#এই_সপ্তাহের_শেষে
৬. ওষুধ আবিষ্কার
(অন্তিম/পর্ব-৫)
-----------------------------------------
আজ ওষুধ আবিষ্কার গল্পের
অন্তিম পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা। এর আগের পর্বগুলিতে আমরা দেখেছি কেমন করে একজন
বিজ্ঞানী প্রথম কাজ শুরু করে আস্তে আস্তে ছোট ছোট ধাপ পেরিয়ে কোষদেহে এবং
প্রাণীদেহে একটি কম্পাউন্ডের এন্টিক্যান্সার গুণ সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। এবং পেপার পাবলিশ করেছেন। সেই প্রথম
প্রকাশিত পেপারটি তাঁর নামে আর্কাইভড
হয়েছে। তারপর সেই পেপার পড়ে সারা পৃথিবীতে
সেই বিষয়ে উৎসাহী গবেষকরা ওই বিশেষ
ক্যান্সারে, ওই বিশেষ কম্পাউন্ডটি যে কার্যকরী
হলেও হতে পারে এমন প্রমাণ পেয়েছেন। তাঁরা তাঁদের
পেপার পাবলিশ করেছেন। এইভাবে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দেশের নানান
ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন গবেষকের কাছ
থেকে, কম্পাউন্ডটির আন্টিক্যান্সার গুণের কথা বার বার উঠে আসলে, তখন মানুষের দেহে কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করে
দেখার কথা ভাবা শুরু হয়। অর্থাৎ এতদিনে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।
প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলি
থেকে কম্পাউন্ডটির কার্যকারিতা
এবং কোনধরনের ক্যান্সারে কোন পরিস্থিতিতে সেটি প্রয়োগ করা হবে সে সম্পর্কে ততদিনে
একটা ধারণা তৈরী হয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু
করার জন্য নানা দেশে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থাকে, যাদের কাছে আবেদন করতে হয়। অনেকটা
সেই প্রাথমিক গ্রান্ট এপ্লিকেশনের মতোই ঘটনা। এক্ষেত্রে ইঁদুরে এক্সপেরিমেন্ট শুরু
করার সময় যে ধরণের প্রশ্ন গুলি উঠেছিল, সেই একই ধরণের প্রশ্ন নিয়ে আবেদন জমা দিতে
হবে। অর্থাৎ, কতগুলি মানুষে প্রয়োগ করলে ফলাফলটির স্ট্যাটিসটিকাল সিগ্নিফিকেন্স
থাকবে? ঠিক কোন কোন dose প্রয়োগ করা হবে? কিভাবে
প্রয়োগ করা হবে? প্রয়োগ করার আগে এবং পরে কি কি ক্লিনিকাল প্যারামিটার নজরদারিতে
রাখা হবে? কতক্ষণ বা কতদিন অন্তর নজরদারি করা হবে?
এই সমস্ত প্রটোকল লিখে আবেদন জমা দিতে হবে প্রথমে ইনস্টিটিউশনাল কমিটির কাছে। এই
কমিটির টিকি বাঁধা থাকে সরকারি দপ্তরে। দেশভেদে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারি
ড্র্যাগ কন্ট্রোলিং দপ্তরগুলি এই বিষয়ে সর্বোচ্চ কথা বলার অধিকারী। USA ক্ষেত্রে
যেমন Food and Drug Administration (FDA), UK ক্ষেত্রে Medicines and Healthcare Products Regulatory Agency
(MHRA) তেমনই ভারতে এই দপ্তরটি হলো Central Drugs Standard Control Organization
(CDSCO).
