খুব কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখেছেন যাঁরা অর্থাৎ মরতে মরতে বেঁচেছেন এমন কিছু মানুষ, যেমন ধরা যাক- কোনো একটা জটিল অস্ত্রপ্রচারের সময় হার্টবিট কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেল তারপর কয়েকসেকেন্ড পরে আবার তা ফিরে এলো, অথবা বীভৎস কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে কেউ একজন মারা পড়তে পড়তেও বেশ গেলেন, বা কেউ বেশ কয়েকদিন কোমাতে কাটিয়ে এলেন বা কার্ডিয়াক এরেস্ট হলো বা ভূমিকম্পের ফলে মরতে মরতে বেঁচে গেছেন এমন মানুষ, ইত্যাদি ইত্যাদি। মানে আমরা যেমন ভাবে সন্ধ্যেবেলায় গল্প করতে করতে বলি যে, "আজ একেবারে মরতে মরতে বেঁচে গেলাম", সেরকম নয়, সত্যিকারের মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন যাঁরা তাদের কথা বলছি। ওই কয়েকসেকেন্ডের অভিজ্ঞতা তাদের ঠিক কি রকম? এই অভিজ্ঞতাকেই বলা হচ্ছে 'near death experience' বা সংক্ষেপে 'NDE'। অদ্ভুতভাবে ওই মানুষেরা ঐসময়ের এমন কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলেন যা দেশ-কাল ভেদেও একইরকম। বেশ একটা মিল লক্ষ্য করা যায় তাঁদের বর্ণিত বিষয়টিতে। যেমন, নিজের শরীরকে শরীরের বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া (out of body experience), নিজের পুরো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী পুনর্বার ফিরে দেখা (life review), বা একটি উজ্জ্বল আলোর টানেলের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তাঁরা। সর্বোপরি, একটা ভীষণ সুন্দর, শান্ত, সমাহিত, সমস্তরকম দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত উন্নততর মনের অবস্থার কথা তাঁরা প্রত্যেকেই বর্ণনা করেন। এই বর্ণনাগুলি আগেই বলেছি দেশ-কাল ব্যতিরেকে সকলের ক্ষেত্রে একই।
Near death experience (NDE) নিয়ে প্রথম পাবমেড (Pubmed) আর্টিকেল পাচ্ছি ১৯৮৩ সালে। লিখেছেন ব্রুস গ্রেইসন (Bruce Greyson)। Dr. Greyson এর পরিচয় এককথায় বলতে গেলে বলতে হয় তিনি ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির Professor Emeritus of Psychiatry and Neurobehavioral Sciences. তাঁর আরো পরিচিত পরিচয় হলো, 'the father of research in near-death experiences.' এই near-death experiences শব্দবন্ধটি অবশ্য প্রথম ব্যবহার করেছিলেন রেমন্ড মুডি। তাঁর শুরু করা চিন্তাধারাকে নতুন ভাবে একটা কোয়ান্টিটেটিভ রূপ দেবার চেষ্টা করেছেন গ্রেইসন। একা গ্রেইসন নন আরো অনেকেই এই NDE রিসার্চকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তবে গ্রেইসন NDE কে ঠিকঠাক চিহ্নিত করবার জন্য একটি পরিমাপন পদ্ধতি প্রণয়ন করেন যা 'গ্রেইসন স্কেল' নামে বহুল বিখ্যাত একটি মডেল। অর্থাৎ কেউ একজন যদি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন তবে তাঁর তিনি আদৌ কিছু অনুভব করতে পেরেছেন কিনা, মানে তার অভিজ্ঞতাকে আদৌ NDE বলা চলে কিনা, বা বললেও সেই অভিজ্ঞতা ঠিক কোন পর্যায়ে পড়ে সেটির মাপকাঠি এই গ্রেইসন স্কেল। তবে গ্রেইসন স্কেল এর প্রণেতা কিন্তু শুধু NDE -র পরিমাপ নয়, NDE- র সাথে কার্ডিয়াক কেয়ার বা অন্যান্য ক্লিনিকাল প্রভাব, আধ্যাত্মিকতার সাথে তার সম্পর্ক সংক্রান্ত বিষয় এমনকি আমাদের কুণ্ডলিনী শক্তি সম্পর্কেও লিখেছেন।
