Sunday, 14 December 2014

আজকে স্নান? পাগল?



সেই গল্পটা মনে আছে তো? ওই যে প্রচন্ড কিপ্টে একজন লোক কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, "আপনি স্নান করেন না কেন?" তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন, 'ধরো, তোমায় দুটো দড়ি দেওয়া হলো। একটা তুমি রোজ কূয়ো-র জলে ডোবাবে আর তুলবে। আর অন্যটা বাড়িতে শুকনো জায়গায় রেখে দেবে। কোনটা বেশিদিন টিকবে বলে তোমার মনে হয়? আমাদের শরীরটাও হলো গিয়ে ওরকম দড়ির মতো। যত জল লাগবে তত তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে। তার পর ধরো না কেন স্নানের সময় তেল, সাবান, গামছা এসবের খরচখরচা তো আছেই।' গল্পতে এই কিপ্টে ভদ্রলোক যতই হাসির খোরাক হন না কেন আমি কিন্তু মাঝে মাঝে এই লোকটির এই কথাটি বেদবাক্যি বলে মনে করি। বিশেষতঃ এই শীতকালে। না দাঁত বার করার মতন কিছু হয়নি। আজকের মতন এরকম একটা দিনে চান ফান করার মতন বিতিকিচ্ছিরি কাজে কেউ সময় নষ্ট করে? এ কি আর আমার সেই ছোটবেলার শীতকালের স্নান? চরচড়ে শীতের রোদে অনেকক্ষণ ধরে সর্ষের তেল মেখে রোদে রাখা গরম জলের সাথে আরো খানিক গরম জল মিশিয়ে উঠোনেই রোদের মধ্যে ঝুপঝাপ স্নান সেরে নেওয়া? একে শীতকাল, তায় আবার আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, সঙ্গে তেহাই হিসেবে আজ আবার রবিবার। ত্রহ্যস্পর্শ। সকাল দশটার সময় পর্দার ফাঁক দিয়ে আলো আসছে কিনা দেখে নিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিছানায় উঠে বসতে হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে কতগুলো শপথ করে ফেলতে হয়। যেমন, আজ আমায় কেটে ফেললেও আমি ঘর থেকে বেরোব না। তারপর কিছু রান্নাবান্না করব না, ফ্রিজ হাঁটকে যা বেরোবে তাই দিয়ে কাজ চালাব। কাজ না চললে দোকানে ফোন করে কাজ চালাবার ব্যবস্থা করব। অত্যন্ত জাগতিক ও জৈবিক প্রয়োজন ছাড়া সারাদিন লেপের ওম ত্যাগ করবনা। বিছানায় বসেই সিনেমা দেখা, গপ্পের বই পড়া, গান শোনা, ইন্টারনেট এ দেশের দশের খবর নেওয়া, হাচিকোকে ভ্যাংচানো, হাচিকোর ঘুমের সময় বিটকেল আওয়াজ করে ওকে চমকে ঘুম ভাঙিয়ে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম সারব। আর মঝে মাঝেই একটু করে ঘুমিয়ে নেব। আর এর মধ্যে স্নান? পাগল? আজকে স্নান মানে তো অপরাধ। এইসব শপথ টপথ নিতে নিতেই দশটা থেকে অন্ততঃ এগারোটা বাজবে। তারপর জনগনের ঠেলায় ঝুঁটি টুঁটি সামলে আয়নার সামনে নিজেকে মুখ ভ্যাংচাতে-ভ্যাংচাতে দাঁত মাজতে হবে। তারপর বারোটার সময় ফ্রিজে রাখা চিকেন আর ভাত খেয়ে সারাদিনের জন্য আবার লেপের তলায় চলে যেতে হবে। 

বাপরে বাপ। কত্ত কাজ। এসব কাজ সেরে, হাচিকোকে খুঁচিয়ে শেষে মনে প্রবল বিরহ পেল। 'এএএই শীইইতে-মেঘলা দিইইনে-বাইরেএএএ  থাআআআকে নাআতও  মওওন। কবে যাবওও, কাছে পাবওও, ওগো লেপের নিমওওন্ত্রণ।'-গাইতে গাইতে লেপে ঢুকতে যাব, সেই মাহেন্দ্রক্ষণে জনগণ আমায় খোঁচালো। "কিরে তুই সত্যি স্নান করবি না?" 
করুণার দৃষ্টিতে তাকালাম। মনে মনে বললাম "ভগবান, এই অর্বাচীনকে তুমি ক্ষমা করে দিও ঠাকুর। এ জানে না এ নিজের কি ক্ষতি করছে এই শীতে রোজ রোজ স্নান করে। ভিজে দড়ি আর শুকনো দড়ির গল্পটা একে মনে করিয়ে দিও ঠাকুর।" কিন্তু এসব কথা তো আর মুখে বলা যাবে না। সুতরাং বললাম, "আজকে ছেড়ে দে। কাল ঠিক করব। কাল রোদ উঠবে, আমি ওয়েদার ফোরকাস্ট এ দেখে নিয়েছি (এখন দেখাচ্ছে কালও নাকি মেঘ বৃষ্টি হবে। হায় হায়!!!!! কাল আর ছাড়ান পাবোনি গো ঠাকুর। কাল গায়ে জল ঢালতেই হবে। নইলে জনগণ আমার গায়ে ঠান্ডা জলই না ঢেলে দেয়! নিজে করলে তাও গরম জল পাব। কি যন্ত্রণা!!)।"
মনটা সেই আগামীকালের সমাগত দুঃখে এত ভারী হয়ে গেল কি বলব। এরকমও মনে হতে লাগলো কেউ আমার বন্ধু নয়। আপনজন? ছোঃ !! আপনজন কি এই শীতে-মেঘলায় গায়ে জল ঢালার পরামর্শ দেয়? রাগে-দুঃখে বারান্দায় চলে গেলুম। গিয়েই বাপ বাপ বলে আবার ঘরে ঢুকে আসতে হলো যদিও। কি হওয়া কি বলব! তার মধ্যে ঝির ঝির বৃষ্টি। বারান্দায় রাখা একমেঅদ্বিতীয়ম কারিপাতার গাছটা পর্যন্ত এই হাওয়ায়-ঠান্ডায়-বৃষ্টিতে দিব্যি স্নান টান করে চকচকে ভেজা সবুজ পাতা নাড়িয়ে আমায় ভ্যাংচাচ্ছে। 



দেখে শুনে মনে মনে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে আর কাঁপতে কাঁপতে আরো দীর্ঘ্য দীর্ঘ্যশ্বাস ফেলে ঘরে ঢুকে এলাম। গুটি গুটি লেপের তলায় ঢুকে আপাতত প্রার্থনায় বসব ভাবছি। "হে ভগবান, কিছু একটা করো, কাল যেন রোদ ওঠে, নইলে যেন ঠিক স্নানের সময়টাতে অন্ততঃ ইনস্টিটিউট এর জলের সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় ঠাকুর।"


2 comments:

  1. ভগবান, এই
    অর্বাচীনকে তুমি ক্ষমা করে দিও ঠাকুর, আজ আমিও স্নান করবো না :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রচন্ড ভালো ব্যাপার। এই তো আমি একজন সমর্থক পেয়েছি। ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।

      Delete