Saturday, 2 May 2020

স্ব-অধীনা

স্ব-অধীনা 
অর্পিতা চ্যাটার্জী
 (বাতায়ন মার্চ-২০২০ সংখ্যায় প্রকাশিত)

শান্ত ভাবে মেয়েটা বলে যাচ্ছিলো অনেক বছর আগেকার একটা বীভৎস রাতের কথা। যে সময়ের কথা বলছিলো, সেসময় সে অঞ্চলের মানুষের নিরবিচ্ছিন্ন রাতের ঘুম ছিলোনা। মেয়েটারও ঘুম ভেঙেছিল সেদিন ভয়ঙ্কর একটা বিস্ফোরণের শব্দে। জানালা দিয়ে যা সে দেখেছিলো সেদিন, তাতে গভীর রাতের সেই বিস্ফোরণে সারা বাড়িটার সাথে কেঁপে উঠেছিল ছোট্ট সেই মেয়েটির ভেতরটাও। লাল-কমলা-ধূসর সমস্ত রং মিলে অদ্ভুত সম্পূর্ণ বৃত্ত একটা যেন। আর সাথে ওই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের শব্দ। বাড়ির খুব কাছেই একটা মিসাইল পড়েছে। একটুর জন্য বেঁচে গেছে মেয়েটার বাড়ি আর তার পরিবার সেরাতের জন্য। সেদিন বাকি রাতটা সে ভগবানকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল সেরাতটাই তার আর তার পরিবারের শেষ রাত ছিল না বলে। আর তার পরেই সেদিনের সেই মেয়েটা, আজকে যিনি  মধ্যবয়সিনী নারী, বলে যাচ্ছিলেন, সেরাতের সেই ধন্যবাদের জন্য আজও কেন তিনি লজ্জায় মরমে মরে থাকেন। সেরাতের মিসাইলের ধাক্কায় তাঁর পরিবার রক্ষা পেয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু মিসাইলের ধাক্কায় মাটিতে মিশে গিয়েছিলো তার সাত বছুরে ভাইয়ের প্রাণের বন্ধুর বাড়ি। সাথে সাথে বাড়ির  বাসিন্দারাও। ভাইয়ের বন্ধু এবং তার বাবা বাড়ি এবং বাড়ির আর সমস্ত কিছুর সাথে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলেন সেদিন। তারপর আরো আরো কত মানুষ, আরো কত কত কাছের পরিবার চোখের সামনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। একের পর এক যুদ্ধে ঘরছাড়া হলো আরো কতজন। সুন্দর সাজানো শহর ছাড়খাড় হয়ে গেল মানুষের তৈরী করা সমস্যায়। বলতে বলতে রাগে, লজ্জায়, হতাশায় কেঁপে উঠছিলো সেদিনের সেই মেয়েটা। নিজের দেশ ছেড়ে তাকে উদ্বাস্তু হতে হয়েছিল শুধু বেঁচে থাকার জন্য। তিরিশ বছর আগেকার ইরাকে সেদিন বেঁচে থাকাটাই দুস্কর ছিল সাধারণ মানুষের। অথচ সে দিনের সেই মেয়েটি তো সাধারণ ছিল না। তার তো নিরাপত্তার অভাব হবার কথা ছিল না। তবুও তো তাকে জীবনের প্রথম উনিশটা বছরের শৈশব, কৈশোর, পরিবার, স্বজন, বন্ধু, সমস্ত জীবনটাই সেখানে ফেলে রেখে ঘর ছাড়তে হয়েছিল। ইরাকী রাষ্ট্রযন্ত্রের অত্যন্ত কাছের একটি পরিবারের একজন হয়েও তার নিজের দেশ তাকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। পালিয়ে আসতে হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এহেন মেয়ের মনে যে যুদ্ধ একটা বিশেষ স্থান দখল করে থাকবে তা অস্বাভাবিক নয়। ইরাকের মাটিতে বারংবার যুদ্ধ তাকে নিশ্চিন্ত উচ্চকোটির জীবনযাপন থেকে একধাক্কায় টেনে এনে বসিয়েছে যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইরাকী উদ্বাস্তুর জীবনে। সে মেয়ের শয়নে স্বপনে জাগরণে সেদিন থেকে কেবল যুদ্ধ।

