Monday, 25 November 2019

অন্য শহর

অন্য শহর
-------------
প্রায় দুশো লোকের সাথে সিগন্যাল পেলে একসাথে রাস্তা পার হবার জন্য একটা ব্যস্ত রাস্তার ধারে জেব্রা ক্রসিং এ দাঁড়িয়ে ছিলাম। পায়ে হাঁটার সিগন্যাল হতেই একসাথে পা বাড়ালাম রাস্তায়। এত লোকের সাথে পা ফেলে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুটি অনুভূতি মন ছুঁয়েই বেরিয়ে গেল। আমার মত মানুষের জন্য ওমাহার মত শান্ত শহরই ভাল। লোকজনের ভিড় নেই। অনর্থক চঞ্চলতা নেই। তাই এত লোকের সাথে একসাথে পথ পার হবার সুযোগও নেই। এতো গায়ে গা লাগানো ভিড়ে মন তিক্ত হয়ে যেতেই পারত। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিলো আমার মন। আমার ভাল লাগছিলো সবার সাথে রাস্তার ধারে অপেক্ষা করতে। আমার ভাল লাগছিলো এত লোকের মাঝে 'কেউ না' হয়ে, ভিড়ের অংশ মাত্র হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে, পথ পার হতে। এই যে অন্তত দুশো লোক আমার ডাইনে-বাঁয়ে, আগু-পিছুতে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের কাউকে আমি চিনি না। তারাও আমায় চেনে না। অথচ সকলে একটি নির্দিষ্ট সিগন্যালের দিকে চোখ রেখে অপেক্ষা করছেন। একসাথে হেঁটে রাস্তা পার হবেন বলে। রাস্তাটুকু পার হয়েই হয়তো এই দুশো লোকের পুরো 'ভীড়'টা ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে যাবে।তবুও এই অচেনা মানুষের  ভিড়ের সকলের আপাতত গন্তব্য একই। রাস্তার ওই ওপারে যেখানে আরো একদল লোক অপেক্ষা করছে সিগন্যাল পেলেই এপারে আসবে বলে, সেই সেখানটায় পৌঁছানো। আমাদের জীবনের মতন না অনেকটা? কিছুদিনের জন্য ছোট্ট একটা রাস্তা পার হবার জন্য অপেক্ষা। আশে পাশের লোকজনের সাথে আদান প্রদান, মান- অভিমান তারপর রাস্তা পার হবার পর গন্তব্য বদলে যাওয়া। এই যে এত লোক আমার আশেপাশে তারা সকলেই আমার অচেনা। মাঝে মাঝে অচেনা লোকের সাথে অদৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।  নিজের অপরিমেয় "কেউ না" হওয়ার সত্যিটা নতুন করে উপলব্ধি হয়। আমার যা কিছু চাওয়া-পাওয়া- মান-অভিমান, আমার যা কিছু গুরুত্ব, আলাদা ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমার যা কিছু অন্য কারো কাছে এতটুকুও গুরুত্বপূর্ণ সেরকম মানুষের সংখ্যা গুনতে হাতের এক-দুইটি আঙুলের করই যথেষ্ট। আমরা জানি বা না জানি, মানি বা না মানি, পৃথিবী সুদ্ধ বাকি প্রতিটা লোকের কাছে আমি ভিড় মাত্র। জনবহুল রাস্তার আরো একজন  মানুষ। এইটি  মনে হলে নিজের প্রতি নজর খানিক কমে। এই যে এত লোক আমার গা ঘেঁষে আমার কাছে তো তারা ভিড় মাত্র। কিন্তু প্রতিটা অবয়ব, মন, অনুভব, হাসি কান্নার কারণ সব আলাদা। তাদের কাছে আমিও তো তাইই। এই কদিনে এই অনুভুতিটা বেশ হচ্ছে।               

গত কয়েকদিন লাস ভেগাসে এসেছি। লোকজনের কথায় অবশ্য বুঝেছি, এখন 'লাস ভেগাস' -র জায়গায় 'ভেগাস' বলাটাই স্মার্টনেস। তা সে যাই হোক, আলোর আর হুল্লোড়ের শহর। যে বয়সে লোকে লাস ভেগাস যেতে পেলে মনে মনে নাচতে শুরু করে আমি সে বয়স পেরিয়ে এসেছি অনেকদিন আগেই। এখানে এসে অবশ্য প্রতিপদে লোককে বলতে শুনছি -"Ultimately it's Vegas." এবছর Society for Redox Biology and Medicine (SfRBM) বার্ষিক সম্মেলন হচ্ছে এখানে প্ল্যানেট হলিউড রিসোর্টে। প্রতিবছরেই এই সম্মেলনে আমরা আসি। কারণ রেডক্স বায়োলজির এটিই আপাতত সবচাইতে বড় সম্মেলন। এখানেই সমস্ত রেডক্স বায়োলজিস্টরা জড়ো হন। আইডিয়া আদান প্রদান করেন। আমরাও আমাদের কাজের ঠিক ভুল বুঝে নিই। তাই লাস ভেগাস যাবার আলাদা করে উৎসাহ কিছু ছিল না। যেটা ছিল সেটা হলো, এবছর এই দিন চার-পাঁচদিনের পুরো সময়টা আমার নিজের। এইটা আমার কাছে কম বড় পাওনা নয়। সাধারণত এই সম্মেলনে এতদিন আমি আমার গাইডের সাথে এসেছি, থেকেছি। শেষ দিনে হয়ত পিনাকী গেছে। সম্মেলনের পরের এক-দুই দিন সেই নতুন শহরে  হেঁটে বেড়িয়েছি। কিন্তু এবছর আমার গাইড আসেননি। পিনাকীও আসবে না। সুতরাং কারো সময়ের সাথে আমার সময় মেলাবার দায় নেই আমার। উপরোন্তু যখন শুনলাম আমার সাথে থাকছে অন্য প্রদেশের, অন্য ইউনিভার্সিটির সম্পূর্ণ  অচেনা একমেয়ে, আমার ভালো বৈ মন্দ লাগলো না। সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের কাছে বসে তার কথা শুনতে বড় ভাল লাগে। কারণ সে মানুষ আমায় বিচার করবে না। করলেও সে বিচারে আমার কিছু যাবে আসবে না। তাকে ভালো লাগলে, তার কাছে আমার মন আলগা করে দিতে পারলে, সে আমার নিত্যদিনের দৈনন্দিকতায় নতুন মানুষ। আর ভাল না লাগলে তার সাথে সময় কাটাবার দায় আমার নেই। তাকে এড়িয়ে সম্পূর্ণ নিজের মধ্যে ঢুকে গিয়ে সময় কাটাতে আমার কিছুমাত্র অসুবিধা হবে না।

সুতরাং লাস ভেগাসে এসে যখন নামলাম তখন খানিকটা ছুটির দিনে কোনো পূর্বনির্ধারিত কাজ ছাড়া অনেক ভোরে সতেজ হয়ে ঘুম ভাঙার মতন একটা অনুভূতি হলো। হাতে অনেকটা সময় আর  অনেকদিন ধরে করতে চাইছেন মনের মত এমন অনেক পড়ে থাকা কাজ আছে।  কিন্তু  আজই শেষ করতে হবে এমন কোনো তাড়া নেই। আবার শেষ করে ফেলতে পারলে বেশ একটা শান্তি আসে মনে। একা নিজের সময় নিজে নিয়ন্ত্রন করার বেশ একটা সুযোগ পেয়ে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে লাস ভেগাসে এয়ারপোর্ট থেকে ল্যাবের আর দুইজনের সাথে প্ল্যানেট হলিউডের ঠিকানায় পৌঁছালাম। বেশিক্ষণের রাস্তা নয়। উবেরের ড্রাইভার আমাদের দেখে লাস ভেগাসের বড় বড় শো গুলির কথা জানাতে লাগলেন। আমি কোনোদিন আসিনি। আমাদের মধ্যে একজনই আগে বার-তিনেক এসেছে। আসলে এদেশে ছেলেপুলেরা প্রথম চাকরি বা পিএইচডি করতে এসে এখানে একবার করে আসেই। হুল্লোড়, গাঁঞ্জা, খোলা যৌনতার আর জুয়ার পীঠস্থান। তবে পুরোটাই নিপুন ভাবে কন্ট্রোলড। কোথাও কোনো বাজে ঝামেলা বিশেষ হয়না। তবে এই এত লোকজন আর এত শব্দ চারিদিকে সে বিষয়ে আমার একটা ভাল না লাগা ছুঁৎমার্গ ছিল। ছিল বলবো না, বলা ভাল আছেই। এখনো কোনো খোলা আকাশের নিচে নির্জন কোনো জায়গাকে আমি একবাক্যে বেশি ভোট দেব যেকোনো হুল্লোড়ে শহরের থেকে। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে নিজেকে ভিড় বানিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ছাড়াও লাস ভেগাস আমায় আর কিছু দিয়েছে। সেটি হলো পারিপার্শ্বিকতাকে অস্বীকার করে মুহূর্তে নিজের খোলসে ভেতরে ঢুকে গিয়ে হুল্লোড়ের মধ্যেও শান্ত থাকার একটা প্রাথমিক পরীক্ষাস্থল। 

মাঝে মাঝে নিজেকে ভাল না লাগা জায়গায় ফেলে দিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। কতটা পারিপার্শ্বিকতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, ভীষণ রকম একটা হুল্লোড়ে জায়গায় বসে নিজেকে একটা অদৃশ্য বুদ্বুদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকতে পারি তার একটা পরীক্ষা করতে ইচ্ছে করে। মানে কমফোর্ট জোনের বাইরে বসে মনটা বরফশীতল রাখার একটা চেষ্টা মনে করতে পারেন। প্ল্যানেট হলিউডে চেক ইন করে সন্ধ্যেবেলা যখন বাইরের রাস্তাটায় হাঁটাহাঁটি করব বলে ক্যাসিনোর ভেতর দিয়ে হেঁটে বেরোচ্ছি, তখন মনে হলো এই মানসিক এক্সসারসাইজটা করার জন্য এর চাইতে ভাল জায়গা আর দুটো হয়না। প্ল্যানেট হলিউড সিজার গ্রূপেরই রিসোর্ট। একদম লাস ভেগাসের বিখ্যাত রাস্তা স্ট্রিপ বা লাস ভেগাস বুলেভার্ডের ওপরেই এর অবস্থান। এই রাস্তাতেই ডাইনে বাঁয়ে পর-পর বিখ্যাত এবং  সিনেমাখ্যাত ক্যাসিনোসহ হোটেলগুলো। প্ল্যানেট হলিউডের ক্যাসিনো লেভেল সুতরাং অত্যন্ত জনবহুল, সাথে রয়েছে ক্যাসিনো লাগোয়া নামি দামি খাবারের দোকান। ফলে ভিড়, ক্যাসিনোর উচ্চকিত বাজনা আর হুল্লোড়। কি নেই এখানে! ঠিক করলাম এখানেই বসে লেখার চেষ্টা করব। দেখাই যাক না মনস্থির করতে পারি কিনা। একটু চোখ চারাতেই দিব্যি একখানা স্টারবাক্স নজরে এসে গেল। তার সামনে ক্যাসিনোর প্রাইম জায়গাটা, বাঁয়ে ক্যাফে হলিউড নাম দিয়ে এই রিসোর্টের রেস্তোরাঁ আর ডাইনে বিখ্যাত গর্ডন রামসে বার্গার। সুতরাং মনস্থির করার এর চাইতে ভাল জায়গা আর হয়না। মনে মনে স্টারবাক্সটিকে দাগিয়ে নিয়ে বাকি দুজনের সাথে বেরিয়ে এলাম লাস ভেগাস বুলেভার্ডে।

