একটা পিচঢালা রাস্তা, মাঝে মাঝে অবশ্য ওপরের চামড়া উঠে গিয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে এসেছে, চকচকে ছবির মতন রাস্তা সে নয় যদিও, তবুও কাকভোরে কুয়াশা মাখা সে রাস্তায় হেঁটে বড়ো আরাম পেয়েছি। হোকনা সে খানিক ভাঙাচোরা, তবুও তার দুইপাশের জমাট বাঁধা কুয়াশা, আদিগন্ত আধসবুজ-আধহলুদ ধানের ভারে নুয়েপড়া ধানক্ষেত, সে আমার নিজের, বড়ো প্রিয়, বড়ো আরামের। আজও একবুক কষ্ট নিয়ে তার কাছে গেলে সে বুক পেতে দেবে আমার চোখের জল ধারণ এর জন্য। আমি জানি, আজও সে ফিসফিসিয়ে বাম কানে বলে উঠবে , "কেঁদে নে মেয়ে, যতটা পারিস। সব পরাজয় এইখানে ফেলে উঠে দাঁড়া। কি বললি ? ফের পরাজয় এলে? আবার আসিস আমার কাছে। এ কান্নার জল শুকিয়ে যাবে ততদিনে আমার বুক থেকে। ফের ভিজিয়ে দিস নাহয় আমায়, তারপর উঠে দাঁড়াস। আরও একবার এর জন্য। আমি আছি তোদের সকলের জন্য। চিরন্তন।"
আম মুকুলের গন্ধ নিয়েছো কোনোদিন, অমন কুয়াশা ভরা কাকভোরে? আমি নিয়েছি। মহূয়ার গন্ধে জগৎ মাতাল হয় শুনেছি। সে কি আমমুকুলের গন্ধের চেয়েও বেশি নেশার? কিশোরবেলার নেশাধরা দোলাচলে আরো নেশাড়ু হয়ে উঠতে সেই আমমুকুলের গন্ধের কোনো ভূমিকা কি নেই সত্যিই?
নতুন কাটা ধান, কুয়াশার আবছায়া, নেশাধরানো আমমুকুলের গন্ধ, আসন্ন দোলউৎসবের আবীর আর সদ্য কৈশোরের তাজা একটা মন, এই তো বসন্ত। আমার দেখা বসন্ত।
সূর্যাস্তের লালিমা দেখতে শেখায়নি কেউই। শীতের শেষে, বাতাসে যখন হিম ফুরিয়ে যায়নি সেই বছরের মতন,তখন শিরশিরে হাওয়ায়, সদ্যকাটা ধানক্ষেতে বসে সন্ধ্যা নেমে আসা দেখেছি সেই কোন ছোট্টবেলায়। অজান্তেই কখন শিখে গেছি, অস্তগামী সূর্যদেব বিদায় নেন কেবল পরদিন আবার আমায় জাগাবেন বলে। অশরীরী কেউ যেন বুকের মধ্যে বসে শিখিয়ে দিয়ে গেছে, "সে বিদায়বেলায় শান্ত থেকো। কোলাহল সন্ধ্যাসূর্যের জন্য নয়। অনুভব করো তার শেষ কিরণটুকু। শুষে নাও অন্তরে। আসন্ন রাত্রির পাথেয় কর তাকে।" মাঠের শেষে পড়শী গ্রামের গাছপালার আড়ালে চলে যেতেন সূর্যদেব। অপলক আমায় তাঁর কমলা-লাল আভায় আপাদমস্তক অবিচল করে দিয়ে। ফ্রকপরা সেই ছোট্ট আমি সেই তবে থেকেই সূর্যদেব এর বিদায়কালে আর বিদায়সম্ভাষণ টুকুও জানিয়ে উঠতে পারিনি কোনোদিন। সূর্যাস্তের রক্তিমাভা চোখে লাগলেই কেমন করে যেন ঝিমধরা চোখে কেবল তাকিয়ে থেকেছি, থাকি। শান্ত হয়ে আসে ভিতর-বাহির। আশেপাশের সমস্ত কিছু মুছে গিয়ে ভেসে উঠতে থাকে আমার আশৈশব এর সদ্যকাটা ধানক্ষেত, আর আমার কিশোরী চোখে দেখা অস্তগামী সূর্যদেব। যিনি বিদায় নিচ্ছেন কেবল ফিরে এসে আমায় জাগবেন বলে।
কুয়াশা মাখা-পাকা ধানক্ষেতের পাড় আঁকা-ভাঙা রাস্তা, বসন্তের আমমুকুলের গন্ধের নেশা, সন্ধ্যে নামার আগে, দিগন্তছোঁয়া ফাঁকা ধানক্ষেতে বসে সেদিনের মতো লাল-কমলায় সম্মোহিত হয়ে যাওয়া। এই আমার শৈশব-কৈশোর। এ কোনো কাব্য করে বলা কথা নয়, মধ্যাহ্ন সূর্যের মতো সত্যি। সত্যিকারের আমি। এখনকার আমির মূল। যে আজও আমার চোখের জলে বুক পেতে দেয়। মেরুদন্ড সোজা করার শক্তি জোগায়। যার কারণেই আজও সব পরাজয় সরিয়ে রেখে নিজেকে দেখি সম্মোহিতের মতো স্থির কি অপূর্ব এক সৃষ্টির সামনে।
http://ichhekhata.blogspot.com/2017/02/mul.html?m=0
আম মুকুলের গন্ধ নিয়েছো কোনোদিন, অমন কুয়াশা ভরা কাকভোরে? আমি নিয়েছি। মহূয়ার গন্ধে জগৎ মাতাল হয় শুনেছি। সে কি আমমুকুলের গন্ধের চেয়েও বেশি নেশার? কিশোরবেলার নেশাধরা দোলাচলে আরো নেশাড়ু হয়ে উঠতে সেই আমমুকুলের গন্ধের কোনো ভূমিকা কি নেই সত্যিই?
