Sunday, 18 August 2019

রবিবারের সকালের মত

গত রবিবার বেশ মেঘ ছিল আকাশে। বৃষ্টিও ঝরছিল অঝোরে। আজ আবার এক রবিবার আমি জানলার দিকে পিঠ ফিরিয়ে দেওয়ালে থেকে দিয়ে বসে ল্যাপটপ খুলে টাইপ করছি অনেকদিন বাদে। ইয়ারফোন দিয়ে মাথায় গলে গলে পড়ছে রাগ দূর্গা। বাইরে ঝকঝকে রোদ্দুর। লিখতে ইচ্ছে করছে কিছু। কিন্তু কি লিখব? লেখার গল্প লিখতে ইচ্ছে করে।  কিন্তু সেসব অপ্রাসঙ্গিক আর ব্যক্তিগত। তাতে নতুন কোনো তথ্য নেই, আসলে নতুন কিচ্ছুটি নেই। আদ্যন্ত সাধারণীর রোজনামচা। আসলে কিছু লিখব বলে বাকি সব কিছু সরিয়ে গুছিয়ে বসা অনেকদিন পর। সময়ের দোহাই নয়, প্রশ্নটা ইচ্ছে আর প্রয়োজনের। এতদিন টুকরো টাকরা যা লেখার চেষ্টা করেছি সেসব আদতে লেখা নয়। দুয়েক কলম মনের কথা। ইচ্ছে করে গুছিয়ে সুন্দর কিছু লিখতে। কিন্তু আমি নিয়মানুবর্তী লিখিয়ে নই যে প্রতিদিন খাতা কলম খুলে নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে বসলেই কিছু না কিছু লাইন কলম বা কীবোর্ড বেয়ে বেরিয়ে আসবে। আর অমনি সেই বস্তুটি আগ্রহ নিয়ে অন্য আর একজন পড়বেন। আমি আসলে আর পাঁচজন মধ্যতিরিশের একজন সাধারণ মানুষ। যার বাকি অন্যদের মতন ছোটবেলায় ফিরে যাবার উপায় নেই। তাই সে মনখারাপ হলে ছোটবেলায় আশ্রয় খোঁজে। তার প্রতিদিনের এই অনন্ত চেষ্টা থেকে বেরিয়ে আসতে অচেনা মানুষদের জীবন থেকে গল্প খোঁজার চেষ্টা করে। তাদের লড়াই থেকে লড়াই করার রসদ জোটায়। আর পাঁচজনার মতোই। সকলেই কোনো না কোনো ভাবে এসবের মধ্যে দিয়ে যান আর সেসব দিয়ে কেউ মনে মনে মহাকাব্য লেখেন আর বিষ্মিত হন জীবনের অদ্ভুত সব প্লট বাস্তবে চাক্ষুষ করে। কেউ কেউ রং তুলি দিয়ে সেসব অভিজ্ঞতা ঢেলে দেয় ক্যানভাসে। কেউ সে জীবন জোড়া অভিজ্ঞতা ঢেলে দেন চলচ্চিত্র বানিয়ে। কেউ কেউ আবার যখন গান করেন বা নাচ, মনে হয়, সুর বা ছন্দ নয় তাঁর পুরো জীবনের শেখা বা অনুধাবন করা সমস্তটুকু তিনি ঢেলে দিচ্ছেন সেই সৃষ্টিতে। সেটি তখন আর কেবল সুর বা ছন্দ নয়, কোনো শ্রোতা বা দর্শকের প্রশংসাবাক্যের আশা বা দাবি নেই সেখানে। সেসব দেখলেই বোঝা যায়। জুড়ে নেওয়া যায় সেসব অনুভব নিজের অনুভূতির সাথে। আর লেখকরা সেই দিয়ে অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে বিরাট এক ছবি এঁকে চলেন। 