মানুষ লাস ভেগাসে আসেন এই রাস্তায় হাঁটবেন বলে। এই জনজোয়ারে গা ভাসিয়ে সমস্ত ভুলে আলো আর অলীক সুখ স্পর্শ করবেন বলে। রাস্তার উল্টোদিকেই বেলাজিওর ফোয়ারা। গানের সাথে সাথে সে ফোয়ারার নাচ দেখা হলো। লাস ভেগাসের আলো দেখা হলো। বিখ্যাত হোটেলগুলোর আলো, বহিরঙ্গ  আর বৈভব দেখা হলো। যা দেখাতে চায় এরা, আর যা দেখতে আসে মানুষ এখানে। বৈভবের প্রদর্শনীর মত লজ্জা বোধহয় আর হয়না। জানি না হয়তো আমিই ভুল। এই যে চারপাশে এত আলো, এত চাকচিক্য জানিনা আমার বুড়োটে মনের জন্যই কিনা, সেদিকে বিস্মিত-আকুল চোখে তো কই তাকাতে পারছিনা? বরং চোখ চলে যাচ্ছে এই জনসমুদ্রের দিকে। আমার কাছে যারা কেবল ভীড় মাত্র। তাদের কাছে আমি যেমন। অজস্র হাসিমুখ, চকচকে চোখ, অর্ধনগ্ন-অদ্ভুত মেকআপ করা মেয়েদের সাথে ছবি তুলছে। ছবি তুলতে দেওয়ার জন্য এই মেয়েরা টাকা পায়। সাথে তাদের বডিগার্ড যাদের কাজ মানুষকে মাঝে মাঝেই ধমকানো। "No free pictures! No free pictures!" নগ্নতার প্রতি মানুষের কৌতূহল আর খিদে এই মেয়েদের খিদে মেটায়।

এটাই "ভেগাস।" এটাও "লাস ভেগাস।"

হোটেল রিও-র বাফে নাকি খুব বিখ্যাত। জনগণ সেখানেই আজকের ডিনারটা করতে চায়। বাইরে বেরোলে আমার কাছে যাহা রিও তাহাই স্টারবাক্সের স্যান্ডউইচের প্যাকেট। ক্ষিদে মেটার মতন পেটে কিছু পড়লেই হলো। গেলাম। রিও থেকে ফেরার সময় ঠিক হলো হেঁটে ফিরবো। ম্যাপ বলছে পঁয়ত্রিশ মিনিট মত লাগবে। এইটা আমার মনের মত কাজ। মেঘ করেছে আকাশে। হালকা শিরশিরে হাওয়ায় হাঁটতে ভালোই লাগছিলো। হাইওয়ের পাশে ফুটপাথ ধরে হাঁটছি। মাঝে হাইওয়ের কাটাকুটির জায়গায় পথচারীদের জন্য ফুট ওভারব্রিজ করে দেওয়া আছে। অন্ধকার সেখানে। শহরের আলো চুঁইয়ে এসে যতটুকুনি আলো হয় কি না হয়। সেখানে বাসা বেঁধেছে এক দম্পতি। মানবেতর নয় মানব দম্পতি। আমাদের দেশে ঠিক যেমন হয়। অজস্র পোঁটলা-পুঁটলি, সাথে একটা হুইল চেয়ার। পাশ দিয়ে নির্দ্বিধায় পেরিয়ে গেলাম। যেমন যাই। যেমন গিয়ে অভ্যস্ত! পেরিয়েই একগাদা ময়লা জড়ো করে রাখা। গন্ধ বেরোচ্ছে পচে যাওয়া জিনিসের। যেমন আমাদের নাক আর চোখ সওয়া!  হাইওয়ের দূরে লাস ভেগাসের আলোকোজ্জ্বল স্কাইলাইন। কি আলো! কি আলো !

এই ভেগাস! এও লাস ভেগাস!

হেঁটে এসে লাস ভেগাস বুলেভার্ডের স্কাই ব্রিজ ধরে রাস্তা পার হয়ে হেঁটে আসছিলাম সকলে মিলে, কেউ আইসক্রিম খাবে, কেউ পরদিনের ব্রেকফাস্ট কিনবে। কেউ টুথব্রাশ ভুলেছে। সেসব কিনবে।বাইরে বেরোলে এদিক ওদিক লোক দেখা ছাড়া আমার কখনোই বিশেষ কিছু করার থাকে না। সুতরাং আমি লোক দেখতে দেখতে এগোচ্ছিলাম। স্বল্পবসনা মেয়েরা পোশাকে, মেকআপে আলো আর চোখে বিরক্তি নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। বিচিত্র ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে তুলে আর চামড়ার বিজ্ঞাপন করে করে চোখে তাদের বিরক্তি জন্মে গেছে বোধহয়। তার মধ্যেই 'ভেগাস' বেড়াতে আসা কমবয়সী ছেলে মেয়েদের উজ্জ্বল পোশাক, চোখে মুখে যৌবনের উচ্ছ্বাস। এদের কাছে 'Sin City' এখনো তার ঔজ্বল্য হারায়নি। ভাল লাগে দেখতে। এই ভিড়েই ভালবেসে ঠাম্মার কোমর জড়িয়ে ধরে হাঁটছেন দাদু। আমার ঠিক সামনেই। খুনসুটিতে ঠাম্মা টোকা মারছেন বহু বছরের সঙ্গীর গালে। তারপর দুজনেই হাসছেন। 'Sin City' হয়ে উঠছে প্রেমের শহর, বহু বছরের নির্ভরতার শহর। হাঁটছিলাম CVS ফার্মাসির পাশ দিয়ে। কষ্ট করে বৃদ্ধ বেরোলেন সেখান থেকে হাতে ওষুধ ভর্তি প্যাকেট। আস্তে আস্তে ভিড় ঠেলে হেঁটে চলেছেন। সিজার প্যালেস, নামকরা হোটেল। এই দেখতে কত লোক আসে। তার পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। এদিকে আলো নেই বিশেষ। আটপৌরে দিক এইটা হোটেলের। পাঁচিলের গায়ে সাজানো গাছের বেদিতে একগোছা জ্যাকেট, জুতো, কম্বল একসাথে পুঁটলি বানিয়ে রাখা। বোঝা যায় এখানেই রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা। পুঁটলির মালিক অবশ্য তখন অনুপস্থিত।

এই ভেগাস! এও লাস ভেগাস!

পরদিন দুপুরে এইলিভ এসে পৌঁছালো। আমার এই কদিনের রুমমেট। সে টার্কির ইসমির থেকে একবছরের জন্য এসেছে এদেশে কিছু কোলাবোরেটিভ এনিম্যাল এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য। পিএইচডি স্টুডেন্ট। তার উচ্চারণ শুনেই মনে হয়েছিল তার পর তার সাথে পরে কথা বলে বুঝলাম। সুন্দর চেহারা আর সেই মতোই চোখা সুন্দরী মেয়েটি। টার্কিশ মেয়েরা যেমন হয়। এইবারের কনফারেন্স এইলিভ আমার আর একটা পাওনা। বড় ভাল লেগেছে আমার মেয়েটিকে। সোজা সাপ্টা , স্পষ্ট ধারণা, স্পষ্ট দার্শনিকতার সোজা মেরুদণ্ডের মানুষ সে। সর্বদা হাসছে। আর অজস্র কৌতূহল আমাদের ধর্ম, স্পিরিচুয়ালিটি আমাদের দেবদেবী নিয়ে। আমি যতটা জানি বলার চেষ্টা করছিলাম।  ওর সাথে পরদিন রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। মিরাজের ভলক্যানিক ঝর্ণা দেখেছে সে। আমায় দেখাতে চায়। বললে, চলো তোমায় দেখিয়ে নিয়ে আসি। ঝর্ণা দেখা হয়েছে। কিন্তু ভলক্যানিক শো এর সময় তখন নয় তাই সেটি আর দেখাতে পারেনি মেয়ে। তাই নিয়ে তার ভারী আফশোষ। মনে হলো, আমায় সে কতটুকু চেনে? তবুও ভাল কিছু দেখলে বন্ধু বা বোনের মতো সে আমায় দেখাতে চায়। মনটা ভাল হয়ে যায় এমন অপ্রত্যাশিত পেলে কিছু। এইলিভের সাথে বুলেভার্ডে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে গল্প করছিলাম। বেশিরভাগই সে জানতে চায় আমাদের ধর্ম আর আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে। আমি জানতে চাই তার টার্কিশ জীবন যাপন, রীতি রেওয়াজ সম্পর্কে। আর দুজনেই জানতে চাই আমাদের খাবার দাবারের রেসিপি সম্পর্কে। টার্কির সাথে আমাদের মোঘলাই খানার বেশ মিল। সে অবশ্য থাকাই স্বাভাবিক। এই করতে গিয়ে লাস ভেগাস বুলেভার্ডের একটি অন্ধকার কোণায় আমরা আবিষ্কার করলাম ফুল, ধূপ দিয়ে সাজানো একটি চতুর্মুখ মূর্তি। আমি ভেবেছিলাম বজ্রযানী বৌদ্ধ দেব-দেবী কেউ হবেন। এইলিভ নজর করে বলল, এতো ব্রহ্মা। দেখো লেখা আছে। আমি লাস ভেগাস বুলেভার্ডে ধূপ-ধূনো-ফুল মালা সজ্জিত ব্রহ্মামূর্তি অন্তত আশা করিনি। এইলিভ জিজ্ঞাসা করলে, এটা কি তোমাদের ওখানে ব্রহ্মা-উপাসনার সময়? ব্রহ্ম-উপাসনার তো আমি ছাই জানি। বললুম 'না তো'। আদতে, পুষ্কর ছাড়া ব্রহ্মা মূর্তির পুজো হয় কিনা সেটাই আমার জানা নেই। দুজনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে এগিয়ে চললাম। আসা ইস্তক সে আমায় রাতে শোবার আগে, ক্যাসিনো লাগোয়া স্টারবাক্সে বসে ল্যাপটপে ক্রমান্বয়ে বাংলায় টাইপ করে যেতে দেখেছিল। জিজ্ঞাসা করেই ফেললো আমি কি এত টাইপ করছি। বললুম, কিছু নন সায়েন্টিফিক লেখা লিখতে আমার ভালো লাগে। তাই লিখছি। আর লাস ভেগাস সম্পর্কে লিখলে তাতে তুমি একটা বড় অংশ হয়ে থাকবে। ততক্ষনে এইলিভ আমার ভাললাগা মানুষের তালিকায় এসে গেছে। তাই আমার যে তাকে ভাল লেগেছে একথা জানাতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। আনন্দ-ভালো লাগা কখনো চেপে রাখতে নেই। বিশেষত সেই কারণ যদি কোনো মানুষ হয়। তার কাছে সেইটুকু ভালবাসা পাবার জন্য কৃতজ্ঞতা তো নিশ্চয়ই জানাতে হয়। এইলিভ বললে, "Oh thank you! say 'Hi' to your readers from me."