নতুন কাটা ধান, কুয়াশার আবছায়া, নেশাধরানো আমমুকুলের গন্ধ, আসন্ন দোলউৎসবের আবীর আর সদ্য কৈশোরের তাজা একটা মন, এই তো বসন্ত। আমার দেখা বসন্ত।
সূর্যাস্তের লালিমা দেখতে শেখায়নি কেউই। শীতের শেষে, বাতাসে যখন হিম ফুরিয়ে যায়নি সেই বছরের মতন,তখন শিরশিরে হাওয়ায়, সদ্যকাটা ধানক্ষেতে বসে সন্ধ্যা নেমে আসা দেখেছি সেই কোন ছোট্টবেলায়। অজান্তেই কখন শিখে গেছি, অস্তগামী সূর্যদেব বিদায় নেন কেবল পরদিন আবার আমায় জাগাবেন বলে। অশরীরী কেউ যেন বুকের মধ্যে বসে শিখিয়ে দিয়ে গেছে, "সে বিদায়বেলায় শান্ত থেকো। কোলাহল সন্ধ্যাসূর্যের জন্য নয়। অনুভব করো তার শেষ কিরণটুকু। শুষে নাও অন্তরে। আসন্ন রাত্রির পাথেয় কর তাকে।" মাঠের শেষে পড়শী গ্রামের গাছপালার আড়ালে চলে যেতেন সূর্যদেব। অপলক আমায় তাঁর কমলা-লাল আভায় আপাদমস্তক অবিচল করে দিয়ে। ফ্রকপরা সেই ছোট্ট আমি সেই তবে থেকেই সূর্যদেব এর বিদায়কালে আর বিদায়সম্ভাষণ টুকুও জানিয়ে উঠতে পারিনি কোনোদিন। সূর্যাস্তের রক্তিমাভা চোখে লাগলেই কেমন করে যেন ঝিমধরা চোখে কেবল তাকিয়ে থেকেছি, থাকি। শান্ত হয়ে আসে ভিতর-বাহির। আশেপাশের সমস্ত কিছু মুছে গিয়ে ভেসে উঠতে থাকে আমার আশৈশব এর সদ্যকাটা ধানক্ষেত, আর আমার কিশোরী চোখে দেখা অস্তগামী সূর্যদেব। যিনি বিদায় নিচ্ছেন কেবল ফিরে এসে আমায় জাগবেন বলে।
কুয়াশা মাখা-পাকা ধানক্ষেতের পাড় আঁকা-ভাঙা রাস্তা, বসন্তের আমমুকুলের গন্ধের নেশা, সন্ধ্যে নামার আগে, দিগন্তছোঁয়া ফাঁকা ধানক্ষেতে বসে সেদিনের মতো লাল-কমলায় সম্মোহিত হয়ে যাওয়া। এই আমার শৈশব-কৈশোর। এ কোনো কাব্য করে বলা কথা নয়, মধ্যাহ্ন সূর্যের মতো সত্যি। সত্যিকারের আমি। এখনকার আমির মূল। যে আজও আমার চোখের জলে বুক পেতে দেয়। মেরুদন্ড সোজা করার শক্তি জোগায়। যার কারণেই আজও সব পরাজয় সরিয়ে রেখে নিজেকে দেখি সম্মোহিতের মতো স্থির কি অপূর্ব এক সৃষ্টির সামনে।
http://ichhekhata.blogspot.com/2017/02/mul.html?m=0