উনিশ বছর বয়সে কলেজের পড়া ছেড়ে মেয়ে চলল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। একা নয় মা-বাবার সাথেই। মায়ের জেদে মেয়েটাকে বসতে হলো বিয়ের আসরে। বাবার প্রচন্ড আপত্তি সত্ত্বেও, সে মেয়ে বিয়ে করল। বিয়ের কয়েক ঘন্টা আগে হবু বরের সাথে চুক্তি হলো তার। ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন তার পরিবার। তাকে বিয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রেখে সুস্থ স্বাভাবিক পড়াশুনা চালিয়ে যাবার জন্য এখানে এসেছেন। সুতরাং সে পড়াশুনা করবে, যা করতে চায় জীবনে তাই সে করবে। এই শর্তে বিয়ে করল সে, উনিশ বছরের মেয়ের বিয়ে নিয়ে, নববিবাহিত জীবন নিয়ে যা যা স্বপ্ন কল্পনা থাকা সম্ভব তার কিছুমাত্র ছিল না এই বিয়েতে। তবুও সেদিনের সেই পাথর হয়ে যাওয়া মেয়েটির মা, যিনি ছিলেন মেয়েটির এত বছরের জীবনে সবচাইতে ভরসার স্থল, তিনি নিজের কলিজাকে সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষের হাতে তুলে দিয়ে গেলেন? কেবলমাত্র তাকে যুদ্ধের বাইরে একটা সুষ্ঠ পরিবেশ দেবেন বলে। তিনিই ছিলেন মেয়েটির লোহার মত মনোবল অথচ শিশুর মতো সতেজ একটি জীবন গড়ে তোলার কারিগর। মেয়েটির মনে সেদিন কি চলেছিল কে জানে? তারপরের সেই স্বল্প বিবাহিত জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডে তার বিয়ের শর্তভঙ্গ হতে দেখে, মানিয়ে নিতে নিতে স্বাধীনচেতা একটি সদ্যযৌবনা মেয়ের আত্মা কোথায় তলিয়ে গিয়েছিল কে জানে। পড়াশুনা হয়নি। কোনো কিছুর স্বাধীনতা তো দূর, মেয়েটির দাম্পত্যজীবন, যৌনজীবন সমস্তকিছুই তলিয়ে গিয়েছিল এই পরিবারের পুরুষ তন্ত্রের, পরিবারতন্ত্রের পেষণে। তখনও সে ভাবত একদিন সে ফিরবে তার সুন্দর অতীতের পরতে পরতে। কিন্তু মানুষের সহ্যসীমা পরীক্ষা করেন বোধহয় বিধাতা। পাথর হতে হতে বাকি ছিল বোধহয় তখনও। ততদিনে গালফ ওয়ার শুরু হয়ে গেছে। আর তার সাথে ছিন্ন হয়েছে মেয়েটির বাড়ির সাথে সমস্ত যোগাযোগ আর বাড়ি ফেরার স্বপ্ন। আর তার সাথে বেড়েছে তার দাম্পত্য জীবনের হতাশা।

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সমস্ত মানুষই তো শেষরক্ষা করার চেষ্টা করে। আর এ মেয়ে তো ভবিষ্যতের আগুন পেরিয়ে হেঁটে চলা ফিনিক্স। সেদিন রাতে বিছানায় ইরাকী রাষ্ট্রনায়কের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে, তার নৃশংসতার বিরুদ্ধে সমস্ত ক্ষোভ সমস্ত রাগ, সমস্ত প্রতি নৃশংসতা উগরে দিচ্ছিলো স্বামীটি এই ইরাকী মেয়েটির ওপর। প্রাণপণ বাধা দেওয়া সত্ত্বেও বিবাহিত স্ত্রী যখন, তখন তাকে ধর্ষণ করার অধিকার তো অলিখিতভাবে স্বামীটির ওপর বর্তায়ই তাই না? আর উদ্ধত একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত দেশের থেকে অনেক দূরে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে ঘৃণা, ক্ষোভ, রাগ হতাশা উগরে দেবার রাস্তা তো ধর্ষণ! বিপ্লবী বা সেনাদের দেশপ্রেমের সাথে ধর্ষণেচ্ছা যে সমানুপাতী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সারা পৃথিবীর সমস্ত দেশের সেনাবাহিনী এ কথার সাক্ষ্য দেবে। সুতরাং এই স্বামীটির যে নীতিগতভাবে এতটুকুও বিবেকে লাগেনি উনিশ কুড়ির এই অসামান্য সুন্দরী সদ্য বিবাহিত ইরাকী তরুণীটিকে সাদ্দাম হুসেনের প্রতিভূ মনে করে বিছানাতেই জবাই করার জন্য। এর পরে যদি যুক্ত হয় আরো একটি সত্য যে, সামনের মেয়েটি সাদ্দাম হুসেনের খুবই কাছের মানুষগুলির মধ্যে একজন, হুসেনকে কাকা সম্বোধন করার মত কাছের, তাহলে তো তাকে একেবারে মেরে ফেললেও বোধহয় কারো কিছু বলার থাকে না। হ্যাঁ, মেয়েটি যেকোনো একজন ইরাকী উদ্বাস্তু ছিল না। তার বাবা ছিলেন সাদ্দাম হুসেনের ব্যক্তিগত প্লেনের পাইলট এবং যুদ্ধ পূর্ববর্তী ইরাকের সিভিল এভিয়েশনের মাথা। সুতরাং সেই সূত্রে সাদ্দামের প্রাসাদেরই অংশ ছিল তার পরিবার। আর সেই সূত্রেই ইরাকী একনায়ক সাদ্দাম হুসেন মেয়েটির 'Amo' অর্থাৎ কাকা। আর সেদিনের সেই কুঁকড়ে যাওয়া মেয়েটিই আজকের আগুন যিনি আজ নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। যেইনাব সালবি (Zainab Salbi)।