দুই সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ পৃথিবীর সম্পূর্ণ আলাদা দুটি দেশ থেকে এসে একে অপরের দেশ সম্পর্কে জানতে জানতে  'Sin City' তে বন্ধুত্বের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ছিলো। 

গতকাল রাতে কনফারেন্স শেষ হয়েছে। আজ ভোর চারটেয় এইলিভ চলে গেছে। ওর ফ্লাইট ছিল সকাল ছটায়। ভোরবেলা ওকে নিচে বিদায় জানিয়ে এসে আমি একা ঘরে বসে টাইপ করছি। এবার বেরোতে হবে আমায়ও। লাস ভেগাস থেকে আমার শান্ত শহর ওমাহার দিকে।


Thursday, 21 November 2019

#এই_সপ্তাহের_শেষে-7

#এই_সপ্তাহের_শেষে
৭. ক্যান্সার কোষ (Cancer cell)
----------------------------------
এই যে চার-পাঁচ সপ্তাহ ধরে ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের গল্প নিয়ে এত কথা বললাম, জ্ঞান দিয়ে দিয়ে আপনাদের মাথা ধরিয়ে দিলাম, গুচ্ছের বকমবাজী করলাম, কিন্তু ক্যান্সার ব্যাপারটা যে কি, সেটিই কিন্তু বেমালুম এড়িয়ে গেছি। তাই না? তাই আজ ভাবলুম আজ নয় খানিক এই নিয়েই গপ্প করা যাক। কি বলেন?

এমনিতে তো সকলেই জানেন বোধহয় ক্যান্সার হলো গিয়ে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি। কিন্তু এখানে অনেক প্রশ্ন আছে।  যেমন, এই নিয়ন্ত্রণহীন বৃদ্ধি ব্যাপারটা ঠিক কি? একেকটা কোষ সাইজে বেড়ে যায়? আর বেড়েই চলে? নাকি তারা সংখ্যায় বাড়ে? সংখ্যায় বাড়া ব্যাপারটা তো শুনে বেশ ভালোই মনে হয় তাই না? বেশ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে নতুন কোষ গিয়ে জায়গাটার ক্ষতিপূরণ করবে। কিন্তু আদতে তো ভাল কিছু হয়না। তাহলে ক্যান্সারের এই অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি কেনই বা হয়? কেনই বা সে অনিয়ন্ত্রিত? সকলের কেনই বা হয় না? অনেকেরই প্রশ্ন থাকে- "এই তো অমুক হলো গিয়ে চেইন স্মোকার (বা জলের বদলে পারলে এলকোহল খেয়েই থাকে) কিন্তু তার কই ক্যান্সার হলো না, অথচ তমুক কিনা জীবনে বিড়ি-সিগারেট-এলকোহল ছুঁলো না পর্যন্ত অথচ ক্যান্সারে কি কষ্টটাই না পেল!" এমনটা কেন? 

একদম নির্জলা সত্যি উত্তরটা শুনবেন? 
উত্তরটা হলো- "এর কোনো নির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই।" 

আদতে কেউই এখনো পর্যন্ত শেষ কথাটা বলে উঠতে পারেননি। কিন্তু বেশ কিছু ঘটনা বা কোষের বেঁচে থাকার সাধারণ পদ্ধতি সম্পর্কে জড়ো করা বহু বছরের জ্ঞানভান্ডার (Knowledge base) থেকে বেশ কিছু কথা বলা যেতেই পারে। সেগুলো নিঃসন্দেহে ক্যান্সার কোষের ধর্ম এবং এগুলোকে কাজে লাগিয়েই সুঁচ হয়ে ঢুকে শেষ পর্যন্ত সারা শরীরে গুন্ডামি করে বেড়ায় ব্যাটারা। সম্পূর্ণ গল্পটা বা বলা ভাল রহস্যটা উদ্ঘাটন হতে এখনো অনেক বাকি। তবুও যেটুকু জানা আছে বলি। 

মনে করুন, আপনি একটি বেশ বড় পরিবারের সদস্য। বড় বলতে বড়লোক নয়, সংখ্যায় বেশ তিরিশ জন মতন লোক আপনার পরিবারে আর সকলে একসাথে মিলে মিশে একবাড়িতেই থাকেন। যেমন অনেক আগের যুগে হতো আর কি। আপনার বাড়িতে নির্দিষ্ট শ্রমবন্টন ব্যবস্থা আছে, অর্থবণ্টন ব্যবস্থা আছে, সমস্ত কিছুর নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সে নিয়মকানুন মিলে আপনার এতবড় বাড়ি-পরিবারকে একদম সুন্দরভাবে চালিয়ে নিয়ে যায়। নিয়ম না থাকলে এতগুলি লোক, তাদের প্রত্যেকের জীবন যাপনের আলাদা আলাদা ঝক্কি, বেঁচে থাকার আলাদা আলাদা চাহিদা, কাজ করার আলাদা আলাদা পারদর্শিতা এবং পদ্ধতি, এত সব কিছু পূরণ করে পুরো পরিবারটাকে নিরবিচ্ছন্নভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটা একটা দুস্কর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় তাই না? 

এখন এক আধদিন যদি কারো কোনো কারণে নির্দিষ্ট কাজ করতে ইচ্ছে না করে বা উপায় না থাকে তখন তার হয়ে অন্য কেউ তার কাজটি করে দিল। কারণ সব শেষে প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য পরিবারটিকে সুন্দর এবং সাবলীলভাবে সচল রাখা (যেমন অনেক যুগ আগে হতো আর কি)। এই বার মনে করুন, আপনার এই পরিবারেরই একজন সদস্য হঠাৎ কোনো কারণে বিগড়ে গেল। মানে, ধরুন তার দায়িত্বে রান্নার জন্য মশলা বাটার কাজ ছিল। সে কোনো কারণে একদিন সেকাজ করতে পারলো না। এবং সে দেখলো কাজ তো বন্ধ থাকবে না, সুতরাং তার হযে অন্য কেউ সেইদিন মশলা বাটার কাজটি করে দিল এবং তাই দিয়ে দিব্য রান্না মিটে গেল। এবং সে পায়ের ওপর পা তুলে বসে না খেটেও দিব্য উদরপূর্তি করে নিলে। এখন এই সদস্যটি ভাবলে, বেশ মজা তো। এরকম চালিয়ে যেতে পারলে দিব্বি লোকের ঘাড়ে নিজের কাজ চাপিয়ে নিজের খিদে মেটানো যায়। এবার সে এই ভাবনাটিকে সুচারুরূপে বারংবার কার্যকরী করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো। এখন রান্নাঘরের দায়িত্বে আর যাঁরা আছে তাঁরা তো আর বোকা নন। তাঁরা কয়েকদিনেই এই চালাকি ধরে ফেললেন। এবং এই বদবুদ্ধির লোকটিকে প্রথমে নরম গরমে বুঝিয়ে, তারপর আচ্ছাসে ধমকে-ধামককে, খাবার বন্ধ করে, দরকারে চড়-চাপড় দিয়ে সিধে করার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। কারণ পরিবারের নিয়মের চাকা সচল রাখলে তবেই যে প্রত্যেকে ঠিক থাকতে পারবেন তা সকলেই জানেন। এখন এই বিগড়ে যাওয়া লোকটি দুটি কাজ করতে পারেন। এক, এইসব ধমক-ধামক, চড়-চাপড় এর ফলে সিধে রাস্তায় ফিরে আসতে পারে। আর দুই, অত্যন্ত কৌশলে এইসব ধমক-ধামক, চড়-চাপড় এড়িয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। কারণ সে দেখেছে এতে খাটতে হয়না কিন্তু দিব্বি বেঁচে থাকা যায়। প্রাথমিক ভাবে সে কিছুদিন এই ধমক-ধামক, চড়-চাপড় খেয়ে এমন ভাবকরে যেন সে সিধে হয়ে গেছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে দল পাকাতে শুরু করে। প্রথমে রান্নাঘরের আর বাদবাকি লোকজনের কান ভাঙ্গায়, লোভ দেখায় তাতে কিছু লোক তার দলে আসে। তারপর বাইরের বদের হাঁড়ি বন্ধুবান্ধবদেরও ডেকে নেয়। তারাও এতে উৎসাহ দেয়, হাত লাগিয়ে সাহায্য করে। তারপর তারা একযোগে পুরো রান্নাঘরটা দখলের চেষ্টা করে যাতে যা খাবার আছে তা শুধু তারাই খেতে পারে। কারণ, বদবুদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে তাদের চাহিদাও উত্তরোত্তর বেড়ে চলে। যেমন হয় আরকি! 