ক্লিনিকাল ট্রায়াল এর ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রশ্নটি হলো, রোগের প্রকোপ কমছে, না কি কমছে না
সেটি পরের কথা। আগে দেখা দরকার যে কম্পাউন্ডই মানবদেহে কোনো সাইড এফেক্ট বা
বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে কিনা। যদিও ইঁদুর বা অন্য প্রাণীদেহে বার বার বিভিন্ন ভাবে
দেখে তবেই মানুষের দেখে সেটি প্রয়োগ করার কথা ভাবা হয়। তাও মানুষের সাথে অন্য
প্রাণীর শারীরবৃত্তীয় পার্থক্যের জন্য এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে ইঁদুরের দেহে
কোনো নেগেটিভ এফেক্ট এলো না বলে মানুষের দেহেও আসবে না। সুতরাং প্রথমেই এই
toxicity testing স্তরটি পেরোতে হবে তারপর অন্য কথা। টক্সিসিটি টেস্টিং হলো
ক্লিনিকাল ট্রায়াল এর প্রথম ধাপ (Clinical trial- phase I)।
এর জন্য প্রথমে যে
হাসপাতাল থেকে রোগী এনরোলমেন্ট হবে সেই হাসপাতালের সেই ডিপার্টমেন্টকে দেখাতে হবে
যে যথেষ্ট সংখ্যক রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার সুব্যবস্থা সেখানে আছে। অর্থাৎ তাঁরা এই পেসেন্ট এনরোলমেন্ট ব্যাপারটি অনায়াসেই করতে পারবেন। এখন এই স্তরে আবার ডাক্তার এবং অন্যান্য ক্লিনিকাল
পার্সনদের দায়িত্ব নিয়ে গবেষকদের সাথে কাজ করতে হবে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সময় তাই
গবেষক, ডাক্তার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রয়োজনীয় ক্লিনিকাল অর্গানাইজারদের
একসাথে আবেদন করতে হয়। এটি সম্পূর্ণরূপে দলগত
কাজ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপন বা আরো অন্য জনসংযোগ পদ্ধতিতে এই ট্রায়াল শুরু
হওয়ার কথাটি প্রচার করবেন। গবেষক এক্ষেত্রে
কম্পাউন্ডটি সাপ্লাই করবেন, রোগীর অন্যান্য মেডিকেশন ও ট্রিটমেন্ট মডিউলের সাথে
বিরোধ না বাঁধিয়ে নতুন কম্পাউন্ডটি প্রয়োগের প্রটোকল বানাবেন ডাক্তারের সক্রিয়
সহযোগিতার সাথে। ডাক্তার এবং ক্লিনিকাল অর্গানাইজার রোগীদের কাউন্সেলিং করে এই
ট্রায়াল সম্পর্কে তাঁদের বিস্তারিত জানাবেন। তারপর যদি তাঁরা স্বেচ্ছায় এই
ট্রায়ালে অংশ নিতে উৎসাহী হন এবং তারপর সমস্ত পদ্ধতিটি বুঝে, লিখিত অনুমতিপত্র
পড়ে, স্বাক্ষর করলে (Informed written consent) তবেই তাঁকে এই ট্রায়ালে স্বাগত
জানানো যাবে। এইবার রোগীটির দেহে নির্দিষ্ট প্রটোকল
অনুসারে কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করার আগে এবং পরে তাঁর শরীরবৃত্তীয় সমস্ত প্যারামিটার
মানে ধরা যাক, ব্লাড কাউন্ট, ব্লাড সুগার, প্রেসার ইত্যাদি সমস্ত সাধারণ ক্লিনিকাল
টেস্ট এবং এই কম্পাউন্ড প্রয়োগের ফলে যদি এছাড়াও অন্য কোনো কিছু বদল হবার সম্ভাবনা থাকে তবে সেই প্যারামিটার টেস্ট করে আগে তাঁকে এই ট্রায়ালের উপযুক্ত
কিনা বিচার করা হবে। সমস্ত ঠিক থাকলে তারপর তাঁর দেহে কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করা হবে। তারপর নির্দিষ্ট সময়
অন্তর খুব সতর্কতার সাথে তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো রকম অবনতি হচ্ছে কিনা সেটি
লিপিবদ্ধ করা হবে।
এর সাথে সাথে অনেক
ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কম্পাউন্ডটির কার্যকারিতা
অনুসারে নির্দিষ্ট সময় (বা দিন) অন্তর তাঁর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে তাতে ইনজেকশনের কত
সময় পর্যন্ত কম্পাউন্ডটি রক্তে পাওয়া যাচ্ছে সেটি পরীক্ষা করে দেখা হয়। এতে মানুষের শরীর কতক্ষনে কম্পাউন্ডটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে বা
শরীর থেকে বের করে দিচ্ছে তার একটা ধারণা করা যায়। তাতে, ভবিষ্যতে কত সময় অন্তর
কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করতে হবে তার ধারণা করা যায়। শরীরে না থাকলে কাজ করবে কি করে
তাই না? এই পর্যায়ে অনেকসময় বিভিন্ন dose এ কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করা হয়। প্রথমে
সর্বনিম্ন dose এ অন্তত খুব অল্প সংখ্যক মানুষে এটি প্রয়োগ করা হয়। তাঁরা
সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে তবে পরবর্তী আরও একটু বেশি dose এ প্রয়োগ করা হয়। সেও খুব
অল্প সংখ্যক মানুষের দেহে। তাঁরাও সম্পূর্ণ
সুস্থ থাকলে তার উপরের dose এ আবার খুব অল্প সংখ্যক মানুষে ওপর প্রয়োগ করা হয়। এবং সাথে সাথে ওই শারীরবৃত্তীয় সমস্ত প্যারামিটার
এর ওপর নজর রাখা হয়। রোগী কিছুমাত্র অসুবিধার কথা বললেই সেই dose টির প্রয়োগ বন্ধ
করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ এই পর্যায়ে মানুষের শরীর কতটা পর্যন্ত এই কম্পাউন্ডটি নিতে
পারে তার একটা ধারণা করা হয়। এই
ভাবে phase- I clinical trial এ কেবল
কম্পাউন্ডটির বিষক্রিয়া, কত সময় এটি শরীরে থাকছে এবং dose নির্ধারিত হয়। প্রায় 70% কম্পাউন্ডই এই phase-I এ পাশ করে
যায়।
এই ট্রায়াল এর সমস্ত
রিপোর্ট জমা করে আবার phase- II ট্রায়াল এর জন্য আবেদন করা হয়। সমত রিপোর্ট রিভিউ
হবার পর সমস্ত কিছু ঠিকঠাক থাকলে পরের
পর্যায়ে যাবার অনুমতি মেলে। এই পর্যায় থেকে শুরু হয় যে উদ্দেশ্যে কম্পাউন্ডটিকে
নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল সেই কাজ। অর্থাৎ অনেক বেশি সংখ্যায় রোগীকে একইভাবে এনরোল করানো হয় তারপর
তাঁদের দুভাগে ভাগ করে একদলকে এক্সপেরিমেন্টাল কম্পাউন্ডটি দেওয়া হয় আর অন্য দলকে
অন্য আর যা ট্রিটমেন্ট তাদের চলছিল সেটির সাথে placebo অর্থাৎ একটি সাধারণ
কম্পাউন্ড যার কোনো বিশেষ জানা ওষধি গুণ নেই (নুন-চিনি গোলা জলও হতে পারে) এমন
একটি কম্পাউন্ড প্রয়োগ করা হয় (Randomized control trial)। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ
সময়েই রোগী বা গবেষক কেউই জানতে পারেন না যে কাকে কি দেওয়া হচ্ছে (blinded trial)।
সুতরাং FDA বা পরবর্তী ক্ষেত্রে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর কাছে কম্পাউন্ডটির
সঠিক কার্যকারিতা রিপোর্ট করার সময় বায়াসড হবার সম্ভাবনা থাকে না। এই পর্যায়ে দেখা
হয় সত্যি সত্যি কম্পাউন্ডটি হিসেবে মত নির্ধারিত ক্যান্সারে নির্ধারিত কাজটি করছে
কিনা। অর্থাৎ আমাদের গল্প অনুসারে ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীদের কলমিশাক থেকে
