ওকব্রুক পার্কের জানালায় আজ ভরা বর্ষা। কাল সারারাত ধরে ঝরে ঝরে সকালের দিকে ক্ষান্ত দিয়েছে। সকাল থেকে তাই রোদ্দুরের পাট নেই। ইদানিং অবশ্য মোতিমালার সকাল হচ্ছে খানিক দেরি করেই। সপ্তাহান্তের ছুটির দিনগুলিতে কাকভোরে উঠে চুপি চুপি একাই ঊষাকালটিকে জাপটে ধরে খানিক বুঁদ হয়ে উপভোগ করা হয়ে উঠেছে না। তেমন করে কিছুই হয়ে উঠছে না মোতির। নিজেকে সে ছেড়ে দিয়েছে। যা নিজে থেকে তার কাছে আসবে তা তার। নইলে নয়। জোর নেই তার কিছুতেই। তেমনই এই উষা বিলাসও, এই মেঘলা সকালও। চোখে মুখে জল দিয়ে বেরোলো যখন, তখন আর ভোর নেই। কটা চীনাবাদাম কাঠবিড়ালী আর পাখিদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে এসে বারান্দায় পা ছড়িয়ে একটা বই খুলে নিয়ে বসে হাঁ করে সামনের গাছগুলিতে দিকে তাকিয়েছিলো সে। তেমন যে কিছু একটা দেখছিলো তাও নয়। ওই আর কী। চেয়ে থাকা। কিছু দেখতে পাওয়ার আশায় নয়। কিছু দেখার আশায় চেয়ে থাকলে দ্রষ্টব্য সামনে আসে না। দর্শক নির্বিকার হলে বোধহয় দ্রষ্টব্যেরেও নিজেকে প্রকাশ করার তাগিদ জন্মায়। সামনের কটনউড গাছগুলো এখন সবুজ। সে চত্বরে রোদ্দুর উঠুক না উঠুক কাঠবেড়ালী আর পাখিদের ব্যস্ততার হেরফের হয় না তাতে সকালে। পাখিদের কনসার্ট হচ্ছিলো আজ। মোতির কান মন ভরে। মাথায় লাল পাগড়ী একজোড়া কাঠঠোকরা দুএকবার ইলেকট্রিক পোস্টের কাঠে ঠোক্কর মেরে গাছের মরা ডালটাতে বসে দাম্পত্য আলাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। গত সপ্তাহে এরকমই সকালে একটি রেড কার্ডিন্যালের স্ত্রী বাদাম নিতে এসেছিলো। মোতির ফোনের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল সে। আজও দেখ না দেখ টুকটুকে লাল বরটিকে গাছের ডালে বসিয়ে রেখে তার বৌটি টুক করে বাদাম নিয়ে পালালো। আগের দিনেরটাই কিনা কে জানে! পুরুষটি তার রঙের জন্যই সহজে চোখে পড়ে। তাই হয়ত লাজুক বর বৌটিকে পাঠায় মানুষের উঠোনে। তার ঠিক পরেই এলেন একজন একাকী ব্লু জে. তিনিও একটি বাদাম নিলেন। তিনি গাছের দিকে গেলেন না। অন্য দিকে চলে গেলেন। এঁর বাসা বোধকরি দূর পাড়ার কোনো গাছে। রেড কার্ডিন্যাল আর ব্লু জে রোজকার পাখি এখানকার। যদিও তাদের রূপের সঙ্গে এই নাম একেবারেই লাগসই লাগে না মোতির। মনে মনে মোতি তাদের নাম দিয়েছে লালকমল আর নীলকমল। কেমন রূপকথা রূপকথা নাম তাই না! কিছু পরে কাঠবেড়ালীদের সঙ্গে ঝটরপটর করতে করতে গাছে এলো একটি হলুদ পাখি। মোতি তার নাম জানে না। চেনা হলুদপাখি বেনেবৌ এর মতোই। অরিওলই হবে কোনো। যাই হোক ইনি আর নামলেন না নিচে। পড়া তেমন কিছু আর হলো না আজ মোতির। সামনের সবুজ ক্যানভাসে রঙের কাটাকুটি দেখতে সময় গেলো। কিছু পরে মোতি যখন দপ্তর গুটিয়ে ভেতরে ঢুকে এসেছে দিনের চাহিদা মেটাতে, তখন একটি গোবদা কাঠবেড়ালী উঠোন থেকে বাদাম নিয়ে এসে মোতির পাকঘরের জানালার সামনে বসে মুখে বাদাম নিয়ে মোতির কুশল নিয়ে গেল।
তেমন কিছুই প্রত্যাশা ছিল না আজ সকালের কাছে মোতিমালার। তবুও সে ভিজিয়ে দিলো মোতিকে আজ। তাই তো মোতি তেমন করে আর কিছু চায় না।