আপাতত দিনদুবেলা প্রচণ্ড ভালমন্দ খাওয়া দাওয়া চলছে। খাদ্যাখাদ্য থেকে
মুখতোলারই সময় পাচ্ছিনা তো আর কি গল্প করব আপনাদের সাথে। প্রচুর গপ্প করার মত
বিষয় জমে আছে সেগুলো সব পরে রসিয়ে বলবখন। আপাতত কি কি খেলাম তার একটা বিশদ
ফিরিস্তি দিয়ে ফেলি কেমন? হিংসে করবেন না যেন । আপনারাও যখন বাড়ি যাবেন তখন আপনারাও
আমার মত ভাল মন্দ খেয়ে জানাবেন। আমি তখন ‘জানব আর জ্বলব, লুচির মত ফুলব’। আপাতত
বলি অ্যাঁ?
আমরা বেরিয়েছি শুক্রবার সেদিন থেকেই শুরু করছি কেমন।
শুক্রবারঃ দুপুরে কাবাব এক্সপ্রেসসের মালাই চিকেন
কাবাব, তান্দুরি চিকেন আর প্লেন নান । আর সঙ্গে ছিল কোক। এখানে দুই হাঁদারাম একটা
কীর্তি করেছি । কি বুঝে দু দুখানা বড় কোক order করে ফেলেছি । তারা তো ৬৫০ml এর দুখানা ঢাউস কোকের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে গেল। আর আমরা ভাবতে বসলাম যে এবার
কি হবে এতটা কোক । ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে হাতে কোকের গ্লাস নিয়ে তো ছোটাও যাবে না
সুতরাং চলো বোতলে ভরো। ছাড়ব না। বোতলের জল একটা খালি কোকের গ্লাসে ঢেলে বাকি
খানিকটা জলের ওপরেই কোক ঢালা হল। ফলে যেটা দাঁড়ালো সেটা হল একটা diluted হলদেটে বিকট জোলো তরল। পিনাকীকে বললাম, “তুই এটা খাবি?” বলল, “ঠিক আছে
ঠাণ্ডা তো জিনিসটা, একটু করে খাব”। বললাম, “লোকে ভাববে মেট্রোতে বসে মদ খাচ্ছিস”।
বলল, “বেশ তো তখন তাদেরকেও একটু offer করব। একবার খেলে আর
বলবে না”। বুঝলাম ওই অখাদ্য পানীয়টা সঙ্গে যাবেই। দেখুন বিষয়টার ছবি তুলে রেখেছি।
আর বিকেল থেকে তো রাজধানীর গতের খাবার । সেসব আর কি নতুন করে বলব। খাওয়া শুরু
হল তো শনিবার দুপুরে বাড়ি পৌঁছানোর পর
থেকে। গুছিয়ে বলা যাক। কি বলেন?
শনিবারঃ দুপুরে তিন পিস ইলিশ মাছ। ভাজা আর সর্ষেবাটার ঝাল। ডাল, দু
তিনটে তরকারি সহযোগে একপেট ভাত। রাতে তো কুমড়োর স্যুপ আর দুর্দান্ত একখানা চিকেন,
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর তেহাই সমেত।
রবিবারঃ দুপুরে ফের তিন পিস ইলিশ, সঙ্গে জাম্বো
সাইজের খয়রা মাছ আর ভেজিটেবিল বেকড, ইলিশের মাথা দিয়ে মোচার ঘণ্ট, শেষপাতে আম। খেয়ে
মনে হচ্ছিলো এইবার নিশ্চয়ই ফেটে যাবে পেটটা। সৌভাগ্যবশতঃ ফাটে যে নি সেতো দেখতেই
পাচ্ছেন ।
সন্ধ্যায় তালের ফুলুরি। তাল আমার বড় ভাল লাগে। বেছে বেছে তাই এই সময়টায় বাড়ি
এসেছি। আমার বাড়িতে অতীব প্রাচীন এবং অতীব মিষ্টি স্বাদের একটা তালগাছ আছে নাম ‘ঘোষাল
গাছ’, চ্যাটার্জী পাড়ায় কেন ঘোষাল গাছ সে ইতিহাস আমি জানি না। সে যাই হোক প্রচুর