তবে মনে হয় প্রতিটি মানুষেরই জীবনে একটি মুখ্য বাক্যই বলার থাকে। সেটিই তার জীবনের প্রধান মন্ত্র। সেটির চারপাশেই আবর্তিত হয় তাঁর পুরো জীবন। সেই যে একটি সর্বদেশের সার্বজনীন প্রাচীন একটি ধারণা আছে না, যে, আমাদের প্রতিটি জন্মে কিছু না কিছু একটিমাত্র মূল মন্ত্র শেখা এবং জীবনে সেটি প্রয়োগ করার জন্যই আমরা সেই বারের জন্য জন্ম নিই। পুরো জন্মেই সেই বিষয়টির আশেপাশেই তাঁর আবর্তন ঘটে। জীবনের পজেটিভ বা নেগেটিভ অভিজ্ঞতা দিয়ে তাঁর সেই শিক্ষা পূরণ হয়। যাতে তিনি সেটি নিশ্চিত ভাবে জীবনের সাথে মিশিয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন পরবর্তী লেশনের দিকে। কিন্তু সেই জন্মের জন্য বোধহয় তিনি এই একটিমাত্র বাক্যটি কেন্দ্রে রেখেই নানান সৃষ্টির বৃত্ত এঁকে চলেন। বেশ কিছু সময় পরে তাইই বোধহয় সেই স্রষ্টার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যেই একটা মূলগত মিল আমরা প্রত্যক্ষ করি। সিনেমার ক্ষেত্রে এই আরো বেশি স্পষ্ট। কারণ তার চলমানতার কারণেই চলচ্চিত্রের তাৎক্ষণিক প্রভাব আমাদের মধ্যে বেশী। তাই একই পরিবেশক বা পরিচালকের দুই বা ততোধিক সৃষ্টির মধ্যেকার মিল এত চট করে চোখে পড়ে। আমাদের সবার জীবনেরই একই উদ্দেশ্য মনে হয়। কেবলমাত্র একটি বাক্য, একটি মন্ত্র শেখা এবং তাকে প্রয়োগ করা। বাক্যটা, মন্ত্রটা কেবল আলাদা আলাদা। তাই প্রত্যেকের জীবনের গল্প আলাদা, প্লট আলাদা। আমাদের কাজ কেবল বোধহয় হতাশা থেকে, সুখ থেকে, দুঃখ থেকে, প্রতীক্ষা থেকে, আনন্দ থেকে, না পাওয়া থেকে, অনেক পাওয়া থেকে, আলো থেকে, অন্ধকার থেকে, সারা জীবনের সমস্ত কিছু থেকে সেই একটি মাত্র বাক্যটিকে খুঁজেপেতে চিনে নেওয়া। তাকে আত্মীকরণ করা। জীবনে প্রয়োগ করা। তবেই আমাদের সাথে হয়ে চলা সমস্ত ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কে আমাদের সমস্ত অভিযোগ একটা উত্তর পাবে। আমাদের অভিযোগ করার আর কিচ্ছুটি বাকি থাকবে না।

লেখার গল্প লিখতে গিয়ে কতগুলি অগোছালো কথা লিখে ফেললাম। এসব হল, নিজের সাথে গল্প করতে বসা। অগোছালো লেখার এই একটি সুবিধা আছে, কোথাও পৌঁছানোর দায় নেই। শেষ করার তাড়া নেই। ধারাবাহিকতার নিয়মানুবর্তিতা নেই। বিষয়ও নেই, পুরোটাই নিজের সাথে প্রলাপ। তাই তর্কের অবকাশও নেই। কেমন এক দায়হীন আত্মকথন। ভেবে দেখেছি, আমার অলস মনের অলস লেখনীর সৃষ্টি তাই এত অগোছালো। রবিবারের সকালের মত। দায়হীন, তাড়াহীন। এই যে দুপুর একটা বেজে গিয়েছে। খাবার দাবারের জোগাড় নেই। ল্যাবের কিছু দায়-যা শনি-রবি বোঝে না। জীবনধারণের সাপ্তাহিক দায়িত্বপালন। সমস্ত কিছুকে সরিয়ে রেখে, কেবল বাংলা ভাষায় টাইপ করার স্বাধীনতা আর সুযোগ এই মুহূর্তে আছে বলে, একটা অদৃশ্য বুদ্বুদের মধ্যে ঢুকে কতগুলি অকিঞ্চিৎকর শব্দ পরপর বসিয়ে যাবার আর সেই সূত্রে নিজের সাথে দুদন্ড সময় কাটাবার মোহে এই এত শব্দের আয়োজন।     

0 comments:

Post a Comment