Saturday, 19 October 2019

#এই_সপ্তাহের_শেষে-3

#এই_সপ্তাহের_শেষে

৩. ওষুধ আবিষ্কার (পর্ব-২) 
--------------------------------

যত দূর বলেছিলাম তার পর থেকে বলি কেমন? কদ্দুর যেন বলেছিলাম? হ্যাঁ, কলমিশাক এর সাথে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে যথা সম্ভব পড়াশুনা করেছেন আপনি, তারপর ফান্ডিং এজেন্সিতে গ্রান্ট লিখে তার বহু বহু পরিমার্জনা করে তারপর কিছু টাকা পেয়েছেন গবেষণা করার জন্য। তারপর আপনি আপনার প্রয়োজন মত সহকারী জোগাড় করেছেন। এই তিন ধাপ পেরিয়ে আপাতত আপনি চতুর্থ ধাপে। কাজ শুরু করবেন এইবার।   

৪.  কাজটি কি? না "কলমিশাক কি ব্রেস্ট ক্যানসারকে আটকাতে পারে?" - এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। কি করে সেকাজ শুরু হবে? ব্রেস্ট ক্যান্সার এর রোগীর ওপর তো সরাসরি কিছু পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। যদি আপনার কারিকুরির ফলে রোগীটির কিছুমাত্র সমস্যা হয়, তবে আপনি এবং আপনার বিজ্ঞানসাধনা তো চিরজীবনের মত গেলেনই আপনার ইন্সটিটিউটের ওপরও ঝড় কম যাবে না। তাই শুরু করা হয় ক্যান্সারের কোষ দিয়ে। কোথায় পাব ক্যান্সারের কোষ? ধরা যাক, কোনো রোগীর ব্রেস্ট টিউমার সার্জারি করে বের করা হয়েছে বা বায়োপসি করে টিউমার থেকে খানিকটা অংশ নেওয়া হয়েছে। সেই অংশে অসংখ্য ক্যান্সার কোষ (Cell, সেল) থাকবে। আপনি কোষ পাবেন সেখান থেকে। এই অংশে আপনার মানে বিজ্ঞানীর সাথে সার্জেন বা অঙ্কোলজিস্ট অর্থাৎ ডাক্তারদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। গবেষকদের প্রতি তাঁদের সদর্থক সহযোগিতা ছাড়া এটি বড়োই কঠিন। দুৰ্ভাগ্যবশতঃ কলকাতায় লিউকেমিয়া পেশেন্ট ব্লাড স্যাম্পেল জোগাড় করার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমাদের বড়োই কষ্ট করতে হয় একটা পেসেন্ট স্যাম্পেল জন্য। একটি স্যাম্পল পেতে বেশিরভাগ সময়েই রিসার্চারকে পুরো একটি দিন হাসপাতালে ধর্ণা দিয়ে পড়ে থাকতে হয়। তাতেও যে ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় স্যাম্পলটি মিলবে, তার কোনো স্থিরতা নেই। কোনো সঠিক লিখিত পদ্ধতিই নেই কোনো হাসপাতালে। এখানে ব্যাপারটা অপেক্ষাকৃত সহজ। ফলে রিসার্চের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো শুরু করাও সহজ হয় এখানে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকদের সক্রিয় সহযোগিতা বাড়লে তবেই একমাত্র আমাদের দেশে হওয়া বায়ো-মেডিক্যাল রিসার্চের জোর বাড়ে।