এখন এই অভিজ্ঞতাগুলিকেই গ্রেইসন স্কেল অন্তত চারটি ভাগে ভাগ করে। অর্থাৎ মানুষটির মানসিক অবস্থা, স্নায়বিক অবস্থা, বেড়ে ওঠার পরিবেশ, আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ইত্যাদি বেশ কিছু বিষয় এই অভিজ্ঞতাগুলিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই চারটি ভাগে ফেলে। Cognitive type, Transcendental type, Affective type এবং Paranormal type. বাকি আর যা অন্য চারটের মিশ্রণ তাকে আর শ্রেণীবিন্যাস করা যায় না। ফলে বাকি সবগুলো হলো মিশ্র বা unclassified type. এখন NDE -র অভিজ্ঞতার ভিন্নতা অনুসারে এই টাইপগুলি ঠিক কি? অভিজ্ঞতার তীব্রতা অনুসারে তার গ্রেডিং করতে বলা হয়। পদ্ধতিটি self assessment গোত্রীয়। প্রায় ষোলোটি প্রশ্নের ০, ১ বা ২ হিসেবে গ্রেডিং করতে বলা হয় NDE প্রত্যক্ষ করেছেন এমন মানুষকে। গ্রেইসন স্কেল বলছে, এই ষোলোটি প্রশ্নের (অভিজ্ঞতার) ধরণ হলো ওই Cognitive type, Transcendental type, Affective type অথবা Paranormal type এর। এখন কোনো একজন মানুষের অভিজ্ঞতা অনুসারে গ্রেডিং করতে করতে কোনো একটি টাইপ এর গ্রেড ৫ বা তার বেশি হলে মানুষটির NDE- কে সেই টাইপ এ বা গোত্রে ফেলা যাবে। এখন ওই ষোলোটি প্রশ্ন একটু দেখে নিই।
যখন আপনি NDE- র মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, অর্থাৎ ঠিক মৃত্যু হবো হবো থেকে আবার ফিরে আসছেন ওই কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আপনার কি মনে হয়েছে-
১. সময়ের গতি অস্বাভাবিক বেড়ে বা কমে যাচ্ছিলো? অর্থাৎ সব কিছু ভীষণ দ্রুত বা ধীর লয়ে ঘটছিল?
২. আপনার চিন্তা করার ক্ষমতা অস্বাভাবিক দ্রুত বা ধীর লয়ে চলছিল?
৩. আপনার জীবনের পুরোনো ঘটনাবলী কি আপনার মনে আবার ফিরে আসছিল?
৪. আপনি কি হঠাৎ করেই আপনার বা আপনার চারপাশে ঘটে চলা সমস্ত জানা অজানা ঘটনার ব্যাখ্যা করতে পারছিলেন? বুঝতে পারছিলেন সমস্ত কিছু?
৫. আপনি কি অসম্ভব একটা শান্তি, স্বস্তি অনুভব করছিলেন?
৬. আপনার কি ভীষণ একটি আনন্দ হচ্ছিলো?
৭. আপনি কি নিজেকে বিশ্বজগতের সাথে একসূত্রে বাঁধা, একাত্ম একজন মনে করছিলেন?
৮. আপনি কি নিজের চারিদিকে উজ্জ্বল একটা আলোর গোলক দেখেছিলেন বা অনুভব করেছিলেন?
৯. আপনার সমস্ত ইন্দ্রিয়ানুভূতিগুলি কি সাধারণ অবস্থার তুলনায় আরো শক্তিশালী বা তীব্র হয়ে উঠেছিল?
১০. আপনার কি মনে হচ্ছিলো, মানে আপনি কি অনুভব করতে পারছিলেন যে অন্যকোথাও একটা চলে যাচ্ছেন বা আশেপাশের জিনিষগুলি অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে?
১১. ভবিষ্যতের কোনো দৃশ্য কি আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল?
১২. আপনি কি অনুভব করেছিলেন যে আপনি আপনার শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছেন (Out of body experience, OBE)?
১৩. আপনার কি মনে হচ্ছিলো আপনি অপার্থিব কোনো জায়গায় পৌঁছে গেছেন?
১৪. আপনি কি রহস্যময় কোনো বস্তুর উপস্থিতি অনুভব করেছিলেন বা অচেনা কোনো কণ্ঠস্বর শুনেছিলেন?