যুদ্ধপূর্ববর্তী ইরাকে ইউরোপিয়ান ধাঁচে শিক্ষিত, স্বাধীন, উচ্চ নীতিবোধ সম্পন্ন, শিক্ষিত রুচির পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন যেইনাব। অর্থের অভাব ছিলো না উচ্চবিত্ত সেই পরিবারে কোনো দিনই। আর ছিল মায়ের থেকে পাওয়া অন্যায়কে সহ্য না করার কঠিন কিন্তু শান্ত-ধীর একটি জেদ। ইরাকে সময় বদলানোর সাথে সাথে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন চলে তাকে যেতেই হবে তার সাধের বাগদাদ ছেড়ে। কিন্তু এইরকম খাঁচার জীবন যাপন করতে জন্মাননি যেইনাব। প্রতি পদে ধর্ষিত হচ্ছিল তাঁর এতদিনের নীতিবোধ, রুচি, শিক্ষা। আর তার সাথে সাদ্দাম হুসেনের কাছের মানুষ হবার সাজা হিসেবে শুধু স্বামী নয়, প্রতিটি মানুষের বাঁকা ঘৃণা। সেদিনের সেই শেষ রাতে বিবাহিত স্বামীর দ্বারা নৃশংস ভাবে ধর্ষিত হতে হতে মন স্থির করে নিয়েছিলেন যেইনাব। আর নয় এবার  নিজের জীবন তাকে নিজেকেই তৈরী করে নিতে হবে। শরীর আর মনকে এক জায়গায় জড়ো করে প্রবল আঘাত করেছিলেন দুর্বিনীত লোকটির বিরুদ্ধে। তাতে যদিও জোয়ান লোকটির বিশেষ কিছুই হয়নি। কিন্তু অবাক হয়েছিল সে আঘাতটা আসতে দেখে। পাল্টা আঘাতটা আসতে পারে জানলে মানুষ আঘাত করবে কিনা দুবার ভাবে। আর সামনের প্রতিপক্ষ দুর্বল হলে মানুষ আঘাত করেই আনন্দ পায়। এতো সর্বৈব সত্য। সুতরাং এই পাল্টা প্রতিরোধ অপ্রত্যাশিত ছিল বলেই পৌরুষে লাগলো বেশি করে। এতটাই লাগলো যে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিযোগে পরদিন সকালে পুলিশ এলো যেইনাবকে নিয়ে যেতে। স্বামীটি ভেবেছিলো, এতে করে বেশ ভয় দেখানো যাবে উদ্ধত মেয়েটিকে। কিন্তু মেয়েটিকে সে চেনেনি তখনও। সে মেয়ে তখন করণীয় ঠিক করে ফেলেছে। সমস্ত অভিযোগ বিনা কথায় মেনে নিয়ে মাথা উঁচু করে চলে গেল পুলিশের সাথে। কারণ, সেটিই সেদিন ছিল তার মুক্তির একমাত্র পথ। মায়ের পূর্বপরিচিত বান্ধবীর সাহায্যে পুলিশি ঝামেলা মিটিয়ে নিজের যতটুকু দামি গয়নাগাঁটি ইত্যাদি ছিল সমস্ত গুটিয়ে ঘর ছাড়লো সে মেয়ে। পথে নামলো রাজার দুলালী। বাড়ির সাথে যোগাযোগ তো আগেই ঘুচেছে। গালফ এর যুদ্ধ তখন তুঙ্গে।

