ভোরের অন্ধকারে বাড়ি ফিরতে ফিরতে পাড়ার মোড়ে অভ্যর্থনা করে ভীত দুটো রাকুন। গাড়ীর হেডলাইটের আলোয় চকচক করে ওঠে ওদের চোখদুটো। মাঝরাস্তায় ছুটোছুটি করছিল দুজনে। আমার জন্য খেলায় ব্যাঘাত হল। দৌড়ে রাস্তার পাশে গিয়ে জুলজুল করে দেখতে থাকে আমায়। ভয়ে ভয়ে আর এক ভীতুর দিকে তাকিয়ে থাকে।
আলো ফুটতে থাকে। দিন শুরু হয়। আমি জানলা খুলি, জল গরম করে টি ব্যাগ ডুবিয়ে খাই। দু চুমুক দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে লোক দেখতে দেখতে, লোকেদের সাথে তাদের কুকুরদের দেখতে দেখতে ভুলে যাই আমি চা খাচ্ছিলাম। আধঘন্টা পরে ঠাণ্ডা চা জলের মতন ঢকঢক করে খেয়ে নি। গলা শুকিয়ে গেছে যে। উঠে গরম করিনা আলসেমি তে। আর ফেলে দিয়ে নতুন করে বানাই না কারণ খাবার জিনিষ ফেলে নষ্ট করতে নেই যে। এখানে আসার প্রথম সপ্তাহেই কি যেন একটা উপলক্ষে বৈকালিক জলযোগের আমন্ত্রণ ছিল ডিপার্টমেন্ট সুদ্ধু সক্কলের। পার্টির শেষে গামলা ভর্তি নানারকম চিজ, ফলের টুকরো, কেক ইত্যাদি সমস্ত উদ্বৃত্ত খাবার একসাথে ধরে ফেলে দিতে দেখেছিলাম। এই আড়াইবছরে এতকিছু ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও ওই দৃশ্যটা ভুলে যেতে পারিনি। প্রানে ধরে চাটুকু ফেলতেও কেমন লাগে। কিপটেমি? মধ্যবিত্ত বস্তাপচা মানসিকতা? হবে হয়ত কোন একটা।
জানলার বাইরে রোদ বাড়তে থাকে। সপ্তাহান্তের শিথিল জীবন বয়ে চলে আমার জানলার কিনারা ঘেঁষে। আমার আজ "কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই।" কথাও বলার নেই। রাতজাগার ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে যায় কখন কে জানে। গায়ের চাদরটা জড়িয়ে গুটুলি পাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি জানলার পাশে মেঝের কার্পেটেই। ঘুম আমায় পাহাড়ে নিয়ে চলে। পাহাড়ে তখন বর্ষা নেমেছে। সদ্যস্নাতা পাহাড়ি লতা থেকে টুপটাপ জল ঝরছে। চকচকে কচি সবুজরং চারিদিকে। তিনদিকে ওই তো দেখতে পাচ্ছি সবুজ পাহাড়। আর সামনে ওইতো দূরে নদীপথ আর ছড়ানো গ্রাম। ওইটেই বুঝি আমার গ্রাম, আমার পৌঁছানোর লক্ষ্য। সেই তিন পাহাড়ের জটলার মাঝে দূরের গ্রামের দিকে তাকিয়ে থাকি কেবল। পৌঁছানোর পথের হদিশ কোথায় যে যাত্রা শুরু করব? তিন পাহাড়ের সংগমে বেভুল হয়ে দূর থেকে কেবল দেখতে থাকি। পৌঁছাতে পারিনা। প্রিয় বর্ষা কেবল গান শুনিয়ে যায় ভিজে বাতাস আর টুপটুপিয়ে পড়া জলের শব্দের আল্পনায়। অনেক বেলায় ঘুম ভেঙে উঠে বসি। বর্ষা, পাহাড়, সবুজ সমস্ত ছাপিয়ে চড়চড়ে রোদ্দুরভরা জানলায় কেবল সত্যি হয়ে থাকে আমার ঘরে ফেরার স্বপ্ন।
উঠে বসে থাকি। জড়বস্তু যেন। খিদে, তেষ্টা নেই। স্নান করার তাড়া নেই। কিছু ভাবারও বুঝি নেই। মস্তিষ্কজাত সমস্ত চিন্তা যেন জলাঞ্জলি দিয়ে বসেছি। শুধু চোখের সামনে যা চলছে, যন্ত্রবৎ তাকে গ্রহণ কর, অনুধাবন কর তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ কর। দিন-মাস-বছর যায়, আমার যন্ত্র থেকে মানুষ আর হয়ে ওঠা হয়না। জানলার ভেতর থেকে দেখতে থাকি জানলার বাইরের সতস্ফুর্ত জীবনস্রোত। জানলা খুলে জীবনের সাথে আলাপ করা আর হয়না।
শেষদুপুরের তামাটে রোদ ক্রমশঃ এলিয়ে পড়ে জানলার বাইরে রাস্তার ওপারে সারি সারি ন্যাড়া গাছগুলোর গায়ে। কয়েকটা গাড়ি যাতায়াত করে। কুকুর নিয়ে দৌড়তে বেরোয় দম্পতি। শীতটা যাবে যাবে করেও যাচ্ছে না এখনো। শেষবেলায় মরণকামড় দেবার মতন। অদ্ভুত সোনালী দেখাচ্ছে গাছগুলোকে। আমি প্রাণভরে দেখতে থাকি গাঢ় নীল আকাশের ক্যানভাসে সোনালী গাছেদের। বিকেল শেষ হতে থাকে। আমার জানলার কাঁচে মাথা কোটে ঠাণ্ডা বৈকালী হাওয়া। অস্নাত, অভুক্ত, চিন্তাশক্তিহীন জড়বৎ আমি কেবল বসে থাকি আলুথালু আমায় আগলে নিয়ে।