এইবার রান্নাঘরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন লোকজন এতদিনে তাদের অত্যাচারে মরে-হেজে গেছে বা পালিয়ে বেঁচেছে। কিন্তু রান্নাঘরের আসল কাজটিতেও তো এতদিনে ভাঁটা পড়েছে তাই না? এতদিন তো রান্নাবান্না শিকেয় তুলে বা নাম- কে-ওয়াস্তে কিছু-মিছু রান্না করে সারা পরিবারের পেট চালাচ্ছিল রান্নাঘরের ভাল সদস্যরা। বাকি সময়টা তো এই ঝামেলা মেটাতেই চলে যাচ্ছিল। কিন্তু এইবার এই গুন্ডাদের চক্করে পড়ে সারা বাড়িতেই খাবারে টান। এইবার রান্নাঘরের বাইরে বাকি সদস্যদের টনক নড়েছে। তারা প্রথমে একযোগে সমস্ত দিকে কাজ করতে ব্যস্ত লোকজনকে খবর পাঠিয়ে রান্না ঘরে ডেকে এনে এদের তাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ততদিনে ধরে ঘরে-বাইরের সমস্ত শত্রু মিলে বেশ শক্তিশালী দুষ্কৃতীদল তৈরী হয়ে গেছে। এখন কেবল হাতে আর মাথায় যুদ্ধ নয় তারা বেশ অস্ত্রশস্ত্রও বাগিয়ে বসেছে। এবং রান্নাঘরের বাইরের সমস্ত নিরীহ ভালমানুষ সদস্যদের মিলিত যুদ্ধকৌশলেও যদি তাদের আটকাতে পারা না যায়, তবে আবার দুটি ঘটনা ঘটে। এক, রান্নাঘরের বাইরের এই সমস্ত নিরীহ ভালমানুষ সদস্যদের যুদ্ধে হারিয়ে তাদের জায়গা এই বদ লোকগুলি দখল করতে পারে। অথবা দুই, এই ভালোমানুষ লোকগুলির মধ্যে থেকেই আস্তে আস্তে কেউ কেউ ভাবে পারে এই বদের দলে ভীড়ে না গেলে তো এরা বাঁচতে দেবে না। সুতরাং তারাও নিজেদের বাঁচাতে আস্তে আস্তে ভালোমানুষ থেকে বদ হয়ে যেতে থাকে। এখন তার ফলে পুরো বাড়ির সমস্ত রকম কাজই আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় বা ভীষণ রকম একটা অরাজকতা শুরু হয়। এবং শেষে বাড়িটার দৈন্যদশা এবং ক্রমে ভগ্নস্তূপে পরিণত হওয়া। এই হলো গল্প। 

কিসের গল্প? কেন? ক্যান্সারের। আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি। এই পরিবার বা সম্পূর্ণ বাড়িটা মনে করুন আপনার শরীর। রান্নাঘরটা মনে করুন আনার একটা অত্যাবশক অঙ্গ (Organ)। এই প্যানক্রিয়াস, লিভার, কিডনি ইত্যাদি ইত্যাদি। রান্নাঘরে বিভিন্ন কাজের ডিপার্টমেন্ট, মানে ধরা এই মশলা বাটার কাজের পুরো টিমটা হলো গিয়ে একেকটা টিস্যু (Tissue) বা কলা। আর এই মশলা বাটার দায়িত্বে থাকা সবকটা লোকজন হলো একেকটা কোষ (cell) এখন এই বিগড়ে যাওয়া লোকটি হলো গিয়ে একটি ক্যান্সার কোষ। প্রথমে যে বাকিদের মানে আশেপাশের ভাল কোষদের ধমকধামক মানে আপনার দেহের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কোনো ভাবে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। তারপর তার কান ভাঙ্গানিতে, মানে এই ক্যান্সার কোষ থেকে নির্গত নানান রকম জৈবরাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে আশেপাশের ভাল কোষগুলিও ক্যান্সার কোষে পরিণত হওয়া। তারপর যা হয়, আপনার বাড়িতে গন্ডগোলের খবর পেলেই বাইরের বদ লোকেরা এসে ফায়দা তোলে। মানে বাইরের ক্যান্সার তৈরিতে উৎসাহ দেয় এমন বস্তুর (কার্সিনোজেন, Carcinogen) সাথে যদি আপনার ওঠাবসা থাকে সে তো জানতে পারবেই আপনার বাড়ির ভেতরে গন্ডগোল চলছে। এরকম বাইরের কার্সিনোজেন (এলকোহল, সিগারেট, বিড়ি, বিশেষ কোনো রাসায়নিক ইত্যাদি) বা আপনার দেহের ভেতরে থাকা কিছু মুখোশ পরা রাসায়নিক (তাদের মধ্যে মুখ্য হলো-চিনি এবং চর্বি) তখন হৈ-হৈ করে মাঠে নেমে পড়ে আপনার রান্না ঘরের ওই বিগড়ে যাওয়া ক্যান্সারকোষটিকে উৎসাহ দিয়ে দলভারী করতে। এবার কোষটিও হৈ-হৈ করে সংখ্যায় বাড়তে থাকে। এই নতুন কোষগুলির না থাকে কোনো কোয়ালিটি কন্ট্রোল, সুতরাং না থাকে তাদের কাজের মাথা মুন্ডু। ভাল কোষগুলিও এদের সাথে লড়তে গিয়ে হয় মারা পড়ে নয় নিজেদের বাঁচাতে ক্যান্সার কোষে পরিণত হয়। তারপর আপনার রান্নাঘর বাঁচাতে আপনার বাড়ির বাকি সদস্যরা তাদের বিভিন্ন রকম কার্যক্ষমতাকে প্রয়োগ করে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অর্থাৎ আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা (immune system), কোষের সাধারণ সেনাদল (Antioxidant defense system), উৎসেচকের দল (hormonal system), ঝাড়ুদার বাহিনী (Autophagy cells) ইত্যাদি সকলকে একযোগে যুদ্ধে নামতে হয়। কিন্তু যদি দস্যুদল এদের সকলের মিলিত শক্তির চেয়েও ততদিনে শক্তিশালী হয়ে যায়, তখন তারা আর রান্নাঘরে আবদ্ধ থাকে না। ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে। আর আস্তে আস্তে আপনার দেহের সমস্ত কিছুর মধ্যে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করে করে দেহটিকে অচল করে। 

তাই ক্যান্সার হলে প্রথমে চেষ্টা করা হয় ওই রান্না ঘরটিকে বা রান্নাঘরের যে অংশে গন্ডগোল শুরু হয়েছে সেটিকে কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া যায় কিনা বাকি শরীরটিকে বাঁচাতে। কিন্তু মাথায় ক্যান্সার হলে তো আর মাথা কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তখন সার্জারি করা যাবে না। তখন ভাবা শুরু হয় কোনো ভাবে ওই বদ লোকগুলিকে টার্গেট করে সরাসরি ওদের মাথায় বোমা ফেলে (রেডিয়েশন থেরাপি) ওদের নিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যায় কিনা। কিন্তু তারা আছে তো আপনার রান্নাঘরেই। সেখানে বোমা ফেললে আপনার রান্নাঘরের বাকি ভালো সদস্যদের মধ্যেও কিছু লোক মারা যাবেই। যতই টার্গেট করা হোক না কেন, এই কোল্যাটারাল ড্যামেজ আপনি এড়াতে পারবেন না। এখন চেষ্টা হচ্ছে এই ব্যাপারে কিছু করার। কিন্তু তবুও যতক্ষণ তারা এই রান্নাঘরেই আবদ্ধ আছে ততদিন এই বোমাটি আপনি ফেলতে পারবেন। একবার রান্নাঘরের বাইরে বেরিয়ে এসে সারা বাড়িতে ছড়িয়ে গেলে কিন্তু এই অপশন আপনার আর থাকবে না। কারণ কোন জায়গায় বোমা ফেলবেন? সারাশরীরে কোথায় যে তারা আছে, আর কোথায় যে তারা নেই সে জানতে জানতেই তো তারা সে অঞ্চলের ক্ষতি করে দেবে। আর কত জায়গায় বোমা মেরে নিজের বাড়িকে নষ্ট করবেন? সুতরাং রেডিয়েশন কাজ করবে কেবল ছড়িয়ে পড়ার আগে। আর ছড়িয়ে গেলে রাসায়নিক ওষুধ দিয়ে (Chemotherapy) আপনার বাড়িরই সুরক্ষা বাহিনীর (ওই যে বললাম আগের প্যারাগ্রাফে) কার্যকলাপে সাহায্য করার চেষ্টা করা হয়। মানে তাদের শক্তি বাড়িয়ে, আরো অস্ত্র দিয়ে, উৎসাহ দিয়ে গুন্ডা বাহিনীকে বাগে আনার চেষ্টা করা হয়। বা ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার কোষগুলি যাতে অন্য জায়গায় বাসা বানাতে না পারে সে চেষ্টা করা হয়। বা সরাসরি তাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়।
এখন আপনার নিজের রান্নাঘরে খারাপ লোক থাকতেও এত কিছুর মাঝে আপনি যদি বাইরের খারাপ লোকজনের কাছে নিজের রান্নাঘরের দরজা অবাধে খুলে দেন, মানে বাইরের কার্সিনোজেনকে (এলকোহল, সিগারেট, বিড়ি, বিশেষ কোনো রাসায়নিক ইত্যাদি) ভেতরে নিজেই ঢুকতে সহায়তা করেন তাহলে আপনার ঘরের গন্ডগোলকে আপনি নিজেই শত গুণে বাড়াবেন। সুতরাং ওদের বাড়ির বাইরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর রইলো বাকি ঘরের মুখোশ পড়া শত্রু চিনি বা চর্বি। এদের কিন্তু আপনি পুরোপুরি ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে পারবেন না। আপনার রান্নাঘরকে ঠিকঠাক চালিয়ে নিয়ে যেতে এদেরও একটা অবদান আছে। কিন্তু কিন্তু কিন্তু......এদের চিনে রাখুন। মোটেই বাড়তে দেবেন না । নইলে এরাও আপনার ওই রান্নাঘরের গন্ডগোলে ভালরকম ইন্ধন দেবে।

যাই হোক, আজ অনেক গপ্প হলো। আজ যাই। আপাতত আমার রান্নাঘরে কাল থেকে মাছ সবজিরা কাঁদছে ফ্রিজে শুয়ে শুয়ে। তাদের একটা হিল্লে করি গে। পরের সপ্তাহে আবার অন্য কিছু নিয়ে গপ্প হবেখন। 

ভাল থাকুন সবাই।
অর্পিতা       

Saturday, 9 November 2019

#এই_সপ্তাহের_শেষে-6

#এই_সপ্তাহের_শেষে
৬. ওষুধ আবিষ্কার (অন্তিম/পর্ব-৫)
-----------------------------------------
আজ ওষুধ আবিষ্কার গল্পের অন্তিম পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা। এর আগের পর্বগুলিতে আমরা দেখেছি কেমন করে একজন বিজ্ঞানী প্রথম কাজ শুরু করে আস্তে আস্তে ছোট ছোট ধাপ পেরিয়ে কোষদেহে এবং প্রাণীদেহে একটি কম্পাউন্ডের এন্টিক্যান্সার গুণ সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। এবং পেপার পাবলিশ করেছেন। সেই প্রথম প্রকাশিত পেপারটি তাঁর নামে আর্কাইভড হয়েছে। তারপর সেই পেপার পড়ে সারা পৃথিবীতে সেই বিষয়ে উৎসাহী গবেষকরা ওই বিশেষ ক্যান্সারে, ওই বিশেষ কম্পাউন্ডটি যে কার্যকরী হলেও হতে পারে এমন প্রমাণ পেয়েছেন। তাঁরা তাঁদের পেপার পাবলিশ করেছেন। এইভাবে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দেশের নানান ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন গবেষকের কাছ থেকে, কম্পাউন্ডটির আন্টিক্যান্সার গুণের কথা বার বার উঠে আসলে, তখন মানুষের দেহে কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করে দেখার কথা ভাবা শুরু হয়। অর্থাৎ এতদিনে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।

প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলি থেকে কম্পাউন্ডটির কার্যকারিতা এবং কোনধরনের ক্যান্সারে কোন পরিস্থিতিতে সেটি প্রয়োগ করা হবে সে সম্পর্কে ততদিনে একটা ধারণা তৈরী হয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার জন্য নানা দেশে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থাকে, যাদের কাছে আবেদন করতে হয়। অনেকটা সেই প্রাথমিক গ্রান্ট এপ্লিকেশনের মতোই ঘটনা। এক্ষেত্রে ইঁদুরে এক্সপেরিমেন্ট শুরু করার সময় যে ধরণের প্রশ্ন গুলি উঠেছিল, সেই একই ধরণের প্রশ্ন নিয়ে আবেদন জমা দিতে হবে। অর্থাৎ, কতগুলি মানুষে প্রয়োগ করলে ফলাফলটির স্ট্যাটিসটিকাল সিগ্নিফিকেন্স থাকবে? ঠিক কোন কোন dose প্রয়োগ করা হবে? কিভাবে প্রয়োগ করা হবে? প্রয়োগ করার আগে এবং পরে কি কি ক্লিনিকাল প্যারামিটার নজরদারিতে রাখা হবে? কতক্ষণ বা কতদিন অন্তর নজরদারি করা হবে? এই সমস্ত প্রটোকল লিখে আবেদন জমা দিতে হবে প্রথমে ইনস্টিটিউশনাল কমিটির কাছে। এই কমিটির টিকি বাঁধা থাকে সরকারি দপ্তরে। দেশভেদে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারি ড্র্যাগ কন্ট্রোলিং দপ্তরগুলি এই বিষয়ে সর্বোচ্চ কথা বলার অধিকারী। USA ক্ষেত্রে যেমন Food and Drug Administration (FDA), UK  ক্ষেত্রে Medicines and Healthcare Products Regulatory Agency (MHRA) তেমনই ভারতে এই দপ্তরটি হলো Central Drugs Standard Control Organization (CDSCO).