যার কোনো দিন এতটুকু অর্থের অভাব ছিল না তারপর সে কি করে ওয়াশিংটনে পালিয়ে এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই জোগাড় করল, কি করে নিজের খরচ চালাবার জন্য কি কি কাজ করল, কি করেই বা পড়াশুনা চালালো সে এক রুদ্ধশ্বাস রূপকথার গল্প। প্রতিপদে বাধা। কিন্তু যে মেয়েটি আজকের যেইনাব হয়ে উঠবেন সে মেয়েকে আটকে রাখতে বিধাতাও ভয় পাবেন বোধহয়। তবে এবার আর ভুল করেনি মেয়েটি। তার পরিবারের পরিচয়, সাদ্দাম হুসেনের সাথে তার পরিবারের সম্পর্ক সম্বন্ধে ঘুণাক্ষরেও কাউকে কিছু জানায়নি তার নতুন দুনিয়ায়। নয়ত, নতুন করে বাঁচতে চাওয়া এই পৃথিবীতে আবার তার প্রতি সকলে ছুঁড়ে দিত ঘৃণা। আর চিরকালীন সেই "পাইলটের মেয়ে" এই অভিধা পেরিয়ে নিজস্ব ব্যক্তিস্বত্তাকে কাউকেই চেনাতে পারত না মেয়েটি। আজকের যেইনাবের জায়গা জুড়ে রাজত্ব করত "পাইলটের মেয়ে"। আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসছিলো ক্ষতটা। প্রাণোচ্ছল মেয়েটি পরিণত হয়েছিল ভয়ার্ত, সংবেদনশীল একটি মূর্তিমতি হতাশায়। কোনো পুরুষকে বিশ্বাস করা সম্ভব ছিল না সেদিন তার। তবুও প্রেম আসে। তবুও প্রেম এলো। বিশ্বাস ভাঙতে ভাঙতেও মানুষ আবার বিশ্বাস করে। আমাদের এই মেয়েটিও বিশ্বাস করার মত আর একটি মানুষ পেল। আমজাদ আতাল্লাহ। আমজাদের বন্ধুত্বে কোনো খাদ ছিল না। স্বদেশ বিচ্ছিন্না, ক্ষতবিক্ষত মনের, কুড়ি বাইশ বছরের যেইনাবের জীবনে প্রেম এলো অবশেষে।

এত কিছুর মধ্যেও যুদ্ধকে ভোলেনি মেয়েটি। যুদ্ধ তার সব কিছু নিয়েছে। তার পরিবার, তার স্বজন,  তার স্বদেশ। তাকে ভিটে ছাড়া করেছে নৃশংসভাবে হাজার হাজার উদ্বাস্তুর সাথে সাথে। Women for Women International তৈরী হলো যখন, মেয়েটির বয়স তখন মাত্র তেইশ। যে বয়সে মেয়েরা স্বপ্নের ডানার ভর করে স্বপ্নের দুনিয়ায় বাসা বাঁধে, সে বয়সে মেয়েটি স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিলো যুদ্ধ বিধ্বস্ত চুড়ান্ত অবহেলিত কিন্তু চুড়ান্ত বাস্তব এক দায়িত্ব। আর সেখান থেকেই শুরু হলো আজকের যেইনাবের যাত্রাপথ। পাথর থেকে আগুন হয়ে ওঠার সূচনা। আগুনে সেই মেয়ে তারপর হেঁটে যেতে লাগলো যুদ্ধবিদ্ধস্ত একের পর এক দেশে।  আফগানিস্তান থেকে সুদান থেকে কঙ্গো থেকে রোয়ান্ডা থেকে ইউক্রেন কোথায় নয়! কোথাও বিপ্লবী কোথাও অন্য দেশের সৈনিক উদ্দাম অত্যাচার চালাচ্ছে মেয়েদের ওপর। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে উঠে আসে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির কথা। উঠে আসে অসংখ্য সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। কিন্তু উহ্য থেকে যায় একটা বিশেষ অংশের কথা। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি কিন্তু যুদ্ধের মধ্যেও যারা জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে তারা কিন্তু এই অংশই।