আলো ফুটতে থাকে। দিন শুরু হয়। আমি জানলা খুলি, জল গরম করে টি ব্যাগ ডুবিয়ে খাই। দু চুমুক দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে লোক দেখতে দেখতে, লোকেদের সাথে তাদের কুকুরদের দেখতে দেখতে ভুলে যাই আমি চা খাচ্ছিলাম। আধঘন্টা পরে ঠাণ্ডা চা জলের মতন ঢকঢক করে খেয়ে নি। গলা শুকিয়ে গেছে যে। উঠে গরম করিনা আলসেমি তে। আর ফেলে দিয়ে নতুন করে বানাই না কারণ খাবার জিনিষ ফেলে নষ্ট করতে নেই যে। এখানে আসার প্রথম সপ্তাহেই কি যেন একটা উপলক্ষে বৈকালিক জলযোগের আমন্ত্রণ ছিল ডিপার্টমেন্ট সুদ্ধু সক্কলের। পার্টির শেষে গামলা ভর্তি নানারকম চিজ, ফলের টুকরো, কেক ইত্যাদি সমস্ত উদ্বৃত্ত খাবার একসাথে ধরে ফেলে দিতে দেখেছিলাম। এই আড়াইবছরে এতকিছু ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও ওই দৃশ্যটা ভুলে যেতে পারিনি। প্রানে ধরে চাটুকু ফেলতেও কেমন লাগে। কিপটেমি? মধ্যবিত্ত বস্তাপচা মানসিকতা? হবে হয়ত কোন একটা।
জানলার বাইরে রোদ বাড়তে থাকে। সপ্তাহান্তের শিথিল জীবন বয়ে চলে আমার জানলার কিনারা ঘেঁষে। আমার আজ "কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই।" কথাও বলার নেই। রাতজাগার ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে যায় কখন কে জানে। গায়ের চাদরটা জড়িয়ে গুটুলি পাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি জানলার পাশে মেঝের কার্পেটেই। ঘুম আমায় পাহাড়ে নিয়ে চলে। পাহাড়ে তখন বর্ষা নেমেছে। সদ্যস্নাতা পাহাড়ি লতা থেকে টুপটাপ জল ঝরছে। চকচকে কচি সবুজরং চারিদিকে। তিনদিকে ওই তো দেখতে পাচ্ছি সবুজ পাহাড়। আর সামনে ওইতো দূরে নদীপথ আর ছড়ানো গ্রাম। ওইটেই বুঝি আমার গ্রাম, আমার পৌঁছানোর লক্ষ্য। সেই তিন পাহাড়ের জটলার মাঝে দূরের গ্রামের দিকে তাকিয়ে থাকি কেবল। পৌঁছানোর পথের হদিশ কোথায় যে যাত্রা শুরু করব? তিন পাহাড়ের সংগমে বেভুল হয়ে দূর থেকে কেবল দেখতে থাকি। পৌঁছাতে পারিনা। প্রিয় বর্ষা কেবল গান শুনিয়ে যায় ভিজে বাতাস আর টুপটুপিয়ে পড়া জলের শব্দের আল্পনায়। অনেক বেলায় ঘুম ভেঙে উঠে বসি। বর্ষা, পাহাড়, সবুজ সমস্ত ছাপিয়ে চড়চড়ে রোদ্দুরভরা জানলায় কেবল সত্যি হয়ে থাকে আমার ঘরে ফেরার স্বপ্ন।
উঠে বসে থাকি। জড়বস্তু যেন। খিদে, তেষ্টা নেই। স্নান করার তাড়া নেই। কিছু ভাবারও বুঝি নেই। মস্তিষ্কজাত সমস্ত চিন্তা যেন জলাঞ্জলি দিয়ে বসেছি। শুধু চোখের সামনে যা চলছে, যন্ত্রবৎ তাকে গ্রহণ কর, অনুধাবন কর তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ কর। দিন-মাস-বছর যায়, আমার যন্ত্র থেকে মানুষ আর হয়ে ওঠা হয়না। জানলার ভেতর থেকে দেখতে থাকি জানলার বাইরের সতস্ফুর্ত জীবনস্রোত। জানলা খুলে জীবনের সাথে আলাপ করা আর হয়না।
শেষদুপুরের তামাটে রোদ ক্রমশঃ এলিয়ে পড়ে জানলার বাইরে রাস্তার ওপারে সারি সারি ন্যাড়া গাছগুলোর গায়ে। কয়েকটা গাড়ি যাতায়াত করে। কুকুর নিয়ে দৌড়তে বেরোয় দম্পতি। শীতটা যাবে যাবে করেও যাচ্ছে না এখনো। শেষবেলায় মরণকামড় দেবার মতন। অদ্ভুত সোনালী দেখাচ্ছে গাছগুলোকে। আমি প্রাণভরে দেখতে থাকি গাঢ় নীল আকাশের ক্যানভাসে সোনালী গাছেদের। বিকেল শেষ হতে থাকে। আমার জানলার কাঁচে মাথা কোটে ঠাণ্ডা বৈকালী হাওয়া। অস্নাত, অভুক্ত, চিন্তাশক্তিহীন জড়বৎ আমি কেবল বসে থাকি আলুথালু আমায় আগলে নিয়ে।