ক্লিনিকাল ট্রায়াল এর ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রশ্নটি হলো, রোগের প্রকোপ কমছে, না কি কমছে না সেটি পরের কথা। আগে দেখা দরকার যে কম্পাউন্ডই মানবদেহে কোনো সাইড এফেক্ট বা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে কিনা। যদিও ইঁদুর বা অন্য প্রাণীদেহে বার বার বিভিন্ন ভাবে দেখে তবেই মানুষের দেখে সেটি প্রয়োগ করার কথা ভাবা হয়। তাও মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর শারীরবৃত্তীয় পার্থক্যের জন্য এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে ইঁদুরের দেহে কোনো নেগেটিভ এফেক্ট এলো না বলে মানুষের দেহেও আসবে না। সুতরাং প্রথমেই এই toxicity testing স্তরটি পেরোতে হবে তারপর অন্য কথা। টক্সিসিটি টেস্টিং হলো ক্লিনিকাল ট্রায়াল এর প্রথম ধাপ (Clinical trial- phase I)।

এর জন্য প্রথমে যে হাসপাতাল থেকে রোগী এনরোলমেন্ট হবে সেই হাসপাতালের সেই ডিপার্টমেন্টকে দেখাতে হবে যে যথেষ্ট সংখ্যক রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার সুব্যবস্থা সেখানে আছে। অর্থাৎ তাঁরা এই পেসেন্ট এনরোলমেন্ট ব্যাপারটি অনায়াসেই করতে পারবেন। এখন এই স্তরে আবার ডাক্তার এবং অন্যান্য ক্লিনিকাল পার্সনদের দায়িত্ব নিয়ে গবেষকদের সাথে কাজ করতে হবে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সময় তাই গবেষক, ডাক্তার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রয়োজনীয় ক্লিনিকাল অর্গানাইজারদের একসাথে আবেদন করতে হয়।  এটি সম্পূর্ণরূপে দলগত কাজ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপন বা আরো অন্য জনসংযোগ পদ্ধতিতে এই ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথাটি প্রচার করবেন। গবেষক এক্ষেত্রে কম্পাউন্ডটি সাপ্লাই করবেন, রোগীর অন্যান্য মেডিকেশন ও ট্রিটমেন্ট মডিউলের সাথে বিরোধ না বাঁধিয়ে নতুন কম্পাউন্ডটি প্রয়োগের প্রটোকল বানাবেন ডাক্তারের সক্রিয় সহযোগিতার সাথে। ডাক্তার এবং ক্লিনিকাল অর্গানাইজার রোগীদের কাউন্সেলিং করে এই ট্রায়াল সম্পর্কে তাঁদের বিস্তারিত জানাবেন। তারপর যদি তাঁরা স্বেচ্ছায় এই ট্রায়ালে অংশ নিতে উৎসাহী হন এবং তারপর সমস্ত পদ্ধতিটি বুঝে, লিখিত অনুমতিপত্র পড়ে, স্বাক্ষর করলে (Informed written consent) তবেই তাঁকে এই ট্রায়ালে স্বাগত জানানো যাবে। এইবার রোগীটির দেহে নির্দিষ্ট প্রটোকল অনুসারে কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করার আগে এবং পরে তাঁর শরীরবৃত্তীয় সমস্ত প্যারামিটার মানে ধরা যাক,  ব্লাড কাউন্ট, ব্লাড সুগার, প্রেসার ইত্যাদি সমস্ত সাধারণ ক্লিনিকাল টেস্ট এবং এই কম্পাউন্ড প্রয়োগের ফলে যদি এছাড়াও অন্য কোনো কিছু বদল হবার সম্ভাবনা থাকে তবে সেই প্যারামিটার টেস্ট করে আগে তাঁকে এই ট্রায়ালের উপযুক্ত কিনা বিচার করা হবে। সমস্ত ঠিক থাকলে তারপর তাঁর দেহে কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করা হবে। তারপর নির্দিষ্ট সময় অন্তর খুব সতর্কতার সাথে তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো রকম অবনতি হচ্ছে কিনা সেটি লিপিবদ্ধ করা হবে।

এর সাথে সাথে অনেক ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কম্পাউন্ডটির কার্যকারিতা অনুসারে নির্দিষ্ট সময় (বা দিন) অন্তর তাঁর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে তাতে ইনজেকশনের কত সময় পর্যন্ত কম্পাউন্ডটি রক্তে পাওয়া যাচ্ছে সেটি পরীক্ষা করে দেখা হয়। এতে মানুষের শরীর কতক্ষনে কম্পাউন্ডটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে বা শরীর থেকে বের করে দিচ্ছে তার একটা ধারণা করা যায়। তাতে, ভবিষ্যতে কত সময় অন্তর কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করতে হবে তার ধারণা করা যায়। শরীরে না থাকলে কাজ করবে কি করে তাই না? এই পর্যায়ে অনেকসময় বিভিন্ন dose এ কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করা হয়। প্রথমে সর্বনিম্ন dose এ অন্তত খুব অল্প সংখ্যক মানুষে  এটি প্রয়োগ করা হয়। তাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে তবে পরবর্তী আরও একটু বেশি dose এ প্রয়োগ করা হয়। সেও খুব অল্প সংখ্যক মানুষের দেহে। তাঁরাও সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে তার উপরের dose এ আবার খুব অল্প সংখ্যক মানুষে ওপর প্রয়োগ করা হয়। এবং সাথে সাথে ওই শারীরবৃত্তীয় সমস্ত প্যারামিটার এর ওপর নজর রাখা হয়। রোগী কিছুমাত্র অসুবিধার কথা বললেই সেই dose টির প্রয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ এই পর্যায়ে মানুষের শরীর কতটা পর্যন্ত এই কম্পাউন্ডটি নিতে পারে তার একটা ধারণা করা হয়।  এই ভাবে phase- I clinical trial এ কেবল কম্পাউন্ডটির বিষক্রিয়া, কত সময় এটি শরীরে থাকছে  এবং dose নির্ধারিত হয়। প্রায় 70% কম্পাউন্ডই এই phase-I এ পাশ করে যায়।  

এই ট্রায়াল এর সমস্ত রিপোর্ট জমা করে আবার phase- II ট্রায়াল এর জন্য আবেদন করা হয়। সমত রিপোর্ট রিভিউ হবার পর সমস্ত কিছু ঠিকঠাক থাকলে পরের পর্যায়ে যাবার অনুমতি মেলে। এই পর্যায় থেকে শুরু হয় যে উদ্দেশ্যে কম্পাউন্ডটিকে নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল সেই কাজ।  অর্থাৎ অনেক বেশি সংখ্যায় রোগীকে একইভাবে এনরোল করানো হয় তারপর তাঁদের দুভাগে ভাগ করে একদলকে এক্সপেরিমেন্টাল কম্পাউন্ডটি দেওয়া হয় আর অন্য দলকে অন্য আর যা ট্রিটমেন্ট তাদের চলছিল সেটির সাথে placebo অর্থাৎ একটি সাধারণ কম্পাউন্ড যার কোনো বিশেষ জানা ওষধি গুণ নেই (নুন-চিনি গোলা জলও হতে পারে) এমন একটি কম্পাউন্ড প্রয়োগ করা হয় (Randomized control trial)। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই রোগী বা গবেষক কেউই জানতে পারেন না যে কাকে কি দেওয়া হচ্ছে (blinded trial)। সুতরাং FDA বা পরবর্তী ক্ষেত্রে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর কাছে কম্পাউন্ডটির সঠিক কার্যকারিতা রিপোর্ট করার সময় বায়াসড হবার সম্ভাবনা থাকে না। এই পর্যায়ে দেখা হয় সত্যি সত্যি কম্পাউন্ডটি হিসেবে মত নির্ধারিত ক্যান্সারে নির্ধারিত কাজটি করছে কিনা। অর্থাৎ আমাদের গল্প অনুসারে ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীদের কলমিশাক থেকে প্রাপ্ত কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করলে কি তাঁদের টিউমারের সাইজ কমছে? টিউমারের ছড়িয়ে পড়া কমছে? কোনো সাইড এফেক্ট ছাড়া তাঁদের আয়ু কি একটু হলেও বাড়ছে? ইত্যাদি ইত্যাদি।  প্রায় এক তৃতীয়াংশ কম্পাউন্ড এই Phase-II clinical trial পাশ করতে পারে।  

এর পর Phase-III . এই পর্যায়েও randomized and blinded টেস্টিং চলে একই ভাবে কিন্তু এক্ষেত্রে পেশেন্টের সংখ্যা বহু বহু গুণ বেশি থাকে। কয়েকশত থেকে কয়েক হাজার। বছরের পর বছর চলে এই ট্রায়াল কারণ এত বিপুল সংখ্যার রোগীকে খুঁজে পেতে হবে, তাঁদের কনসেন্ট পেতে হবে, তাঁদের শরীর ট্রায়ালের জন্য উপযুক্ত কিনা জানতে হবে তারপর তাঁদের নিয়ে ট্রায়াল শুরু হবে। সময় তো লাগবেই। Phase-III ট্রায়াল সফল ভাবে শেষ হলে তবেই কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি FDA (বা সেদেশের ড্র্যাগ কন্ট্রোলিং দপ্তর) এর কাছে কম্পাউন্ডটির মার্কেটিং, large scale production এসবের জন্য অনুমতি পেতে আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে আবেদন মনজুর হওয়া না হওয়া পুরোটাই ওই সরকারি দপ্তরের  বিশেষজ্ঞ রিভিউয়ারদের হাতে। ট্রায়ালে এতটুকু কোনো খারাপ এফেক্ট থাকলে আবেদন সরাসরি না মঞ্জুর হয়ে যায়। তখন সেই খারাপ এফেক্টকে কোনো ভাবে বাগে আনতে পারা যায় কিনা, অন্য চলতি ট্রিটমেন্টের সাথে মিশিয়ে বা কম্পাউন্ডটিকে কোনো ভাবে একটু রাসায়নিক পরিবর্তন করে আরো ভাল এফেক্টিভ কম্পাউন্ডে পরিণত করা যায় কিনা সে গবেষণা শুরু হয় পৃথিবী জুড়ে। আবার সেই একই পদ্ধতিতে। 

