“The wound is the place where the Light enters you.”-Rumi
পিঠ সোজা করে বোসো একবার, বন্ধ করো চোখ, প্রবেশ করো নিজের ভিতরে, বুকের খাঁচা ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে থুতনি উঁচু করে তাকাও দেখি আকাশের দিকে, এবার একবার ফুসফুস খালি করে ত্যাগ করো দেখি সমস্ত আবর্জনা।
করেছো?
এবার সত্যি করে বোলো দেখি, মাথার ভিতরটা একটুও খালি হল কিনা? দুকাঁধে পেশিগুলো একটুও শিথিল হয়নি কি? দুই ভ্রূ এর মাঝের চামড়াতে একটা ভাঁজও কি কমেনি?
কি বলছো?
জানিনা ঠিক কি পরিবর্তন হলো, কিন্তু ঠিক এর পরের শ্বাসটা মনে হলো যেন একটু বড় করে নিতে পারলাম।
তবে তো উৎসব শুরু।
তুমি যুদ্ধে জিততে শুরু করেছো যে। একটি একটি করে শ্বাস তোমার হয়ে কথা বলবে এভাবেই। তারপর শ্বাসের সাথে সাথে একটু একটু করে দেখবে গোটা ফুসফুসটা তোমার কথা শুনে চলছে। তারপর একদিন দেখবে পুরো শরীরটা, যেখানে তুমি রয়েছো এতগুলি বছর ধরে, সে তোমার কথা শুনতে শুনতে ক্রমশঃ তুমি হয়ে উঠেছে। আর অনুভূতিগুলো যেগুলো এতবছর ধরে পুতুল নাচন নাচিয়ে চলছিল তোমায়, একদিন তাদের কান ধরে শাসন করে, লাটাইয়ের সুতোর ডগায় বেঁধে হুস করে দিয়েছো আকাশে ভাসিয়ে।
সত্যি বলছি। একটা শ্বাস যদি বুকভরে নিতে পারো, এ সবই পারবে তুমি। একবার বিশ্বাস করে বুক চিতিয়ে চোখটা বন্ধ করে দেখোই না।
দুঃখ, দুঃসময়, প্রবঞ্চনা, একাকিত্ব, অপ্রেম, অনিশ্চয়তা এতো কিছু পেরিয়ে চলেছো তুমি, এখনো তো দিব্য বেঁচে আছো, নিজেও কি ভেবেছিলে পার হতে পারবে নড়বড়ে সাঁকোটা?
কিন্তু পেরিয়ে তো এলে? বা পার হবার বার জন্য সাহস করে প্রথম পা টা তো ফেলেছো দেখতে পাচ্ছি। তবে অর্ধেক যুদ্ধ তো জিতেই গেলে প্রায়। কি বললে, যন্ত্রনায় ছিঁড়ে পড়ছে মন? শরীর আর চলছে না? ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে জীবন? জানি তো। হচ্ছে তো। তোমার-আমার-ওর-সক্কলের। যন্ত্রণার প্রকার কেবল তোমার-আমার-ওর-সক্কলের মৌলিক। জীবন মৌলিক তাই যন্ত্রণাও মৌলিক। মৌলিক যোদ্ধার জীবন যাপন। জীবন। যুদ্ধটা কেবল অমৌলিক। সত্যিটা হলো, প্রতিনয়ত প্রতি সেকেন্ডে যুদ্ধটা জিতে চলেছি তুমি-আমি-ও-সক্কলেই। প্রতিদিনের ওঠা নামায়। নইলে আজও জানলা দিয়ে সূর্য্যাস্তের লাল আলো চোখে পড়লে একবার চোখ বন্ধ করে সে আলোটা চোখে মেখে নাও কেন তুমি? আজো খানসাহেবের আঙ্গুল সরোদ ছুঁলে ঈশ্বর এসে স্পর্শ করেন কেন তোমার হৃদয়? আজও কেন নেই রাজ্যের বাসিন্দা কারো যুদ্ধজয়ের গল্প শোনার শেষে তোমার চোখ ভিজে আসে? আজও কেন আরো একবার চেষ্টা করতে ইচ্ছে করে? জিতেছ বলেই তো? ওই যে কবে প্রথম শ্বাসটা নিয়েছিলে চেষ্টা করে দেখবে বলে, সেইদিনেই জিততে শুরু করেছিলে নিজেও বোঝোনি। বুঝিনি- বোঝেনা। তুমি-আমি-ও-সক্কলে।
নতুন বছরে নতুন যুদ্ধের রসদ পেয়েছো তো আগের আগের সমস্ত বছরের যুদ্ধ গুলো থেকে? ব্যুহসজ্জাও সম্পন্ন হয়েছে নিখুঁতভাবে? হয়েছে। তোমার-আমার-ওর সক্কলের অজান্তেই। এস তবে আরেকবার ব্রহ্মক্ষণে দরজা খুলে দাঁড়াই ভৈরবী আলোয়, নতুন যুদ্ধের আবাহনের অপেক্ষায়। জিতবো বলে। বুক পেতে ক্ষতটা গ্রহণ করবো বলে। সেই ক্ষতপথে ভৈরবী আলোর সবটুকু বুকের ভেতর গ্রহণ করবো বলে। বেঁচে উঠবো বলে। আরও একবার। তুমি- আমি- সক্কলে। একসাথে। ভিন্ন ভিন্ন পথে।
ভাগ্যিস ক্ষতরা থাকে সক্কলের জীবনে, নইলে আলোরা যে বাইরেই মাথা কুটে মরতো (“The wound is the place where the Light enters you.”-Rumi)।