Thursday, 1 January 2015

নিউ ইয়ার রেজোলিউশান


কেমন আছেন সবাই? এই পঁচিশ থেকে এক তারিখ পর্যন্ত হুল্লোড়-নাচানাচি-ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া- বেড়াতে যাওয়া এসবের মধ্যে কি করেই বা খারাপ থাকা যায়? যদিও একত্রিশ তারিখের সন্ধ্যে আর এক তারিখের সকালের মধ্যে নতুন করে ভাল বা খারাপ থাকা কোনটাই বোঝার কোন উপায় নেই বলেই আমার মনে হয়, তবে কিনা এক তারিখ সকালে যদি আমি আপনাকে দাঁত বার করে “হ্যাপি নিউ ইয়ার” না বলি সাথে সাথেই আপনি আমার সারা বছরের পাওনা নম্বর থেকে ঘ্যাঁচ করে খানিকটা কেটে নেবেন আর আমার চরিত্র বিশ্লেষণের ফর্মে ‘দেমাকি’ কথাটার পাশে টিক মার্ক পড়ে যাবে। সে আমি সেই “হ্যাপি নিউ ইয়ার” এর পেছনে আপনাকে যতই গালমন্দ করি না কেন। সুতরাং একত্রিশ তারিখের একত্রিশ বছরের পুরনো জং ধরা আমি আর এক তারিখের আরও একদিন বেশি বয়সের আমি দুটোই আপাদমস্তক একটুও পরিবর্তিত না হয়ে সকলকে সকাল থেকে “হ্যাপি নিউ ইয়ার” বলে চলেছি। তারাও সমান দাঁত দেখিয়ে প্রত্যুত্তর দিয়ে চলেছে। বাকি সবকিছু আজন্ম কালের মত সমান নড়বড়ে গতিতে হয়ে চলেছে। আজ ২০১৫ র পয়লা জানুয়ারি বলে তার কোন ব্যত্যয় হয়নি।

তবে কিনা চারিদিকে নিউ ইয়ার রেজোলিউশান এর ঠেলায় মাঝে মাঝে দোটানায় পড়ে যাচ্ছি। কি রে বাবা আমারও কি কিছু প্রতিজ্ঞা-টটিজ্ঞা এইবেলা করে ফেলা উচিৎ নাকি? নইলে লোকে কি বলবে? চারপাশের জনগণ তো বটেই, এমন কি বড় বড় দিকপাল বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত প্রতিজ্ঞা করে সেই রেজোলিউশান বিশ্বের এক নম্বর বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় ছাপিয়ে ফেলেছেন। সে তালিকায় কে নেই? মহাকাশ বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে জীববিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী সব সব। আর হেঁজিপেঁজি কেউ নয়, তাবড় তাবড় সব বিজ্ঞানীকুল ২০১৫ র তিনশ পঁয়ষট্টি দিনের মধ্যে কি কি করেই ফেলবেন তার তালিকা প্রকাশ করেছে নেচার জার্নাল।

NASA র প্রধান Ellen R. Stofan বলছেন ২০৩০ এর মধ্যে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর জন্য প্রধান যেসব অগ্রগতি দরকার সেসব ২০১৫ র মধ্যে শেষ করে ফেলবেন। UK র প্রধান চিকিৎসা অধিকর্তা Sally Davies বলছেন ২০১৫ র মধ্যে Antimicrobial Research এ বিপ্লব এনে ফেলবেন। Bill and Melinda Foundation এর প্রধানের আবার প্রতিজ্ঞা এই বছরের মধ্যেই আফ্রিকা থেকে পোলিও আর ebola কে উৎখাত করেই ছাড়বেন। Sustainable energy-generation এর লক্ষ্যে চীনের রসায়নবিদ Yi Xie ঠিক করে ফেলেছেন যে নিজের ল্যাবরেটরিতে Photo, electro এবং chemical energy র পারস্পরিক পরিবর্তন সফল ভাবে করে ফেলবেন। UNFCCC এর অধিকর্তা বলছেন আমার আপনার দ্বারা পৃথিবীর জলহাওয়ার যে পরিবর্তন হচ্ছে তার বিরুদ্ধে লড়াইটা আরও জোরদার করবেন। CERN এর Director General হিসাবে তাঁর শেষ বছরে Rolf-Dieter Heuer বলছেন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তির উৎস হিসাবে CERN এর কাজকে স্থাপন করতে চান। মেয়েদের আর বেশি করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আসতে সাহায্য করবেন Gloria Bonder এবং Athene Donald। এরকমই সব ভাল ভাল প্রতিজ্ঞা। বেশি পড়তে গেলে এখানে দেখুন।

এত সবকিছু পড়ে-টড়ে ভাবলাম একটা নিউ ইয়ার রেজোলিউশান না হলেই নয়। কি এমন রেজোলিউশান নেওয়া যায়? যেটা কিনা যত শীঘ্র সম্ভব ভাঙতে হবে। হবেই। সেটাই নিয়ম। তো ভেবে-চিন্তে দেখলাম উপায় তো হাতের কাছেই রয়েছে। ঝট করে নিয়ে ফেললাম রেজোলিউশান। নিয়ে ফেলেই মনে মনে জোড়হাত করে বললাম, please ভগবান একটা দিন অন্তত এই পিতিজ্ঞেটি যেন রাখতে পারি। জীবনে পেথথম বার নেওয়া পিতিজ্ঞে যেন পেথথম দিনেই ভেসে না যায় ভগবান।

বলে টলে বেশ একটা স্ফূর্তি এল মনে। এই তো আমারও বেশ একটা রেজোলিউশান আছে। পেট টেট চুলকে শান্ত মনে নতুন বছরের মিষ্টি খেলাম (নিজের ‘জয়ঢাক’ নাম তাড়াতে আজ থেকে আর মিষ্টি খাবনা এই রেজোলিউশান আমি ভুলেও নেবনা কোনোদিন)। এবং অনেক জনের অনেক কথোপকথনের মাঝে তৎক্ষণাৎ নিজের রেজোলিউশান ভেঙ্গে বেরিয়ে এলাম।

এই আমার নিউ ইয়ার রেজোলিউশান এর গল্প। অ্যাঁ? রেজোলিউশানটা কি ছিল? এখনও আন্দাজ করতে পারলেন না? “নিজের চারপাশের শান্তিবলয় সঠিক রাখতে সঠিক সময় সঠিক কথাটা সঠিক স্বরে যেন বলতে পারি” - আরে বাবা এটা ছাড়া ক্যাবলাচরণ দ্যা গ্রেট-এর আর কি রেজোলিউশান হতে পারে? যাই হোক আপাতত সক্কলের আগে রেজোলিউশান ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার প্রতিযোগিতায় হই হই করে ফার্স্ট হয়ে গিয়ে দারুণ আহ্লাদিত হয়ে পড়েছি। বাড়ি ফিরেই সেই আনন্দে আর চাট্টি ল্যাংচা-মোয়া-নারকেল নাড়ু খাব কিনা ভাবছি।

নতুন বছর সকলের খুব ভাল কাটুক এই কামনা করি। আর যে যার রেজোলিউশান সঠিক সময়ে সফল ভাবে ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে পুনর্মূষিকাবস্থা প্রাপ্ত হন এই শুভেচ্ছা রইল। ভাল থাকবেন সক্কলে।          

0 comments:

Post a Comment