এই প্রত্যেকটি স্তরে আবেদনের সময় ঠিক যে যে পদ্ধতিতে ট্রায়ালটি হবার কথা ছিল, এবং টক্সিসিটি টেস্ট বা ক্যান্সারে কাজ করছে কিনা দেখার জন্য যা যা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখার কথা ছিল, রোগীর ব্লাড, ইউরিন, টিউমার বা অন্য কোনো অংশ থেকে-তা একেবারে ঠিকঠাক প্রটোকল মেপে করা হয়েছে কিনা তার রিপোর্ট জমা দিতে হয়। ধরা যাক, আপনি আবেদনে লিখেছেন,  ইনজেক্ট করার আধঘন্টা পর রোগীর দেহ থেকে রক্ত নিয়ে দেখবেন তাতে কতটা কম্পাউন্ড আছে এবং রক্ত কণিকার স্বাভাবিক পরিমাণের কতটা হেরফের হচ্ছে। সেই অনুসারে আপনার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। এখন আপনার কাজ করতে কিছু দেরি হতেই পারে। বিভিন্ন কারণে রক্ত সংগ্রহ করতে দেরি হতে পারে একটু আধটু। আপনাকে প্রতিটি পেশেন্টের প্রতিবার রক্ত সংগ্রহের সময় (ইনজেকশনের সময় থেকে) লিখে রাখতে হবে এবং তা সাবমিট করতে হবে। আপনার আবেদনে কতটা পর্যন্ত দেরি মেনে নেওয়া যেতে পারে তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। তার এদিক ওদিক হলে সেই sample collection এ deviation হয়েছে সেই উল্লেখ করতে হবে রিপোর্ট জমা দেবার সময়। এবার মনে করুন, খুব বেশিবার এই deviation মানে কিন্তু আপনার ট্রায়ালে রোগীর সংখ্যা কমছে সুতরাং ট্রায়ালের মান কমছে। বেশি কমলে বাতিলও হয়ে যেতে পারে। তখন আরো আরো বেশি সময় লাগবে।

এই approval পেতে বহু বছর লেগে যায় অনেকসময়ই। যাই হোক, এই approval পেলে তবেই কোনো একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এই কম্পাউন্ডের বাজারীকরণের দায়িত্ব পায়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পেটেন্ট পেলে কোম্পানির সাথে সাথে গবেষক (বা গবেষকরা), রিসার্চ ইনস্টিটিউট সকলেই দাবিদার। এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার তো বটেই। এই পর্যায়ে আমরা কম্পাউন্ডটিকে আমরা 'ওষুধ' বলতে পারি। এখনো একটা কাজ বাকি আছে।  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেটি হলো, Post Marketing Surveillance Trials। অনেকসময়, এটিকে Phase-IV trial ও বলা হয়। কম্পাউন্ডটিকে 'ওষুধ' হিসেবে প্রেসক্রিপশনে আসার পারমিশন পাবার পর FDA এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি দুজনেরই উৎসাহে এই সার্ভিলেন্স চলে। এর কারণ বিবিধ। এক, এই নতুন ওষুধটি ওই ধরণের পুরোনো চলতি ওষুধগুলির তুলনায় ভাল না খারাপ কাজ করছে, দুই, ওষুধটি নিয়মিত ব্যবহার করলে রোগীর long term কোনো সাইড এফেক্ট দেখা দিচ্ছে কিনা বা তার quality of life বজায় থাকছে কিনা, তিন, ওষুধটির যা অর্থমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং যা উপকার পাওয়া যাচ্ছে সেটি তূল্যমূল্য কিনা (cost effectiveness)। ইত্যাদি ইত্যাদি। এর কোনো একটিতে গন্ডগোল হলেই ওষুধটির ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয় সাময়িক ভাবে।  

এই হলো সংক্ষেপে ওষুধ আবিষ্কারের গল্প। এত মহাভারত লেখার পরও কিন্তু কিছুমাত্র সাইড-এফেক্টের খবর এলেই ওষুধটিকে বাজার থেকে আবার গবেষণাগারে ফেরত যেতে হয়। এ ঘটনা হামেশাই হয়। আর সেজন্য গবেষকরা মানসিকভাবে প্রস্তুতই থাকেন। আগেই তো বলেছি- Failure আমাদের অভ্যাস, success আমাদের rare gift. সুতরাং এবার কি বোঝাতে পারলাম যে, গবেষণাগারে প্রাপ্ত কোনো এন্টিক্যান্সার কম্পাউন্ডের খোঁজ পেলে খবরের কাগজে অমন দুম করে "ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কার" লিখে দেওয়া যায় না?

এই সিরিজ লিখতে শুরু করার একটা কারণ ছিল, এরকম কাগুজে খবরগুলো দেখলে যাতে কিছু মানুষ অন্তত বোঝার চেষ্টা করেন যে "ওষুধ আবিষ্কার" এর হেডিং এর তলায় কি লেখা আছে সেটি পড়ে  কম্পাউন্ডটি "আবিষ্কার" এর কোন পর্যায়ে আছে সেটি যেন বুঝতে পারেন। আর আরো একটা কথা, যদি আপনি এই ওষুধ আবিষ্কারের পুরো গল্পটি পড়ে থাকেন, তবে এবার নিশ্চয়ই আড্ডা মারতে মারতে কোনো ক্যান্সার গবেষককে "কি করছো এত রিসার্চ করে, ক্যান্সারের ওষুধ তো আর আবিষ্কার করতে পারলে না" এই "নির্দোষ" মজাটি করার আগে একটু ভাববেন। রিসার্চারটি হয়ত শুনে উত্তর না দিয়ে একটু মুচকি হাসবেন। কিন্তু আপনি এখন জানেন যে, সেই কম্পাউন্ডটি ফেল করলে, একা ফেল করে না। রিসার্চারের অন্তত কুড়িটি বছরের কেরিয়ার সাথে নিয়ে ফেল করে।  

অনেক গল্প হলো আজ। পরের দিন আবার অন্য গল্প নিয়ে হাজির হয়ে যাব। জীববিজ্ঞানের অজস্র আকর্ষক গল্পের কোনো একটা নিয়ে গল্প হবে নিশ্চয়ই। আজ আসি তবে। 

ভাল থাকুন সবাই।

অর্পিতা  


Saturday, 2 November 2019

#এই_সপ্তাহের_শেষে-5

#এই_সপ্তাহের_শেষে

৫. ওষুধ আবিষ্কার (পর্ব-৪) 
--------------------------------
এই যে এসে গেছি কলমিশাকের নির্যাস থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ওষুধ বানানো যায় কিনা দেখতে। পূর্ববর্তী পর্বগুলোতে আমরা দেখেছি -একজন বিজ্ঞানী ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে কলমিশাক উপকারি কিনা এই উদ্ভট প্রশ্নের সমাধান করতে কেমন করে গ্রান্ট লিখে ফান্ড জোগাড় করেছেন, লোকজন জোগাড় করেছেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার কোষ জোগাড় করেছেন, তাতে কলমিশাকের নির্যাস থেকে প্রাপ্ত কম্পাউন্ড প্রয়োগ করে ক্যান্সার কোষের বাড়-বাড়ন্ত রোধ হচ্ছে কিনা দেখেছেন। তারপর ইঁদুরে ব্রেস্ট ক্যান্সার তৈরী করে তাতে কম্পাউন্ডগুলি ইনজেক্ট করে সেখানে প্ৰাপ্ত ফলাফল, কোষস্তরে প্রাপ্ত ফলাফলের মতোই আশাব্যাঞ্জক কিনা তা দেখেছেন। অর্থাৎ, in vitro (কোষে) এবং in vivo (প্রাণীতে) দুই স্তরের গবেষণার ফলাফলেই আশাজনক ফল মিলেছে। এই পুরো ব্যাপারটা ঘটতে অন্তত সাত থেকে দশ বছর সময় লেগেছে। এখন এই বিজ্ঞানীর করণীয় কি? এই জায়গা থেকে আজ শুরু করব। আগের পর্বগুলোতে লেখা গবেষণার ধাপগুলো ধরলে আজ আট নম্বর ধাপে আছি আমরা। চলুন এই এত নম্বর ধাপ থেকেই গল্পে ঢুকে পড়া যাক তবে?

৮. তো এখন এই যে এতদিন ধরে দিনরাত এক করে আপনি কোষ এবং প্রাণীতে গবেষণা করে আপনার মনে হলো, কলমিশাক ব্রেস্ট ক্যান্সার উপশম করার জন্য উপকারী হলেও হতে পারে, এই মনে হওয়াটাতে কোনো গলদ রয়ে যাচ্ছে নাতো? মানে আপনি নিজের বিদ্যে বুদ্ধিমত কাজ করে যা ফলাফল পেয়েছেন সেগুলো হয়ত ঠিকঠাকই কিন্তু গবেষণার এমন একটা দিক হয়ত আপনার নজর এড়িয়ে গেছে যাতে আরো কিছু প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে আপনার সিদ্ধান্তে। যেমন ধরুন, এই যে আমি বার বার বলছি ব্রেস্ট ক্যান্সার 'রোধ' বা ব্রেস্ট ক্যান্সার 'উপশম' এই দুটি কথা কিন্তু এক নয়। আপনার কম্পাউন্ডটি ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোন অবস্থায় কার্যকরী? কম্পাউন্ডটি আগে প্রয়োগ করলে পরে ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে বাধা দেয়? নাকি ব্রেস্ট ক্যান্সার দেহে বাসা বাঁধার পর কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করলে ব্রেস্ট ক্যান্সারকে বাড়তে বাধা দেয়? প্রথমটি ঠিক হলে বলা যেতে পারে কম্পাউন্ডটি ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধক। কিন্তু সেক্ষেত্রে আরো একটা প্রশ্ন আছে, তাহলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে বসে আছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে তাহলে এই কম্পাউন্ডটি কার্যকরী হবে কি? আর দ্বিতীয়টি ঠিক হলে বলা যেতে পারে কম্পাউন্ডটি ব্রেস্ট ক্যান্সার উপশমে কাজ করে। এখানেও প্রশ্ন আছে। এক, সেক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোন স্তরে কম্পাউন্ডটি কার্যকরী? প্রথম অবস্থায়, যখন ক্যান্সারের কোষগুলি স্তনগ্রন্থির চৌহদ্দি পার করে এদিক ওদিক উপনিবেশ তৈরী করতে বেড়িয়ে পড়েনি, জন্মস্থানেই (primary tumor site, প্রাইমারি টিউমার সাইট) বেড়ে চলেছে, তখন? নাকি তারা দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে পড়া (Metastasis, মেটাস্টাসিস)-র পরেও এই কম্পাউন্ড কাজ করতে পারে? এই ধরণের আরো অনেক বৃহৎ প্রশ্ন অথবা আপনার পরীক্ষা পদ্ধতি সংক্রান্ত খুঁটিনাটি প্রশ্ন যদি আপনার চোখ এড়িয়ে গিয়ে থাকে তবে আপনার প্রাপ্ত ফলাফলের কিন্তু অনেক ফাঁক থেকে যাবে। সুতরাং আপনার রিসার্চ থেকে আপনি যা সিদ্ধান্ত করছেন তার একটি সুচারু, সুচিন্তিত, বৈজ্ঞানিক কোয়ালিটি কন্ট্রোল মেথড থাকা দরকার। যাতে সে  সে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী ক্ষেত্রে আরো যা গবেষণা হবে কম্পাউন্ডটিকে মানবদেহে প্রয়োগ করা যায় কিনা দেখতে তার ভিত্তিটিই নড়বড়ে না হয়। তা এই কোয়ালিটি কন্ট্রোল কি করে করা হয়? সেই গল্পই এখন বলব।

