Wednesday, 29 March 2017

বৃষ্টিভোর


আজ ভোরে জানলা খুলতেই তার সাথে দেখা। সে যে আছে, কিংবা বলা যায়, বহুক্ষণ থেকেই ছিল, তা জানলা খোলার আগে অনুভবই করিনি। কোলাহলবিহীন তার উপস্থিতি। জানলা খুলেই দেখি, আজকের দিনটির মলিনতা মুছিয়ে ধুয়ে মেজে চকচকে করে রেখেছে সবকিছু সে। গাছপালারাও স্নান সেরে নিয়েছে ভোর রাত্রেই। ঝাঁকড়া চুল থেকে বাড়তি জল ঝরিয়ে নিয়ে সবাই মিলে জানালো 'সুপ্রভাত'। প্রভাতের তখনও অল্প দেরি আছে আসার। ভাবলাম বুঝি, সে এসে চলে গেছে ঘুমের মধ্যেই, তার আসা যাওয়ার সংবাদ ঘুমের পরত ভেদ করে এসে পৌঁছোয়নি আমার কানে। ভুল ভেবেছিলাম। ঝরঝর নৃত্যে তখনও অবিরল তার প্রভাতীবন্দনা। মরজগৎ  জেগে উঠেছে, উছলিত হয়ে উঠেছে সে বন্দনায়। কেবল আমি ছাড়া। জানালার ভেতরে দাঁড়িয়ে আর একটু হলে সদ্য নিদ্রত্থিতা আমি বেমালুম অস্বীকারই করে বসেছিলাম তার প্রবল উপস্থিতিকে। কেবলমাত্র তার উপস্থিতিজনিত কোলাহলটুকু নেই বলে। নিজেদেরই তৈরী করা শব্দনিরোধ জানালায় নিজেই প্রায় বঞ্চিত হচ্ছিলাম জগতজোড়া এই আনন্দময় প্রভাতফেরী থেকে। কতকিছুই যে এইরকম ভাবে নজরানা না দিয়ে মুখলুকোয় তার হিসেব কে রাখে। উপস্থিতির কোলাহলমুখরতার দিকেই বুঝি কেবল আমার একনিষ্ঠা। লাজুক কোলাহলবিমুখ আনন্দের উপস্থিতি তাই হারিয়ে যায় প্রতিদিনের অহেতুক শব্দময়তায়।

Monday, 27 March 2017

চাহিদা




ক্ষুধার প্রয়োজনে অন্নসংগ্রহ, 
অন্ন অন্বেষণের ক্লান্তিতে নিদ্রা, 
আর শারীরিক প্রয়োজনে মৈথুন 
শুনেছি আদিকালে এই ছিল 
জীবনের চাহিদা। 

এই তিন চাহিদা পূরিত করে, 
অনায়াস অর্জিত শান্তিতেই যাপিত হচ্ছিলো
আদিমানবীর জীবন। 

তারপর, কেমনকরে যেন, 
কোন এক দুর্বিপাকে, 
ক্ষনিকের জন্য 
শান্ত জলাশয়ে বিম্বিত হলো 
তারই শ্যামলী মুখচ্ছবিখানি।
প্রেমে পড়লো সে তার আপন লালিমার। 
আর সেই প্রাগৈতিহাসিক মুহূর্তে 
রচিত হলো বুঝি 
আত্মরতির ইতিহাস। 

কেবল আহার- নিদ্রা- মৈথুনে 
শান্ত রইল না জীবন।
কেবলই ভালোবাসতে ইচ্ছে হলো 
সেই প্রাগৈতিহাসিনীর। 
ক্রমশঃই সেই নব জাগরিত নরম প্রেম, 
সঞ্চারিত হয়ে চললো দিগন্তের দিকে। 
এতদিনে তার প্রয়োজন পড়েছে প্রসাধনীর।
আলুলায়িত রুক্ষ কেশপুঞ্জ 
শাসিত হয়েছে নবকবরীর আল্পনায়। 
বসন্তে সেখানে উঠেছে 
রক্ত-পলাশগুচ্ছ।  
সে পলাশ তার কানে দিয়েছে 
তার প্রিয় আদিমানবের সুরের সন্ধান। 
শিহরিত হয়েছে তার গলার ঝিনুকমালা।
দিগন্তরেখা স্পর্শ করতে গিয়ে 
অনন্ত সেই প্রেম, 
ছুঁয়েছে আদিমানবের হৃদয়। 
আর সেই ক্ষনেই রচিত হয়েছে 
যুগলজীবনের নতুন চাহিদা। 

সৌন্দর্যপ্রিয়তার চাহিদা। 
জীবনের সৌন্দর্যরূপ 
পরস্পরে ভাগ করে নেওয়ার চাহিদা। 
কেবল বেঁচে থাকার জন্য নয়, 
ভালবাসার জন্য বেঁচে থাকার চাহিদা।

আর সেদিন থেকেই 
আহার- নিদ্রা- মৈথুনকে 
যোজনক্রোশ পিছনে ফেলে-
দীপ্যমান হয়ে দাঁড়িয়েছে 
জীবনের উজ্জ্বলতম চাহিদা, 
ভালবাসা।।


Sunday, 26 March 2017

ব্রহ্মনাদ


প্রানের জন্ম কি শব্দ থেকে?
ব্রহ্মনাদ শব্দটি সঠিক কি অর্থবাহক?
হাজার হাজার নারী পুরুষের কোন অন্তরীন অতল থেকে উতসারিত আনন্দ,
বীণার তানরূপে তুলেছে ঝঙ্কার।
সৃষ্টি করেছে আদিম ব্রহ্মনাদ।
সৃষ্টি করেছে প্রাণ।
সৃষ্টি  করেছে শ্রী।

সমষ্টিগত সেই শ্রীনাদের পুনরারম্ভে
আজ কি পুনরাগমন হবে না সেই আদিম শ্রীয়ের?
পুনরায় জেগে উঠবেন না কি সেই আদিমাতা?
সৃষ্টি করবেন না কি নতুন প্রাণ?

তিলে তিলে মিলন হচ্ছিল
নিমীলিত অজস্র হৃদয় আর
নবকল্পের সেই নবব্রহ্মনাদের।
অপার্থিব সেই সংগমে জেগে উঠেছে
প্রতিটি প্রানের প্রতিটি সুপ্ত সুর।
সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক সরগম।
নবকল্পের বীজ জেগেছে অনাদি নিদ্রা ভঙ্গ করে।
দিবাকরকে উষার অর্ঘ্য নিবেদনের সময়াসন্ন যে।

সমষ্টির আহবানে
আদিমাতা ধারণ করেছেন বরাভয়মুদ্রা।
জেগেছে সমস্ত সত্বা।
সমস্ত আগল ছিন্ন করে
সুরপ্লাবিত হয়েছে জগত।
ব্রহ্মনাদের আবাহনে
তরল হয়ে মিশে যাচ্ছে আজন্মের প্রস্তরীভূত আমিত্ব।

এতদিনে হল জন্ম।
আর নেই ভয়।