মেয়েরা।

যেইনাব তুলে আনেন তাঁদের কথা যাঁরা বছরের পর বছর যুদ্ধবন্দী যৌনদাসীরূপে সেনাদের লালসার শিকার হন আবার তাদেরই জল, খাবার দাবার, গোলাবারুদ বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হন। ভাসা ভাসা দেশপ্রেমের ধ্বজাধারীদের গালে সপাটে একটা থাপ্পড় কষিয়ে যেইনাবের অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়-"'শান্তি' মানে যুদ্ধের শেষ নয়, শান্তি মানে জীবনের শুরু।" কেমন জীবন জানেন? এই যে আমি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে কিবোর্ডে কটা শব্দ টাইপ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত নারীদের জন্য ছদ্ম হাহুতাশ দেখাচ্ছি সেরকম লতানে জীবন নয়। শুধু ঋজু হয়ে বেঁচে থাকা। প্রতিদিনের খাওয়া পরা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতালকে চালু রাখা। বোমা পড়লে বাচ্চাদের আগলে রাখা। তাদের মনে ভয় আর প্রতিহিংসার বীজ অঙ্কুরেই বিনিষ্ট করার চেষ্টা করে যাওয়া। এটাই তাঁদের জীবন। এটাই তাদের কাছে শান্তি। যেইনাব সংগ্রহ করেন এদের গল্প আর নির্মম উলঙ্গ সত্যিগুলো আমাদের ড্রয়িং রুমে ছড়িয়ে দিয়ে যান তার লেখায়, বক্তব্যে। দেশপ্রেম আর যুদ্ধের নায়কচিত গল্পের আড়ালে আসল রক্তাত সত্যটাকে আমাদের খাবার টেবিলে সাজিয়ে দেন। কি করবেন তখন? বীভৎসতার, নৃশংসতায় বমনোদ্রেক হবে আপনার? সেজন্য যেইনাব বলেন সে গল্প? না। অবশ্যই সেজন্য নয়। তিনি বলেন জীবনের গল্প। তিনি বলেন তাদের কথা যা জানলে আপনি নিজেকে আর ততটা অসহায় মনে করবেন না। যেইনাবের গল্প থেকে কটা গল্প শোনাই বরং।

আপনি জানেন, ইরাকে যখন মুহুর্মুহু বোমা পড়ত যেইনাবের ছোটবেলায়, যেইনাবের মায়ের মত অসংখ্য ইরাকী মা যেইনাব আর তার ভাইয়ের মত অসংখ্য ছোট ছোট বাচ্চাদের বুকের কাছে বসিয়ে পুতুলনাচ দেখাতেন? যাতে তারা বোমার শব্দের মাঝেও জীবনকে আগলাতে শেখে। যাতে তাদের কাছে বোমার শব্দটাই তাদের একমাত্র ছেলেবেলার স্মৃতি না হয়ে থাকে।  আপনি কি চেনেন ফরিদাকে? সৌদি আরবের এই অত্যন্ত সাধারণ রমণীর হয়ত খাতায় কলমে যুদ্ধে তাদের দেশকে রক্ষা করার কোনো রেকর্ড নেই। কিন্তু এই অসাধারণ রমণীকে চিনে রাখুন। বাচ্চাদের স্কুলের মিউজিকের শিক্ষিকা ইনি। পুরো যুদ্ধের সময়টায় একটা দিনের জন্য, হ্যাঁ, একটা দিনের জন্যও স্কুল বন্ধ করার কথা ভাবেননি। বোমার ভয় অগ্রাহ্য করে বাচ্চাদের উৎসাহ দিয়েছেন পিয়ানো আর অর্কেষ্ট্রায়। বুকের খাঁচা সোজা করে রুখেছেন যুদ্ধের ভয়কে, বাচ্চাদের মনে ঢোকার আগেই। যেমন তেমন করে নয়, যথাযথ ফরম্যাল পোশাক, হ্যাট, গ্লাভস পরে আনন্দ করে বাজাতে শিখিয়েছেন বাচ্চাদের। পুরো যুদ্ধের সময়টাতেই। বাচ্চাদের জীবন সচল রেখেছেন।

আর সেই প্যালেস্টিনীয় মহিলার গল্প শুনিয়েছেন যেইনাব। বহুদিন পরে একদিন সামান্য সময়ের জন্য সিজ ফায়ার হলেই যিনি সাথে সাথে ছুটে যান বাজারে। কিনে আনেন ফুল। যতখানি সম্ভব। বেক করেন কেক। যতগুলি সম্ভব। তারপর সানন্দে বিলি করেন পাড়া প্রতিবেশীকে। শুধু এইটুকু মনে করিয়ে দিতে যে, আজ এই মুহূর্তেই সিজ ফায়ার অর্ডার উঠে গিয়ে আবার বোমা বর্ষণ শুরু হলেও তার অন্তরে জীবনের সুরটা কোথাও মিলিয়ে যায় না। অন্তরসলীলা হয়ে বয়েই চলে।