আপনাকে আপনার গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল সমস্ত বিজ্ঞানীমহলে প্রকাশ করতে হবে। যাতে আপনার গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা আপনার কাজের পদ্ধতি, ফলাফল এবং তা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করে কোথাও ফাঁক থেকে থাকলে বা অন্য কোনো একটি দিক যা আপনার মাথাতেই আসেনি সে সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করবেন। তখন আপনি সেই ফাঁক মেরামত করে আপনার গবেষণালব্ধ ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। তা এই বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের আপনি পাবেন কোথায়? আপনার গবেষণার ফলাফল কাগজে লিখে তাঁদের দোরে দোরে  ঘুরে তাঁদের পড়িয়ে বেড়াবেন না নিশ্চয়ই। তাহলে?

আপনাকে যেটা করতে হবে তার প্রথম ধাপ হলো, বিভিন্ন বিশেষ বিশেষ বিষয় নিয়ে সারা পৃথিবীতে নানান বৈজ্ঞানিক সম্মেলন হয়। আপনার কাজের বিষয়ের সাথে মিল আছে এমন একটি নির্ভরযোগ্য সম্মেলন খুঁজে নিয়ে সেখানে আপনাকে যোগদান করতে হবে। কি করে করবেন? সেখানে গেলেই তো আর আপনাকে আপনার কাজ নিয়ে আলোচনা করতে কেউ দেবে না। আপনাকে আপনার কাজের একটি ছোট্ট সারমর্ম (এই ধরুন তিনশো থেকে পাঁচশো শব্দের মধ্যে) লিখে সম্মেলনের বহু আগে জমা দিতে হবে। সম্মেলনের রিভিউ বোর্ড আপনার কাজের মান, গুরুত্ব বুঝে আপনাকে সুযোগ দেবে আপনার কাজ সম্পর্কে সেখানে বলার। দুভাবে বলতে পারেন আপনি। এক, আপনাকে পনের কুড়ি মিনিট সময় দেওয়া হবে তার মধ্যে স্টেজে উঠে আপনাকে সংক্ষেপে বলতে হবে (Oral presentation)। তারপর সেখানে উপস্থিত সমস্ত বিজ্ঞানী বা ছাত্ররা যে কেউ আপনাকে প্রশ্ন করে বা মতামত দিয়ে আপনার কাজের ঠিক ভুল সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করতে পারে। আর দুই, আপনাকে স্টেজে উঠে পনের মিনিটে বলতে হলো না। তার জায়গায় আপনি আপনার কাজের যাবতীয় তথ্য একটি বড় কাগজে পোষ্টার আকারে প্রিন্ট করে নিয়ে সেখানে গেলেন তারপর পোষ্টার প্রেসেন্টেশনের নির্দিষ্ট দিনে আরো অনেকের সাথে আপনার জন্য নির্দিষ্ট পোষ্টার বোর্ডে আপনার পোষ্টার লাগিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন। আপনার কাজের হেডিং দেখেই আপনার কাজের বিষয়ের মানুষজন আপনার পোষ্টারের কাছে আসবেন এবং আবার সেই একই পদ্ধতিতে আপনাকে প্রশ্ন করে, ভুল ধরিয়ে দিয়ে বা আরো কার্যকরী কিছু উপদেশ দিয়ে আপনার কাজের মূল্যায়ন করবেন। খুব ভাল কাজ করলে এইসমস্ত ন্যাশন্যাল বা ইন্টারন্যাশন্যাল কনফারেন্সগুলোয় আপনি বেস্ট পোষ্টার বা বেস্ট ওরাল প্রেসেন্টেশন এর পুরস্কারও পেয়ে যেতে পারেন। তবে সেসব আমাদের মতন ছোটমানুষদের জন্য। বড়দের এইসব পুরস্কার পাওয়া বা না পাওয়ায় কিছু যায় আসে না। তাই তারা এসব থেকে বাদই থাকেন।

তো আপনি এই ধরণের সম্মেলন থেকে আপনার কাজের একটা প্রাথমিক মূল্যায়ন পেলেন। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। আরও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মূল্যায়ন এবং পরিমার্জনের পর এই কাজের একটা পাকাপোক্ত দলিল থাকা দরকার। নইলে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা বুঝবেন কি করে যে কলমিশাক থেকে প্রাপ্ত কম্পাউন্ডটি ভবিষ্যতে ব্রেষ্ট ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ভাবা গেলেও যেতে পারে? আপনার মত অন্যকেউ আবার প্রথম থেকে কাজটি শুরু করবেন। তাহলে গবেষণা এগোবে কি করে? সেই তো একই জিনিসের চক্রবৎ আবর্তন চলবে। আরো একটা কথা, আপনিই যে এই কাজটি প্রথম শুরু করেছেন সে বিষয়েও এই দলিলটি সাক্ষ্য দেবে। পরবর্তী ক্ষেত্রে আপনার কাজের ওপর ভিত্তি করে এই বিষয়ে যত কাজ হবে তার জন্য আপনাকে অর্থাৎ এই দলিলটিকে উল্লেখ করতে হবে ভবিষ্যৎ গবেষকদের। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই দলিলটি আপনার কাজের জন্য কতখানি দরকারি? এটি না থাকলে আপনি যে কাজটি করেছেন এবং তার থেকে যে ফলাফল পেয়েছেন তার কোনো প্রমান নেই। সুতরাং কোষ এবং প্রাণীদেহে গবেষণার পর, প্রাথমিক মূল্যায়নপর্ব পেরিয়ে আপনার পরবর্তী কর্তব্য এই দলিলটি প্রকাশ করা। অবশ্য কোষস্তরে গবেষণার পরেও এই সম্মেলনে বা দলিলে আপনার কাজ প্রকাশ করা যেতে পারে। তবে প্রাণিদেহেও একই ফল মিলেছে এই প্রমাণ দেখাতে পারলে আপনার দাবির জোর বাড়ে। কারণ প্রাণীদেহ এড়িয়ে আপনি কোনো ভাবেই আপনার কম্পাউন্ডটি মানবদেহে প্রয়োগ করতে পারবেন না। এই যে 'দলিল', 'দলিল' বলছি তখন থেকে, এটি কি ওরকম স্ট্যাম্প পেপারে তৈরী করা দলিল নাকি? মোটেও না। তবে কি? বলছি।

দলিল বলতে 'অরিজিনাল রিসার্চ আর্টিকেল'। ডাকনামে আমরা বলব 'পেপার'। ব্যাপারটা হলো, আপনাকে একটি লেখা লিখতে হবে যাতে থাকবে আপনি কাজটি কেন শুরু করেছেন, অর্থাৎ কাজটির গুরুত্ব। কাজটির ঠিক কোন অংশটি আপনি এই আর্টিকলে বলবার চেষ্টা করছেন, সে সম্পর্কে আগে কি কি তথ্য পাওয়া যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। মোটকথা বৈজ্ঞানিক গৌরচন্দ্রিকা (Introduction)। তারপর আপনি ঠিক কি করে পুরো কাজের প্রতিটা স্টেপ করেছেন সেটি বলতে হবে (Materials and methods)। সেটি এতটাই গুছিয়ে বলতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আপনার ওই পেপার থেকে নতুন কেউ আপনার কাজটি পুনরায় করে ফেলতে চাইলে কোনো অসুবিধা ছাড়াই একইরকম ফলাফল পায়। তারপর লিখতে হবে আপনি আপনার গবেষণায় যা ফলাফল পেয়েছেন সবটা। সমস্ত তথ্য গ্রাফ বা ছবির আকারে সাজিয়ে স্টাটিস্টিক্যাল আনালিসিসসহ এমন ভাবে লিখতে হবে যে কোথাও কোনো ফাঁক না থাকে (Results)। এর সাথে লিখতে হবে এই ফলাফলের গুরুত্ব কি? অর্থাৎ এই গবেষণা করে এবং তাতে এই ফলাফল পেয়ে হাতি ঘোড়া কি লাভ হলো (Discussion)? অর্থাৎ একটি সম্পূর্ণ গল্প আপনাকে বলতে হবে। তারপর? এইবারই তো আসল ঘটনা!