প্রাপ্ত কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করলে কি তাঁদের টিউমারের সাইজ কমছে? টিউমারের ছড়িয়ে
পড়া কমছে? কোনো সাইড এফেক্ট ছাড়া তাঁদের আয়ু কি একটু হলেও বাড়ছে? ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রায় এক তৃতীয়াংশ কম্পাউন্ড এই
Phase-II clinical trial পাশ করতে পারে।
এর পর Phase-III . এই
পর্যায়েও randomized
and blinded টেস্টিং চলে একই ভাবে কিন্তু এক্ষেত্রে পেশেন্টের সংখ্যা বহু বহু গুণ বেশি থাকে। কয়েকশত থেকে কয়েক হাজার। বছরের পর বছর
চলে এই ট্রায়াল কারণ এত বিপুল সংখ্যার রোগীকে খুঁজে পেতে হবে, তাঁদের কনসেন্ট পেতে
হবে, তাঁদের শরীর ট্রায়ালের জন্য উপযুক্ত কিনা জানতে হবে তারপর তাঁদের নিয়ে
ট্রায়াল শুরু হবে। সময় তো লাগবেই। Phase-III ট্রায়াল সফল ভাবে শেষ হলে তবেই কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল
কোম্পানি FDA (বা সেদেশের ড্র্যাগ কন্ট্রোলিং দপ্তর) এর কাছে কম্পাউন্ডটির
মার্কেটিং, large scale production এসবের জন্য অনুমতি পেতে আবেদন করতে পারে।
এক্ষেত্রে আবেদন মনজুর হওয়া না হওয়া পুরোটাই ওই সরকারি দপ্তরের বিশেষজ্ঞ রিভিউয়ারদের হাতে। ট্রায়ালে এতটুকু কোনো খারাপ এফেক্ট থাকলে
আবেদন সরাসরি না মঞ্জুর হয়ে যায়। তখন সেই খারাপ এফেক্টকে কোনো ভাবে বাগে আনতে পারা যায় কিনা, অন্য চলতি ট্রিটমেন্টের সাথে মিশিয়ে বা কম্পাউন্ডটিকে কোনো
ভাবে একটু রাসায়নিক পরিবর্তন করে আরো ভাল এফেক্টিভ কম্পাউন্ডে পরিণত করা যায় কিনা
সে গবেষণা শুরু হয় পৃথিবী জুড়ে। আবার সেই একই পদ্ধতিতে।
এই
প্রত্যেকটি স্তরে আবেদনের সময় ঠিক যে যে পদ্ধতিতে ট্রায়ালটি হবার কথা ছিল, এবং টক্সিসিটি টেস্ট বা ক্যান্সারে
কাজ করছে কিনা দেখার জন্য যা যা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখার কথা ছিল, রোগীর ব্লাড,
ইউরিন, টিউমার বা অন্য কোনো অংশ থেকে-তা একেবারে ঠিকঠাক প্রটোকল মেপে করা হয়েছে
কিনা তার রিপোর্ট জমা দিতে হয়। ধরা যাক, আপনি আবেদনে লিখেছেন, ইনজেক্ট করার আধঘন্টা পর রোগীর দেহ থেকে রক্ত
নিয়ে দেখবেন তাতে কতটা কম্পাউন্ড আছে এবং রক্ত কণিকার স্বাভাবিক পরিমাণের কতটা
হেরফের হচ্ছে। সেই অনুসারে আপনার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। এখন আপনার কাজ করতে কিছু দেরি হতেই পারে। বিভিন্ন কারণে রক্ত সংগ্রহ
করতে দেরি হতে পারে একটু আধটু। আপনাকে প্রতিটি পেশেন্টের প্রতিবার রক্ত সংগ্রহের
সময় (ইনজেকশনের সময় থেকে) লিখে রাখতে হবে এবং তা সাবমিট করতে হবে। আপনার আবেদনে
কতটা পর্যন্ত দেরি মেনে নেওয়া যেতে পারে তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। তার এদিক ওদিক হলে সেই sample collection এ deviation
হয়েছে সেই উল্লেখ করতে হবে রিপোর্ট জমা দেবার সময়। এবার মনে করুন, খুব বেশিবার এই
deviation মানে কিন্তু আপনার ট্রায়ালে রোগীর সংখ্যা কমছে সুতরাং ট্রায়ালের মান কমছে। বেশি কমলে বাতিলও হয়ে যেতে
পারে। তখন আরো আরো বেশি সময় লাগবে।
এই