যেইনাব মনে করিয়ে দেন আরো একজন মায়ের কথা। কঙ্গোলিজ  এই সাধারণ মহিলা অসাধারণ হয়ে ওঠেন যখন রাষ্ট্রবিপ্লবের শেষে women for women এর প্রচেষ্টায় তিনি ভোকেশনাল ট্রেনিং পান। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে নতুন বাড়িতে যুদ্ধের ভয় কাটিয়ে মাথা উঁচু করে নিজের খাটুনির রোজগারে বাঁচতে শেখেন তিনি। তবুও কোথাও একটা অতৃপ্তি তাড়া করে চলে তাঁকে। ভয় হয় বাচ্চাদের নিয়ে। ওদের মনে কোথাও ঘৃণা, দ্বেষ তৈরী হচ্ছে নাতো? চোখের সামনে তারা তাদের মাকে, বোনকে রাষ্ট্রবিপ্লবীদের দ্বারা ধর্ষিত হতে দেখেছে। বাবাকে আর নয় বছরের ছোট ভাইকে নৃশংসভাবে খুন হতে দেখেছে। বড় হয়েও তারা যদি প্রতিহিংসার প্রতিযোগিতায় নামে? সারা ছেলেবেলা জুড়ে কেবলই ঘৃণা পুষে রাখে? তাহলে তো এই যুদ্ধ কোনোদিন শেষ হবে না। চলতেই থাকবে বংশ পরম্পরা জুড়ে। তাই সে মা নিজে সব কিছু ভুলে হাসতে শেখে। আনন্দে পালা-পার্বনে নাচে পর্যন্ত। কেবল বাচ্চাদের মনে একটি সুন্দর ছোটবেলার স্মৃতি রোপন করার জন্য। যেইনাব তুলে আনেন এই মহিয়সী মায়ের কথা। বিশ্বশান্তির বিরাট নামডাকওয়ালা মহোৎসভায় এই নিরক্ষর যুদ্ধবিদ্ধস্ত ধর্ষিতা মায়ের ভূমিকা ঠিক কি একটু ভাবতে বলেন আমাদের।

যেইনাব তুলে আনেন সুদানের সেই মেয়েটির কথা। যার কাছে 'শান্তি' মানে- তার পায়ের নখ বাড়াতে পারা। বুঝলেন না তো? আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। বলছি বুঝিয়ে। যুদ্ধের পর যুদ্ধে যৌনদাসী হিসেবে ধরা পড়েছে সুদানী এই মেয়েটি। দিনের পর দিন সেনাদের সাথে পায়ে হেঁটে তাকে পেরিয়ে যেতে হয়েছে মাইলের পর মাইল পথ তাদের ভারী জিনিসপত্র বয়ে। এক দুই বছর নয়, কুড়িটি বছর।  দুই দশক। ভাবতে পারেন? ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে তার পা। পাথরের ধাক্কায় চলতে চলতে রক্তাত হয়ে ক্ষয়ে গেছে পায়ের আঙুলের নখ। যেইনাব তুলে এনেছেন সে মেয়ের গল্প যার কাছে 'শান্তি' মানে পায়ের নখ বাড়তে পারা। তাকে স্বনির্ভর করেছেন। তার পায়ের নখের পরিপ্রেক্ষিতে ভাবতে শিখিয়েছেন আমাদের যুদ্ধকে। যাতে গল্প সিনেমাতে যতই যুদ্ধকে মহিমান্বিত দেখানো হোক না কেন, যেইনাবের সাথে সাথে আমাদের ভাবতে অসুবিধা না হয় যে, যুদ্ধ ভয় ছাড়া আর কোনো কিছুরই জন্ম দেয় না। আর কিচ্ছু না। আর সে ভয় বিশ্বজনীন। সেখানে একজন কঙ্গোলিজ মায়ের সাথে সুদানি মায়ের বা ভিয়েতনামি মায়ের বা আফগানী মায়ের কোনো তফাৎ নেই। প্রতিদিন মরতে মরতে তারা তবুও প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছে উত্তর প্রজন্মের মধ্যে থেকে হিংসা-দ্বেষ-ভয়কে সমূলে ধ্বংস করার। যদিও যুদ্ধ মানে রাষ্ট্রনায়ক আর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ রক্ষা। তবুও এর চাইতে কার্যকরী দীর্ঘমেয়াদী বিশ্বশান্তির পদ্ধতি কিছু আছে কি?

যেইনাব আমাদের শোনান যুদ্ধবিধ্বস্ত রোয়ান্ডার সেই মেয়েটির কথা। বিধ্বংসী বোমা বর্ষণের পরের দিন যেইনাব সেখানে রোজকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে Women for Women International এর কর্মীদের নিয়ে যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছান এবং জিজ্ঞাসা করেন আর এক্ষুনি কি কি লাগবে তাদের, মেয়েটি নির্দ্বিধায় উত্তর দেয় -"একটা লাল টুকটুকে লিপস্টিক।" অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন এ কেমন বায়না? কিন্তু যুদ্ধের ধূসরতায় রং টাই তো একমাত্র কম পড়ে তাইনা? যুদ্ধের ভয়াবহতায় যেখানে কয়েক মুহূর্ত পরে বেঁচে থাকবো কিনা এটাই একমাত্র প্রশ্ন, সেখানে বর্তমানকে সাজিয়ে আনন্দে বেঁচে নেওয়াটাই তো জীবন। যেইনাব আমাদের শেখান যুদ্ধশান্তির জন্য এই নিরক্ষর, ধর্ষিতা, মেয়েদের এই অনমনীয় তীব্র বেঁচে থাকা শুধু নয় জীবনকে যুদ্ধের ওপরে তুলে চিবুক উঁচিয়ে বাঁচার স্পর্দ্ধা কতটা জরুরি।