তাল রয়েছে। আমি নিশ্চিন্তে আছি আয়েশ করে কয়েকদিন তালের ভুষ্টিনাশ করা যাবে। তাল
নিয়ে পিনাকীর হাজারও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আর এক কান দিয়ে বার করে
দিচ্ছি তুশ্চু করে।
রাতে রুটি-দুধ এর সাথে মামার গাছের অ্যায়সা বড় মর্তমান কলা, পণ্ডিতের দোকানের special রাজভোগ,
আর লাইন দিয়ে হরেক রকম তরকারি।
সোমবারঃ সকালে তো গেলাম
কলকাতা ইউনিভার্সিটি । সেখানে তো আর এক কাণ্ড। সে গল্পও তোলা রইল গুছিয়ে বলতে হবে
। সে চক্করে দুপুরে বিশেষ কিছু ভাল-মন্দ জোটেনি । চিন্তা করবেন না রাতে ফুল লোড
নিয়ে পুষিয়ে নিয়েছি। রাতে খেলাম কি শুনুন- ভাত, চিংড়ি মাছ আলু পোস্ত, আবার ইলিশ দু
পিস, ডাল, ডবল-কুসুমের ডিম সেদ্ধ, পুঁটীমাছের ঝাল।
মঙ্গলবারঃ সকালে আবার ডবল-কুসুমের ডিম দিয়ে পোচ আর
টোস্ট সৌজন্যে আমাদের মাস্টার শেফ শ্রীমান পিনাকীচরন। দুপুরে ইলিশ মাছের ঝাল, পুঁটী
মাছের ঝাল, গোবদা গোবদা চিংড়ীর মালাইকারী, চিংড়ীর পোস্ত, ডাল, চাটনি।
রাতে পেটকে রেস্ট দিতে দুধ-পাঁউরুটি-কলা-রাজভোগ।
বুধবারঃ এদিন আবার কলকাতা ইউনিভার্সিটি। সকালে দুধ-ভাত, আলুসেদ্ধ,
ধ্যাবড়া একটা পোস্তর বড়া, আর মেদিনীপুর জেলার special গয়নাবড়ি ভাজা দিয়ে
গাঁতিয়ে খেয়ে ইউনিভার্সিটি গেলাম। বিকেলে ফিরে এসে একবাটি বড়কাঁকড়ার ঝাল এমনি এমনি
খেয়ে ফেললাম। রাতে চিকেন রোল।
বৃহস্পতিবারঃ আজ দুপুরে ভাতের সাথে থালা আলো করতে ছিল
ডাল, পুঁইশাক-কুমড়ো-ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে চচ্চড়ি- উফফ অমৃত অমৃত! ভাবলেই ঢোঁক
গিলতে হচ্ছে। আর ছিল চিংড়ী মাছ- বেগুন-আলু ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে ফাটাফাটি একটা
তরকারী । আর ইলিশ মাছ। আমার বাবা সম্ভবতঃ ঠিক করেছেন আমায় এই সাত দিনে সারা বছরের
ইলিশ সাধ মিটিয়ে খাইয়ে দেবেন। আর আমিও উচ্চবাচ্য না করে দিব্য দিন-দুবেলা পেটপুরে
সাঁটিয়ে চলেছি। পেটের ভেতরের যন্ত্রপাতি আর অ্যাডিপোসাইট কোষের বাড়-বৃদ্ধি
সম্পর্কে বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা না করে।
রাতে মা তাল দিয়ে পুলি পিঠে বানাচ্ছে দেখে নিয়েছি। অতএব রাতে আমার প্রিয় আরও
একটি বিষয় হতে চলেছে। এমতাবস্থায় আর বেশি কিছু লিখছি না।
এই হল এখনও পর্যন্ত আমার ‘ভুঁড়ি-ভোজনের’ ইতিকথা। আর মাঝেমধ্যেই যে সব পান্তুয়া-ঝুরিভাজা-ডাঁশাপেয়ারা-নারকেল
নাড়ু ইত্যাদি প্রভৃতি চলছে সেসব তো বললামই না। এসব সকাল-দুপুর-সন্ধ্যে-রাত্রি অঢেল
পরিমাণে খেয়েদেয়ে যদি সত্যি সত্যি পেট ফেটে মরে না যাই তবে আবার গপ্প হবে। আপাতত
টা-টা। পিঠে খেতে হবে।
0 comments:
Post a Comment