যাক যা বলছিলাম, মনে করুন সার্জারির পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিউমারের অংশটি থেকে খানিকটা নিয়ে কুচি কুচি করে খুব ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নেওয়া হল। এবার যদি ওই ছোট ছোট কুচি গুলোকে এক্কেবারে মানুষের দেহের ভেতরের পরিবেশ না হলেও মোটামুটি একইরকম একটা পরিবেশ দেওয়া হয় (যেখানে তারা খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারবে কিছুদিন, মানে আমার এক্সপেরিমেন্ট যতদিন চলে ততদিন অন্তত), তাহলে তারা কিন্তু সেখানে বেঁচে থাকবে এবং সংখ্যায় বাড়বেও। এই যে সরাসরি রোগীর দেহ থেকে নিয়ে ল্যাবরেটরিতে তাদের বাঁচিয়ে রাখার বিষয়টা, তাকে ল্যাবের ভাষায় বলব প্রাইমারি কালচার (primary culture)। প্রাইমারি কেন? না যেহেতু সোজা রোগীর দেহ থেকে ল্যাবের প্লাস্টিকে এসেছে। ওহো , 'প্লাস্টিক' বললাম কারণ, ল্যাবে সাধারণত বিশেষ ধরণের প্লাস্টিকের তৈরী পাত্রে (Cell culture quality) কোষগুলিকে বাড়তে দেওয়া হয়। আপনার এক্সপেরিমেন্টের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সেসব পাত্রের আকার আয়তন বিভিন্ন হয়। নীচে কয়েকটা ছবি দিচ্ছি culture vessel এর।

এখন প্রশ্ন, বলে তো দিলাম এই সব পাত্রে কোষ গুলি ফেলে দিলে তারা কিছুদিন খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারবে। দেহের ভেতরে তো খাবার অভাব নেই। কিন্তু দেহের বাইরে তারা খাবেটা কি? সুতরাং Culture vessel-এ আমাদের সেই কোষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় সঠিক খাবার দিতে হবে। বেশির ভাগ সময়েই সেটি তরল। কারণ সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র টেনে নিতে কোষের সুবিধা হয়। এই তরলে থাকবে নির্দিষ্ট অনুপাতে নানান ধাতব লবন, হরমোন, আরো নানান বায়োকেমিক্যাল সাপ্লিমেন্ট। এই অনুপাতটি ভীষণ ভীষণ সতর্ক ভাবে ঠিক রাখা দরকার নইলে কোষগুলি বাঁচবে না। এই তরলটি হলো গ্রোথ মিডিয়া (growth media)। এই মিডিয়ায় রেখে সাধারণত সাঁইত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবং পাঁচ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসে কোষগুলিকে রাখা হয়। সাধারণত বললাম কিন্তু। বিভিন্ন ধরণের কোষের বাঁচার পরিবেশ বিভিন্ন তাই দেহের বাইরে তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন ধরণের মিডিয়া। বিভিন্ন ধরণের এবং বিভিন্ন স্টেজের ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়। সবরকম ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই এই কথাটি প্রযোজ্য। এবং একটি ব্রেস্ট টিউমারের মধ্যেই বিভিন্ন ধরণের কোষ থাকে যাদের কাজ, বাঁচার শর্ত আলাদা। ধরা যাক, আপনি এই ব্রেস্ট ক্যান্সারের এই কোষগুলির জন্য উপযুক্ত মিডিয়া কি হবে তা জানেন। গ্রোথ মিডিয়া তৈরী করে এমন নানা বায়োমেডিক্যাল কোম্পানি আছে। তাদের তৈরী করা মিডিয়ার লিস্টে যদি আপনি আপনার দরকারি মিডিয়াটি পেয়ে গেলেন তো ভালোই। তাদের থেকে কিনে নিলেন। নইলে আপনার প্রয়োজনীয় গ্রোথ সাপ্লিমেন্ট, লবন ইত্যাদি কিনে কোনো পরিচিত মিডিয়ায় মিশিয়ে আপনার নিজের মিডিয়া বানিয়ে নিতে হবে। আর যদি একেবারেই নতুন ধরণের কোষ হয় তাহলে তো আরো কাজ বাড়লো। আপনাকে ট্রায়াল এন্ড এরর মেথডে আস্তে আস্তে কোষগুলির সঠিক মিডিয়া খুঁজে নিতে হবে।

