Tuesday, 12 May 2020

ইচ্ছে করে


আমার খুব ইচ্ছে করে খুব ভোরের বাসে করে বাড়ী ফিরব। বাসের জানলা দিয়ে দেখতে পাব ইলোরা এপার্টমেন্টের লম্বা বাড়ীটারছাদে সকালের রোদ এসে জুটেছে। তার কিছুটা বাসের জানলা দিয়ে ঢুকে এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমার বাঁদিকের গাল। আর ভোরেরহাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে চুল। মুখে ভোরের ঠাণ্ডা হাওয়া এসে লাগলে কেমন একটা স্নান করার অনুভুতি আসে। সেইটি নিয়েফাঁকা বাসে চেপে বাড়ি ফিরবার ইচ্ছে করে একবার। 

আমার খুব ইচ্ছে করে কাঁসাই নদীর ধারে গিয়ে বসি আর একবার। একটু দূরে ডানদিকে থাকুক একটা  ঝুপসি গাছ। কি গাছ তারনাম নয় নাই জানলাম। পুরনো দিনের গন্ধ থাকুক তাতে। লাল মাটির কাঁকুড়ে জমিতে গুছিয়ে বসে গল্প করি অনেক। বাঁদিকদিয়ে ওই দূরে থাকুক নয় একখানা একাবোকা ট্রেন লাইন। গ্ল্যামারহীনগ্রাম্য গোছের। খানিকটা ঠিক আমারই মতন। কুটুর কুটুরকত গল্পই না জমে থাকে অমন দিনে। গল্প করতে করতে সন্ধ্যে নামলে আবার কাঁকুড়ে পথে নয় ফিরে চলব  লাল মাটির পথেলাল সাইকেলের চাকায় কুড়কুড় করে শব্দ হবে তৃপ্তির। আমার খুব ইচ্ছে করে বন্ধু এসে এমন দিনে ছুঁয়ে দেবে ডানহাত দিয়ে।ভরসা দেবে বন্ধু থাকার। 

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গেছে নিজের ঘরেমায়ের পাশে। শীতের কুয়াশায় ডুবে আছে বাঁড়ুজ্জে পুকুর। এমনকুয়াশা যে ঘোষাল গাছের মাথাটাও আবছা হয়ে আছে নিচে থেকে দেখলে  প্রাক দীপাবলির সাতসকালে এমন দিনে চুবড়ি হাতেচোদ্দশাকের সন্ধানে বেরোই আর একবার। পাড়াসুদ্ধু বন্ধু বান্ধব সব জুটিয়ে নিয়ে। 

মাঠের ধারে কচি ধানের শিষের ভেতর দুধ জমে। জানতামই নাহিরুদিদি না দেখালে। আমার খুব ইচ্ছে করে আর একবারবিকেল বেলায় ক্ষেতের কোণায় গিয়ে দাঁড়াই দুজন মিলে। কত নতুন কিছু শিখব তবে। তারপরেতে বিকেল বেলায় খুব খানিকপিট্টু খেলব। নইলে নাহয় বউবসন্ত। আমি কিন্তু তোমার দলে। খুব খেলব সন্ধ্যে নামার পর পর্যন্ত। তারপর নয় সন্ধ্যে হলেলোডশেডিং হোক। যেমন হত প্রাত্যহিকই। হ্যারিকেনের আলোয় মায়ের কাছে ভূগোল বই খুলে বসব তখন। আবহবিকার আরভূপ্রকৃতি পড়ব তখন বেশটি করে। ঠাকুরদোরে ফুরফুরিয়ে হাওয়া দেবে আর চ্যাপ্টা মতন ম্যাপবইটা খুলে বসে দেশ দেখব দুজনমিলে। আমার খুব ইচ্ছে করে। 

আমার খুব ইচ্ছে করে সাতসকালে পুঁচকে খাঁদুর দাঁত মাজিয়েমুখ ধুইয়েবাঁ হাত দিয়ে গালটা ধরে চুল আঁচড়েদুধ বিস্কুট খাইয়েদিয়েহাত ধরে  বা কোলে করে শিবতলার দুগগাঠাকুর দেখিয়ে আনি। আর একবার। ইচ্ছে করে। 

আমার খুব ইচ্ছে করে গরমের ছুটিতে সোমদত্তাসংহিতার চিঠি পেতে। নীল রঙ্গের ইনল্যান্ড লেটার। আর একবার। গোটাঅক্ষরে লেখা থাকবে, "ছুটি খুললে প্রথম দিন তাড়াতাড়ি আসিস কিন্তু। এক বেঞ্চে বসতে হবেআমার খুব ইচ্ছে করে আরএকবার শ্যামলীদির সেই ছাদের ঘরে সাতসকালে পড়তে বসি। কিংবা সেই ব্যাকরণের পরীক্ষা হোক সবাই মিলে আর একবার।ভীষণ রকম ইচ্ছে করে সরস্বতীপুজোর দিনে গিয়ে জুটি সবাই মিলে মনিদীপার বাড়ি। কিংবা ব্ল্যাকবোর্ডে ইচ্ছে করে মনিদীপাকে"মোণীদ্বীপালিখে দেখি। তুই কি অমন রেগে যাবিএখনোওহ্যাঁরে

মনিদীপাদেবীমিতাসুহিতাসোমদত্তাসংহিতাসঙ্গীতাসোনালীপুনমঅনামিকামালারিয়ারিমিঅনুস্মিতাতাপসীতমসাসরমাগায়েত্রী। সবার নামই কি সুন্দর। হয় ছোট্ট মিষ্টিমত। নইলে বড়সড়। ওজন আছে। গাম্ভীর্যও। আমারটা কেন এমনমাঝামাঝিচলনসই মতশুধুআমার খুব ইচ্ছে করে এই একটাই আমার একমাত্র ক্ষোভ হয়ে যাক জীবন জুড়ে। আর যতসববড়বেলার শোক দুঃখ সেসব স্রেফ নেই হয়ে যাক। আমার খুব ইচ্ছে করে। 

আমার এসব ইচ্ছে করে। আমার ভীষণ ইচ্ছে করে

0 comments:

Post a Comment