১৫. আপনি কি আপনার মৃত কোনো আত্মীয় বা আধ্যাত্মিক কোনো মানুষকে দেখেছিলেন বা অনুভব করেছিলেন?
১৬. আপনি কি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছিলেন যেখান থেকে প্রায় আর ফিরে আসা যায় না?
এই হলো গিয়ে গ্রেইসন স্কেলে উল্লিখিত ষোলোটি প্রশ্ন। এখন এই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের ধরণ অনুসারে, ০, ১ বা ২ গ্রেডিং করা হয়। যেমন এই শেষ প্রশ্নটিই ধরা যাক, 'আপনি কি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছিলেন যেখান থেকে প্রায় আর ফিরে আসা যায় না?' এই প্রশ্নের উত্তর যদি "না" হয় তবে তার জন্য বরাদ্দ নম্বর হলো '০', যদি উত্তর হয় এরকম-"আমি নিজে সচেতনভাবে জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম" তাহলে তার জন্য বরাদ্দ নম্বর হলো '১', আর যদি উত্তরে NDE অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষটি বলেন যে-"আমি একটি বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম যে বাধাটি পার হবার অনুমতি ছিল না। বা আমায় জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে" তাহলে তার জন্য বরাদ্দ নম্বর হলো '২'। এখন এইসবগুলি প্রশ্নের মিলিত উত্তর ৭ বা তার বেশি হলে তবেই ধরা হয় যে আদৌ মানুষটির near death অভিজ্ঞতা হয়েছে।
এখন ১ থেকে ৪ নম্বর প্রশ্ন হলো cognitive component, ৫ থেকে ৮ নম্বর প্রশ্ন হলো affective component, ৯ থেকে ১২ নম্বর প্রশ্ন হলো paranormal component এবং ১৩ থেকে ১৬ নম্বর প্রশ্ন হলো transcendental component. কোন ধরণের প্রশ্নে মানুষটির স্কোর বেশি হচ্ছে তার ওপরে মানুষটির অভিজ্ঞতার ধরণ নির্ণীত হয়।
তাঁরা যা যা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতির কথা বলেছেন সেসবের ওপর ভিত্তি করে ১৫৮ জন NDE সম্পন্ন মানুষের ওপর করা সাম্প্রতিকতম আর্টিকেল পাচ্ছি এই বছরেরই অর্থাৎ ২০২০ -র জানুয়ারিতে প্লস ওয়ান (PLoS One) জার্নালে প্রকাশিত। সেখানে গ্রেইসন স্কেলে করা প্রশ্নগুলো ছাড়াও নিজেদের ভাষায় (Descriptive) তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে বলা হয়েছিল। তাতে গ্রেইসন স্কেলে বেঁধে দেওয়া প্রশ্নোত্তরের গন্ডি তা থাকে না। তাতে তাঁরা যে কথা গুলি বলেছেন তার মাধ্যমেও NDE -র মূল ব্যাপারটাকে খানিকটা বোঝা বা ধারণা করা যাচ্ছে। এখানে মূলত তাঁরা NDE কে বর্ণনা করতে যে যে শব্দ বা শব্দবন্ধ বর্ণনা করেছেন তার প্রকৃতি মূলত তিন ধরণের: visual perceptions, emotions and spatial components অর্থাৎ দেখা, অনুভব করা বা অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য।
এবারে কিছু উল্লেখযোগ্য স্টাডির কথা বলি যা পাবমেড থেকে আপাতত পাচ্ছি। অবশ্যই এছাড়াও অজস্র স্টাডি আছে যাতে ইনভেস্টিগেটররা NDE-র ঘটনাগুলিকে কেস স্টাডি হিসেবে প্রকাশ করেছেন। আমি সেই কেস স্টাডিগুলি আপাতত বলছিনা। বলছি সেই স্টাডিগুলোই যেগুলিতে গবেষকরা NDE-র কিছু অন্তর্গত কারণ, এসোসিয়েশন বা নিউরোনাল পরিবর্তনের কথা আন্দাজ করেছেন (অবশ্যই কারণসহ) বা করার চেষ্টা করেছেন আমাদের বর্তমান বিজ্ঞানে ব্যবহৃত জ্ঞান, থিওরি বা যন্ত্রপাতিতে যতটুকু মাপা সম্ভব আর কি, তাই দিয়ে।