কিন্তু এখনো একটা বড় প্রশ্ন আছে। এই প্রাইমারি কোষগুলি বেশিদিন দেহের বাইরে বেঁচে থাকে না। দু- চার সপ্তাহ বড় জোর। তাহলে? বার বার তো মানুষের শরীর থেকে কোষ নেওয়া যাবে না। তাহলে উপায়? তার সমাধান হলো কোষগুলির আয়ুষ্কাল কোনোভাবে বাড়িয়ে দেওয়া বা অমর করে দেওয়া। সেইটি কি সম্ভব? নিশ্চয়ই সম্ভব। কিকরে সেটা এখনই বলছি না। মহাভারত হয়ে যাবে এই লেখাটিই তবে। সে পদ্ধতি সম্পর্কে পরে একদিন বলবখন। এখন এটুকু বলি যে, আপনি নিজে সে কোষের আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে দিতে পারেন। নতুবা, বেশ কিছু কোম্পানি আপনার কাজ কমানোর জন্য সে দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। যেমন American Type Culture Collection (ATCC). আপনি সে কোম্পানি থেকে কিছু সংখ্যক কোষ কিনে নিতে পারেন। তারপর মনে করুন তাদের থেকে কিছু কোষ নিয়ে উপযুক্ত মিডিয়ায় রেখে সংখ্যায় বাড়িয়ে তারপর ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অত্যন্ত ঠান্ডায় (-১৪০ থেকে -২০০ ডিগ্ৰী সেলসিয়াস) রেখে দিলে তারা বেশ কিছু বছর ঠিক থাকে। প্রয়োজন মত একটা অংশ বের করে নিয়ে আবার মিডিয়ায় রেখে বাড়িয়ে নিয়ে কাজ শুরু করলেই হলো। এই সংরক্ষণের কাজে ওই অত ঠান্ডা কি করে করা হয়? কেন? তরল অবস্থায় নাইট্রোজেন (লিকুইড নাইট্রোজেন) আছে তো। প্রায় -২০০ ডিগ্রি তাপমাত্রা তার। তবে সাবধান, লিকুইড নাইট্রোজেন একবার চামড়ায় লাগলো মানে কিন্তু সে অংশের চামড়াটি আপনার গেল।

আর একটা কথা, কোম্পানি হিসেবে আমি কেবল ATCC র কথা বললাম কেন? কারণ আপনি যেখান থেকে আপনার culture টি কিনছেন তাদের সেই কোষটির সমস্ত বৈশিষ্ট্য বজায় আছে এমন গ্যারেন্টি দিতে হবে।  সময় এবং culture এর বয়স অনুসারে কোষের কিছু বৈশিষ্ট্য বদল হয়ে  যেতে পারে। তখন আপনি ভাববেন এক, আর কোষটি আচরণ করবে সম্পূর্ণ অন্যরকম। সেই কোষ থেকে পরীক্ষা করে আপনি কিছুই ঠিকঠাক প্রমাণ করতে পারবেন না। ATCC সেই গুরুদায়িত্ব সসম্মানে পালন করে আসছে। সারা পৃথিবীতে bio-medical রিসার্চে সেল টাইপ এর প্রধান এবং নির্ভরযোগ্য ভাঁড়ারঘর তাই ATCC। তবে এছাড়াও আরো বেশ কিছু কোম্পানি এবং সংস্থা আছে  যারা এই কোষ সরবরাহের কাজটি করে থাকেন। এখন আপনার কাজের প্রয়োজনে আপনি নিজে যদি কোনো নতুন ধরণের কোষ খুঁজে পান এবং তার বৈশিষ্ট্যগুলো শুদ্ধভাবে বজায় রেখে তাকে অমরত্ব দান (Immortalized) করে দিতে পারেন, তবে সেই কোষ ও আপনি কোনো কোষ ব্যাংক, রিপোজিটরিতে দিতে পারেন। যাতে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে সে কোষ গবেষকরা প্রয়োজন মত ব্যবহার করতে পারেন। বা আপনাকে সরাসরি কেউ যোগাযোগ করলে আপনাকে সেই কোষ তাঁকে পাঠাতে হবে। এটিই পৃথিবী জুড়ে গবেষণার নৈতিক নিয়ম (ethical rule)। আপনার আবিষ্কার নিঃসন্দেহে আপনার। প্রত্যেকে সে আবিষ্কারকে ব্যবহার করার সময় আপনার ঋণস্বীকার করবে। কিন্তু আপনাকে আমার জিনিস বলে আপনার আবিষ্কারকে আগলে রাখলে চলবে না। 