আপনাকে এই পেপারটি বৈজ্ঞানিক পত্রিকা (Journal)-এ পাঠাতে হবে। অজস্র জার্নাল আছে। কোথায় পাঠাবেন? যে জার্নালটি বা জার্নালগুলি আপনার কাজের ধরণের গবেষণাপত্র প্রকাশ করে তাদের কাছে পাঠাবেন। তবেই তো আপনার কাজ বুঝবে এরকম লোকজনকে পাবেন আপনার কাজের মূল্যায়ন করার জন্য। যদি আপনার পেপারটি সেখানে তাঁরা প্রকাশ করেন, তবে আপনার কাজটি ওই ধরণের কাজে উৎসাহী সমস্ত বৈজ্ঞানিকদের কাছে উন্মুক্ত হয়ে গেল। এবং তাঁরা তখন আপনার কাজ সম্পর্কে জেনে আপনার কাজের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের প্রয়োজন এবং প্রজ্ঞামত কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এবং আপনিও আপনার কাজের একটি মান্যতা পাবেন। এখন প্রশ্ন হলো, এই যে আমি বললাম, "যদি আপনার পেপারটি সেখানে তাঁরা প্রকাশ করেন", এই যদি কথাটি মারাত্মক। একটি পেপার পাবলিশ করতে প্রথম আবেদনের দিন থেকে দুই বছরও লেগে যেতে পারে। কেন? কারণ আপনি পাঠালেন আর তারা লুফে নিলো তা তো নয়। যত উঁচুদরের জার্নাল, তত উঁচু তাদের প্রকাশনার মান। এমন কিছু জার্নাল আছে যারা এমন পেপারই ছাপে যার থেকে পরে সারা বিশ্বে ওই সংক্রান্ত চিকিৎসায় সম্পূর্ণ বিপ্লব এসে গেছে। সর্বোচ্চ স্তরের জার্নালগুলোর এডিটর বোর্ডে থাকেন বহু বহু বিজ্ঞানী যাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী এবং সেই বিষয় সংক্রান্ত গবেষনায় রথী-মহারথী। এরকম পাবলিশিং হাউসগুলির দু একটির নাম বলি। যেমন নেচার পাবলিসিং হাউস। যাদের রয়েছে খোদ নেচার জার্নাল, নেচার মেডিসিন, নেচার সেল বায়োলজি, নেচার কমিউনিকেশন, নেচার বায়োটেকনোলজি। আরো আরো অনেককিছু। তারপর ধরুন Elsevier, cell press আরো নানান ছোট বড় পাবলিসিং হাউস আছে। এইসব জার্নালের রিভিউ প্রসেস সর্বোচ্চমানের তাই এখানে প্রকাশিত বিজ্ঞানও সর্বোচ্চমানের।   

যাই হোক, জার্নালের মান অনুসারে সেখানে আপনার পেপার রিভিউ হবে। রিভিউ করবেন সেই সংক্রান্ত বিষয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা। তারপর হয়ত তাঁরা বললেন, বাপুহে, কাজ তো বুঝলাম, কলমিশাকের নির্যাস থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার কমছে। কিন্তু এর সাইড এফেক্ট নিয়ে কিছু বললে না যে? এই বিষয়টি কি ভেবে দেখেছো? দেহের সব কোষ তো আর ক্যান্সার কোষ নয়।  বেশিরভাগই নরমাল কোষ। এখন এই নরমাল কোষগুলি বেঁচেবর্তে না থাকলে যে সমূহ বিপদ। সাধারণ কার্যকলাপই বন্ধ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে কিছু না জানলে তো তোমার এই কম্পাউন্ডটিকে সামনে এগিয়ে যেতে দেওয়া যায়না। দেখো দিকি নরমাল কোষে তোমার এই কম্পাউন্ডটি কেমন কাজ করে। নইলে বাপু আমরা ছাপতে পারছি না তোমার কাজ। আপনি তখন অন্য জার্নালে পাঠিয়ে দেখতে পারেন তারা বিষয়টি এড়িয়ে ছেপে দেয় কিনা। কিন্তু সেটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বেশ কিছু ভুলভাল রিভিউ এর উদাহরণ থাকলেও সাধারণত রিভিউয়ারদের মতামত মতো কাজ করে আবার সাবমিট করলেই আখেরে কাজের মানটি বাড়ে। আমি নরমাল কোষের উদাহরণ দিলাম কারণ ওটাই মনে এলো এখন তাই। এরকম নানান প্রশ্ন আসতে পারে বা আপনার কাজের পদ্ধতিগত কোনো ভুল বা ফাঁক থাকলেও এই পর্যায়ে সেটি সংশোধন হবে। এই কাজ করে আবার জমা দিলে তার পরেও আরো প্রশ্ন আসতে পারে। এরকম করে যাওয়া আসা করতে করতে যখন আপনার গল্পটির সমস্ত ফাঁক বন্ধ হয়ে একটি সম্পূর্ণ গল্প হয়ে উঠবে তখনই একমাত্র আপনার পেপারটি সেই জার্নালে প্রকাশ পাবে। আবার এত কিছুর পরেও গল্পটি না দাঁড়ালে জার্নাল সেটি প্রকাশ করবে না। সুতরাং সময় তো লাগবেই।

এই পেপার আপনিও পড়তে পারেন কিন্তু। পুরোটা না হলেও কিছুটা তো ওপেন থেকেই থাকে সকলের জন্য। কিভাবে পড়তে পাবেন সে গল্প অন্য একদিন ভাল করে করব। আর তাছাড়া কথাই তো ছিল, unsupervised তথ্য আর authentic তথ্য বুঝব কি করে সে গল্প আমি বলব। সুতরাং অন্য একদিন ভাল করে বলা যাবেখন। 

পেপার পাবলিশ হয়ে গেলেই আপনার দায়িত্ব শেষ তা নয় কিন্তু। এবার এই পেপার সারা পৃথিবীতে সবাইয়ের জন্য খোলা কেবল জার্নাল রিভিউয়ারদের কাছে নয়। এখন কেউ যদি পড়তে গিয়ে বা আপনার কাজ রিপিট করতে গিয়ে কোনো ভুল পায় বা কাজটি রিপিট করতে না পারে তখন কিন্তু আবার আপনার কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠবে। যদি বোঝা যায় আপনি জেনেশুনে কিছু কারচুপি করেছেন আপনার ডেটায় তাহলে তো হল। জার্নালের দপ্তর থেকে আপনাকে নিজের কাজ পুনরায় ব্যাখ্যা করতে বলা হবে এবং আপনার এই গন্ডগোল ইচ্ছাকৃত হলে বহুকাল আগে প্রকাশিত পেপারও জার্নাল বাতিল করে দেবে তো বটেই, তার সাথে সাথে আপনার কেরিয়ারে যে দাগ লাগলো তা ওঠানো মুশকিল। সে আপনি এই বিষয়ে যতবড় হনুই হননা কেন। এরকম বহু বহু উদাহরণ আছে। এবং লজ্জার কথা তার একটা বেশ বড় শতাংশ ভারতীয় বিজ্ঞানী। সুতরাং পেপার লেখার সময় প্রতিটা শব্দ আপনাকে ভেবে লিখতে হবে। যা লিখছেন, ফলাফল থেকে যা দাবি করছেন তার সপক্ষে একশ শতাংশ তথ্যপ্রমাণ আপনি পেপারে দিচ্ছেন তো? এবং রেজাল্ট থেকে বানানো সমস্ত ছবি, গ্রাফ ইত্যাদি যা দিয়ে আপনি আপনার দাবিটি করছেন তা একশ শতাংশ সঠিক তো?

এই ট্রেনিংটি আমাদের সর্বাগ্রে নিতে হয় যে, যা বার বার করে দেখছি তা ঠিক দেখছি কিনা। যদি প্রতিবার সমস্ত পদ্ধতি ঠিক হওয়া সত্ত্বেও এমন কিছু দেখি, যা আমাদের হাইপোথেসিস এর সাথে মিলছে না তখন আমাদের আরো গভীর ভাবে পড়াশুনা করে ভাবনাটাকেই অন্য পথে নিয়ে যেতে হয় বায়োলজিটা বোঝার জন্য। ফলাফল পরিবর্তন করা যায় না কোনোভাবেই। তাতে সময় লাগে, আরো বেশ কিছু নতুন এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে হয়। কিন্তু এটাই পথ। অন্য কোনো উপায় নেই। জীববিজ্ঞানে যা সত্যি, সেটিই তো আপনি দেখবেন। আপনি যেমন ভেবেছিলেন তেমন তেমন উপায়ে তো আর আমাদের শরীর কাজ করবে না, তাই না? আর সত্যিটা হলো, ভাবনা অনুসারে রেজাল্ট না আসাটাই বেশি ঘটে। যা ভেবে এক্সপেরিমেন্ট শুরু করেছিলেন ঠিক তেমন তেমনই মিলে গেলে পেপারটা যেন কিরকম আলুনি হয়ে যায়। তাই বোধহয় আমরা বলি, life is 90% failure, enjoy the rest 10% to the fullest.

হ্যাঁ যা বলছিলাম, তো রিভিউ পর্ব পেরিয়ে আপনার পেপার পাবলিশ হলো বৈজ্ঞানিক জার্নালে। যত বড় জার্নাল তার গুরুত্ব তত বেশি। এবার এই কাজ থেকে আরো নানান রকম কাজ শুরু করবেন সারা পৃথিবী জুড়ে এই বিষয়ে উৎসাহী বিজ্ঞানীরা। যেমন, অন্য ধরণের ব্রেস্ট ক্যান্সারে একইরকম তথ্য মিলছে কিনা? অনেকদিন ধরে এই কম্পাউন্ডটি ব্যবহার করলে ইঁদুরে কোনো রকম সাইড এফেক্ট দেখা যাচ্ছে কিনা? ক্যান্সারগ্রস্ত ইঁদুরদের দেহে এটি প্রয়োগের পর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, স্নায়ু, মস্তিস্ক কিরকম ব্যবহার করছে? ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঠিক কোন অবস্থায় এই কম্পাউন্ডটি সবচাইতে বেশি কার্যকরী? আর অন্য কোনো কম্পাউন্ড বা অন্য প্রচলিত ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসার সাথে গাঁটছড়া বাঁধলে কি কম্পাউন্ডটি আরো ভালো কাজ করতে পারে? এইসব সমস্ত দিক থেকে সমস্ত প্রশ্নের আণবিক স্তরে গবেষণা চলবে। অর্থাৎ সারা পৃথিবীর এই বিষয়ে কাজ করতে উৎসাহী বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দিক থেকে গবেষণা করে, তাঁদের নিজ নিজ কাজের পরিসর অনুসারে একই পদ্ধতিতে গবেষণা চালিয়ে প্রমাণ করবেন অন্তত ব্রেস্ট ক্যান্সারগ্রস্ত ইঁদুরে কলমিশাকের নির্যাস থেকে প্রাপ্ত এই কম্পাউন্ডটি বেশ উৎসাহজনক উপকার দেখাচ্ছে কোনো সাইড এফেক্ট ছাড়াই।

এতক্ষনে সময় এসেছে এটিকে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে দেখার কথা ভাবার। এতক্ষণে আপনার কাজ শুরু থেকে অন্তত পনের আর প্রথম এই বিষয়ে পেপার পাবলিশ করা থেকে অন্তত দশ বছর কেটে গেছে।

এবার মানুষের দেহে কম্পাউন্ডটি প্রয়োগ করা হবে। এই পর্যায়টি হলো "ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল" (Clinical trial)। এখানেও সেই একই কথা, ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগী দেখলাম আর পটাপট কম্পাউন্ডটি ইঞ্জেক্ট করে দিলাম এমন মগের মুলুকের ব্যাপার এটা নয়। তার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আইন রয়েছে। সে এক বিশাল কর্মকান্ড।  সে গল্প বরং পরের দিন বলি কেমন? তাড়াহুড়ো না করে বেশ গুছিয়ে গল্প হবে তবে পরের দিন। আজ তবে আসি।

ভাল থাকুন সব্বাই।
অর্পিতা