NDE-র কারণ হিসেবে সবচাইতে প্রচলিত থিওরিটি হলো দৃষ্টিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন। যদিও বর্তমানে গুচ্ছ গুচ্ছ এমন NDE কেসের কথা পাওয়া যাচ্ছে যা কেবলমাত্র একটি প্রায় মৃত মস্তিষ্কের বিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন বলে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। এবিষয়ে সাম্প্রতিকতম আর্টিকেলটা পাচ্ছি এই বছরের (২০২০) মার্চ মাসে প্রকাশিত এক্সপ্লোর জার্নালে। প্রকাশ করেছেন Institute of Neuroscience, Department of Human Physiology, University of Oregon এর গবেষকরা। সেখানে ৩২ বছর বয়সী একজন চিকিৎসকের তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে কার্ডিয়াক এরেস্ট হয় এবং তাঁর NDE-র অভিজ্ঞতা হয়। তারপর তিনি নিজেই তাঁর কেস অত্যন্ত বিশদভাবে পরীক্ষা করে মূলত দুটি সিদ্ধান্তের কথা এই রিপোর্টে প্রকাশ করেন যে, ১) আমাদের বস্তুগত ধারণা অনুসারে, মানুষের চেতনা (Consciousness) যদি শুধুমাত্র মানুষের মস্তিস্ক থেকে তৈরী হয় তবে তা দিয়ে NDE-র সময়, মানুষের যে যে ইন্দ্রিয়গত অনুভূতি হয় তাকে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। এবং ২) NDE-র পরে মানুষের চেতনা (Consciousness) সম্পর্কে মূল ধারণাটিই পাল্টে যায়।এই দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটির অবশ্য ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। জীবন সম্পর্কে, ধারণার আমূল পরিবর্তন, সাংঘাতিক একটা চরিত্রগত পরিবর্তন (অবশ্যই ভালোর দিকে), নেশা ছেড়ে দেওয়া, আলস্য ছেড়ে জীবনকে গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি life changing ঘটনার অজস্র উদাহরণ আছে NDE-র পর। এমনকি Suicidal প্রকৃতির মানুষ বা post traumatic stress disorder এর মতো long term চিকিৎসাধীন রোগীদেরও NDE-র পর সম্পূর্ণ অন্যরকম মানুষ হয়ে যাবার বেশ কিছু প্রমান বা কেস স্টাডির উল্লেখ পাওয়া যায়। গত বছরে জার্মানি এবং ডেনমার্কের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাকেন্দ্র থেকে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলের কথা বলি, যেখানে পৃথিবীর পঁয়ত্রিশত দেশ থেকে ১০৩৭ জন মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং এঁদের ৮১ জনের মধ্যে মানে প্রায় ৭.৮% মানুষের NDE ছিল। এই পরীক্ষায় আর একটি বিষয় উঠে আসে। সেটি হলো, এই ৮১ জনের মধ্যে ৩৩ জনের একটি বিষয় মিল ছিল সেটি হলো মাইগ্রেন অরা। অর্থাৎ খুব সোজা কোথায় বললে, মাইগ্রেনেই মাথা ব্যাথার সময় তাঁরা উজ্জ্বল একটি আলোর উৎস দেখতে পান। অর্থাৎ মাইগ্রেন অরা সংক্রান্ত স্নায়বিক কার্যকলাপ বোঝা গেলে তার কিছুটা দিয়ে NDE -র ধারণাটিকে নেড়েচেড়ে দেখা যেতে পারে ভবিষ্যতে। আবার ওই গতবছরেরই কথা, Medical hypothesis জার্নালে Center for Integrative Medicine, University of Arizona College of Medicine থেকে একটি রিভিউ প্রকাশ করলেন ড: জেমস লেক। সেখানে তিনি বললেন, NDE একটি "Higher cognitive trait" যা জেনেটিক, বা এপিজেনেটিক উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্ভব। এখানে, আমার একটা ব্যক্তিগত wild চিন্তার কথা বলি। মনে করা যাক, NDE বা ঐধরণের অভিজ্ঞতাগুলিকে যদি আধ্যাত্মিক (Spiritual) অভিজ্ঞতা হিসেবে মনে করি এই মুহূর্তের জন্য, তাহলে "Higher cognitive trait", এই কথাটিকে খানিক চেনা চেনা লাগে। আমাদের দেশে সেজন্যই কি বলা হয় যে যিনি মনের দিক থেকে (In case of consciousness) যত উন্নত ততই তাঁর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা তত স্পষ্ট? দু ক্ষেত্রেই মোদ্দা কথাটা একই কেবল টার্মিনোলজিটা আলাদা?