৫. যাই হোক, আপনার হাতে এতক্ষনে ব্রেস্ট ক্যান্সার কোষটি এলো। এবার আপনার চাই কলমিশাক এর নির্যাস। তার জন্য আপনার চাই একজন রসায়নবিদ, কেমিক্যাল বায়োলজিস্ট বা কেমিস্ট যিনি আপনার হয়ে ওই নির্যাস বানাবেন এবং তাকে রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে বিভিন্ন রকম অংশে ভেঙে কোষে দেবার উপযুক্ত করে তুলবেন। আমি কেবল উদাহরণ হিসেবে কলমিশাক কথাটি ব্যবহার করছি। এই পর্বটি দরকার হবে না যদি আপনি আগে থেকে জানা কখনো রাসায়নিক বা বায়োলোজিক্যাল কম্পাউন্ড নিয়ে কাজ করেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকেই কোনো রসায়ন বিজ্ঞানী এই কাজটি করে রেখেছেন। আপনি ওই কম্পাউন্ড কিনে নিতে পারেন বা ফার্মাসিউটিক্যাল ল্যাব থেকে পেতে পারেন। অবশ্যই কতটা কিনবেন বা পাবেন তার অত্যন্ত সূক্ষ্ম হিসেব সময়মত আপনাকে জমা দিতে হবে।

৬. এবার আপনি এই কম্পাউন্ডটি কোষে প্রয়োগ করে নানান পরীক্ষা করতে শুরু করবেন। এই অংশটি আমি এখনই বিশদে যাচ্ছি না কারণ এটির কোনো শেষ নেই। কি কি করতে হতে পারে, তা নির্ভর করবে আপনার প্রশ্নের ওপর। আমি এই সিরিজে আস্তে আস্তে এই পরীক্ষাপর্বের কিছু কিছু সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করব। আপাতত মনে করুন আপনি জানতে চান ওই কম্পাউন্ড ব্রেস্ট ক্যান্সাররের বৃদ্ধি কমায় কিনা? এর জন্য সাধারণত অন্তর্নিহিত প্রশ্নগুলি কি হতে পারে? মোটামুটি এরকম ধরা যেতে পারে। প্রাপ্ত ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে এর পরিবর্তন হতে পারে যদিও। তবে গতিটা মোটামুটি এরকম। কম্পাউন্ডটি কি ব্রেস্ট ক্যান্সার কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি কমায়? উত্তর হ্যাঁ হলে,  পরবর্তী প্রশ্ন কি করে? কোষগুলিকে একেবারে মেরে ফেলে? নাকি তাদের বংশবিস্তার রোধ করে? তাদের অন্য জায়গাতে ছড়িয়ে যেতে বাধা দেয় কি? নাকি সেই চলনে বাধা দিতে পারে না কিন্তু প্রাথমিক বৃদ্ধিতে বাধা দেয়? তাই যদি হয় তবে এই কম্পাউন্ডটি প্রাথমিক অবস্থায় কাজ করতে পারে। এডভান্স স্টেজে নয়। বা উল্টোটাও হতে পারে। আরো আরো নানান প্রশ্ন এবং তার উত্তর খোঁজা। পরীক্ষা পদ্ধতির গল্পটা বরং এখন থাক। পরে নিশ্চয়ই কিছু কিছু করে বলবো।