approval পেতে বহু বছর লেগে যায় অনেকসময়ই। যাই হোক, এই approval পেলে তবেই কোনো একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এই কম্পাউন্ডের
বাজারীকরণের দায়িত্ব পায়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পেটেন্ট পেলে কোম্পানির সাথে সাথে
গবেষক (বা গবেষকরা), রিসার্চ ইনস্টিটিউট সকলেই দাবিদার। এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার
তো বটেই। এই পর্যায়ে আমরা কম্পাউন্ডটিকে আমরা 'ওষুধ' বলতে পারি। এখনো একটা কাজ বাকি আছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেটি হলো, Post Marketing Surveillance Trials। অনেকসময়,
এটিকে Phase-IV trial ও বলা হয়। কম্পাউন্ডটিকে 'ওষুধ' হিসেবে প্রেসক্রিপশনে আসার
পারমিশন পাবার পর FDA এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি দুজনেরই উৎসাহে এই
সার্ভিলেন্স চলে। এর কারণ বিবিধ। এক, এই নতুন ওষুধটি ওই ধরণের পুরোনো চলতি
ওষুধগুলির তুলনায় ভাল না খারাপ কাজ করছে, দুই, ওষুধটি নিয়মিত ব্যবহার করলে রোগীর
long term কোনো সাইড এফেক্ট দেখা দিচ্ছে কিনা বা তার quality of life বজায় থাকছে
কিনা, তিন, ওষুধটির যা অর্থমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং যা উপকার পাওয়া যাচ্ছে
সেটি তূল্যমূল্য কিনা (cost effectiveness)। ইত্যাদি ইত্যাদি। এর কোনো একটিতে
গন্ডগোল হলেই ওষুধটির ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয় সাময়িক ভাবে।
এই হলো সংক্ষেপে ওষুধ
আবিষ্কারের গল্প। এত মহাভারত লেখার পরও কিন্তু কিছুমাত্র সাইড-এফেক্টের খবর এলেই
ওষুধটিকে বাজার থেকে আবার গবেষণাগারে ফেরত যেতে হয়। এ ঘটনা হামেশাই হয়।
আর সেজন্য গবেষকরা মানসিকভাবে প্রস্তুতই থাকেন। আগেই তো বলেছি- Failure আমাদের
অভ্যাস, success আমাদের rare gift. সুতরাং এবার কি বোঝাতে পারলাম যে, গবেষণাগারে প্রাপ্ত কোনো এন্টিক্যান্সার কম্পাউন্ডের খোঁজ পেলে খবরের কাগজে অমন দুম করে "ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কার" লিখে দেওয়া যায় না?
এই সিরিজ লিখতে শুরু
করার একটা কারণ ছিল, এরকম কাগুজে খবরগুলো দেখলে যাতে কিছু মানুষ অন্তত বোঝার
চেষ্টা করেন যে "ওষুধ আবিষ্কার" এর হেডিং এর তলায় কি লেখা আছে সেটি পড়ে কম্পাউন্ডটি "আবিষ্কার" এর কোন পর্যায়ে আছে সেটি যেন বুঝতে পারেন। আর আরো একটা কথা, যদি আপনি
এই ওষুধ আবিষ্কারের পুরো গল্পটি পড়ে থাকেন, তবে এবার নিশ্চয়ই আড্ডা
মারতে মারতে কোনো ক্যান্সার গবেষককে
"কি করছো এত রিসার্চ করে, ক্যান্সারের ওষুধ তো আর আবিষ্কার করতে পারলে
না" এই "নির্দোষ" মজাটি করার আগে একটু ভাববেন। রিসার্চারটি হয়ত
শুনে উত্তর না দিয়ে একটু মুচকি হাসবেন।
কিন্তু আপনি এখন জানেন যে, সেই কম্পাউন্ডটি ফেল
করলে, একা ফেল করে না। রিসার্চারের অন্তত কুড়িটি বছরের কেরিয়ার সাথে নিয়ে
ফেল করে।
অনেক গল্প হলো আজ। পরের
দিন আবার অন্য গল্প নিয়ে হাজির হয়ে যাব। জীববিজ্ঞানের অজস্র আকর্ষক গল্পের কোনো
একটা নিয়ে গল্প হবে নিশ্চয়ই। আজ আসি তবে।
ভাল থাকুন সবাই।
অর্পিতা
0 comments:
Post a Comment