NDE -র স্টাডি সব থেকে বেশি হয়েছে হাসপাতালের "terminally ill" রোগীদের ওপরে, বা কার্ডিয়াক ইউনিটের ক্রিটিকাল অস্ত্রপ্রচারের রোগীদের ওপরে। সাধারণ হাসপাতালের রোগীদের ওপর একটি উল্লেখযোগ্য স্টাডি পাওয়া যাচ্ছে শ্রীলংকার কলম্বো নর্থ টিচিং হাসপাতাল থেকে। ৮২৬ জন সাধারণ রোগীর ওপর গ্রেইসন স্কেল অনুসারে পরীক্ষা করে ৩% মানুষের মধ্যে NDE চিহ্নিত করতে পেরেছেন তাঁরা। এছাড়া অজস্র স্টাডি হয়েছে কার্ডিয়াক সার্জিক্যাল ইউনিটগুলোতে। সমস্যা একটা জায়গায় আটকে আছে যে ঠিক ওই অভিজ্ঞতা ঘটাকালীন শারীরিক, স্নায়বিক পরিবর্তনগুলি খুব ভালো করে মাপা বা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়না এখনো পর্যন্ত। ফলে ফিজিওলজিক পরিবর্তনগুলি এখনো অধরা। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে ওই যে ওপরের প্রশ্নাবলী বললাম না, মানুষটির দেশ, জাতি, বড় হয়ে ওঠা, আধাত্মিকতা এবং ধর্মীয় মতবাদ বা যদি সে নাস্তিকও হয়, সমস্ত ভিন্নতা স্বত্তেও সব ক্ষেত্রেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই ধরণের অভিজ্ঞতার কথাই তাঁরা বলেন। সাধারণত এই জাতীয় অভিজ্ঞতায় ধর্মবিশ্বাসের সাথে সম্পর্ক থাকার ভাবনাটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ১৯৮৪ সালের একটি স্টাডি হয়েছিল তাতে বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের সাথে NDE -র গভীরতা সম্পর্কে কাজ হয়েছিল। এই স্টাডিতে SA McLauhlin ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে NDE -র কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাননি। বছর দুই আগে Imperial College London, London, এবং University Hospital of Liège, Belgium এর বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রকাশিত আর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টাডির কথা এখানে বলি, আমাদের শরীরে সেরোটোনার্জিক নিউরন, যা কিনা আমাদের সামগ্রিক আনন্দে থাকার ব্যাপারটা খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করে তা থেকে উৎপন্ন N,N-Dimethyltryptamine (DMT) প্রয়োগ করেছিলেন ১৩ জন সুস্থ মানুষের দেহে এবং তারপর পরে আলাদা ভাবে তাঁদের দেহে প্লাসিবো (placebo) কিছু তরলও প্রয়োগ করেছিলেন। অবশ্যই কখন কোনটা প্রয়োগ করা হচ্ছে সেসময় তাঁদের সেটি জানানো হয়নি। অর্থাৎ যাকে বলে 'within-subjects placebo-controled study' এবং দুই ক্ষেত্রেই NDE -র বৈশিষ্ট্যগুলি পরীক্ষা করা হয়েছিল। এবং দেখা গিয়েছিলো, DMT প্রয়োগের পর তাদের NDE মতো বেশ কিছু অনুভূতি হয়েছিল। অর্থাৎ এটিও NDE -কে স্নায়বিকভাবে ব্যাখ্যা করার আরো একটি পদ্ধতি হলেও হতে পারে।
আরো কিছু গবেষনা হয়েছে NDE নিয়ে। সবই আপাতত খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে। তবুও আপাতত যা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর গল্প নিয়ে আবার পরের দিন ফিরে আসছি।
আজ এপর্যন্তই।
ভালো থাকবেন।
অর্পিতা।