যাইহোক, আপনার এই প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে যদি কিছু আশাব্যঞ্জক উত্তর মেলে তবে সেই পরীক্ষা আপনাকে অন্তত তিন বা বেশি বার করে করে সে সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতে হবে যে অন্তত কোষস্তরে কম্পাউন্ডটি কাজ করছে। এখানে গবেষকদের মধ্যে প্রচলিত একটা টার্ম বলে রাখি, পরে কোথাও পড়লে "বুঝি না" বলবেন না যেন। যেকোনো কোষ স্তরের পরীক্ষা নিরীক্ষা, যা কোনো প্রাণীদেহের বাইরে কালচার ভেসেলে করা হচ্ছে তাকে আপনি ইন ভিট্রো (In vitro) এক্সপেরিমেন্ট বলতে পারেন। কিছু না, সংক্ষেপে বলার জন্য একটা শব্দবন্ধ আর কি। এই In vitro এক্সপেরিমেন্ট করে মোটামুটি খুব ছোটখাটো একটা আশার আলো দেখতে খুব তাড়াতাড়ি হলেও বছর দুই-তিন সময় লাগে। কারণ, আপনার পরীক্ষা পদ্ধতির সমস্ত স্টেপ আপনাকে বার বার টেস্ট করে সম্পূর্ণ প্রটোকলটিকে আগে নিশ্ছিদ্র করে নিতে হবে। অর্থাৎ আপনি এ ব্যাপারে প্রথমে নিশ্চিন্ত হবেন যে, আপনি 'যেভাবে' পরীক্ষাটি করছেন তাতে প্রাপ্ত রেজাল্টটি বিশ্বাস যোগ্য হচ্ছে কিনা। এই অংশটি  হলো 'assay optimization' । তারপর আপনি আসল পরীক্ষাটি করবেন। এবং অন্তত বার বার বিভিন্ন সময়ে তিন থেকে পাঁচবার একই ফল পেলে তবে বলবেন যে "হ্যাঁ কিছু একটা হলেও হতে পারে।"  তিন থেকে পাঁচ বার অন্তত একই ফলাফল পেতেই হবে আপনাকে। এবং যদি কোনো আশাব্যঞ্জক বদল দেখেন তবে সেই বদলটি যে সংখ্যাতত্ত্বগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ (statistically significant) বদল, সেটিও আপনাকেই অঙ্ক কষে দেখতে হবে। নইলে বিশ্ব জুড়ে বিজ্ঞানীদের কাছে আপনার প্রাপ্ত ফলাফলের কোনো মূল্যই থাকবে না। ফলে সময় লাগবেই। আমি বছর দুই-তিন  বললাম যুক্তরাষ্ট্রের নিরিখে। ভারতে এই কাজ করতে কমপক্ষে অন্তত পাঁচটি বছর লাগবে। কারণ, প্রায় প্রতিটি দরকারি জিনিস আমাদের তখন বিদেশ থেকে কিনতে হবে। ভারতে প্রায় কিছুই আমরা তৈরী করে উঠতে পারিনি এখনো। করলেও তার নির্ভরযোগ্যতা কম বলে তার গ্রহণযোগ্যতাও কম। এটি একটি মস্ত সমস্যা। অতি সাধারণ একটি এক্সপেরিমেন্ট যা যুক্তরাষ্ট্রে একসপ্তাহে করা সম্ভব সেটি করতে ভারতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ সেই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় একটি জিনিস হয়ত অর্ডার করার পর ট্যাক্স, কাস্টমস, কাগজপত্র পেরিয়ে বিদেশ থেকে আসতে তিন মাস সময় নিয়ে নিলো।

এই রে! অনেক গল্প হয়ে গেল আজ। বড্ড দেরি করিয়ে দিলাম না? কোষস্তরে আশার আলো দেখার পর প্রাণীদেহে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়। সে গল্প বরং পরের সপ্তাহে বলব। আজ তাহলে এটুকুই থাক। কেমন! আসি তবে? পরের সপ্তাহে ইঁদুরদের নিয়ে হাজির হয়ে যাবোখন।

ভাল থাকবেন সক্কলে।

অর্পিতা

0 comments:

Post a Comment