যেইনাব তাদের Women for Women International এর আওতায় এনে সম্মানের সাথে বাঁচার রাস্তা দেখিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু আমাদের সাথে তাদের গল্প ভাগ করে নেওয়ার ফাঁকে নির্দ্বিধায় এটা স্বীকার করে নিয়েছেন, এই মেয়েরা তাঁর আজকের যেইনাব হয়ে ওঠার পেছনে কতবড় ভূমিকা পালন করেছে। তিনি এদের সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে বুঝেছেন, জীবনের সত্যিকে গোপন করার মধ্যে কোনো মহিমা নেই। এরা যদি পারে তিনি কেন গোপন করবেন তাঁর জীবনের মর্মান্তিক সত্যিকে? এতদিন পর্যন্ত সাদ্দাম হুসেনের সাথে তার পরিবারের সম্পর্ক সযত্নে গোপন রেখেছিলেন যেইনাব। ততদিনে ইরাকে যুদ্ধ শেষ হয়েছে। ইঁদুরের গর্তে মৃত্যু হয়েছে সাদ্দাম হুসেনের। একনায়কতন্ত্রের অবসান হয়েছে।  কিন্তু সাদ্দামের প্রতি সার্বজনীন ঘৃণা আজও এতটুকু কমেনি পৃথিবীর। আর সেই ঘৃণা একদিন তছনছ করে দিয়েছিল যেইনাবের দাম্পত্যজীবন। সার্বজনীন সেই ঘৃণা আর অগ্রহণযোগ্যতার ভয়ে আর "পাইলটের মেয়ে" পরিচয়ের আড়ালে হারিয়ে হবার ভয়ে তরুণী যেইনাব লুকিয়েছিলেন তাঁর পরিচয়। কিন্তু আজ এই আক্ষরিক অর্থেই ধ্বস্ত মেয়েরা বারংবার তাঁকে সাহস যোগালো তার জীবনের সত্য পরিচয় দেবার। সেদিনের সেই ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া  নির্বান্ধব যেইনাব নয়, আজকের যেইনাব লোহার মত কঠিন কিন্তু মায়ের মত কোমল। লৌহকঠিনতায় ভরা সভায় যিনি দাবি করেন শান্তিবার্তার দরদামের আসরে রাজনীতিবিদদের সাথে সাথে, সমাজ আর দেশ নিয়ন্ত্রকদের সাথে সাথে, পলিসি মেকারদের সাথে সাথে মেয়েদের আনতে হবে। আনতে হবে, ডাক্তার, নার্স, শিক্ষাবিদ আর সবাইকে যারা জীবনে বন্দুক ধরেননি। আনতে হবে তাদের যারা পিছনে থেকে যুদ্ধের ভয়াবহতাকে, প্রতিহিংসা পরায়ণতাকে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে যেতে দেননি। এক দুই জনকে নয়, দরদামের টেবিলের পুরো পঞ্চাশ শতাংশ। আবার সেই যেইনাব এই মেয়েদের কথা বলতে গিয়ে ভরা সভায় চোখের জল সামলান।

