এসেছি। কিন্তু বছরের এইসময়ে নয়। আর পথ পার হয়েছি সন্ধ্যে নামার পরে। ভরা বর্ষায় দিনের বেলা এ রাস্তায় আসা আমার প্রথম। মনে হলো ভাগ্যিস এসেছিলাম, ভাগ্যিস এই ট্রেনে টিকিট কেটেছিলাম। বাড়ি থেকে ফিরে আসার মনখারাপ রাস্তাতেই উধাও। তার ওপরে আবার অনেক দিন পর স্লিপারে ফেরা। হাজার কিলোমিটার রাস্তা, হু হু করে ছুটে চলা ট্রেন, দুপাশে ছুটে চলা মন মাতানো ল্যান্ডস্কেপ, মাঝে মাঝে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। মুখের ওপর পাগলা হওয়ার ঝাপটা। এই হওয়াটাই ট্রেনজার্নির মজা যেটা এসি তে অমিল। অনেকদিন পর দুর্গাপুর স্টেশন থেকে ওঠা হকারের কাছ থেকে মৌরি লজেন্স কিনে খেলাম। মনে হচ্ছিল ছোট্ট হয়ে গেছি। ভেবেছি চান্স পেলে আবার স্লিপারের টিকিট কাটব। বর্ষাকাল হলে তো নিশ্চয়ই। সূর্যাস্তে লাল হয়ে আসা চারদিক, ট্রেন থেকে দেখা পরেশনাথ পাহাড়, পাহাড়ের টং এ ছোট্ট মন্দির, টানেল, সবুজ মাঠ আর হু হু বাতাস বয়সটা কমিয়ে দিয়েছে প্রায় দশ বছর। শুধু মনে হচ্ছে আবার কবে?



0 comments:

Post a Comment