যেইনাব তার জীবন দিয়ে আমাদের শেখান স্বাধীনতা মানে একটি দেশের শাসনতন্ত্র একনায়কতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিকতায় পরিণত হওয়া নয়। স্বাধীনতা মানে স্ব- অধীনতা। নিজের সমস্ত কিছুর দায়িত্ব নিজে বহন করা। মাত্র তেইশ বছর বয়সে যে মেয়ে Women for Women International গড়ে তুলেছিলেন নিজের হাতে, তাকে সারা পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত মেয়েদের আশ্রয়স্থল বলে সংজ্ঞায়িত করছিলেন, সেই সংস্থার দায়িত্ব নির্দ্বিধায় ছেড়ে দিয়েছিলেন, কেবল অফিসিয়াল কাজের চাপে। যে কারণে এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা, মেয়েদের কাছে পৌঁছানো, সেই কাজটি নিজে গিয়ে করতে পারছিলেন না বলে। একে যেইনাব ব্যাখ্যা করেছেন বিশ্বাসভঙ্গ করা বলে। তাঁর মনে হয়েছে, এর ফলে মেয়েদের কাছে বসে তাদের গল্প শুনে তাদের জীবনকে সম্পূর্ণ কাছ থেকে দেখে তাদের উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করার সেই সঙ্কল্পে সময় দেওয়া যাচ্ছেনা। Authenticity-র মানে নতুন করে সামনে এসে দাঁড়ায় যেইনাবের কথা শুনলে। তার লেখা পড়লে। তাঁর শান্ত-স্মিত মুখের পেছনে সংকল্পের দৃঢ়তা দেখলে মানবতায় ভরসা করতে ইচ্ছে করে। আমার মতন কাগুজে সহানুভূতি নয়, সত্যিকারের স্ব-অধীনতা। অন্তরের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সেদিনের সেই মেয়েটির জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে, উঠে দাঁড়াচ্ছে লক্ষ লক্ষ গুঁড়িয়ে যাওয়া মেয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে। শিখে নিচ্ছে কাকে বলে অন্তরের স্বাধীনতা। শিখে নিচ্ছে "Freedom is an inside job" , হয়ে উঠছে স্ব-অধীন।

***********************************************************

What if I’m not sadness?
By zainab Salbi


What if I’m not sadness?
What if I’m not grief?
What if I’m not my victim’s story,
Nor am I my pain?

What if they are all part of me,
But not fully me?
What if I am just me?

What if I’m joy without reason,
Happiness in all seasons?
What if I am love for all?
What if I laugh for no reason and all reasons?
What if they are all part of me?

What if I don’t hate my enemy?
What if I forgive?
What if I see without judgment,
Love without reasons?
What if I give and receive without worry?
What if I can be all, and still be me?

What if this is it?
What if this is perfect?
What if I don’t doubt?
What if I just believe?

How would life be if I let it be?
How would I be if I accept fully me?
What will I be if today I am free?
What if this is the new story?

_____________________________________


যদি আমি দুঃখ না হই?
না হই যদি শোক?
নাইবা হলাম ধস্তজনের রোজনামচা,
কিংবা আপন দুঃখভোগ?

আবার ধরো,

রইল সবই আমার মাঝে
জানি, অনুভূতিরা দামী-
আমি রইলেম ঠিক যেমনটি
এইক্ষণের এই আমি?

খুশী হতে কারণ আমার
নাই যদি আর লাগে?
বছরভরের খুশীর মালা
নিই যদি আজ গলে?

বিশ্বপ্রেমের সংজ্ঞা যদি
লিখি নিজের চোখে?
অহোরাত্র হাসির রেখা
রয় যদি মোর মুখে?

এসব যদি সত্যি হতো?
সত্যই আমার মতো?

যারা আমার রক্ত ঝরাও,
ঘেন্না করো মোরে,
তোমায় দেখে ঘেন্না আমার
নাই যদি হয় মনে?

মনে করো, ক্ষমাই যদি
করি তোমায় এক্কেবারে?
রক্ত মুছে বন্ধু হবে?
চিরকালের তরে?

যা কিছু আমার বেঠিক-বেভুল,
যা কিছু আরও বাকি,
সব যদি আজ সামনে আসে?
হয় যদি সব ফাঁকি?

এসব নিয়ে তাও যদি আজ
আমায় ভালোবাসি?
সব জড়িয়েই নিজেই নিজের
প্রেমেই পড়ি যদি?

তোমার প্রতি আমার আলাপ,
না যদি হয় ঠিক সেরকম,
যেমন নাকি আমার প্রতি
তোমার আলাপন?

তার বদলে এমন যদি হয়-

যেমন কিনা তুমি আমার
সত্যিকারের আপন?

কেমন হবে সেই আমিটা?
সত্যিকারের মুক্তি যদি পাই?

সমালোচক নাই যদি আজ হই?
অদরকারেই প্রেম আসে আজ যদি?
দেওয়া-নেওয়ার হিসেব নাই যদি আজ নিলেম,
তবুও আজ সব মিলিয়েই আমায় খুঁজে পেলেম।

এটাই আর এইটাই যদি সত্যি হয়?
শ্বাশ্বত হয় এসব যদি?
অবিশ্বাসকে চুলোয় দিয়ে বিশ্বাসীই হই যদি,
জীবন তবে কেমন হবে এই যদির বাসর রাতে?
আমিই তবে কেমন হব পূর্ণ আমির সাথে?

এই আজকেই, আজকের আমি, মুক্তি যদি পাই-
কেমন হবে নতুন কাহন? যদি, যদির দেশে যাই?

0 comments:

Post a Comment